Total Pageviews

Feedjit Live

This is default featured post 1 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured post 2 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured post 3 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured post 4 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured post 5 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

Friday, July 29, 2011

 হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদন, বেলুচিস্তানে অপহরণ নির্যাতন গুম করছে নিরাপত্তা বাহিনী

পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই শত শত সরকারবিরোধী রাজনৈতিক কর্মীকে অপহরণ করে আটকে রাখছে। নির্যাতন চালাচ্ছে তাদের ওপর।
গতকাল বৃহস্পতিবার প্রকাশিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, অপহূত অনেককে মেরে ফেলা হচ্ছে। এর মধ্যে কিছু লোকের লাশ পাওয়া যাচ্ছে। অনেকের লাশ গুম করে ফেলা হচ্ছে।
‘উই ক্যান টর্চার, কিল অ্যান্ড কিপ ইউ ফর ইয়ার্স’ শীর্ষক প্রতিবেদনে কমপক্ষে ১০০ ব্যক্তির সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে অনেকেই আছে, যারা বেলুচিস্তানে নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এ ছাড়া অপহূত ও নিখোঁজ ব্যক্তির স্বজনদেরও সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১২ বছরের শিশুরা পর্যন্ত অপহরণের শিকার হয়েছে, যাঁদের কোনো খোঁজখবর পাওয়া যাচ্ছে না।
পাকিস্তানের সবচেয়ে বড় প্রদেশ বেলুচিস্তান দেশটির ৪৪ শতাংশ ভূভাগ দখল করে আছে। তেল, গ্যাস, তামা, সোনাসহ বিভিন্ন ধরনের খনিজ সম্পদে প্রদেশটি সমৃদ্ধ। ইরান ও আফগানিস্তানের সীমান্ত এই প্রদেশের সঙ্গে যুক্ত। আফগানিস্তানের তালেবান নেতারা বেলুচিস্তান ঘাঁটি গেড়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র অনেক আগে থেকে অভিযোগ করে আসছে। সরকার বলেছে, আফগান তালেবানের পাশাপাশি স্থানীয় উগ্রপন্থী জাতীয়তাবাদী আদিবাসীরাও বেলুচিস্তানে সংঘর্ষে জড়াচ্ছে।
বেলুচিস্তানের জাতীয়তাবাদী আদিবাসী নেতা-কর্মীদের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার এসব সম্পদের খুব কম অংশই এ প্রদেশের মানুষকে ভোগ করার সুযোগ দেয়। বালুচ রিপাবলিকান পার্টির মতো কয়েকটি জাতীয়তাবাদী দল অধিকতর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সুবিধার দাবিতে আন্দোলন করে আসছে। তাদের দমিয়ে রাখতেই নিরাপত্তা বাহিনী এসব অপহরণ ও খুনের ঘটনা ঘটাচ্ছে।
স্থানীয় ভুক্তভোগীদের উদ্ধৃতি দিয়ে হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারবিরোধী কর্মীদের প্রায়ই সাদা পোশাকে নিরাপত্তাকর্মীরা তুলে নিয়ে যান।
বালুচ রিপাবলিকান পার্টির কর্মী বশির আজিম বলেছেন, ২০০৫, ২০০৬ ও ২০০৯ সালে তিন দফায় তাঁকে ধরে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। তাঁর ভাষ্য, ‘তাঁরা আমার নোখের ভেতর সুচ ঢুকিয়ে দিত, পিঠের ওপর চেয়ার পেতে বসে পড়ত। একবার আমাকে এমন একটা কক্ষে ২৪ ঘণ্টা আটকে রাখা হয়েছিল, সেখানে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া নড়াচড়া করার কোনো সুযোগ ছিল না। যখন তাঁরা আমাকে বাইরে নিয়ে এল, তখন আমার পা দুটো ফুলে গেছে। আমি বাইরে আসার সময় পড়ে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়লাম।’
তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা কাউকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়া ধরে আনে না। যাদের ধরে আনে তাদের সময়মতো আদালতে সোপর্দ করা হয়। ডন ও বিবিসি অনলাইন।

গণতন্ত্রঃ তত্ত্বে ভুল? নাকি অক্ষমতা...!!!


ব্যাপারটি নিয়ে ভাবছি বেশ কিছুদিন হলো। সমাধান খুঁজে পাচ্ছিনা। কারো সাথে শেয়ারও করতে পারছিনা। পাছে না আবার ভাবে, পাগল! আদার খুচরো দোকানদার, জাহাজ নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে! পরে ভাবলাম যা আছে কপালে। জাতির সাথেই শেয়ার করি। দু’পাঁচ জনের কাছে পাগল সেজে লাভ নেই। পাগল বললে পুরো জাতি পাগল বলুক। জাতীয় পাগল হতে পারাও মন্দ হবে না।

আমি যেহেতু ছোট লেখক, তাই লেখাটি ছোট করেই লিখে পাঠিয়েছিলাম দৈনিক সমকালে। গণতন্ত্র ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা শিরোণামে। দৈনিক সমকাল ১৮ জুন'১১ইং সংখ্যায় যা প্রকাশিত হয়েছিলো

একটি কথা আছে,
কাজির গাই, কেতাবে আছে গোয়ালে নাই!

ভাবছি, গণতন্ত্রের বেলায় এটি সমভাবে প্রযোজ্য হয়ে যায় কিনা!!

বর্তমান বিশ্বে সবচে’ সমাদৃত ও গ্রহণযোগ্য রাষ্ট্রনীতি হচ্ছে গণতন্ত্র। আমাদের দেশেও। যদিও এদেশে গণতন্ত্রের পোশাক পরে রাজতন্ত্রের অশরীরি আত্মাগুলোকেই ঘুরে বেড়াতে দেখা যায়, তবুও।

যদিও আমাদের গণতন্ত্রের থলের ভেতরেই ঘাপটি মেরে বসে থাকতে দেখা যায় উর্দি শাসনকে স্বাগত জানানোর পাইক-পেয়াদাদের, তুবও।

আমরা ভাবতে ভালোবাসি, বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। যদিও এদেশের রাস্তা-ঘাটে, গ্রাম-শহরে, অফিস-আদালতে, এমনকি জাতীয় সংসদেও, অবলা গণতন্ত্রকে ধর্ষিত হতে দেখা যায়। গণতন্ত্রের কোমল বুকে ছুরি বসিয়ে পেছনের দরজা দিয়ে মসনদ হাসিল করার ঘটনাও ঘটে। তবুও।

আমরা সেই গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করি। যে গণতন্ত্রের বুকে পা রেখে উপরে উঠা যায়। সেই গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি আমরা, যে গণতন্ত্র আমাদের পৌঁছে দিতে পারে ক্ষমতার শীর্ষ বিন্দুতে। আমরা গণতন্ত্রের প্রতি ততক্ষণ আস্থাশীল থাকতে পারি, যতক্ষণ আমার স্বৈরতান্ত্রিক আচরণে বাধা হয়ে না দাড়ায় ।

গণতন্ত্র মানে হচ্ছে, জনগণের জন্য জনগণের মনোনিত জনগণের সরকার। অর্থাৎ রাষ্ট্রের জনগণ যাকে চাইবে, যাদেরকে চাইবে, তারাই করবে সরকার গঠন। তারাই চালাবে রাষ্ট্র। কিন্তু কথা হচ্ছে দেশের সকল মানুষের চাওয়া তো আর সমান হয়না। কেউ চায় অমুককে তো কেউ চায় তমুককে। কেউ ভোট দেয় আম গাছকে তো কেউ আবার তাল গাছকে। এ জন্য ব্যাপারটির নিষ্পত্তি করা হয়েছে এভাবে,

কোনো আসনের অধিকাংশ মানুষ যাকে ভোট দেবে, তিনিই হবেন নির্বাচিত। এ ধারাই অনুসৃত হয়ে আসছে বিশ্বব্যাপী। স্থানীয় নির্বাচন থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত। কোনো নির্বাচনী এলাকায় অধিকাংশ মানুষ যাকে সমর্থন জানাচ্ছে, তিনিই পাচ্ছেন নির্বাচিত প্রতিনিধি হিসেবে জনগণের খেদমত (!) করবার সুযোগ। আর আমার প্রশ্ন এখানেই। আমার খটকার জায়গাটিই এটি। আমার বোঝার ভুলও হতে পারে। কেউ হয়তো ব্যাপারটি ব্যাখ্যা করবেন। সমস্যাটির ব্যাখ্যা আছে আমার কাছে। সমাধান নিয়ে ভাবা হয়নি। কেউ হয়তো ভাববেন। কিংবা কে জানে অন্য কোনো সূত্রে বিষয়টি মীমাংসিতই আছে কিনা। জানার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করবো আমি। আর এই সাথে জানিয়ে রাখি, গণতন্ত্রের ফজিলত বর্ণনা করা বা পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তি-তর্ক উপস্থাপন করার জন্য এই লেখা নয়। বিষয়টি হচ্ছে গণতন্ত্রের কেতাবী সংজ্ঞা এবং প্রায়োগিক বাস্তবতার মাঝে মিল-অমিল সংক্রান্ত।

বুঝতে পারছিনা কীভাবে প্রকাশ করবো। গণতান্ত্রিক শাসন কাঠামোর মূল কথা হচ্ছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের পছন্দ ও সমর্থনের ভিত্তিতেই জন-প্রতিনিধি বা সরকার গঠিত হবে। কিন্তু একটু সুক্ষ্মভাবে ক্যালকুলেশনে গেলে দেখা যায় এর ব্যতিক্রম হয়েও সরকার গঠিত হতে পারে। আর হচ্ছেও। তাও আবার গণতান্ত্রিকভাবেই।

দেখা গেলো, অধিকাংশ মানুষ কাউকে বা কোনো দলকে পছন্দ করলো না, সমর্থন জানালো না, তারা চাইলোনা এরা নির্বাচিত হোক বা সরকার গঠন করুক। কিন্তু গণতন্ত্রের দেয়ালের ঠিক মধ্যেখানে থাকা বেশ বড় একটি ছিদ্র দিয়ে তাদেরও সুযোগ হয়ে উঠছে নির্বাচিত হবার বা সরকার গঠনের। আর এমনটি অহরহই হচ্ছে। উদাহরণ দিচ্ছি।

মনে করা যাক, কোনো আসনের মোট ভোটার সংখ্যা ৩ লাখ। নির্বাচনে প্রার্থী হয়েছেন ৫ জন। ভোট কাস্ট হলো ৮০%। ধরে নেয়া যাক হিসাবটা দাঁড়ালো এভাবে,

যিনি নির্বাচিত হলেন, তিনি পেলেন ৯০ হাজার ভোট।
২য় অবস্থানে থাকা প্রার্থী পেলেন ৮০ হাজার।
৩য় জন ৪০ হাজার।
বাকী দু’জন পেলেন ৩০ হাজার ভোট।
এলাকার ২০% বা ৬০ হাজার লোক ভোট দেয়নি অর্থাৎ কাউকেই সমর্থন জানায়নি।

এবারে অবস্থা দাঁড়ালো এই যে,

মিস্টার এক্স ৯০ হাজার ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়ে গেলেন। এর মানে তার এলাকার ৯০ হাজার মানুষ সমর্থন জানালো তাকে। তারা চাইলো মিস্টার এক্স এমপি হোন। কিন্তু পরাজিত ৪ প্রার্থী মিলে পেয়েছিলেন ৮০ হাজার যোগ ৪০ হাজার যোগ ৩০ হাজার সমান ১ লক্ষ ৫০ হাজার ভোট। এর মানে এই দেড় লক্ষ মানুষ মিস্টার এক্সকে চাইল না। তারা চেয়েছে তার বিকল্প। আর তাদের এই চাওয়াটা খন্ড খন্ড হয়ে যাওয়াতে সুযোগটা পেয়ে যান মিস্টার এক্স। ফলাফল দাঁড়ালো, ৯০ হাজার মানুষের পছন্দ এবং দেড় লক্ষ মানুষের অপছন্দকে পুঁজি করে গণতন্ত্রের ছিদ্র দিয়ে তিনিই হয়ে গেলেন নির্বাচিত!

গণতন্ত্রের মূল কথাটি আবারো সামনে নিয়ে আসা যাক। জন প্রতিনিধি নির্বাচিত হবেন অধিকাংশের সমর্থনের ভিত্তিতে। অথচ এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। অধিকাংশ মানুষ যাকে চায়নি, তিনিই হয়ে যাচ্ছেন নির্বাচিত। ব্যাপারটি কেমন হয়ে গেলো না?

পূর্বোল্লিখিত সম্ভাবনা এবং অনেকটা বাস্তবতাকে আমলে নিয়ে যে ছকটি দাঁড়ায়, তা হচ্ছে, দেখা গেলো কোনো দল প্রদত্ত ভোটের ৪৫% ভোট পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সরকার গঠন করে ফেললো। সেটা হলো একটা গণতান্ত্রিক সরকার।

অথচ সরকারকে ভোট দেয়নি- এমন মানুষের সংখ্যা ৫৫%। তাহলে কেমন করে বলা যায় গণতান্ত্রিক নির্বাচন ব্যবস্থায় দেশের অধিকাংশ মানুষের মতামতের ভিত্তিতেই সরকার গঠিত হয়ে থাকে?

ব্যাপারটির কোনো সহজ সমাধান আপাতত সামনে নেই আমার। চিন্তাজীবি যারা, তাদের কাছে থাকলেও থাকতে পারে।

অতি সম্প্রতি হোসেইন মোহাম্মদ এরশাদ নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে একটি ফর্মুলা প্রস্তাব করেছেন। বলেছেন, নির্বাচন হবে দলীয় ভিত্তিতে। অর্থাৎ, মানুষ বিশেষ কোনো প্রার্থীকে ভোট দেবেনা। ভোট দেবে নৌকা, ধানের শীষ, লাঙ্গল ইত্যাদি মার্কাকে অর্থাৎ দলকে। যে দল সংখ্যা গরিষ্ঠ মানুষের সমর্থন পাবে, তারাই করবে সরকার গঠন। প্রাপ্ত ভোটের আনুপাতিক হারে স্ব স্ব দল প্রার্থী মনোনিত করে তাদের জীবনের আমলনামাসহ নির্বাচন কমিশনে পাঠাবে। নির্বাচন কমিশন মনোনিত ব্যক্তিকে সার্বিক বিবেচনায় যোগ্য মনে করলে তবেই তাকে ঘোষণা করা হবে নির্বাচিত হিসেবে।

এরশাদ সাহেবের এই ফর্মূলার পক্ষে বিপক্ষে দু'দিকেই যুক্তি আছে। ফর্মূলাটি গ্রহণ করে নেয়া হলে কালোটাকার মালিকরা টাকার বিনিময়ে ভোট কিনে এমপি হবার সুযোগ পাবেন না। পেশি শক্তির কিংবদন্তিরা জোর করে কেন্দ্রদখল করে এবং গায়ের জোরে জিতে আসার সুযোগ পাবেন না। গণতন্ত্রের সংজ্ঞা অনুযায়ী দেশের অধিকাংশ মানুষ যাদের চাইবে তারাই করবে সরকার গঠন। কারণ সামনে থাকবে প্রাপ্ত ভোটের সর্বমোটের আনুপাতিক পরিসংখ্যান।

আবার এর দুর্বল দিকও আছে। এতে কার দলের প্রধান ও প্রভাবশালী অংশের সেচ্ছাচারিতা ও দৌরাত্ব লাগামহীন হয়ে যেতে পারে। তাদের ভাই-বেরাদার, ভাগ্নে-মামা তথা আত্মীয়-স্বজনদের ভারে বিষাক্ত হয়ে উঠতে পারে সংসদ। যেহেতু মাঠ পর্যায়ে পয়সা খরচ করতে হচ্ছেনা, সে জন্যে কোঠি টাকার নমিনেশন বাণিজ্যের স্থলে মনোনয়ন বাণিজ্যের টাকার অংক চলে যেতে পারে শত কোটিতে। সেই সঙ্গে সংসদ ভরে যেতে পারে অযোগ্যদের দ্বারা।

গণতন্ত্রের যে দুর্বল দিকটির কথা আমি উল্লেখ করলাম, জানি না সেটা আসলেই দুর্বলতা কিনা! হয়ে থাকলে এর সমাধান কী? প্রথম আলো ব্লগ

 সরকার দুর্নীতিমুক্ত: স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

সাহারা খাতুন সাহারা খাতুন
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন বলেছেন, বর্তমান সরকার দুর্নীতিমুক্ত। সরকারের কারও বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা সম্ভব হয়নি। আজ শুক্রবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) কার্যালয়ে বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত দুর্নীতিবিরোধী রোড শোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সাহারা খাতুন বলেন, নির্বাচনী ইশতেহার অনুসারে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি বন্ধসহ আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকার কাজ করে চলেছে। তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা দেখাতে চাই যে এ সরকার দুর্নীতিমুক্ত।’ দেশকে সরকার দুর্নীতিমুক্ত সমাজ উপহার দিতে চায় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বেসরকারি একটি টিভি চ্যানেলে প্রচারিত প্রতিবেদনে আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মন্ত্রী ও সাংসদদের সম্পদের হিসাব চেয়েছেন। এ থেকেই বোঝা যায় দুর্নীতি করলে কেউ রেহাই পাবে না। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সজাগ বলেই প্রধানমন্ত্রী এই নির্দেশ দিয়েছেন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজি) হাসান মাহমুদ খন্দকার ও অন্যরা

ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে কাছে টানার উদ্যোগ

আটটি দলের কাছে আ.লীগের প্রস্তাব

 রাজনৈতিক ঐক্য গড়া ও সরকারবিরোধী আন্দোলন থেকে নিবৃত্ত রাখতে ধর্মভিত্তিক ছোট ছোট রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলোর সঙ্গেও আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
গত এক সপ্তাহে সরকারের পক্ষ থেকে আটটি দলের কাছে আলোচনার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। একজন প্রতিমন্ত্রীর পক্ষ থেকে গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা এবং মহাজোটের শরিক একটি ধর্মভিত্তিক দলের প্রধান এ প্রস্তাব দিয়েছেন বলে দলগুলোর নেতারা জানিয়েছেন।
সরকারের পক্ষ থেকে যে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করা হচ্ছে, সেগুলো হলো চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী ঐক্য আন্দোলন, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি এবং কয়েকটি দল ও সংগঠনের মোর্চা সম্মিলিত ওলামা মাশায়েখ পরিষদ। এর মধ্যে শেষ তিনটি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত কোনো দল নয়। ছোট ছোট ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে কাছে টানার এই উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির আবদুর রব ইউসুফী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সরকারের এই অনুভূতিকে ইতিবাচক মনে করি। তবে এই উদ্যোগ সরকারের শোচনীয় অবস্থার প্রমাণ বহন করে।’ তিনি জানান, পরিবেশ ও বন প্রতিমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য তিনি প্রস্তাব পেয়েছেন।
২০০৬ সালের ২৩ ডিসেম্বর খেলাফত মজলিসের সঙ্গে ফতোয়ার অধিকার ফিরে দেওয়াসহ পাঁচ দফা সমঝোতা চুক্তি করেছিল আওয়ামী লীগ, যা পরে বাতিল করা হয়।
সূত্র জানায়, একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা গত বুধবার সকালে খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব জাফরুল্লাহ খানকে মুঠোফোনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকে বসার প্রস্তাব দেন। একজন প্রতিমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
জাফরুল্লাহ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আলোচনায় বসতে রাজি নই। এর দরকার আছে বলেও মনে করি না। সরকার যদি সংবিধানের মূলনীতিতে “আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস” কথাটি পুনঃস্থাপন করে, তাহলে বসার দরকার কী?’
এর আগে গত শনিবার প্রতিমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আরেক কর্মকর্তা আলোচনার প্রস্তাব দেন খেলাফত মজলিসের আমির আহমদুল্লাহ আশরাফকে। এ কথা স্বীকার করে আশরাফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বলেছি, আমি তো যেতে পারব না। উনি (প্রতিমন্ত্রী) এলে স্বাগত জানাব।’
সূত্র জানায়, একইভাবে প্রতিমন্ত্রীর পক্ষ থেকে অন্তত দুবার বৈঠকে বসার প্রস্তাব দেওয়া হয় চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনকে।
জানতে চাইলে ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ইউনূছ আহমাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গা থেকে দাওয়াত আসছে। আমরা তাদের বলে দিয়েছি, বসার আগে আলোচ্য বিষয় ঠিক করতে হবে, লক্ষ্য স্থির করতে হবে এবং আশ্বস্ত করতে হবে।’
প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির আবদুর রব ইউসুফী ও সম্মিলিত ওলামা মাশায়েখ পরিষদের যুগ্ম মহাসচিব খলিলুর রহমান মাদানীর কাছে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছেন বলে দল দুটির সূত্রগুলো জানিয়েছে।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকে বসার ব্যাপারে ‘ইসলামী ও সমমনা ১১ দল’ যাতে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়, সে ব্যাপারে ভূমিকা রাখতে আবদুর রব ইউসুফীকে অনুরোধ করেছেন ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
‘ইসলামী ও সমমনা ১১ দল’ নামে ছোট ছোট দলগুলোর এই মোর্চা গঠিত হয় গত ৩০ জুন। ইউসুফী এই মোর্চার অন্যতম নেতা। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, সরকার সংবিধানে পঞ্চম সংশোধনীর মূলনীতি পুনর্বহাল, বিসমিল্লাহর নতুন অনুবাদ প্রত্যাহার করে নিলেই হবে। এ জন্য কোনো দলের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন নেই।’
অবশ্য সম্মিলিত ওলামা মাশায়েখ পরিষদ বিএনপি-জামায়াতঘেঁষা। এর মহাসচিব হলেন আবদুল লতিফ নেজামী। তিনি একই সঙ্গে মুফতি ফজলুল হক আমিনীর নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোটেরও মহাসচিব। আলোচনার ব্যাপারে এই সংগঠনের পক্ষ থেকে খুব একটা সাড়া পায়নি সরকারি দল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ছোট ছোট এসব ধর্মভিত্তিক দলকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনায় বসাতে গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা ছাড়াও মহাজোটের শরিক বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী সক্রিয় রয়েছেন। তাঁর দাবি, প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় তিনি এ উদ্যোগ নিয়েছেন।
মিছবাহুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘জামায়াতবিরোধী ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে তাদের বোঝাতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তারা যদি আগ্রহ দেখায়, তাহলে প্রধানমন্ত্রী তাদের আলোচনায় স্বাগত জানাবেন।’ তিনি জানান, ‘ইসলামী ও সমমনা ১১ দলের’ সাতটিসহ আরও একটি দলের নেতাদের সঙ্গে এ বিষয়ে তাঁর কথা হয়েছে। গোপনীয়তার স্বার্থে দলগুলোর নাম জানাতে রাজি হননি তিনি।
মিছবাহুর রহমান বলেন, ‘যেসব দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাঁদের বক্তব্য হচ্ছে, সংবিধানের মূলনীতিতে “আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস” কথাটি পুনঃস্থাপন করার আশ্বাস দিলে সরকারের সঙ্গে আলোচনা ও মহাজোটের সঙ্গে থাকার কথা বিবেচনা করবেন তাঁরা।’ তিনি বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।প্রথম আলো

 যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার চাঁদাবাজি

আমতলী উপজেলায় ন্যাশনাল সার্ভিসের তৃতীয় ধাপের কর্মীরা উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা অজুহাতে চাঁদা তুলে তা আত্মসাতের অভিযোগ করেছেন।
অস্থায়ী নিয়োগের চুক্তিপত্র, দপ্তর বণ্টন, দাপ্তরিক কাগজপত্র ঢাকায় পাঠানো ও ই-মেইল ঠিকানা খোলাসহ বিভিন্ন খাত দেখিয়ে কর্মীদের কাছ থেকে চাঁদা তুলছেন বলে অভিযোগে জানা গেছে। এসবের প্রতিকার চেয়ে ন্যাশনাল সার্ভিসের বেশ কয়েকজন কর্মী গত সোমবার আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন।
ন্যাশনাল সার্ভিসের বেশ কয়েকজন কর্মী অভিযোগ করেন, গত মে মাসের শেষদিকে তাঁদের তিন মাসের প্রশিক্ষণের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর দুই বছরের অস্থায়ী নিয়োগের ‘চুক্তিপত্র’ করার জন্য স্ট্যাম্প কেনা বাবদ তৃতীয় ধাপের দুই হাজার ৮০০ প্রশিক্ষণার্থীর কাছ থেকে ২৬০ টাকা করে আদায় করেন উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা।
এ ছাড়া বর্তমানে ন্যাশনাল সার্ভিসের কর্মীদের জীবনবৃত্তান্তসহ দাপ্তরিক কাগজপত্র ঢাকা অফিসে পাঠানোর জন্য কর্মীপ্রতি ৬০ টাকা ও প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীর ই-মেইল ঠিকানা (আইডি) খোলার জন্য আরও অতিরিক্ত ৬০ টাকা করে মোট ১২০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে।
ই-মেইল ঠিকানা খোলার নামে ৬০ টাকা করে চাঁদা উত্তোলনকারী যুব উন্নয়ন দপ্তরের কর্মচারী মজিবুর রহমান বলেন, ‘উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তার নির্দেশেই আমি এই টাকা তুলছি।’
আমতলী উপজেলা যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের ঋণ পরিদর্শক কবির হোসেন বলেন, ‘দাপ্তরিক সব কাগজপত্র পাঠানোর জন্য আমাদের নিজস্ব তহবিল আছে। এ জন্য কর্মীদের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কোনো বিধান বা সুযোগ নেই।’
কর্মীরা আরও অভিযোগ করেন, তৃতীয় ধাপের প্রশিক্ষণার্থীদের বিভিন্ন দপ্তরে বদলির জন্যও উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তাকে পাঁচ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়েছে। ওই দপ্তরের আরেক ঋণ পরিদর্শক আমিনুল ইসলামের মাধ্যমে এই টাকা লেনদেন করা হতো বলে অভিযোগে জানা যায়।
ন্যাশনাল সার্ভিসের বেশ কয়েকজন কর্মী নাম গোপন রাখার শর্তে জানান, উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা জালাল আহমেদের সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে দেখা করতে গেলেও ঘুষ দিতে হয় কর্মীদের।
এ ব্যাপারে তাঁর সঙ্গে কথা বলার জন্য মঙ্গলবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ অসত্য।’ তবে ই-মেইল ঠিকানা ও অন্যান্য দাপ্তরিক কিছু কাজের জন্য অল্প কিছু অর্থ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি স্বীকার করেন।
ন্যাশনাল সার্ভিসের আমতলী উপজেলা কমিটির সভাপতি ও আমতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মশিউর রহমান বলেন, অভিযোগের বিষয়গুলো তদন্ত করে দেখা হবে। প্রথম আলো

বিশ্ববিদ্যালয়ছাত্র কাদেরকে নির্যাতনতিন পুলিশ কর্মকর্তা সাময়িক বরখাস্ত, তদন্তের নির্দেশ হাইকোর্টের

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুল কাদেরকে হাইকোর্ট থেকে হাসপাতালে নেওয়া হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুল কাদেরকে হাইকোর্ট থেকে হাসপাতালে নেওয়া হয়
ছবি: প্রথম আলো
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবদুল কাদেরের ওপর নির্যাতনের ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার নিচে নন, এমন ব্যক্তি দিয়ে কমিটি গঠন করে তদন্ত করতে আইনসচিবকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তদন্তকালে খিলগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হেলাল উদ্দিন, উপপরিদর্শক (এসআই) আলম বাদশা ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) শহিদুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করতে পুলিশের মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এ নির্দেশ দেন।
এর আগে আদালতের নির্দেশ অনুসারে বিকেল পাঁচটার দিকে অ্যাম্বুলেন্সে করে আবদুল কাদেরকে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে হাইকোর্টে আনা হয়। সোয়া পাঁচটা থেকে ছয়টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত আদালত নির্যাতনের শিকার আবদুল কাদের, অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মিজানুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মামুন রশীদ চৌধুরী, আইনজীবী আবদুল মতিন খসরু ও খিলগাঁও থানার ওসি হেলাল উদ্দিনের বক্তব্য শোনেন।
এ সময় হুইলচেয়ারে বসা প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র কাদের তাঁর ওপর নির্মম নির্যাতনের বর্ণনা দেন। তখন তিনি দাঁড়াতেও পারছিলেন না। আদালতের নির্দেশে পরনের টি-শার্ট খুললে পিঠে আঘাতের চিহ্ন দেখা যায়।
কাদের আদালতকে বলেন, পুলিশ তাঁকে চাপাতি দিয়ে আঘাত করেছে। ওসি অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করেন। প্রায় দুই ঘণ্টার শুনানি শেষে আদালত আদেশ দেন।
আদালত তাৎক্ষণিকভাবে আবদুল কাদেরকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) পাঠাতে স্বরাষ্ট্রসচিব, আইজিপি, ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার ও আইজি প্রিজনকে নির্দেশ দেন। কাদেরের মা-বাবা তাঁকে যেকোনো সময় দেখতে যাওয়ার সুযোগ পাবেন। আইজিপিকে বিভাগীয় তদন্ত করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আট সপ্তাহের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিল করতে হবে। কাদেরের পক্ষে সংশ্লিষ্ট আদালতে ন্যায়বিচার চেয়ে আবেদন করার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে।
ঘটনাপ্রবাহ: ১৫ জুলাই গভীর রাতে আবদুল কাদেরকে খিলগাঁও থানার পুলিশ আটক করে। পরদিন তাঁকে ডাকাতির প্রস্তুতি ও অস্ত্র আইনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ডেইলি স্টার-এর এ-সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন নজরে এলে আদালত বেলা সাড়ে তিনটার মধ্যে কাদেরকে হাইকোর্টে হাজির করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। একই সময় খিলগাঁও ও মোহাম্মদপুর থানার ওসিকে হাজির হতে বলা হয়। এ ছাড়া কাদেরকে নির্যাতন থেকে কেন অব্যাহতি দেওয়া হবে না এবং দোষীদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করা হয়।
তখন পৌনে তিনটা: আদালতের নির্ধারিত সময়ের আগে পৌনে তিনটায় এজলাসে হাজির হন দুই ওসি। তাঁরা আদালতকে জানান, লিখিত আদেশ না পাওয়ায় কাদেরকে কারাগার থেকে আনা যাচ্ছে না। আদালত বলেন, তাঁকে আজই (বৃহস্পতিবার) আনতে হবে। আদালত লিখিত আদেশের অনুলিপি তাৎক্ষণিক সরবরাহ করতে বলেন। কাদের না আসা পর্যন্ত দুই ওসিকে থাকতে বলেন। তখন অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় থেকে আইজি প্রিজনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়।
অবশেষে বিকেল পাঁচটার দিকে কারাগার থেকে অ্যাম্বুলেন্সে করে কাদেরকে আনা হয় হাইকোর্টে। হুইলচেয়ারে করে তাঁকে এজলাসকক্ষে নেওয়া হয়। এর আগে সোয়া তিনটার দিকে আদালতে আসেন কাদেরের মা মনোয়ারা বেগম ও বোন জান্নাতুল মাওয়া। এরপর আসেন অধ্যাপক মামুন রশীদ চৌধুরী ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান। আদালত তাঁদেরও আসতে অনুরোধ করেছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হুইলচেয়ারে করে এজলাসকক্ষে প্রবেশের আগে কাদেরের মা ছেলেকে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কাদেরও কাঁদছিলেন।
এজলাসকক্ষে: কাদের আদালতকক্ষে ঢোকার পর তাঁর শিক্ষক মামুন রশীদ চৌধুরী বলেন, কাদের মাস্টার্সে পড়ছে। সে নিরীহ ছেলে। সে কোনো ধরনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গেও জড়িত নয়। সে ক্লাসের সবচেয়ে ভদ্রদের একজন। সে ডাকাতির সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে না। কাদেরকে মুক্ত করার আরজি জানিয়ে মামুন রশীদ বলেন, ‘বহু কাদের এভাবে হারিয়ে যাচ্ছে। আমাদের কাদের যেন হারিয়ে না যায়। পুলিশের প্রতি শ্রদ্ধার অভাব নেই। তবে প্রশ্ন, নিরীহ ছেলেটাকে নিয়ে গিয়ে কেন এমন করা হলো?’
এরপর আদালত কাদেরের বক্তব্য শুনতে চান। আদালত জানতে চান কোত্থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। জবাবে কাদের বলেন, শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে সেগুনবাগিচার দুদক কার্যালয়ের সামনে থেকে সাদা পোশাকের পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
তারা যে পুলিশ কীভাবে বুঝলেন—আদালতের এ প্রশ্নের জবাবে কাদের বলেন, ‘যারা আমাকে আঘাত করেছে, তারাই আমাকে থানায় নিয়ে যায়। এতে বুঝতে পারি, তারা পুলিশ। আমি যখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র পরিচয় দেই, তখন তারা বলে, যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, তারাই বেশি ডাকাতি করে। এ কথা বলে আরও বেশি নির্যাতন করে। আমার পিঠে ও হাতে আঘাত করা হয়। একপর্যায়ে আমি প্রায় জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।’ এ কথা বলার সময় কাদের কান্নায় ভেঙে পড়েন। তখন এজলাসকক্ষে উপস্থিত কাদেরের মা ও বোনও কাঁদছিলেন।
কাদের বলেন, ‘থানায় নিয়ে যাওয়ার পরও আমার ওপর নির্যাতন করা হয়েছে। খিলগাঁও থানার ওসি নিজে নির্যাতন করেছেন।’
সাড়ে পাঁচটার দিকে আদালত তাঁর পরনের জামা খুলে দেখাতে বলেন। জামা খোলার পর অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান বলেন, সারা পিঠে পেটানোর দাগ দেখা যাচ্ছে। এ সময় অধ্যাপক মামুন রশীদ বলেন, ‘আমাদের কাদেরকে ছেড়ে দিন।’
এ পর্যায়ে আদালত ওসি হেলাল উদ্দিনের বক্তব্য শুনতে চাইলে তিনি বলেন, গাড়িতে করে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে কাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। সাদা পোশাকের পুলিশ তাঁকে গ্রেপ্তার করে। তার কাছ থেকে চাপাতিসহ অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। আদালত জানতে চান, ওই সময় কারা দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। জবাবে হেলাল উদ্দিন বলেন, এসআই আলম বাদশার নেতৃত্বে একটি দল। কখন ও কোত্থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে? জবাবে ওসি বলেন, রাত সাড়ে তিনটার দিকে খিলগাঁও ফাঁড়ির সামনে থেকে। কারা আঘাত করেছে? ওসি হেলালের জবাব, গণপিটুনিতেই কাদের আহত হয়েছেন। জনতাই তাঁর ওপর আঘাত করেছে।
আদালত জানতে চান, তাহলে যারা নির্যাতন করেছে, তাদের গ্রেপ্তার করলেন না কেন? সে যদি ডাকাত হয়েও থাকে, আপনি তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করলেন না কেন? জবাবে ওসি বলেন, ‘আমরা তাঁকে ফার্স্ব এইড (প্রাথমিক চিকিৎসা) দিয়েছি।’
আদালত বারবার ওসিকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘আপনি মিথ্যা কথা বলবেন না। মিথ্যা কথা বললে ইউনিফর্ম খুলে আমরা সরাসরি আপনাকে নাজিমউদ্দিন রোডে পাঠিয়ে দেব।’
এ পর্যায়ে আদালত ওসিকে এফআইআর পড়তে বলেন। ওসি এফআইআর পড়ে শোনান। আদালত বলেন, কটা মামলা হয়েছে। ওসির জবাব, দুটি। অন্যটি কী? ওসির জবাব, অস্ত্র মামলা।
আদালত ওসির কাছে জানতে চান, ‘আপনি নাকি চাপাতি দিয়ে মেরেছেন, কাদের বলেছে। ওসি অস্বীকার করে বলেন, এটা ঠিক নয়। এ পর্যায়ে আদালত কাদেরের কাছে জানতে চান, মাথায় আঘাত পেয়েছে কি না। কাদের বলেন, ‘মাথায় মারার চেষ্টা করে। কিন্তু আমি হাত দিয়ে ঠেকাই।’
এ সময় আইনজীবী আবদুল মতিন খসরু বলেন, কাদেরের বাবা শিক্ষা কর্মকর্তা। কাদের মেধাবী ছেলে। নির্যাতনে তার হাতের আঙুল ফেটে গেছে। এ অবস্থার সমাপ্তি হওয়া উচিত।
এ পর্যায়ে শুনানিতে অংশ নিয়ে অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, কাদেরকে পুলিশ নির্দয়ভাবে পিটিয়েছে। এ ধরনের ঘটনা অনেক ঘটছে। এটা চলতে দেওয়া যায় না। ইদানীং পুলিশ কিছু হলেই বলছে, এটা গণপিটুনি। এ ধরনের কথা বলে তারা গণপিটুনিকে বৈধতা দিচ্ছে। এটা খুবই ভয়ংকর। এভাবে গণধোলাইয়ের অধিকার দিলে সাধারণ মানুষের অধিকার কোথায় গিয়ে ঠেকবে! এতে বোঝা যায়, দেশে আইনশৃঙ্খলা কী অবস্থায় রয়েছে। এটা মানবাধিকার লঙ্ঘনের বড় উদাহরণ।
শুনানিকালে মিজানুর রহমান হেফাজতে নিয়ে পুলিশি নির্যাতনের জন্য রাষ্ট্রকে দায়ী করলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম এর প্রতিবাদ জানান। অধ্যাপক মিজান বলেন, পুলিশ সংস্কারের জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয় করা হচ্ছে। এই কী সংস্কারের নমুনা!
আদালত বলেন, পুলিশ আইনের ঊর্ধ্বে নয়। সাধারণ নাগরিক অপরাধ করলে যে সাজা পাবে, পুলিশকেও সে সাজা পেতে হবে।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘সাংবাদিকেরা অনুসন্ধান করে এ ঘটনাটি জাতির সামনে প্রকাশ করেছেন। এ জন্যই আমরা বিষয়টি জানতে পেরেছি। পুলিশ রাষ্ট্রের অপরিহার্য অংশ। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় পুুলিশই রাজারবাগে প্রথম আঘাতের শিকার হয়।’ তিনি বলেন, সব ঘটনা না জেনে কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা ঠিক হবে না। কাউকে শাস্তি দেওয়াও উচিত হবে না।
আদালত বলেন, ‘আমরা এখন কাউকে শাস্তি দিচ্ছি না। তবে তদন্ত চলাকালে তাঁদের সাসপেন্ড করতে হবে। না হলে তদন্ত প্রভাবিত হতে পারে।’
হাসপাতালে কাদের: কাদেরের বোন জান্নাতুল মাওয়া প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে কাদেরকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেলে ভর্তি করা হয়। আদালতের নির্দেশনা ছিল বাবা-মা প্রয়োজন মতো ছেলের দেখাশোনা করতে পারবেন। তবে প্রিজন সেল থেকে ভেতরে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছিল না। শেষ পর্যন্ত মাকে এক মিনিটের জন্য ঢুকতে দেওয়া হয়। মা কাদেরকে রাতের খাবার দিয়ে আসেন।

Thursday, July 28, 2011

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হতে পারে

অ্যান্ডারস বেহরিং ব্রেইভিক অ্যান্ডারস বেহরিং ব্রেইভিক
নরওয়েতে গত শুক্রবার জোড়া হামলা চালিয়ে ৭৬ জনকে হত্যার দায় স্বীকার করা অ্যান্ডারস বেহরিং ব্রেইভিকের বিরুদ্ধে সে দেশের পুলিশ মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনার কথা চিন্তাভাবনা করছে। সরকারি কৌঁসুলি ক্রিশ্চিয়ান হ্যাটলো গতকাল মঙ্গলবার আফেনপোস্টেন পত্রিকাকে এ কথা জানিয়েছেন।
ক্রিশ্চিয়ান হ্যাটলো বলেন, বর্তমানে ব্রেইভিকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁর সর্বোচ্চ ২১ বছরের করাদণ্ডাদেশ হতে পারে। তবে ব্রেইভিকের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাঁর ৩০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ হতে পারে।
নরওয়ের বিচারমন্ত্রী নুট স্টরবার্জেট জোড়া হামলার ঘটনায় পুলিশের তৎপরতার প্রশংসা করেছেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি অসলো পুলিশ ও তাদের সহযোগীদের চমৎকার কাজের জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’ এর আগে হামলার ঘটনায় কর্মকর্তাদের কাজের ধীরগতির জন্য গণমাধ্যমে পুলিশের সমালোচনা করা হয়েছে।
নুট স্টরবার্জেট বলেন, ‘এই লোকেরা প্রত্যাশার চেয়েও অনেক বেশি কঠোর পরিশ্রম করেছে। তারা তাদের ছুটির দিনও বিসর্জন দিয়েছে এবং দেশের সব প্রান্ত থেকেই তারা স্বেচ্ছায় সহযোগিতা করেছে।’
পুলিশের মুখপাত্র স্টার্লা হেনরেইকসবো বলেন, ব্রেইভিকের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে অন্য অভিযোগগুলোর সম্ভাবনা এখনো বাদ দেওয়া হয়নি। পুলিশের গতকাল রাতেই হামলার শিকার ব্যক্তিদের নামের তালিকা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করার কথা।
নরওয়ের পুলিশ ধারণা করছে, শুক্রবার অ্যান্ডারস বেহরিং ব্রেইভিক সম্ভবত একাই জোড়া হামলা চালিয়ে ৭৬ জনকে হত্যা করেছিলেন। ঘটনা তদন্তের সঙ্গে জড়িত ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র বলেছে, ব্রেইভিক যখন নিজেই একা ওই হামলা চালানোর দাবি করেছেন, তখন তাঁর দাবি তেমন বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়নি। তবে আমরা কেউই তাঁর দাবির বিষয়টি একবারেই উড়িয়ে দিইনি। বিবিসি, এএফপি, রয়টার্স ও দ্য হিন্দু। প্রথম আলো

নৃশংস খুনির পক্ষ নিয়েছে রাষ্ট্র (!)

রাষ্ট্রপতিকে প্রশ্ন করা হয়েছে, তিনি কি আইভি রহমানের (তাঁর প্রয়াত স্ত্রী) খুনিদের ক্ষমা করবেন? এ প্রশ্ন নুরুল ইসলামের স্ত্রীর। পাথরের মতো নিশ্চল এ প্রশ্নের কোনো উত্তর রাষ্ট্রপতির দেওয়ার কথা নয়। তিনি এর আগে নাটোরের গামা হত্যাকারীকে ক্ষমা করেছিলেন। এর কিছুদিন পর একই এলাকায় খুন হন গামারই রাজনৈতিক সহকর্মী কমিশনার সানাউল্লাহ নূর। রাষ্ট্রপতি এবার ক্ষমা করেছেন নুরুল ইসলামের খুনিকে। তাঁকে অপহরণ করে টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন লক্ষ্মীপুরের ত্রাস আবু তাহেরের ‘সুযোগ্য’ পুত্র বিপ্লব। এই পাশবিক হত্যাকাণ্ডে সারা দেশে নিন্দার ঝড় উঠেছিল। নুরুল ইসলামের আতঙ্কিত স্ত্রী এলাকা ছেড়ে পরিবার নিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন ঢাকায়। তিনি ও তাঁর পরিবার এখন নতুন করে বিপর্যস্ত। আমরা পত্রিকায় পড়েছি, তাঁর কিশোরী কন্যা এই সংবাদ পাওয়ার পর থেকে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেছে। লক্ষ্মীপুরের মানুষের মনেও নতুন আতঙ্ক ভর করেছে। খুনিকে রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করে দেওয়ার পর এরই মধ্যে খুনির কর্মীরা লক্ষ্মীপুরে নুরুল ইসলামের স্মৃতিসৌধ ভাঙচুর করে তাদের দাপট প্রদর্শন করেছে। দুই দিন আগে তারা মিছিল করে খুনির জয়গান গেয়েছে।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি, আপনি এই রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে কী মেসেজ দিলেন বাংলাদেশের মানুষকে? আওয়ামী লীগের কেউ খুনি হলে, সেই খুন আদালতে প্রমাণিত হলেও তাকে ক্ষমা করে দিতে পারে রাষ্ট্র? নিহত ব্যক্তি, বিশেষ করে বিরোধী দলের হলে তাই খুনিদের আর ভয় পাওয়ার কিছু নেই? এই রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তি আপনি; আপনি আছেন অসীম উদারচিত্তে তাদের কাউকে কাউকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য? আওয়ামী লীগের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ কর্মীরা এই ভরসায় তাহলে আরও হত্যাকাণ্ডে অনুপ্রাণিত হলে এর নৈতিক দায় আপনি কীভাবে এড়িয়ে যাবেন? এই রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আসনে বসে আপনি কীভাবে আপনার নাগরিকদের মনে ভীতি, ক্ষোভ কিংবা করুণ অসহায়ত্ব জন্ম দেওয়ার মতো কাজ করতে পারেন?
আমরা জানি, এই দায় একমাত্র আপনার নয়। বাংলাদেশের সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রপতিকে দণ্ড মওকুফ বা হ্রাস করার কাজটি করতে হয় প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে। বাংলাদেশের আইন ও রীতি অনুসারে স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয় ক্ষমা প্রদর্শনের প্রাথমিক সম্মতি দিয়ে থাকে। এসব তথ্য আমাদের আরও বিপর্যস্ত করে। কারণ, তা প্রমাণ করে, বাংলাদেশের অন্তত আরও দুজন মন্ত্রী এবং স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি ছিল খুনিকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য। মহামান্য রাষ্ট্রপতি, তাঁদের অফিসের মাধ্যমে প্রেরিত ফাইল আপনার দপ্তরে গেছে, আপনি স্বাক্ষর করে দিয়েছেন। সংবিধান অনুসারে আনুষ্ঠানিকভাবে আপনার আপত্তি জানানোর সুযোগ ছিল না। কিন্তু সরকার বা রাষ্ট্র পুরোপুরি যান্ত্রিক কোনো বিষয় নয়। অত্যন্ত সম্মানিত একজন নেতা হিসেবে আপনি মৌখিকভাবে আপত্তি জানালে হয়তো প্রধানমন্ত্রী তা বিবেচনায় নিতেন। কে জানে, আপনি হয়তো তা জানিয়েছেনও। কিন্তু আপনারা যে সংবিধান অনুসারে শাসন করেন, তাতে আপনার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর যোগাযোগের কোনো তথ্য জানার অধিকার কারও নেই। সংবিধান অনুসারে আমাদের শুধু ধরে নিতে হবে, প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শক্রমে আপনি এ কাজটি করেছেন। এই পরামর্শ মানতে অস্বীকৃতি জানালে আপনাকে হয়তো পদত্যাগ করতে হতো একপর্যায়ে। কিন্তু তাতে মানুষের মনে চিরতরে শ্রদ্ধার আসনে অধিষ্ঠিত হতেন আপনি। আপনার একবারও মনে হয়নি, নৃশংস খুনির বিপক্ষে দাঁড়ানোর জন্য প্রয়োজনে এটিই করা উচিত রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ অভিভাবকের?
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছেও আমাদের কিছু প্রশ্ন আছে। আপনার কি সত্যি পরামর্শ ছিল খুনিকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য? বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের বিচারে কোনো অসংগত হস্তক্ষেপ না করে আপনি বহু মানুষের শ্রদ্ধা পেয়েছেন। হত্যাকারী কয়েকজনের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর আপনি ও আপনার কিছু মন্ত্রী দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলেছিলেন। বলেছিলেন, হত্যা করে পার পেয়ে যাবে না আর কেউ এ দেশে। গামা আর নুরুল ইসলামের হত্যাকারীরা তাহলে পার পেল কীভাবে? নাকি বিরোধী দলের কাউকে হত্যা করা হলে, খুনি আওয়ামী লীগের কেউ হলে তাকে ক্ষমা করে দেওয়ার কোনো আইন রয়েছে এ দেশে?

২.
হ্যাঁ, আমরা জানি, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইনে অপরাধীকে ক্ষমা করে দেওয়ার বিশেষ অধিকার দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে। এই অধিকার পৃথিবীর প্রায় সব সংবিধানে দেওয়া হয়েছে। ইংল্যান্ডে সেই ১৩২৭ সালে তৃতীয় এডওয়ার্ডের অভিষেক উপলক্ষে ঢালাও ক্ষমা করে দেওয়া হয়েছিল বহু অপরাধীকে। কিন্তু সেই যুগ এখন আর নেই। এখন পৃথিবীর বিভিন্ন সংবিধানে (যেমন: আয়ারল্যান্ড, রাশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা) রাষ্ট্রপতির ক্ষমা করার অধিকারকে নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছে বিভিন্ন কমিটির মাধ্যমে বা শর্তারোপ করে। যেখানে সংবিধান এটি করতে পারেনি, সেখানে বিচার বিভাগ (যেমন: ব্রিটেন, আমেরিকা, ভারত) এই ক্ষমতা প্রয়োগে স্বেচ্ছাচারিতা রোধ করতে বিভিন্ন রায় দিয়েছে।
মহামান্য রাষ্ট্রপতি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, একজন অপরাধীকেও ইচ্ছামতো ক্ষমা প্রদানের অধিকার সংবিধান আসলে দেয়নি আপনাদের। ভারতের সংবিধানে প্রায় অবিকল বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ক্ষমা করার বিধান রয়েছে। কিন্তু সেখানে ১৯৮০ সালে মারু রাম বনাম ইন্ডিয়া মামলায় বলা হয়, কোনো বিবেচনা বা কাজ সম্পূর্ণ অপ্রাসঙ্গিক, অযৌক্তিক, স্বেচ্ছাচারপ্রসূত বা অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হতে পারে না। এসব ক্ষেত্রে আদালত রাষ্ট্রপতির ক্ষমা প্রদান ক্ষমতার প্রয়োগের ন্যায্যতা পরীক্ষা করে দেখতে পারে। ১৯৮৯ সালে কেহার সিং মামলায় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট বলেছিলেন, কেবল অসংগত হয়রানি ও প্রতীয়মান ভুলের ক্ষেত্রে মার্জনা করার ক্ষমতা প্রয়োগ করা যেতে পারে। ভারতের সংবিধানে এই ক্ষমতা রাজ্যগুলোতে প্রয়োগের অধিকার রয়েছে গভর্নরের। ২০০০ সালে সাতপাল বনাম হরিয়ানা মামলায় সুপ্রিম কোর্ট বলেন, আদালত মার্জনার আদেশ রদ করতে পারেন, যদি গভর্নর রেকর্ডে থাকা তথ্যাবলির দিকে নজর না দিয়ে যান্ত্রিকভাবে আদেশটি প্রদান করে থাকেন।
চাইলে আরও বহু রায় উত্থাপন করা যায়। কোনো রায় রাজনৈতিক বিবেচনায় বা খেয়ালখুশিমতো রাষ্ট্রপতি কর্তৃক ক্ষমা করার অধিকার মেনে নেয়নি। আমেরিকায় জেরাল্ড ফোর্ড এভাবে এই ক্ষমতা প্রয়োগ করে জনগণের ধিক্কার পেয়েছেন। আবার ভারতে প্রতিভা পাতিলকে রাষ্ট্রপতি করার পরিকল্পনার সময় তিনি তাঁর এক জ্ঞাতি ভাইকে খুনের দায় থেকে রেহাই দেবেন বলে যে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিল, তিনি তা মিথ্যা প্রমাণ করেছেন। আর আমেরিকার বাজে উদাহরণ খুব প্রাসঙ্গিকও নয় আমাদের জন্য। সেখানে মুক্তি পাওয়া অপরাধীদের সার্বক্ষণিক নজরদারির ব্যবস্থা রয়েছে, পুনরায় অপরাধ হলে তা প্রমাণের সুদক্ষ ব্যবস্থা রয়েছে। বাংলাদেশে বিপ্লবেরা পুনরায় হত্যাকাণ্ডে মেতে উঠলে তা ঠেকাবে কে? যাঁরা তাঁকে ক্ষমা করেছেন, তাঁরাই আবার বিচার করবেন তাঁদের?
৩.
বিভিন্ন রাষ্ট্রপতির ক্ষমায় বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কত খুনি, কত অপরাধী জেল থেকে বের হয়ে এসেছে, সেই তথ্য জানা নেই আমাদের। গণমাধ্যমে বিএনপির আমলে দলীয় বিবেচনায় জিন্টু নামের এক খুনিকে ক্ষমা করে দেওয়ার সংবাদ প্রকাশিত হলে তা নিয়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল দেশে (প্রসঙ্গত বলে রাখি, সে সময় সোচ্চার কিছু মানবাধিকার সংগঠন ও বিশিষ্ট নাগরিক আওয়ামী লীগের আমলের একই ধরনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত নিশ্চুপ রয়েছে)। জিন্টুকে ক্ষমা করে দেওয়ার নিন্দা জানিয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা একে সংবিধান লঙ্ঘন এবং রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতিষ্ঠানের জন্য মর্যাদাহানিকর বলেছিলেন। তাঁরা আইনমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করেছিলেন। তাঁদের সে সময়ের বক্তব্য নিজেদের সরকারের জন্যও প্রযোজ্য হবে না কেন?
বিএনপির জন্য সেই জঘন্য কাজ করার পক্ষে যুক্তির অভাব হয়নি। তারা বলেছিল, জিন্টু সামরিক আদালতে শাস্তি পেয়েছিল, সেখানে ন্যায়বিচার হয়নি। এখন আওয়ামী লীগের আইন প্রতিমন্ত্রীও বলছেন, বিপ্লব ন্যায়বিচার পাননি। তাঁর মামলার তদন্তকালে বিএনপির নেতারা হস্তক্ষেপ করেছিলেন। তাঁর বক্তব্য শুনে নুরুল ইসলামের আত্মা নিশ্চয় হেসেই খুন হচ্ছে! প্রিয়তম সন্তান আর স্ত্রীর কাছ থেকে চিরতরে কেড়ে নিয়ে তাঁর শরীর টুকরো টুকরো করে নদীতে নিক্ষেপ করা হয়েছিল। এটাই রাষ্ট্রের কাছে ন্যায়বিচার? কসাই খুনির শাস্তি ন্যায়বিচার নয়?
মাননীয় প্রতিমন্ত্রী এবং আরও ক্ষমতাবান ব্যক্তি, বিপ্লবের মামলা তো হাইকোর্টে লড়া যেত। বিএনপি সরকার, পুলিশ আর বিচারিক আদালত যদি তাঁর প্রতি ন্যায়বিচার না করে থাকে, আপনাদের আমলে আপনাদেরই নিয়োগ দেওয়া বহু হাইকোর্টের বিচারপতি তো রয়েছেন। ন্যায়বিচারের জন্য তাঁদের কাছে আপনারা গেলেন না কেন? সর্বোচ্চ আদালতের প্রতিও আস্থা নেই আপনাদের? আর বিচারিক আদালতের প্রতিই বা আপনাদের আস্থা থাকবে না কেন? আপনাদের ভোলা উচিত নয়, বিপ্লবের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের বিবরণ ও সাক্ষ্য দিয়েছিলেন স্বয়ং লক্ষ্মীপুরের আওয়ামী লীগের ও ছাত্রলীগের কিছু নেতা-কর্মীও।

৪.
এক জিন্টুর কুনজির সামনে রেখে আওয়ামী লীগের রাষ্ট্রপতি আধামেয়াদেই যদি অন্তত তিনটি ক্ষমা (সাজেদা চৌধুরীর পুত্রসহ) করেন, তাহলে আমরা নিশ্চিত থাকতে পারি, ভবিষ্যতের কোনো বিএনপি সরকার আরও কয়েকগুণ বেশি ক্ষমা করে দেবে। কে জানে, বঙ্গবন্ধুর অবশিষ্ট খুনি, আইভি রহমানের সব খুনি আর ২১ আগস্টের বর্বরোচিত হামলার প্রকৃত নায়কদেরও হয়তো ভবিষ্যতের কোনো রাষ্ট্রপতি ক্ষমা করে দেবেন! বলা হবে, তাঁরাও রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়েছিলেন! কে জানে, এমন মিথ্যাচারও হয়তো সইতে হবে আমাদের!
অনুসিদ্ধান্ত হচ্ছে, আওয়ামী লীগ তার নেতা-কর্মীদের খুনের অভিযোগে বিচার করবে না। বিএনপি ক্ষমতায় এসে তাদের ধরে বিচার করবে। পুনরায় আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তাদের রাষ্ট্রপতি ক্ষমা প্রদান করবেন। বিএনপি ঠিক একই কাজ করবে। দুই দল পালাক্রমে ক্ষমতায় এসে রাজনৈতিক বিবেচনায় মামলা হয়েছে—এ অজুহাতে নিজেদের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা প্রত্যাহার করবে। যেগুলো প্রত্যাহার সম্ভব নয়, সেগুলোর তদন্ত আর বিচারে হস্তক্ষেপ করে নিজেদের লোকজনকে বাঁচানোর চেষ্টা করবে। সেটিও সম্ভব না হলে আইন ও বিচারালয়কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রাষ্ট্রপতি তাদের ক্ষমা করে দেবেন! আইন আর বিচার থাকবে শুধু বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জন্য!
আমরা কি এমন ভয়াবহ এক পরিস্থিতির দিকেই ক্রমাগত ধাবিত হচ্ছি না?
আসিফ নজরুল: অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।প্রথম আলো

কারাগারে ‘বড় মিয়া’র বিলাসী জীবন

কারাগারে বসেই বাড়ির রান্না করা খাবার খাচ্ছেন। প্রতিদিন আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে দেখা করছেন। দরকার হলে মোবাইল ফোনে কথাও বলছেন। তাঁর ইচ্ছাই যেন সেখানকার নিয়ম। লক্ষ্মীপুর কারাগারে এমনই জীবন যাপন করছেন একাধিক খুনের মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি ‘বড় মিয়া’।
এই বড় মিয়া হলেন এ এইচ এম বিপ্লব। লক্ষ্মীপুরের পৌর মেয়র আবু তাহেরের বড় ছেলে। শুধু তাহেরের বড় ছেলে বলেই নয়, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে লক্ষ্মীপুরের অপরাধ জগতের সবচেয়ে দুর্ধর্ষ হিসেবে বিপ্লবকে সমীহ করে বড় মিয়া ডাকেন সাঙ্গপাঙ্গরা। কারাগারে বড় মিয়ার সঙ্গে আছেন তাঁর আরেক ‘গুণধর’ ভাই আবদুল জব্বার ওরফে লাবু (তাহেরের পালিতপুত্র)। লাবু পাঁচটি খুনের মামলার আসামি, দুটিতে যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে।
বহুল আলোচিত নুরুল ইসলাম হত্যা মামলায় বিপ্লবের ফাঁসির দণ্ড সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি মওকুফ করেছেন। এ খবর প্রথম আলোসহ বিভিন্ন সংবাদপত্রে প্রকাশ হওয়ার পর আবার আলোচনায় আসেন লক্ষ্মীপুরের একসময় ‘গডফাদার’ হিসেবে পরিচিত তাহের ও তাঁর ছেলে বিপ্লব। এ অবস্থায় বড় মিয়ার কারাগারের বিলাসী জীবনযাপন যাতে সাংবাদিকদের নজরে না পড়ে, সে জন্য লক্ষ্মীপুর কারাগারের সামনে তাহেরের লোকজন দিনের বেলায় পাহারা বসিয়েছেন বলে স্থানীয় কয়েকটি সূত্র জানায়। অচেনা কেউ কারাগারের সামনে গেলে নানা প্রশ্নের মুখে পড়তে হচ্ছে। স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক বলেছেন, এই পাহারা পেরিয়ে সংবাদ সংগ্রহে কারাগারের দিকে যেতে সাহস করছেন না তাঁরা।
অবশ্য গত সোমবার বেলা সোয়া দুইটার দিকে এই প্রতিবেদক কারাগারে গেলে পাহারায় থাকা তাহেরের লোকজন বাধা দেননি।
জেলারসহ কারাগারের সব কর্মকর্তাকে বলে দেওয়া হয়েছে, তাঁরা যেন তাহেরপুত্র বিপ্লব নিয়ে কোনো তথ্য না দেন।
অভিযোগ রয়েছে, বিপ্লবের কারাজীবন, মামলার সাজা ইত্যাদি বিষয়ে সাংবাদিকদের কোনো তথ্য না দিতে বিপ্লবের পক্ষ থেকে লক্ষ্মীপুর কারাগারের কর্মকর্তাদের বলে দেওয়া হয়েছে। ফলে কয়েক দিন ধরে কারা কর্মকর্তারা সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হচ্ছেন না।
এই প্রতিনিধি বিপ্লবের কারাগারের জীবন ও সাজা সম্পর্কে জানতে লক্ষ্মীপুর কারাগারে গিয়ে অনেক চেষ্টা-তদবির করেও কারও কাছ থেকে কোনো তথ্য পাননি। সরাসরি গিয়ে ব্যর্থ হয়ে টেলিফোনেও চেষ্টা করা হয়। কিন্তু কিছুতেই কথা বলতে রাজি হননি জেলার আখতার হোসেন। তাঁর মোবাইলে ফোনে বার্তা (এসএমএস) পাঠানো হলে, তাঁরও কোনো জবাব দেননি তিনি।
তবে সংশ্লিষ্ট অন্যান্য সূত্র থেকে জানা যায়, একটি মামলার ফাঁসির দণ্ড মওকুফ পাওয়ার পর বিপ্লব বাকি দুটি হত্যা মামলার দণ্ড মওকুফের জন্য চেষ্টা করছেন। এর মধ্যে একটি হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজা মওকুফের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছেন তাঁর বাবা তাহের। এটার ফয়সালা হলে অপরটির জন্য আবেদন করা হবে বলে জানা গেছে।
তাহের নিজেও প্রথম আলোকে বলেন, ‘দরখাস্ত একটা করছি, অ-ন কী অবস্থায় আছে জানি না, খোঁজও নেই না।’
বিপ্লবের নাম শুনলে মানুষ আঁতকে ওঠে, এর কারণ জানতে চাইলে আবু তাহের বলেন, ‘এগুলো সব মিডিয়ার সৃষ্টি। আপনারা সাংবাদিকেরা বানাইছেন। আমার কোনো ছেলে সন্ত্রাসী না। তারা কারোরে খুন করেনি।’ তিনি সাংবাদিকদের প্রতি কটাক্ষ করে বলেন, ‘সাংবাদিকেরা মাইনষের জাত না। কয় একটা আর লেয় আরেকটা।’
বিপ্লব ভালো ছেলে হলে এতগুলো খুনের মামলার আসামি হলো কেন—এই প্রশ্নের জবাবে তাহের বলেন, সব মিথ্যা মামলা। দলের কিছু লোক ও বিএনপির লোক ঈর্ষান্বিত হয়ে তাকে ধ্বংস করার জন্য এ ষড়যন্ত্র করেছে। তাঁর দাবি, ‘আমার হুতেরা (ছেলেরা) খুন করতেই পারে না।’
তাহলে পুলিশের তদন্ত, অভিযোগপত্র, আদালতের রায়, সবই কি মিথ্যা? জবাবে তাহের বলেন, ‘কে বড়, সিআইডি নাকি থানার পুলিশ? নাসিমের (সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী) আমলে সিআইডি নুরুল ইসলাম হত্যা মামলায় ফাইনাল রিপোর্ট দিল। আর এখন নাইস্যা (মোহাম্মদ নাসিম) কয়, এডা নাকি নিয়মমতো অয় ন।’
তাহেরের দাবি, ‘আমি মক্কা শরিফ ছুঁইয়ে বলেছি, আমি নুরুল ইসলামের হত্যার সঙ্গে জড়িত ছিলাম না। যারা জড়িত আল্লাহ যেন তাদের বিচার করেন। পাপ হুতেরেও (ছেলেরে) ছাড়ে না।’
লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের এক জ্যেষ্ঠ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তাহের ও তাঁর ছেলেরা আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে নানা অপরাধ করে। আর ক্ষমতা থেকে চলে গেলে তারা আত্মগোপন করে। কিন্তু ভোগান্তি পোহাতে হয় দলের সাধারণ নেতা-কর্মীদের।
নিহতদের পরিবারের শঙ্কা: লক্ষ্মীপুরে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তাহেরপুত্র ও তাঁর লোকজনের হাতে খুন হওয়া কয়েকজনের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খুনের মামলায় বিপ্লবের ক্ষমা লাভের ঘটনায় তাঁরা শঙ্কিত।
‘মরইন্যারে তো হিরি হামু না। বিপ্লইবা বাইর অইলে তো আর যে দুগা হুত আছে এগুনরেও মারি হালাইব। আঁই কিয়া করুম, চোকেও কিচু দেহি না’ (যে মরে গেছে, তারে তো ফিরে পাব না। বিপ্লব বের হলে তো যে দুই ছেলে জীবিত আছে, তাদেরও মেরে ফেলবে। তখন আমি কী করব, চোখেও কিছু দেখি না)। দক্ষিণ মজুপুরের বাড়িতে গেলে এভাবেই প্রথম আলোর কাছে উদ্বেগের কথা বলছিলেন নিহত কামালের বৃদ্ধ মা আয়েশা বেগম। তিনি বলেন, দুই ছেলেকে তিনি বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার কথা ভাবছেন।
বিএনপির কর্মী কামালকে ১৯৯৯ সালের আগস্টে হত্যা করা হয়। তাঁর ভাই আবদুর রহিম বলেন, কামাল হত্যার ঘটনায় তিনি আবু তাহের ও তাঁর তিন ছেলে বিপ্লব, টিপু ও লাবুসহ ছয়জনকে আসামি করে মামলা করেন। এই মামলায় চট্টগ্রাম বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল টিপু ও লাবুকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন। আর তাহের ও বিপ্লবের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হয়। বিপ্লব ও আরেক আসামি খালেদ ছাড়া বাকি চারজন পরে হাইকোর্ট থেকে খালাস পান।
কামালদের পাশেই ফিরোজ আলমের বাড়ি। ফিরোজ খুন হন ১৯৯৮ সালের ১ অক্টোবর। নিহত ফিরোজের ভাই রেজাউল করিম প্রথম আলোকে বলেন, তাহের বাহিনী ও তাঁর ছেলেদের অত্যাচারে তিনি তখন বিদেশে পালিয়েছিলেন। বিপ্লব গ্রেপ্তার হওয়ার পর দেশে ফিরে আসেন।
রেজাউল বলেন, বিপ্লব ও লাবুর নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা ফিরোজকে ধরে নিয়ে খুন করে। ফিরোজ তখন অষ্টম শ্রেণীতে পড়ত। এ মামলাটি এখন বিচারাধীন। তিনি বলেন, তাঁরা এখন আতঙ্কে আছেন, বিপ্লব কখন যে বেরিয়ে আসে। তাই রেজাউল তাঁর আরেক ভাইকে বিদেশ পাঠিয়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন।
একই আতঙ্কের কথা বলেছেন সদর থানার বনগাঁও শিবপুরের আমান উল্লাহ। তিনি নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তিনি বলেন, তাঁর ছেলে মহসিন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। মহসিনকে ২০০০ সালের ৫ সেপ্টেম্বর লক্ষ্মীপুর শহরের বিপ্লব, বাবু, রিংকু, লাবুসহ কয়েকজন মিলে প্রকাশ্যে খুন করে।
আমান উল্লাহ বলেন, মহসিন খুনের ঘটনায় তাহেরপুত্র লাবুসহ পাঁচজনের ফাঁসি ও বিপ্লবসহ সাতজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত।
এই মামলায় বিপ্লবের দণ্ড মওকুফ চেয়ে তাহের রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেছেন বলে শুনেছেন আমান উল্লাহ। ক্ষুব্ধ এই পিতা বলেন, ‘এত বড় খুনিদের যদি মাফ করে দেওয়া হয়, তাহলে চোর-ডাকাতদের আটকে রাখার দরকার কি, তাদেরও ছেড়ে দেওয়া হোক।’

Tuesday, July 26, 2011

আদালতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করলেন এ রাজা

ভারতের সাবেক টেলিযোগাযোগমন্ত্রী এ রাজা ২জি (দ্বিতীয় প্রজন্মের) মোবাইল ফোনের লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। গতকাল সোমবার নয়াদিল্লির একটি বিশেষ আদালতে হাজির করা হলে তিনি নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন।
লাইসেন্স দেওয়ার সময় দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগে গত নভেম্বরে এ রাজাকে মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়। ভারতের জাতীয় নিরীক্ষকের মতে, এই দুর্নীতির ফলে সরকারের চার হাজার কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে। তবে আদালতে কৌঁসুলিরা দাবি করেন, পুলিশি তদন্তে দেখা গেছে, এই দুর্নীতির ঘটনায় সরকারের ৬৭০ কোটি মার্কিন ডলার ক্ষতি হয়।
এ ঘটনায় ভারতের ক্ষমতাসীন জোট সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চার (ইউপিএ) শরিক দল ডিএমকের নেতা এ রাজার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণা, জালিয়াতি ও অসদাচরণের অভিযোগ আনা হয়েছে।
আদালতে গতকাল রাজার আত্মপক্ষ সমর্থনের একটি বিবৃতি পড়ে শোনানো হয়। বিবৃতিতে রাজা বলেন, লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের নীতি অনুযায়ীই তিনি সব পদক্ষেপ নিয়েছেন। এ কারণে যদি তাঁর বিরুদ্ধে দণ্ডাদেশ হয়, তাহলে ১৯৯৩ সালের পর ভারতের সব টেলিযোগাযোগমন্ত্রীকে তাঁর সঙ্গে কারাগারে থাকতে হবে। বিবৃতিতে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট সবার যৌথ সিদ্ধান্তে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে কীভাবে শুধু একজনের বিচার হয়?
সাবেক মন্ত্রী রাজা গত ফেব্রুয়ারি থেকে পুলিশি হেফাজতে রয়েছেন। তিনিসহ এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে ১৬ জনের বিচার চলছে। এএফপি, টাইমস অব ইন্ডিয়া।প্রথম আলো

সারা দেশে বিএনপি-জামায়াতের বিক্ষোভ বৃহস্পতিবার

বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী আগামী বৃহস্পতিবার সারা দেশে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আজ মঙ্গলবার উভয় দল পৃথক সংবাদ সম্মেলনে প্রায় একই দাবিতে এ কর্মসূচি ঘোষণা করে।
দ্রব্যমূল্য কমানো, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় তারেক রহমানকে জড়ানো, নুরুল ইসলামের খুনিদের ফাঁসি, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির দাবিতে আগামী বৃহস্পতিবার সারা দেশে বিএনপি বিক্ষোভ সমাবেশ করবে। নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের যৌথ সভা শেষে সংবাদ ব্রিফিংয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
মির্জা ফখরুল সরকারের উদ্দেশে বলেন, ‘পারলে দাবি মেনে নেন। নইলে ক্ষমা ছাড়েন।’ সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আমানুল্লাহ আমান ও রিজভী আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে আজ দুপুরে জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম একই দিন দেশের সব মহানগর, জেলা ও উপজেলাকেন্দ্রে বিক্ষোভ সমাবেশ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
রাজধানীর বড় মগবাজারে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আজহারুল ইসলাম বলেন, দ্রব্যমূল্য কমানো, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, গ্যাস বিদ্যুত্ ও পানি সংকটের সমাধান এবং দলের শীর্ষ নেতাদের মুক্তির দাবিতে এ বিক্ষোভ সমাবেশে কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে। এ কর্মসূচি বিএনপি চারদলীয় জোটের শরিক দলগুলো যুগপত্ভাবে পালন করবে বলে তিনি জানান।
দ্রবমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সমালোচনা করে আজহারুল বলেন, সরকার ১০ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়ানোর কথা বলে এখন ৩৪ থেকে ৫৮ টাকা কেজি দরে চাল খাওয়াচ্ছে। এ সময় তিনি চারদলীয় জোট সরকারের সময়কার ও বর্তমান সরকারের আড়াই বছর সময়কার দ্রব্যমূল্যর তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেন।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল দাবি করেন, শীর্ষ সন্ত্রাসীরা রাজনৈতিক ব্যানারে থেকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। এ সরকারের সময় আট হাজার ৬১৮ জন খুন হয়েছে। ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১২৬০ জন নারী। আর রাজনৈতিক খুনের শিকার হয়েছেন ৪০০ জন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের কংগ্রেস দলের সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ দমনে যে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন, সে সম্পর্কে জামায়াত নেতা বলেন, ‘ভারত নিজেই জঙ্গি দমন করতে পারছে না। কয়েকদিন আগেই তাদের দেশে একটি হোটেলে জঙ্গি হামলা হয়েছে। আমাদের দেশের প্রশাসনই জঙ্গিবাদ দমনে যথেষ্ট।’
উল্লেখ্য, গতকাল সোমবার হাসিনা-সোনিয়া হোটেল রূপসী বাংলায় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
সংবাদ সম্মেলনে দলের সহকারী সেক্রেটারি শফিকুর রহমান, নির্বাহী পরিষদের সদস্য রফিউদ্দিন, রফিকুল ইসলাম খান, এ টি এম মাসুম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।প্রথম আলো

গাদ্দাফির ‘প্রস্থান পরিস্থিতি’ পর্যালোচনা করছে ব্রিটেন

ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হাগ বলেছেন, লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফিকে অবশ্যই পদত্যাগ করতে হবে। তবে ব্রিটেন তাঁর দেশ ত্যাগ চাইলেও, সেটা নাও হতে পারে।
লিবিয়ার নেতা কর্নেল গাদ্দাফির প্রস্থান পরিস্থিতি নিয়ে ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনাকে সামনে রেখে ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হাগ লন্ডনে এ কথা বলেন। খবর বিবিসি অনলাইনের।
হাগ বলেন, ‘যাই হোক না কেন, এটা পরিষ্কার, তাঁকে ক্ষমতা ত্যাগ করতে হবে। তবে নিজ উদ্যোগে লিবিয়া ত্যাগ করাটাই তাঁর জন্য সবচেয়ে ভালো হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘লিবিয়ার জনগণই তাঁর ভাগ্য নির্ধারণ করবে। ব্রিটেন কিংবা ফ্রান্স নয়।’
এর আগে অবশ্য গাদ্দাফিকে দেশ ত্যাগ করতে হবে বলে মত দিয়েছিলেন উইলিয়াম হাগ।প্রথম আলো

ক্ষমা দেবধর্ম

সৈয়দ আবুল মকসুদ
প্রাচ্যে সেই বৈদিক যুগেই ঋষিরা বলে গেছেন: ক্ষমা দেবধর্ম। দেবতারা চাইলে যে কাউকে ক্ষমা করে দিতে পারেন। মধ্যপ্রাচ্যে প্রবর্তিত ইসলামি ধর্মশাস্ত্রেও বলা হয়েছে: আল্লাহর গুণে গুণান্বিত হও। আল্লাহর অসংখ্য গুণের মধ্যে একটি তাঁর ক্ষমাশীলতা। সাংঘাতিক পাপীতাপীও তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি ক্ষমা করে দেন।
আমার এক পাঠিকা অনেকটা বিচলিতভাবে আমাকে অনুরোধ করেছেন: ‘ক্ষমা নিয়ে কিছু লিখুন তো!’ কিসের ক্ষমা, কাকে ক্ষমা, কী কারণে ক্ষমা—তা তিনি কিছু বলেননি। রাজনীতির ক্ষমা, না সাহিত্যের ক্ষমা; অর্থনীতির অর্থাৎ শেয়ারবাজারের অপরাধীদের ক্ষমা, না টেন্ডার-সংক্রান্ত মারামারির ক্ষমা; টাকা পাচারকারীদের ক্ষমা, না ছাত্রী ধর্ষণের অপরাধীকে ক্ষমা; কূটনীতিকদের অপকর্মের ক্ষমা, নাকি খুনের মামলার দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ওরফে নেতাকে ক্ষমা—তা তিনি পরিষ্কার করে বলেননি।
আইন-আদালতের জগতে ক্ষমা বলতে কী বোঝায় তা আমার জানার কথা নয়। আইন সাহিত্য আমার অপঠিত। মাস তিনেক ঘোরাঘুরি করেছিলাম আলীম আল রাজীর পাঠশালায়। আইনের ক-খ শুরু করেছিলাম, ক্ষমার অধ্যায় পর্যন্ত যাওয়ার আগেই ইস্তফা দিই। তবে আইন সাহিত্যে না হলেও বাংলা সাহিত্যে কোথায় ক্ষমা চাওয়াচাওয়ি আছে, তা কিছু জানা আছে।
আমাদের উপজেলার কর্মকর্তাদেরও গুরুদেব, যেন তারা সবাই শান্তিনিকেতনের তিরিশের দশকের ছাত্র, ম্যালা বিষয়ে লিখে গেছেন। নানা রকম ক্ষমার কথাও আছে তাঁর রচনায়। তবে খুনখারাবির আসামিকে ক্ষমা করার কথা তিনি বলে যাননি। তাঁর চিত্রাঙ্গদা গীতিনাট্যে চিত্রাঙ্গদাকে অর্জুনের উদ্দেশে বলতে শুনি:
আমি তোমায় করিব নিবেদন
আমার হূদয় প্রাণ মন।
শিল্পা শেঠি বা মাধুরী দীক্ষিতের মতো সুন্দরী চিত্রাঙ্গদার ওই প্রস্তাব আমাদের মতো মানুষকে দিলে বলতাম: অতি উত্তম। কিন্তু অর্জুন অন্য রকম। তিনি বলেছেন:
ক্ষমা করো আমায়, আমায়—
বরণযোগ্য নহি বরাঙ্গনে—
ব্রহ্মচারী ব্রতধারী।
গুরুদেবের পরিশোধ নাট্যগীতি আপনারা অনেকেই শুনেছেন। বজ্রসেন বলছেন:
কাঁদিতে হবে রে, রে পাপিষ্ঠা
জীবনে পাবি না শান্তি।
প্রত্যুত্তরে শ্যামা বলছেন:
ক্ষমা করো নাথ, ক্ষমা করো
এ পাপের যে অভিসম্পাত
হোক বিধাতার হাতে নিদারুণতর
তুমি ক্ষমা করো।
ক্ষমা সম্পর্কে গুরুদেবের আরও কথাবার্তা আছে। তাঁর চণ্ডালিকা-য় আনন্দ বলছে:
জল দাও, আমায় জল দাও।
প্রকৃতি তার জবাবে বলছে:
ক্ষমা করো প্রভু, ক্ষমা করো মোরে
আমি চণ্ডালের কন্যা
মোর কূপের বারি অশূচি।
দুনিয়াতে নানা রকমের ক্ষমা চাওয়া আর ক্ষমা করা আছে। ইচ্ছা করে কোনো তরুণীর গায়ে একটু ঘষা দিয়ে তাকে বলতে পারেন: ক্ষমা করুন। এ ক্ষেত্রে যদি ক্ষমা আপনি পান, তা নিয়ে পত্রপত্রিকা লেখালেখি করবে না। গোটা কয়েক মার্ডার করে আদালতের রায়ে যদি আপনি প্রাণদণ্ড পান এবং সেই প্রাণদণ্ড যদি কলমের এক খোঁচায় মওকুফ হয়, তখন কাগজগুলো কিছু লিখুক বা না লিখুক ক্ষমাকারীর বিবেক কী বলছে, তা জানার আগ্রহ যে কারও হতে পারে।
ক্ষমা বলতে রবীন্দ্রনাথের নায়ক-নায়িকারা যা বোঝে, আমাদের রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রপতির ক্ষমা তা নয়। আমরা এমন এক রাষ্ট্রে বাস করছি যেখানে অপরাধী হলেই হবে না, তার দলীয় পরিচয়টিই প্রধান। একেক আমলে একেক ধর্মীয় পরিচয় গুরুত্বপূর্ণ। তার বাড়ি কোন জেলায়। এসব পরিচয় যদি ঠিকঠাক থাকে তা হলে কেউ ছাত্রী ধর্ষণ ও সাত খুন করেও পার পেয়ে যাবে। দলীয় ও ধর্মীয় পরিচয় যদি মিলে যায়, সোনায় সোহাগা। ওই ধর্ষকের ব্যাপারে মানবাধিকারকর্মীরা টুঁ-শব্দটিও করবেন না—রাস্তার মধ্যে আদম বন্ধন যতই হোক তার শাস্তির দাবিতে। সাংগঠনিক, দলীয় ও ধর্মীয়—এই তিন পরিচয় যদি খাপে খাপে মিলে যায়, তা হলে কোনো কূটনীতিকের কুচ পরোয়া নেই। তিনি তাঁর গাড়িতে অন্য রাষ্ট্রের পতাকা ওড়াতে পারেন, বন্ধুরাষ্ট্রের কূটনীতিকের সুন্দরী স্ত্রীকে বিরক্ত করতে পারেন, কারও হোন্ডার পেছনে বসে শুঁড়িখানায় বা অন্য কোনো আলয়ে যেতে পারেন, চাঁদার খাতা নিয়ে ঘুরে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা রোজগার করতে পারেন। তাঁর সম্পর্কে কাগজের লোকেরা অভিযোগ করলে, তাঁর মন্ত্রী বলবেন, ছিঃ, ওসব বলতে নেই, এখন আমরা সেক্যুলার। ক্ষমা তাঁকে করব না তো কাকে করব?
অপরাধীর ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নেই। সত্য ও ন্যায়বিচার ব্যক্তি ও ধর্মনিরপেক্ষ। অপরাধী যত প্রিয়জনই হোক তাকে ক্ষমা করা যায় না। উপমহাদেশের মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে মহাত্মা গান্ধীর পত্নী কস্তুরবা গান্ধীর ত্যাগ বিরাট। একবার তিনি ভুলবশত আশ্রমের সম্ভবত মাত্র চারটি টাকা নিজের প্রয়োজনে খরচ করেছিলেন। হিসাব না মেলায়, গান্ধীজি তদন্ত করে দেখলেন ও-টাকা কস্তুরবা ব্যয় করেছেন। ক্ষুব্ধ গান্ধী তাঁর অনুসারীদের সামনেই স্ত্রীকে ভৎর্ সনা করে বললেন, এই টাকা জনগণের। তুমি তা ব্যয় করেছ। এটাকে বলে চুরি। তোমার নামে পুলিশের কাছে চুরির অভিযোগে কেস করা যায়।
গান্ধীজি তাঁর সর্বত্যাগী পত্নীকেও ক্ষমা করেননি। এর নাম নৈতিকতা।
সৈয়দ আবুল মকসুুদ: গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক।  প্রথম আলো

ইন্দিরা গান্ধীকে স্বাধীনতা সম্মাননা

একাত্তরে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার জন্য ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধীকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সম্মাননা অর্পণ করা হয়েছে গণপ্রজাতন্ত্র্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে। গতকাল সোমবার বঙ্গভবনে এক অনাড়ম্বর ও সৌহার্দ্যপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ইন্দিরা গান্ধীর পুত্রবধূ ও ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের প্রধান সোনিয়া গান্ধীর হাতে এই সম্মাননা তুলে দেন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান। সোনিয়া গান্ধী গত রোববার ঢাকায় আসেন অটিজম-বিষয়ক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে। বাংলাদেশ সরকার আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী প্রায় পাঁচ শ বিদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এই সম্মাননা দেওয়া হবে। ইন্দিরা গান্ধীকে সম্মাননা দেওয়ার মধ্য দিয়ে তার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলো। আমরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।
যে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সর্বতোভাবে সহায়তা করেছেন, প্রায় এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছেন, স্বাধীনতার পক্ষে বিশ্ব জনমত গড়ে তুলতে সারা বিশ্বে কূটনৈতিক তৎ পরতা চালিয়েছেন, তাঁকে সম্মানিত করতে পেরে দেশবাসীও গৌরববোধ করছে। এমন একটি সময়ে এই সম্মাননা দেওয়া হলো, যখন সব সংশয় ও সন্দেহ পেছনে ফেলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নবযুগের সূচনা হতে যাচ্ছে। আগামী সেপ্টেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরকালে সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি ও তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সই হওয়ার কথা। একই সঙ্গে আঞ্চলিক কাঠামোর মধ্যে দুই দেশের মধ্যে স্থল ও রেলওয়ে ট্রানজিটসুবিধা বিনিময়েরও প্রস্তুতি চলছে। এই দুটি দেশের ভৌগোলিক অবস্থান এমনভাবে বিন্যস্ত যে পারস্পরিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির স্বার্থে আন্তযোগাযোগ বাড়ানোর বিকল্প নেই।
বিলম্বে হলেও ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী দেশের এই রাষ্ট্রনেতাকে স্বাধীনতা সম্মাননা প্রদানের মধ্য দিয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি জানানো হলো। উত্তম হতো, যদি স্বাধীনতার সম্মাননা জানানোর বিষয়টিও আমরা জাতীয় মতৈক্যের ভিত্তিতে করতে পারতাম, এ নিয়ে জাতীয় সংসদে আলোচনা হতো। আরও আনন্দের হতো, যদি এ রকম একটি বিরল ও ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যেত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক যে আমাদের বৈরী রাজনীতির কারণে সেটা সম্ভব হলো না। তবে প্রধান বিরোধী দল সোনিয়া গান্ধীর বাংলাদেশ সফর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নের সহায়ক হবে বলে যে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে, তা ইতিবাচক। রাজনৈতিক পথ ও মতের ভিন্নতা সত্ত্বেও পররাষ্ট্রনীতি তথা নিকট প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে আমাদের জাতীয় নেতৃত্ব একযোগে কাজ করবে—এটাই প্রত্যাশিত।
বিদেশি নাগরিকদের সম্মাননা জানানোর পাশাপাশি যে লক্ষ্য ও আদর্শ সামনে রেখে একাত্তরে এ দেশের মানুষ জীবন বাজি রেখে জাতীয় মুক্তির মহাসমরে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সেই লক্ষ্য ও আদর্শ কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে, সেই আত্মজিজ্ঞাসাও জরুরি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা কেবল মুখে উচ্চারণই যথেষ্ট নয়, আমাদের চিন্তা ও কর্মে এর যথাযথ প্রতিফলন থাকতে হবে। স্বাধীনতার চল্লিশ বছরে এটাই দেশবাসীর ঐকান্তিক প্রার্থনা।

 সিরিয়ায় বহুদলীয় রাজনীতির দ্বার উন্মুক্ত হচ্ছে

অবশেষে সিরিয়ায় বহুদলীয় রাজনীতির দ্বার উন্মুক্ত হতে চলেছে। সরকার ইতিমধ্যে নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের অনুমতিসংক্রান্ত একটি খসড়া আইন তৈরি করেছে। বিক্ষোভকারীদের মূল দাবিই ছিল এটি। গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সানা এ খবর জানায়।
প্রকাশিত খবরে বলা হয়, দেশের রাজনীতিতে প্রাণ ফেরাতে সংস্কারের অংশ হিসেবে সরকার নতুন রাজনৈতিক দল গঠনসংক্রান্ত ওই খসড়া আইন তৈরি করেছে। দল গঠন, আচরণবিধি নিয়ন্ত্রণ, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা, দলগুলোর অধিকার ও দায়বদ্ধতার মতো অপরিহার্য বিষয়গুলো ওই বিলটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
তবে বহুদলীয় রাজনীতির পথ উন্মুক্ত করা হলেও ধর্ম, উপজাতি, অঞ্চল বা পেশাভিত্তিক কোনো দল গঠন করা যাবে না। গোত্র, লিঙ্গ বা বর্ণভিত্তিক কোনো জনগোষ্ঠী যাতে বৈষম্যের শিকার না হয়, সেই বিধান রাখা হয়েছে ওই খসড়া বিলে। এ ছাড়া যেসব দল সিরিয়াভিত্তিক নয়, সেগুলোকেও নিষিদ্ধ করা হচ্ছে বলে প্রকাশিত খবরে বলা হয়।
উল্লেখ্য, ১৯৯৩ সাল থেকেই সিরিয়ার ক্ষমতায় আঁকড়ে রয়েছে প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের বাথ পার্টি। দেশটির সংবিধান অনুযায়ী এই দলটিই সমাজ ও রাষ্ট্র পরিচালনা করে। রাজনৈতিক সংস্কারসহ বিভিন্ন দাবিতে গত ১৫ মে থেকে সিরিয়ায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলে আসছে। এএফপি

এ সম্মান সবার(ইন্দিরা গান্ধীকে দেওয়া পুরস্কার হাতে সোনিয়া)

রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের কাছ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অনন্য অবদান রাখার জন্য গতক� রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের কাছ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অনন্য অবদান রাখার জন্য গতকাল ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধীকে দেওয়া ‘বাংলাদেম স্বাধীনতা সম্মাননা পুরস্কার’ গ্রহণ করেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী
ছবি: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সৌজন্যে
বঙ্গভবনের হলওয়ে আর ক্রেডেনশিয়াল হলের দেয়ালে শোভা পাচ্ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ইন্দিরা গান্ধীর দুর্লভ কিছু ছবি। সেই সঙ্গে ফ্রেমে বন্দী ছিল সেই সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ও ভারতের ভূমিকার আখ্যান।
দুটি কক্ষেই প্রতিফলিত হচ্ছিল বন্ধুর লড়াইয়ে বন্ধুর হাত বাড়িয়ে দেওয়া। ফিরে এসেছিল চার দশক আগের দুনিয়া কাঁপানো সেই সব দিন। তাই কাল বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে বঙ্গভবনে পা রেখেই চার দশক আগে ফিরে গিয়েছিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। উপলক্ষ, শাশুড়ি ইন্দিরা গান্ধীর পক্ষে ‘বাংলাদেশ স্বাধীনতা সম্মাননা’ গ্রহণ। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য গতকাল সোমবার বিকেলে ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে দেওয়া হয় এই সম্মাননা।
ইন্দিরা গান্ধীর পুত্রবধূর হাতে পুরস্কার তুলে দিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান বলেন, তাঁকে সম্মান জানিয়ে এ দেশ নিজেও সম্মানিত হচ্ছে। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমাদের দুঃসময়ে ইন্দিরা গান্ধী অভিভাবক হিসেবে অমূল্য সহায়তা দিয়ে আমাদের চিরকৃতজ্ঞ করেছেন।’
বঙ্গভবনের দরবার হলে গতকাল এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বিদেশিদের জন্য বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘বাংলাদেশ স্বাধীনতা সম্মাননা’ (মরণোত্তর) তুলে দেন সোনিয়া গান্ধীর হাতে। ‘বাংলাদেশ স্বাধীনতা সম্মাননা’ হিসেবে ১৮ ক্যারেটের ২০০ ভরি ওজনের স্বর্ণ দিয়ে তৈরি পদক ও তিন পৃষ্ঠার একটি মানপত্র দেওয়া হয়। সৌহার্দ্য, শান্তি ও অর্জনের প্রতীক হিসেবে কদমগাছের নকশাসংবলিত ষোড়শ শতাব্দীর টেরাকোটার আদলে তৈরি পদকের নকশা করেছেন শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী ও হাশেম খান।
পুরস্কার গ্রহণের পর আবেগাপ্লুত সোনিয়া ফিরে যান চার দশক আগের বিশেষ এক দিনে। তিনি বলেন, ‘১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি লন্ডন থেকে ঢাকায় ফেরার পথে দিল্লিতে যাত্রাবিরতি করেন বঙ্গবন্ধু। স্বামী রাজীব গান্ধীর সঙ্গে বিমানবন্দরে আমি উপস্থিত ছিলাম।’
সোনিয়া গান্ধী বলেন, ‘আজ যদি ইন্দিরা গান্ধী আমাদের মাঝে থাকতেন, আমি জানি, যে আসামান্য সম্মান আপনারা তাঁকে দিয়েছেন, তাতে তিনি অসম্ভব খুশি হতেন। বঞ্চিত মানুষের স্বাধীনতা এবং একটি দেশের অভ্যুদয়ে অবদানের জন্য স্বীকৃতির চেয়ে মূল্যবান আর কিছুই হতে পারে না। তাই তাঁর পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করার সুযোগ পেয়ে নিজেকে গর্বিত মনে করছি।’
সোনিয়া বলেন, নানা হুমকি ও চাপের পরও অবিচল থেকে বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের প্রতি সব সময় বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে রেখেছিলেন ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। তিনি বলেন, ‘আপনাদের বিজয় ও মুক্ত বাংলাদেশ ইন্দিরা গান্ধীর শ্রেষ্ঠতম অর্জন। এই সম্মান ইন্দিরা গান্ধীর একার নয়, ভারতের সবার।’
রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধে মহান অবদানের জন্য শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীকে সম্মান জানিয়ে আমরা নিজেদের সম্মানিত করি এবং আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতিগাথায় ফিরে যাই।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আজ আমরা এখানে এক বিশাল ব্যক্তিত্বকে গভীর শ্রদ্ধা জানাতে সমবেত হয়েছি। আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধে তাঁর অবদান অনন্য, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও একক।’ তিনি বলেন, ‘তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টি দিয়ে তিনি ইতিহাসের ধারা এবং পরবর্তী প্রজন্মের ভাগ্যকে প্রভাবিত করেছেন। তিনি শুধু লাখ লাখ বাংলাদেশির জন্য ভারতের দরজাই উন্মুক্ত করেননি, আমাদের প্রবাসী সরকারকে নৈতিক সমর্থন এবং সাজসরঞ্জাম দিয়ে সহায়তা করেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদানের জন্য ইন্দিরা গান্ধীকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সম্মাননা দিতে পেরে আমরা নিজেরাও সম্মানিত বোধ করছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে এবং বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, একাত্তরে ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে এবং পাকিস্তানে জেলে আটক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির লক্ষ্যে বিশ্ব জনমত গঠনের জন্য সারা বিশ্ব সফর করেছিলেন।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সীমান্ত অতিক্রমকারী বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি শরণার্থীকে ভারত শুধু আশ্রয়ই দেয়নি, বাংলাদেশ সরকারকে কূটনৈতিক, সামরিক ও মানসিক সহায়তাও দিয়েছিল। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ-ভারত মিত্রবাহিনীর যেসব ভারতীয় সেনাসদস্য আত্মদান করেছেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের মাত্র তিন মাসের মধ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে নেন। সমসাময়িক বিশ্ব-ইতিহাসে এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের জন্য ভারতের অসামান্য অবদান ভুলবার নয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট ঘাতকেরা আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর ইন্দিরা গান্ধী আমার ছোট বোন শেখ রেহানা ও আমার পরিবারকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। আমাদের দুঃসময়ে ইন্দিরা গান্ধী অভিভাবক হিসেবে এই অমূল্য সহায়তা দিয়ে আমাদের চিরকৃতজ্ঞতার পাশে আবদ্ধ করেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও সুদৃঢ় হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
শেখ হাসিনার বক্তব্যের পর বঙ্গবন্ধু ও ইন্দিরা গান্ধীর দুর্লভ কিছু মুহূর্ত নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এ বি তাজুল ইসলাম অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। বাংলাদেশ স্বাধীনতা সম্মাননাপত্র পাঠ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব আবদুল আজিজ।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী, সাংসদ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, শিল্পী এবং পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাসহ দেশি-বিদেশি অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।

 তাহেরের হেরফের নেই!

ইঞ্জিন, আসন, চাকা—কোনো কিছুই আগের মতো নেই। কাঠামোটা এখনো টিকে আছে। তবে রং চটে গেছে, ধরেছে মরিচা। লক্ষ্মীপুর মডেল থানা চত্বরে ১০ বছর ধরে পড়ে আছে মাইক্রোবাসটি। এটি বিএনপির নেতা নুরুল ইসলাম হত্যা মামলার আলামত।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাইক্রোবাসটি নতুন করে আবার থানায় আগত মানুষের নজর কাড়ছে। তাহেরপুত্র বিপ্লবের ফাঁসির দণ্ড মওকুফের পর মামলার এই আলামতের মধ্যে এখন নতুন সন্ত্রাসের আলামত দেখছে এলাকার মানুষ। দিন কয়েক আগে নুরুল ইসলামের স্মৃতিস্তম্ভ ভেঙে ফেলা এলাকার মানুষের এই আশঙ্কাকে আরও জোরালো করেছে।
স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, এই মাইক্রোবাসে চড়েই দাপিয়ে বেড়াতেন লক্ষ্মীপুরের বিতর্কিত আওয়ামী লীগের নেতা আবু তাহেরের বড় ছেলে ফাঁসির আসামি এ এইচ এম বিপ্লব, পালিত ছেলে আবদুল জব্বার লাবু ও তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা। বিভিন্ন সূত্রের তথ্যমতে, ১৯৯৮ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত কমপক্ষে ১০টি খুন ও এক ডজনের বেশি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে এই মাইক্রোবাস ব্যবহূত হয়েছিল। এই মাইক্রোবাস নিয়েই লক্ষ্মীপুর পৌর ছাত্রদলের নেতা মুনছুর আহমেদ ও আনোয়ার হোসেন জুলফুর দুই হাতের সব আঙুল কেটে ফেলেন তাহেরের বড় ছেলে বিপ্লব। সেই মামলায় তাঁর সাজাও হয়েছিল।
কিন্তু এত দিন পরও এলাকাবাসী গণমাধ্যমের সামনে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। লক্ষ্মীপুরে এসে কয়েক দফা চেষ্টার পর দুই তরুণের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। শেষ পর্যন্ত তাঁরা কথা বলতে রাজি হন, কিন্তু ভয়ে ছবি তুলতে সম্মত হননি। এমন আতঙ্ক এখন লক্ষ্মীপুরজুড়ে।
আঙুল হারানো মুনছর প্রথম আলোকে শুধু বললেন, ‘রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ মহল থেকে যখন অবিচার হয়, তখন আত্মহত্যা করা ছাড়া আর উপায় থাকে না।’
বিএনপির নেতা নুরুল ইসলাম হত্যা মামলায় তাহেরের ছেলে এ এইচ এম বিপ্লবের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। কিন্তু তাহেরের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতি তাঁর মৃত্যুদণ্ডাদেশ মওকুফ করেন। নুরুল ইসলাম হত্যা মামলা ছাড়াও বিপ্লব আরও চারটি হত্যা মামলার আসামি। এর মধ্যে দুটিতে তাঁর যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। তিনি বর্তমানে লক্ষ্মীপুর কারাগারে আছেন। বিপ্লবের এই সাজা মওকুফ নিয়ে লক্ষ্মীপুরবাসীর মনে আবার আতঙ্ক ভর করেছে। সবার একই আশঙ্কা, বিপ্লব মুক্ত হলেই আবার সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড শুরু হবে।
নিজের ছেলে বিপ্লবের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও সাজা মওকুফ হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তাহের বলেন, ‘বিপ্লবের নাম কে জানত, এখন সবাই তাকে চেনে। সে জেলা কমিটির (আ.লীগ) সদস্যও না। অথচ আজ প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, বিরোধী নেতা, ড. কামাল, সুরঞ্জিত সেন, মোহাম্মদ নাসিম—সবার মুখে মুখে তার নাম। টেলিভিশনে তাকে নিয়ে টক শো হচ্ছে। সে এখন জাতীয় নেতা। এক কোটি টাকা খরচ করেও এমন নাম পাওয়া যাবে না। ছেলেকে বলেছি, তুই এখন মরলেও আমি খুশি।’
তবে তাহেরকে নিয়ে জনমনে আতঙ্ক থাকলেও বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের অভিযোগ কমই হয়েছে। কেবল মেয়র নির্বাচনের সময় তিনি বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে প্রতিপক্ষের লোকজনকে বের করে দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তাহের অবশ্য এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ—কেউ আমাকে ভোট দেয়নি। তারা আমার বিরোধিতা করেছে। পৌর নির্বাচনে আমি কারও কাছে ভোট চাইতেও যাইনি, লোকজন ভালোবেসে আমাকে ভোট দিয়েছে।’
লক্ষ্মীপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম সরোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, এই সরকারের আমলে তাহের ও তাঁর ছেলেদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা বা অভিযোগ দায়ের হয়নি, যা আছে সব বিগত সময়ের অভিযোগ।
উন্নয়নকাজের নিয়ন্ত্রণ: স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর লক্ষ্মীপুর পৌরসভাসহ জেলায় যত সরকারি উন্নয়নকাজ হয়েছে, এর প্রায় সবই নিয়ন্ত্রণ করেছেন তাহের। এ ক্ষেত্রে তাঁর পক্ষে সব দেখাশোনা করেছেন মেজো ছেলে এ কে এম সালাউদ্দিন টিপু। জেলা পরিষদ, শিক্ষা প্রকৌশল, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের যাবতীয় ঠিকাদারি কাজের নিয়ন্ত্রণ তাঁরই হাতে। তাঁর কথামতোই সব কাজ ভাগ হয়েছে, সেভাবেই দরপত্রে ঠিকাদারেরা অংশ নিয়েছেন। তবে সংশ্লিষ্ট বিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তারা এ নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন পৌর কাউন্সিলর অভিযোগ করেন, দরপত্র চাওয়ার আগেই বাস টার্মিনালের সীমানাদেয়াল নির্মাণের কাজ মেয়র তাঁর পছন্দের ঠিকাদারকে দিয়ে দেন।
তবে মেয়র তাহের এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘কে আমার নাম কইছে, কন।’ লোকজন বলেছে, আপনার নামেই তো এসব হয়ে থাকে—এ কথার জবাবে তাহের বলেন, ‘ওই আমলে (বিগত আওয়ামী লীগ আমল) হয়ে থাকতে পারে। এবার আমি কোনো এক্সইএনকে (নির্বাহী প্রকৌশলী) একটি ফোনও করিনি।’
পরবর্তী লক্ষ্য সাংসদ হওয়া: এলাকার বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাহের এখন স্বপ্ন দেখছেন আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সাংসদ নির্বাচিত হওয়ার। এর আগে তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হতে চান। এরপর আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। এভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছেন তাহের। দল চার ভাগে বিভক্ত হলেও ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে তিনি নিজের পছন্দের লোকদের জিতিয়ে এনেছেন। তাঁদের মধ্যে সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত দুই ইউপি চেয়ারম্যানও রয়েছেন বলে স্থানীয় সূত্রগুলো বলছে।
নিজের ‘ভাবমূর্তি’ উজ্জ্বল করতে পৌরসভার বাজেট ঘোষণার সময় ৬৫টি খাসি কেটে ভোজ দিয়েছেন তাহের। বিএনপি-জামায়াতের নেতারা সেই ভোজে অংশ নিয়েছেন, বক্তৃতাও করেছেন। তাহের এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি পৌর মেয়র হিসেবে আমন্ত্রণ করেছি, এমপি হলেও আমন্ত্রণ করব।’
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র সাহাবুদ্দিন সাবু প্রথম আলোকে বলেন, তাহেরের লক্ষ্য আগামী সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া। তাই নিজের ভাবমূর্তি উদ্ধারে তিনি এটা করেছেন।
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম আলাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, দলের কাউন্সিলররা সিদ্ধান্ত নেবেন, কে সভাপতি হবেন। কেউ চাইলেই তিনি সভাপতি হবেন, তা তো নয়।
সংসদ নির্বাচনের ইচ্ছা আছে কি না, জানতে চাইলে তাহের প্রথম আলোকে বলেন, ‘পৌরসভা নির্বাচনের সময় মানুষের কাছে ওয়াদা করেছিলাম, আমি আর নির্বাচন করব না। কথা তো রাখতে হবে। তবে নেত্রী (শেখ হাসিনা) যদি চায়, তাহলে তো আমি আর না করতে পারব না।’

সরকারের কাছে আর কিছু চান না এরশাদ

মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টি আগামী সংসদ নির্বাচন এককভাবে করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আবার জোট-মহাজোটের রাজনীতি চালু থাকলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটেই থাকতে চান দলটির প্রধান সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ। তবে রাজনৈতিক সতর্কতা হিসেবে জাতীয় পার্টি এখন আর সরকারের কাছ থেকে মন্ত্রিত্ব বা অন্য কোনো সুবিধা নিতে চায় না।
জাতীয় পার্টির একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, এক বছর আগেও জাতীয় পার্টি থেকে আরেকজনকে মন্ত্রী করার জন্য অনুরোধ করে এইচ এম এরশাদ চিঠি লিখেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। কিন্তু এখন সরকার থেকে দেওয়া মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব সবিনয়ে ফিরিয়ে দিচ্ছেন তিনি। এটি জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক অবস্থানের একটি বড় ধরনের পরিবর্তন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল গত বৃহস্পতিবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠকে জাতীয় পার্টি তার এ অবস্থান স্পষ্ট করে জানায় আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদলকে। সূত্র জানায়, বৈঠকে এরশাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, মহাজোটের অন্যতম শরিক হলেও জাতীয় পার্টিকে তেমন কিছু দেওয়া হয়নি। এতে জাতীয় পার্টির প্রতি ‘সাধারণ মানুষের এ ধরনের সহানুভূতি’ সৃষ্টি হয়েছে। এই সহানুভূতিকে এখন অন্য কিছু পাওয়ার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করছেন এরশাদ।
এইচ এম এরশাদের বারিধারার বাসভবনে গত ২১ জুলাই যান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের ও স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক। তাঁরা মহাজোটকে শক্তিশালী করতে সরকারের জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণ আরও বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে তাঁরা ওই আলোচনা করছেন বলে এরশাদকে জানান।
বৈঠক সূত্র জানায়, জাতীয় পার্টিকে মহাজোট সরকারে আরও এক থেকে দুটি মন্ত্রীর পদ দেওয়া ছাড়াও এরশাদকে একটি সম্মানজনক অবস্থান দেওয়া নিয়েও আলোচনা হয়। বর্তমান মহাজোট সরকারে জাতীয় পার্টির মন্ত্রী রয়েছে একজন। এরশাদের অনুজ জি এম কাদের, তিনি বেসরকারি বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন। সংসদে জাতীয় পার্টির আসন সংখ্যা ২৯।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠক সম্পর্কে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে এ মুহূর্তে জাতীয় পার্টি বর্তমান সরকারে আর কোনো মন্ত্রিত্ব বা অন্য কোনো কিছু নিতে চায় না। কারণ, জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে এককভাবে অংশ নিতে চায়। এরশাদ বলেন, ‘দেশের যেখানেই যাই, মানুষ বলে, আগামী নির্বাচন যেন জাতীয় পার্টি এককভাবে করে।’
বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগের প্রসঙ্গে এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টি জোটবদ্ধ রাজনীতি করলে মহাজোটেই থাকবে। বের হলে এককভাবে নির্বাচন করবে। সে ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির সামনে বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। বিএনপির সঙ্গে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সরকার কিছু ভালো কাজ করলেও তার জনপ্রিয়তা কমছে। তার মানে এই নয় যে, বিএনপির জনপ্রিয়তা বেড়েছে। বিকল্প হিসেবে মানুষ এখন জাতীয় পার্টির কথা ভাবে বলে দাবি করেন এরশাদ।
এরশাদের সঙ্গে বৈঠক সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মহাজোটকে আরও সক্রিয় করতেই ওই বৈঠক হয়েছিল। এরশাদ সাহেব আমাদের জানিয়েছেন, তিনি মহাজোটেই থাকবেন। তবে এর জন্য তিনি তাঁর দল থেকে নতুন করে কোনো মন্ত্রীর পদ বা অন্য কিছু নিতে চান না।’
এরশাদের একক নির্বাচনের পরিকল্পনা সম্পর্কে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জোটে থাকলে তিনি মহাজোটেই থাকবেন। নইলে একক নির্বাচন করবেন—এ কথা তিনি আমাদের বলেছেন।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ পরবর্তী নির্বাচন নয়, পরবর্তী প্রজন্মের কথা চিন্তা করে কাজ করছে। সে কারণে দারিদ্র্য, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদসহ অভিন্ন কিছু ইস্যু নিয়ে সব দল-মতের মানুষের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।
জাতীয় পার্টি সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচন করার প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু করেছে। ইতিমধ্যে ৬০টি জেলায় দলের কমিটি গঠনের কাজ শেষ হয়েছে। অধিকাংশ উপজেলায়ও কমিটি গঠনের কাজ শেষ করেছে তারা। ৩০০ নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থীর তালিকা প্রণয়নের প্রাথমিক কাজও শুরু হয়েছে বলে জানান দলের একাধিক নেতা।
জাতীয় পার্টির এই নেতাদের মতে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। আর ওই নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা কম। ফলে ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি এককভাবে অংশ নিয়ে বিরোধী দল হোক, এটা আওয়ামী লীগও চাইবে। আর এ সুযোগ কাজে লাগাতে চায় জাতীয় পার্টি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নেতা বলেন, বর্তমানে সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের যে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে, তাতে আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি নিজস্ব ভোটের পাশাপাশি অনেক ‘নেগেটিভ ভোট’ও পাবে। আর বিএনপি অংশ না নিলেও জাতীয়তাবাদী ওই অংশের ভোটও জাতীয় পার্টির বাক্সে পড়ার সম্ভাবনা বেশি। এসব ঘটলে ভোটের ফলাফল অনেক কিছুই বদলে দিতে পারে বলে মনে করছেন জাতীয় পার্টির এ নেতারা।

সবকিছু ভেঙে পড়ে

থিংস ফল অ্যাপার্ট। ‘সবকিছু ভেঙে পড়ছে। কেন্দ্র আর কোনো কিছু ধরে রাখতে পারছে না। জগৎ জোড়া শুধুই নৈরাজ্য।’ লিখেছিলেন কবি ডব্লিউ বি ইয়েটস। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে। বাংলাদেশেও হঠাৎ করে মনে হচ্ছে সবকিছু ভেঙে পড়ছে। চারদিকে কেবল দুঃসংবাদ। দুঃসংবাদের চাপে সুসংবাদ উধাও।
এই মহাজোট সরকার তার আড়াই বছর পার করেছে কেবল। আড়াই বছরের মাথায় এসে মনে হচ্ছে, সরকার যা কিছু করছে, সবই তার বিরুদ্ধে চলে যাচ্ছে। সরকার যদি বা কিছু না-ও করে, দেশে যেসব দুর্ঘটনা ঘটছে তার দোষ কেবল সরকারের ঘাড়ে নয়, সরকারি দলের ওপরও এসে আছড়ে পড়ছে।
এত তাড়াতাড়ি এমন হওয়ার কথা নয়। কেন এমন ঘটছে? একটা কারণ হতে পারে, সরকার জনপ্রিয়তা হারিয়ে ফেলেছে। জনগণ তাদের ওপর বিরক্ত। দেখতে নারি, চলন বাঁকা। সরকারের ভালো কাজগুলোও আর মানুষের চোখে পড়ছে না। ব্যর্থতাগুলোই তাদের চোখে প্রকট হয়ে পড়ছে। সরকারের জনপ্রিয়তা যে কমে গেছে, স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের ফল থেকে তা কিছুটা আঁচ করা যায়। কিন্তু সরকার জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে কেন? জনজীবনে সরাসরি আঁচ লাগে, এমন কিছু ব্যর্থতা বড় স্পষ্ট। জিনিসপত্রের দাম আসলেই খুব বেড়ে গেছে। সীমিত আয়ে আর সংসার চলে না। দিন যাপন করা যায় না। শেয়ারবাজারে ধস অসংখ্য পরিবারকে পথে বসিয়ে দিয়েছে। ছোট ছোট বিনিয়োগকারীর পকেট কেটে কতিপয় বড়লোক হাজার কোটি টাকা নিয়ে সটকে পড়েছেন। এবং এই বিপর্যয়ের জন্য যাঁরা দায়ী বলে মানুষ মনে করে, তাঁরা সরকারের উচ্চমহলের ঘনিষ্ঠ, অথবা সরকারেরই লোক। এসব বড় ঘটনা তো আছেই, নিত্যদিনের পথচলায় মানুষকে একটা বিশেষ প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে, তার নাম দলীয়করণ ও রাজনৈতিকীকরণ। যেখানে দলের দরকার নেই, সেখানেও সবকিছু করা হয় দলীয় পরিচয় বিবেচনা করে। যেখানে রাজনীতি টেনে আনার দরকার নেই, সেখানেও রাজনীতি ও রাজনীতিকেরা এসে হাজির হন এবং সবকিছু রাজনীতির ছায়ায় ঢেকে ফেলেন। একটা অজপাড়াগাঁর স্কুলে শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে, সেই নিয়োগের প্রক্রিয়াটা নিয়ন্ত্রণ করেন এলাকার রাজনীতিকেরা, এমপি, মন্ত্রী, সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক। যাঁকে নেওয়া হয়, টাকা-পয়সা তো তাঁকে দিতে হয়ই, তাঁর দলীয় আনুগত্যও বিচার করা হয়। তারপর ওই শিক্ষক যদি কোনো দুর্নীতি বা অপরাধ করেন? তাহলে তাঁর বিচার করবেন কে? আইন, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সর্বত্র দলীয় পরিচয়-বিবেচনা। সবকিছু যদি রাজনীতির মাপকাঠিতে বিচার করা হয়, সবকিছু যদি চলে দলীয় পরিচয়ের যোগ্যতায়, তাহলে সবকিছু ভেঙে পড়তে বাধ্য। ধরা যাক, কথার কথাই বলছি, একজন পকেটমার হাটের মধ্যে পকেট কাটতে গিয়ে ধরা পড়ল। এখন যদি দেখা যায়, সে জবরপুর ইউনিয়ন পকেটমার লীগের বা দলের সভাপতি, আর ওই পকেটমারকে যে চৌকিদারের হাতে তুলে দেওয়া হলো, তিনি ওই এলাকার চৌকিদার লীগের বা দলের সভাপতি, তখন ওই চোরের বিচার কী হবে?
আমাদের নেতা-নেত্রীরা মনে করেন, সর্বত্র দলীয় লোক বসাতে পারলে দেশটা তাঁর নিয়ন্ত্রণে থাকে। আসলে ঘটনা উল্টো। দলের লোকেরও এক ভোট, দলের বাইরে যে ১৪ কোটি ২০ লাখ মানুষ আছে, তাদের মধ্যে যাঁরা প্রাপ্তবয়স্ক, তাঁদেরও মাথাপিছু এক ভোট। শুধু দলের ক্যাডারদের ভোট পেয়ে কোনো নেতা বা নেত্রী ক্ষমতাসীন হন না। সাধারণ ভোটারদের ভোটেই তাঁরা একবার জেতেন, একবার হারেন। কোনো একটা পদে যখন নির্লজ্জভাবে অযোগ্য কোনো দলীয় কর্মী/এলাকার মানুষ/নেতার আত্মীয়কে চাপিয়ে দেওয়া হয়, ওই পদপ্রত্যাশী আরও ১০০ জনই কেবল বঞ্চিত ও ক্ষুব্ধ বোধ করেন না, ওই ঘটনা যাঁরা জানেন-দেখেন, তেমন হাজার মানুষও ক্ষুব্ধ ও বিরক্ত হন। সেই ক্ষোভ তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে দেখান না। কিন্তু একটা দিন আসে, যখন ওই দলীয় বিচারে নিয়োগপ্রাপ্ত ব্যক্তি একটা ভুল বা অন্যায় করে বসেন। ভুল করার আশঙ্কা তাঁর পক্ষে বেশি, কারণ একে তো তাঁর ওই পদে বসার যোগ্যতা নেই, তার ওপর তিনি ভাবেন, আমি দলীয় পরিচয়ে নিযুক্ত হয়েছি, আমি সবকিছুর ঊর্ধ্বে, আমি কাউকে জবাবদিহি করতে বাধ্য নই। যেই না তিনি একটা ভুল করেন, যার সঙ্গে হয়তো দলের কোনো সম্পর্ক নেই, রাজনীতির কোনো যোগাযোগ নেই, তখন ওই ভুলের সব দায়িত্ব দলের ওপর এসে পড়ে, রাজনীতির ওপর এসে পড়ে।
এবার একটা বাস্তব উদাহরণ দিই। ডেইলি স্টার-এ ২৪ জুলাই ২০১১-এর প্রথম কলামের খবর এটা। চিয়ারস ফর পার্টিজান ট্রেডারস। দলীয় ব্যবসায়ীদের পোয়াবারো। ঘটনা কী? ঘটনা হচ্ছে, কুড়িগ্রামের বালিয়ামারী সীমান্তে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে প্রথম সীমান্ত হাট চালু হয়েছে। দুই দেশের মানুষ করতালি দিয়ে এই হাটকে স্বাগত জানিয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারত উভয় দেশের বাণিজ্যমন্ত্রী এ উপলক্ষে আয়োজিত উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। খুবই ইতিবাচক একটা সংবাদ। মানুষের সঙ্গে মানুষকে প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ হতে দেখলে, শত্রুতা নয়, বন্ধুত্ব বিনিময় করতে দেখলে কার না ভালো লাগে? কিন্তু ডেইলি স্টার লিখেছে, যে ২৫ জন ব্যবসায়ীকে ওই সীমান্ত হাটে স্টল দেওয়া ও ব্যবসা করার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তাঁদের প্রত্যেকেই শাসক দলের সুপরিচিত কর্মী। আপনি একটা ব্যবসার সুযোগ যাঁদের দিচ্ছেন, তাঁদের শতকরা ১০০ ভাগই যদি আপনার কর্মী হন, তাহলে ওই এলাকার অ-কর্মী যে হাজার হাজার মানুষ আছেন, তাঁরা আপনার ওপর অনুরাগ দেখাবেন না বিরাগ দেখাবেন? ওই ২৫ জনের কোনো একজন যেদিন কোনো বড় অন্যায় বা ভুল করবে (আমরা চাই তাঁরা কোনো ভুল বা অন্যায় না করুন ও ভালোমতো ব্যবসা করুন), সেদিন হাজার হাজার মানুষ ঝাড়ু হাতে রাস্তায় নামবে।
সবকিছুর রাজনৈতিকীকরণ ও দলীয়করণ আমাদের বায়ুমণ্ডল বিষাক্ত করে তুলছে। এটা যে কেবল মহাজোট সরকার করে বা করছে তা নয়, বিএনপি-জামায়াতও তা-ই করেছিল। করেছিল বলেই কানসাট কিংবা যাত্রাবাড়ীর গণ-অসন্তোষ গণবিস্ফোরণে রূপ নিয়েছিল। আওয়ামী লীগ দল হিসেবে বড়, তার বিস্তার তৃণমূল পর্যন্ত, সংসদে মহাজোটের সংখ্যাগরিষ্ঠতা তিন-চতুর্থাংশ, তারা যদি দলীয়করণ করতে চায়, তখন সবকিছুই দলের ছায়ায় ঢেকে যায়। মানুষ শ্বাস নেওয়ার মতো পরিসর পায় না।
এ থেকে উত্তরণের উপায় কী?
উপায়টা জানার জন্য খুব বেশি কষ্ট করতে হবে না, সামান্য একটু কষ্ট করতে হবে। গত সংসদ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কর্তৃক প্রচারিত নির্বাচনী ইশতেহার ২০০৮ একটু কষ্ট করে পাঠ করতে হবে। সবকিছু ওই দলিলে স্পষ্ট অক্ষরে লেখা আছে। ‘দলীয়করণমুক্ত অরাজনৈতিক গণমুখী প্রশাসন প্রতিষ্ঠা করা হবে। যোগ্যতা, জ্যেষ্ঠতা ও মেধার ভিত্তিতে সব নিয়োগ ও পদোন্নতি নিশ্চিত করা হবে।’ ‘বিচার বিভাগের প্রকৃত স্বাধীনতা ও নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা হবে। বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধ করা হবে।’ ‘আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা, শক্তিশালী স্বাধীন মানবাধিকার কমিশন গঠন ও ন্যায়পাল নিয়োগ করা হবে। মানবাধিকার লংঘন কঠোরভাবে বন্ধ করা হবে।’ ‘সংসদকে কার্যকর করা হবে, সরকার সকল কার্যকলাপের জন্য জবাবদিহি করতে বাধ্য থাকবে এবং প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের সম্পত্তির বিবরণী প্রতিবছর প্রকাশ করা হবে।’ ‘প্রতিটা নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে রাজনৈতিক প্রভাবের ঊর্ধ্বে রাখা হবে।’ ‘ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে ইউনিয়ন, উপজেলা ও জেলা পরিষদগুলোকে শক্তিশালী করা হবে।’ আর ওই নির্বাচনী ইশতেহারের প্রধান দুটো অঙ্গীকার ছিল, যা অগ্রাধিকার বলে ঘোষিত হয়েছিল—জিনিসপত্রের দাম কমানো এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করা, ঘুষ-চাঁদাবাজি ইত্যাদি বন্ধ করা। (আমি ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করছি বলে শব্দ এদিক-ওদিক হতে পারে, তবে অর্থের হেরফের হওয়ার আশঙ্কা কম)
এখন জনগণ যদি প্রশ্ন করে, পুলিশ কি রাজনৈতিক প্রভাবের ঊর্ধ্বে? প্রশাসনের নিয়োগ ও পদোন্নতির মাপকাঠি কি মেধা, দক্ষতা, যোগ্যতা? স্থানীয় সরকারকে কি কার্যকর করা হচ্ছে? আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে? বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কি বন্ধ হয়েছে? বিচার বিভাগ কি আগের চেয়ে বেশি স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারছে?
জনতা যখন দেখে, প্রচলিত আইনে বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা নেই, তখনই তারা আইন হাতে তুলে নেয়। মহামান্য রাষ্ট্রপতি যদি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত খুনের আসামিকে ক্ষমা করে দেন, তখন মানুষ দিশেহারা বোধ করে। বলা হচ্ছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে রাষ্ট্রপতি বরাবর এই মর্মে আবেদন পাঠালে রাষ্ট্রপতির বিকল্প কিছু করার থাকে না। তাহলে আমাদের প্রশ্ন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কেন এটা পাঠাতে গেল?
সবকিছুতেই দলীয় বিবেচনা, সবকিছুরই রাজনৈতিকীকরণ। খুন ও খুনিরও রাজনৈতিকীকরণ চলছে। আর আছে রাজনীতিতে সমঝোতা ও মতৈক্য সৃষ্টির চেষ্টা বাদ দিয়ে সংঘাতের পথ বেছে নেওয়া। সংসদকে কার্যকর করার বদলে অকার্যকর করার চেষ্টা। সংবিধানের সংশোধনীতে এমন এক অনুচ্ছেদ যোগ করে দেওয়া, যার পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৭২-এর সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘আমি চাই আমার ফাঁসি হোক, এ সংশোধনীর বিরোধিতার জন্য ফাঁসি হলে তা হবে সম্মানের।’
আজ চারদিকে ভাঙনের সুর। দুঃসংবাদে আকীর্ণ সংবাদপত্রের পাতা। সবকিছু ভেঙে পড়ছে। আরও অনেক কিছুই বোধহয় ভেঙে পড়তে দেখতে হবে।
আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।

Monday, July 25, 2011

হামলার আরও ভয়াবহ চিত্র বেরিয়ে আসবে

  • নরওয়ের রাজধানী অসলোয় শুক্রবারের ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে এক সমাবেশে কাঁদছেন দুই শোকার্ত ন� নরওয়ের রাজধানী অসলোয় শুক্রবারের ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের স্মরণে এক সমাবেশে কাঁদছেন দুই শোকার্ত নারী।
    ছবিটি গতকাল তোলা এএফপি
  • প্রধানমন্ত্রী স্টলটেনবার্গ: স্তম্ভিত প্রধানমন্ত্রী স্টলটেনবার্গ: স্তম্ভিত
1 2
নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী জেনস স্টলটেনবার্গ বলেছেন, হামলায় নিহত ব্যক্তিদের নাম শিগগিরই প্রকাশ করা হবে। সবার নাম প্রকাশ করা হলে হামলার আরও ভয়াবহ চিত্র বেরিয়ে আসবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
রাজধানী অসলোর প্রধান গির্জায় শোকে মুহ্যমান শত শত মানুষের সামনে প্রধানমন্ত্রী স্টলটেনবার্গ গতকাল রোববার এ কথা বলেন। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী বলেন, লেবার পার্টির যুব শাখার সদস্যসহ নিহত সবার পরিচয় ও ছবি যত দ্রুত সম্ভব প্রকাশ করা হবে। তখন নৃশংস এই ঘটনার প্রকৃত ভয়াবহতা বেরিয়ে আসবে। তিনি বলেন, আমাদের দেশ ছোট। কিন্তু আমরা গর্বিত জাতি। আমরা কখনোই আমাদের মূল্যবোধ থেকে সরে যাব না। স্টলটেনবার্গ বলেন, নৃশংস এই হামলা সত্ত্বেও আমরা প্রকৃত গণতন্ত্র, উদারতা ও মানবিকতার দিকে এগিয়ে যাব।
দেশটির গির্জার প্রধান যাজক ওলে ক্রিশ্চিয়ান কেভারমে শোকার্ত জনতার উদ্দেশে বলেন, আমরা শোকের চিহ্ন নিয়ে এখানে সমবেত হয়েছি। সঙ্গে আশাও জিইয়ে রাখতে হবে।
যুক্তরাজ্যের রানির শোক: নরওয়েতে জোড়া সন্ত্রাসী হামলায় হতাহতের ঘটনায় যুক্তরাজ্যের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ নরওয়ের রাজা হ্যারাল্ডের কাছে পাঠানো এক শোক বার্তায় বলেন, এই ঘটনায় আমি গভীরভাবে শোকাহত। রাজা ফিলিপসহ আমি নরওয়ের জনগণের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। সন্ত্রাসী হামলায় হতাহত সবার প্রতি আমাদের প্রার্থনা ও শুভকামনা রইল।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী জেনস স্টলটেনবার্গকে ফোন করে সমবেদনা জানিয়েছেন। এ সময় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্যামেরন এ ঘটনা তদন্তে ব্রিটিশ পুলিশের সহযোগিতা দেওয়ার প্রস্তাব দেন।
পোপের শোকপ্রকাশ: নরওয়েতে হামলার ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন পোপ ষোড়শ বেনেডিক্ট। গতকাল রোববার নিজের গ্রীষ্মকালীন বাসভবনে এই শোক প্রকাশের কথা জানান। ঘৃণ্য এই পথ থেকে সরে আসার জন্য সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
পোপ বেনেডিক্ট বলেন, আমরা হামলায় নিহতদের জন্য প্রার্থনা করি। আহতদের প্রতি সমবেদনা জানাই।
গত শুক্রবার জোড়া সন্ত্রাসী হামলায় রক্তাক্ত হয় নরওয়ে। রাজধানী অসলোতে বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয় সাতজন। ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরসহ কয়েকটি সরকারি ভবন। এর কিছুক্ষণ পর রাজধানীর দক্ষিণে একটি দ্বীপে দেশের ক্ষমতাসীন দলের যুব সংগঠনের সম্মেলনে এক বন্দুকধারীর গুলিতে নিহত হয় ৮৫ জন। এএফপি, বিবিসি।

Sunday, July 24, 2011

ছোট দলগুলোকে কাছে পেতে বিএনপির বাধা জামায়াত

সরকারবিরোধী আন্দোলনে সুবিধা করতে পারছে না বিএনপি। শরিক দলগুলোর অবস্থাও জোরালো নয়। এ অবস্থায় একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য গড়তে ছোট দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। কিন্তু এ প্রচেষ্টায় এখন বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে জামায়াতে ইসলামী।
দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপি দুই সপ্তাহ ধরে যেসব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করেছে, সবগুলোরই আপত্তি জামায়াতকে নিয়ে। দলগুলোর বক্তব্য, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী জামায়াত থাকলে তাদের পক্ষে বিএনপির সঙ্গে ঐক্য করা কঠিন।
এ অবস্থায় বিএনপির নেতারা নতুন সংকটে পড়েছেন। কারণ দলটির পুরোনো মিত্র জামায়াত ভোটের রাজনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তাই জামায়াতকে ত্যাগ করা বিএনপির পক্ষে কঠিন।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, জামায়াতকে বাদ দিয়ে কোনো রাজনৈতিক মোর্চা গড়ার চিন্তা বিএনপির নেই। তবে অন্যান্য দলকে কাছে টানার কৌশল হিসেবে চারদলীয় জোটে জামায়াতের প্রভাব কমানোর কথা ভাবা হচ্ছে।
অবশ্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের দাবি, জামায়াতের বিষয়ে বিএনপির মধ্যে কোনো সমস্যা নেই। ঐক্য গঠনের ক্ষেত্রে যদি কোনো দলের আপত্তি থাকে, তা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান হবে।
দলীয় সূত্রগুলো জানায়, সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা বাংলাদেশ, কাদের সিদ্দিকীর কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, অলি আহমদের লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি) ইতিমধ্যে বিএনপির সঙ্গে পৃথক বৈঠকে জামায়াতের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছে। একই আপত্তি আ স ম আবদুর রবের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), মেজর জেনারেল (অব.) মুহাম্মদ ইবরাহিমের বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টিরও।
কাদের সিদ্দিকী গত শনিবার রাতে খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠকে বলেছেন, মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের সঙ্গে থেকে জোট গঠনে তাঁর দলের অসুবিধা আছে।
ওই বৈঠকসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, কাদের সিদ্দিকীর আপত্তির বিষয়ে সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন খালেদা জিয়া। তবে তিনি কী করবেন, সে ব্যাপারে কিছু বলেননি।
এলডিপির যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাত হোসেন সেলিম প্রথম আলোকে বলেন, মুক্তিযুদ্ধে জামায়াতের অবস্থান সবার জানা। তারা এরশাদ সরকারের সময় বেইমানি করে নির্বাচনে গেছে। তাই এদের সঙ্গে জোট করা যায় না। জামায়াত থাকলে এলডিপি বিএনপির সঙ্গে জোটে যাবে না, তবে যুগপ ৎ আন্দোলনে থাকবে।
এ ছাড়া সরকারবিরোধী আন্দোলনে যুগপ ৎ কর্মসূচি বা রাজনৈতিক ঐক্যের লক্ষ্যে বিএনপি বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি), বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলসহ (বাসদ) কয়েকটি বামপন্থী দলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তারাও জামায়াতের ব্যাপারে জোর আপত্তি করেছে বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ প্রথম আলোকে বলেন, চলমান আন্দোলনকে বেগবান করতে বিএনপির নেতৃত্বে অন্য দলগুলোকে নিয়ে একটি বৃহ ৎ ঐক্য প্রতিষ্ঠা হবে। এ জন্য যা করার, বিএনপি তা করবে। তাঁর দাবি, আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন দলের মধ্যে সমঝোতা প্রতিষ্ঠা হবে প্রথম আলো

প্রধানমন্ত্রীর এই ক্ষমা বৈধ নয়

‘তিনি একজন আইনজীবী হয়ে কীভাবে একজন আইনজীবীর খুনিকে ক্ষমা করতে পারলেন?’
—বেগম নুরুল ইসলাম

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত হাটে হাঁড়ি ভেঙেছেন। তিনি আমাদের জানিয়েছেন, আইনজীবী নুরুল ইসলাম হত্যা মামলায় দণ্ডিত আসামি বিপ্লবের দণ্ড মওকুফের ক্ষেত্রে নিয়ম মানা হয়নি। আইনমন্ত্রী তাঁকে জানিয়েছেন যে এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। সরকার পরিচালনার রুলস অব বিজনেসে লেখা আছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ৪৯ অনুচ্ছেদ-সংক্রান্ত বিষয় প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির কাছে পেশ করবে। তবে এ ধরনের নথি শুরুতেই ভেটিংয়ের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে যায়। প্রথমেই বলে নিই, এটা রাষ্ট্রপতির ক্ষমা নয়। মন্ত্রিসভার ক্ষমা নয়। ক্ষমাহীন এই ক্ষমার দায় প্রধানমন্ত্রীর। পত্রিকাগুলো যদি বড় বড় শিরোনাম করত কার্যত প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমা, সেটা বেশ হতো। সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল মাহমুদুল ইসলাম কনস্টিটিউশনাল ল অব বাংলাদেশ বইয়ের ৩২২ পৃষ্ঠায় ভারতের সুপ্রিম কোর্টের রায়ের বরাতে লিখেছেন, ‘অন্যান্য ক্ষমতার মতো এই ক্ষমতাও রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে প্রয়োগ করতে হয়।’ সুতরাং এই ক্ষমা রাষ্ট্রপতির নয়।
একটি মিল আছে। ২০০৫ সালে সুইডেনপ্রবাসী জিন্টুর মৃত্যুদণ্ড মওকুফের ঘটনায় সাবেক আইনমন্ত্রী মওদুদ আহমদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দোহাই দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের আইনমন্ত্রীও তা-ই দিলেন। কিন্তু সংসদীয় গণতন্ত্রে এভাবে দায় এড়ানো সম্ভব নয়। বিপ্লব ও জিন্টুদের ক্ষমার আসল দায় প্রধানমন্ত্রীর, সংসদের কাছে যৌথভাবে মন্ত্রিসভার।
সুরঞ্জিতের সুরে মওদুদও বলেছেন, রাষ্ট্রপতিকে দায়ী করা যাবে না। এ দাবি সঠিক, কিন্তু নিরঙ্কুশ অর্থে নয়। কারণ, সংবিধান এ-সংক্রান্ত নথিতে ‘মেকানিক্যালি’ সই দিতে তাঁকে বলেনি। যদি জানতাম, তিনি পুনর্বিবেচনার জন্য নথিটি অন্তত একবার ফেরত পাঠিয়েছিলেন কিংবা দ্য স্মিথ বর্ণিত সতর্ক ও পরামর্শ দেওয়ার ঐতিহ্যগত দায়িত্ব পালনে ব্রতী ছিলেন, তাহলে কথা ছিল। অবশ্য এই রাষ্ট্রপতি রাবারস্ট্যাম্প হিসেবে নিজেকে ঘোষণা দিয়েছিলেন। শপথ নেওয়ার আগে তিনি বলেছিলেন, তাঁর নেত্রী কোনো ভুল করতে পারেন না। তাঁর সামনে বিকল্প ছিল। মৃত্যুদণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন বা আরও লঘু দণ্ড দিতে পরামর্শ দিতে পারতেন। দোষীসাব্যস্তকরণ ও দণ্ড দুটো আলাদা বিষয়। তাই ক্ষমা শর্ত ও নিঃশর্ত হতে পারে। শুধু দণ্ড ক্ষমা করলে আইনের চোখে দণ্ডিতের ‘কনভিকশন’ থেকে যাবে। এ ক্ষেত্রে কী ঘটেছে, তা জানি না।
এটি মূলত ব্রিটেনের অনুসৃত ‘রয়্যাল প্রিরোগেটিভ’ থেকে এসেছে। ৪৯ অনুচ্ছেদে বাংলায় ‘অধিকার’ লেখা হলেও ইংরেজিতে কথাটি প্রিরোগেটিভ বা বিশেষাধিকার। ব্রিটেন, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো বহু দেশের সংবিধানে এটা আছে এবং মূলত একই অর্থে ও ব্যাপ্তিতে। আমাদের জানামতে, এই বিষয়ে বাংলাদেশের উচ্চ আদালতের কোনো রায় নেই।
ভারতে হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্ট বিপুলসংখ্যক মামলার বৈধতা পরীক্ষা করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশে তা ঘটেনি। আমাদের আদালত সম্ভবত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের প্রথম আলোতে প্রকাশিত বক্তব্যের সূত্র ধরেই সুয়োমোটো রুল জারি করতে পারেন। কোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি রিট করতে পারেন। নুরুল ইসলামের স্ত্রীর সেই অধিকার তো অবশ্যই রয়েছে। সেনগুপ্তের ধন্যবাদ প্রাপ্য। কারণ, এই সিদ্ধান্ত যে চ্যালেঞ্জযোগ্য, সেই সত্য তিনি অকপটে উচ্চারণ করেছেন।
স্মরণাতীত কাল থেকে ব্রিটেনে এই রয়্যাল প্রিরোগেটিভের প্রয়োগ ঘটে আসছে। এর মূল ভিত্তি হচ্ছে নৈতিকতা ও জনকল্যাণ। বিপ্লবকে দেওয়া ফাঁসির রায় যে ভুল ছিল, সে দাবি কিন্তু সরকার এখনো করেনি। প্রাচীন ব্রিটেনের এক রাজা ক্ষমার আবেদন পেয়ে ভুলক্রমে তা আদালতে পাঠান। প্রধান বিচারপতি পুনঃ শুনানি করেন। এতে দণ্ডিত ব্যক্তি নির্দোষ প্রমাণিত হন। আদালতের মারাত্মক কোনো বিচ্যুতি বা ভুল শোধরাতেই এই বিধান রাখা। কোনো প্রধানমন্ত্রী বা রাষ্ট্রপতির খেয়ালখুশির প্রতিফলন ঘটানোর কোনো সুযোগ নেই। ভারত বহুকাল এই ঘোরের মধ্যে থেকেছে যে রাষ্ট্রপতির এই বিশেষাধিকার সংসদের আইন দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করা চলে কি না। আদালত এর বৈধতা পরীক্ষা করতে পারেন কি না। এরপর ১৯৬১ সালে নানাভাতি মামলায় ভারতের সুপ্রিম কোর্ট প্রথমবারের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠের রায়ে স্বীকার করেন যে রাষ্ট্রপতির এই ক্ষমতা বেড়ি পরানোর ঊর্ধ্বে নয়। ব্রিটিশ আইনবিদ ব্লাকস্টোন ও তাঁদের আদালত মেনেছেন যে সংসদ ‘রয়্যাল প্রিরোগেটিভ’ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
আমেরিকান জুরুসপ্রুডেন্স বইয়ে লেখা আছে, ‘প্রত্যেক সভ্য দেশ স্বীকৃতি দেয় যে ক্ষমার ক্ষমতা উপযুক্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে অনুগ্রহ ও মানবতার নিরিখে প্রয়োগ করা হবে। এ ধরনের ক্ষমতার বিধান ছাড়া একটি দেশ তার রাজনৈতিক নৈতিকতার দৃষ্টিকোণ থেকে সবচেয়ে অযথার্থ ও ঘাটতিপূর্ণ থেকে যাবে।’ বাংলাদেশের নৃপতিরা যখন ৪৯ অনুচ্ছেদের দিকে চোখ তুলে তাকান, তখন তাঁদের বিবেক কী বলে? ‘রাজনৈতিক নৈতিকতা’ বলে কিছু কি অবশিষ্ট আছে?
মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট ১৯২৭ সালে বিডল বনাম পেরোহিচ মামলায় বিচারপতি হোমস এই ক্ষমতার অন্তর্নিহিত দর্শন সম্পর্কে বলেন, ‘ক্ষমা প্রদর্শন ঘটনাচক্রে ক্ষমতায় থাকা কোনো ব্যক্তির ব্যক্তিগত করুণা প্রদর্শনের বিষয় নয়। এটা সাংবিধানিক স্কিমের অংশ। যে ক্ষেত্রে এটা মঞ্জুর করা হয়, সে ক্ষেত্রে চূড়ান্ত কর্তৃপক্ষের এই ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটতে হবে যে একটি রায়ে, যা নির্ধারিত হয়েছে, তার চেয়ে ক্ষমা করার মধ্য দিয়ে জনকল্যাণ অধিকতর উত্তম রূপে নিশ্চিত হবে।’ বিপ্লব-জিন্টুরা যেভাবে ক্ষমা পাচ্ছেন, তার নৈতিকতা ও বৈধতা বিচারপতি হোমসের ওই উক্তির আলোকে যাচাইযোগ্য। এবং আমাদের এটা বিশ্বাস করার সংগত কারণ আছে যে লক্ষ্মীপুর আওয়ামী লীগের সভাপতির আবেদনে বিপ্লবকে ক্ষমা প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির ‘ব্যক্তিগত করুণা’। এর সঙ্গে জনকল্যাণের কোনো সম্পর্ক নেই। বরং এই ক্ষমা দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের তথাকথিত ‘প্রয়োজনীয় অশুভ প্রক্রিয়া’কে আরও ভয়ংকর দিকে ধাবিত করবে। খুনিরা নৃত্য করবে।
প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভানেত্রী যাঁর মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করেছেন, সেটা দৃশ্যত আদালতের ভুল রায়ে একজন নিরীহ ব্যক্তির মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তি নয়। বিপ্লব আরও দুটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত। আইনের প্রতি তাঁর কখনো শ্রদ্ধা ছিল, এর কোনো প্রমাণ আমরা পাই না। একটানা ১০ বছরের বেশি সময় বিপ্লব আইনের চোখে পলাতক ছিলেন। আদালতে তাঁর তথাকথিত আত্মসমর্পণের সঙ্গে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমার সইয়ের তারিখের মধ্যে একটি যোগসূত্র স্পষ্ট।
অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, বিএনপি বা পরবর্তী সরকার এই সিদ্ধান্ত উল্টাতে পারবে কি না। নাগরিকের মনে এমন জিজ্ঞাসা খুবই স্বাভাবিক। অন্য ক্ষেত্রে তাঁরা তো এটাই দেখেন। গতকাল কথা হয় বিএনপির নিহত নেতা ও আইনজীবী নুরুল ইসলামের স্ত্রীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আইনগত সুযোগ থাকলে তিনি এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করতে প্রস্তুত। তবে তিনি গতকালই টক শোতে শুনেছেন, রাষ্ট্রপতি আইনজীবী ছিলেন। তাই তাঁর আকুল প্রশ্ন, ‘তিনি একজন আইনজীবী হয়ে কীভাবে একজন আইনজীবীর খুনিকে ক্ষমা করতে পারলেন?’
প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে আমাদের প্রতীয়মান হয়, এই ক্ষমা অবৈধ ও গুরুতররূপে সংবিধানের চেতনানাশক। বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান ও ড. আনিসুজ্জামান আইনকোষ-এ লিখেছেন, ‘একবার ক্ষমা মঞ্জুর করা হইলে আসামিকে বিচারের সম্মুখীন করা যায় না এবং দোষী সাব্যস্ত করা হইয়া থাকিলে শাস্তি প্রদান করা যায় না। অভিযুক্ত অথবা শাস্তি প্রদান করিবার বিরুদ্ধে ক্ষমাপ্রদর্শনের অজুহাত খাড়া করিবার দায়িত্ব ক্ষমাপ্রাপ্ত ব্যক্তির। যদি তিনি যতশীঘ্রসম্ভব তাহা না করেন, তবে তিনি তাহা পরিত্যাগ করিয়াছেন বলিয়া সাব্যস্ত হইবে।’ আমরা মনে করি, বিপ্লবের বাবার আবেদনটি ছিল তামাদি এবং সে কারণেই তা পরিত্যক্ত। কারণ, রায়ের পরে ‘যতশীঘ্রসম্ভব’ বলতে অর্ধযুগ পেরোনো কোনো সময়কে কল্পনাতে আনাও এক কষ্টকল্পনা।
বিপ্লবের দণ্ডের তারিখ ৯ ডিসেম্বর, ২০০৩। গত ৬ এপ্রিল বিপ্লব আত্মসমর্পণ করেন। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে আড়াই বছর হয়ে গেছে। কিন্তু বোঝাই যায়, ম্যানেজ করতে সময় লেগেছে। অনুমান করতে পারি, আবেদনটি ৬ এপ্রিলের পর করা হয়েছে। পলাতক অবস্থায় তাঁর আবেদন করার কথা নয়। অবশ্য সেটাও যদি ঘটে, অবাক হব না। জিন্টুর দণ্ড মওকুফের ঘটনায় আমরা ধারণা পেয়েছিলাম যে সুপরিকল্পিতভাবে তথ্য গোপন করা হয়েছিল। বিপ্লবের ক্ষেত্রে সে রকম কিছু শুনতে আগ্রহী ছিলাম। কিন্তু বাংলাভিশনের এক আলোচনায় মাহমুদুর রহমান মান্না আমাকে প্রশ্ন করেন, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম দলের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে উল্লেখ করেন যে এই দণ্ড মওকুফে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী তাঁর সঙ্গে একমত হননি। বরং তা ৎ ক্ষণিক তিনি নাকি সিদ্ধান্তের যথার্থতা পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
প্রশ্ন হচ্ছে, দণ্ড মওকুফের এই সিদ্ধান্ত বাতিল বা প্রত্যাহার করা সম্ভব কি না। দৃষ্টান্ত বিরল। তবু খুঁজে দু-একটি পেয়েছি এবং আমাদের বিবেচনায় তা অকাট্য। ১৯৫৩ সালের ফেব্রুয়ারি। শাহবাজ নামের এক ব্যক্তির খুনের দায়ে মৃত্যুদণ্ড হলো। লাহোর হাইকোর্টে আপিল হলো। দণ্ড হ্রাস পেয়ে তিনি যাবজ্জীবনপ্রাপ্ত হন। ১৯৫৩ সালের শেষ দিকে অভিযুক্ত ব্যক্তির ভাই পাঞ্জাব সরকারের কাছে দণ্ড মওকুফের আবেদন জানান। ১৯৫৪ সালের আগস্টে প্রাদেশিক সরকারের আদেশে ১৪ আগস্ট থেকে দণ্ড মওকুফ কার্যকর করার আদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ১৩ আগস্ট অর্থা ৎ ওই আদেশ কার্যকর হওয়ার আগেই পাল্টা আদেশ দিয়ে পূর্ববর্তী দণ্ড মওকুফের আদেশ বাতিল করা হয়। ফেডারেল কোর্টের কাছে আবেদনকারী এই নালিশ নিয়ে যান যে প্রাদেশিক সরকার একবার দণ্ড মওকুফ করে তা আর বাতিল করতে পারে না। এই যুক্তির পক্ষে ভেংকট যশোবন্ত দেশপান্ডে বনাম সম্রাট (দ্বিতীয়) মামলার দৃষ্টান্ত হাজির করা হয়। এতে অপরাধীদের দণ্ড মওকুফের ঘোষণা একইভাবে একটি নির্দিষ্ট তারিখ থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। এ সময়ে নাগপুর সরকারের আইন বিভাগের একজন কর্মকর্তা কারা কর্তৃপক্ষের কাছে এক চিঠি দিয়ে জানান, ওই দণ্ডিতদের মুক্তি দেওয়া যাবে না। পরে নাগপুরের ফুল বেঞ্চ এ মর্মে একমত হন যে ‘কাউকে ক্ষমা প্রদর্শনের পরে তা প্রত্যাহার করে নেওয়া যায় কি না, তা সংশয়পূর্ণ। তবে তেমন সুযোগ যদি থাকেও, তাহলে একটি নির্দিষ্ট পর্যায়ের পর সে ক্ষমতা সরকারের থাকে না।’ এ রায়ে দণ্ডিতরা মুক্তি পেয়েছিলেন।
বিপ্লবের ক্ষেত্রে নিশ্চয় ‘সেই নির্দিষ্ট সময়’ পার হয়ে যায়নি। নাগপুরের দণ্ডিতরা বিপ্লবের মতো দুর্ধর্ষও ছিলেন না। তাঁরা জোড়া যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্ত ছিলেন না। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের ফেডারেল কোর্ট শাহবাজ মামলায় কী বলেছিলেন, সেটা প্রাসঙ্গিক। পাকিস্তানের ফেডারেল কোর্ট দেখেন, পাঞ্জাব সরকার দণ্ড মওকুফের সিদ্ধান্ত কার্যকর করার নির্দেশও দেয়নি। এমনকি নির্দিষ্ট তারিখের আগেই তারা পুনর্বিবেচনা করেছে। দণ্ড মওকুফের সিদ্ধান্ত বাতিল তাই আইনের চোখে বৈধ।
এই যুক্তির সপক্ষে আমাদের বরেণ্য বিচারকদের রায়ও আছে। বিচারপতি মোর্শেদ, বিচারপতি সাত্তার ও বিচারপতি সায়েমের সমন্বয়ে গঠিত পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টের ফুল বেঞ্চ ১৯৬৩ সালে বহুল আলোচিত কর্নেল ভট্টাচার্যের মামলার রায় দিতে গিয়ে ওই শাহবাজ ও দেশপান্ডে মামলার রায় বিবেচনায় নেন। এবং তাঁরা এ সম্পর্কে একটি অভিন্ন সিদ্ধান্তে পৌঁছান। আর তা হলো, সরকার কারও দণ্ড মওকুফ করে তা বাতিল করতে পারে। তবে অসময়ে বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না। সুতরাং আমরা দেখি রাষ্ট্রপতির এই ক্ষমতার প্রয়োগ প্রত্যাহারযোগ্য। আইনজীবী রাষ্ট্রপতি সেটা অন্তত বুঝবেন।
আইন মন্ত্রণালয়ের ভেটিং না থাকা, রায়ের অর্ধযুগ পরে ক্ষমার আবেদন এবং সর্বোপরি রায় প্রদানে কোনো গলদ না থাকা ইত্যাদি কারণে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমা ঘোষণার সিদ্ধান্ত বৈধ বলে প্রতীয়মান হয় না। আর সে কারণেই আমরা তা প্রত্যাহারযোগ্য মনে করি। যদি সেটা না করা হয়, তাহলে বাকি রইল আদালতের শরণাপন্ন হওয়া। টিভির টক শোতে অনেককে দেখি এ নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে। মাহমুদুল ইসলামের মতে, ‘মেরিটে সাংবিধানিক ক্ষমতার প্রয়োগ বিচারিক তদন্তের বাইরে। কিন্তু আইনের শাসন যখন সাংবিধানিক ম্যান্ডেট, তখন ক্ষমতার কোনো প্রয়োগই একনায়কসুলভ বা বৈষম্যমূলক হতে পারে না। একনায়কসুলভ বা খেয়ালখুশিমতো সিদ্ধান্ত বাতিল।’ এই ক্ষমা সন্দেহাতীতভাবে বৈষম্যমূলক। এবং সে কারণে তা আদালতের তদন্তযোগ্য।
ভারতের খ্যাতিমান বিচারপতি কৃষ্ণা আয়ারের একটি উক্তি দিয়ে শেষ করি। ১৯৯৮ সালে শরণ সিং বনাম উত্তর প্রদেশ মামলায় তিনি বলেন, ‘কোনো মুখ্যমন্ত্রীর খেয়াল চাপল তিনি তাঁর জন্মদিনে ক্ষমা করে জেলখানা খালি করবেন, সেই পাগলামি মেনে নেওয়া সংবিধানের প্রতি চরম সন্ত্রাস।’
মিজানুর রহমান খান: সাংবাদিক।
mrkhanbd@gmail.com
মিজানুর রহমান খান  প্রথম আলো

ঢাকায় সোনিয়া গান্ধী

শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভারতের কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে স্বাগত জানান সায়ম� শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভারতের কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে স্বাগত জানান সায়মা হোসেন
ছবি: হাবিবুর রহমান
ভারতের কংগ্রেস পার্টির সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী গতকাল রোববার রাতে ঢাকায় এসে পৌঁছেছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে দুই দিনের সফরে তিনি ঢাকা এলেন।
সোনিয়া গান্ধী ভারতের ক্ষমতাসীন জোট সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চার (ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স—ইউপিএ) চেয়ারপারসন। আজ সকালে রূপসী বাংলা হোটেলে অটিজম-বিষয়ক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন তিনি। বিকেলে বঙ্গভবনে ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে দেওয়া বিশেষ সম্মাননা গ্রহণ করবেন তাঁর পুত্রবধূ সোনিয়া গান্ধী। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ইন্দিরা গান্ধীকে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সম্মাননা’ (মরণোত্তর) পদক দেওয়া হচ্ছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সোনিয়াকে বহনকারী ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ বিমান গতকাল রাত আটটা ৪৫ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এ বি তাজুল ইসলাম। এ সময় বিমানবন্দরে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা হোসেন ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রাণ গোপাল দত্ত।
সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে ঢাকায় এসেছেন ভারতের গৃহায়ণ, দারিদ্র্য বিমোচন ও সংস্কৃতিমন্ত্রী কুমারী সাইলেজা।
বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে সোনিয়া গান্ধী সরাসরি সোনারগাঁও হোটেলে যান। বাংলাদেশ সফরের সময় তিনি এখানেই থাকবেন।
দিনের কার্যসূচি: আজ সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে দিনের কার্যসূচি শুরু করবেন সোনিয়া গান্ধী। সাভার থেকে তিনি রূপসী বাংলা হোটেলে অটিজম-বিষয়ক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে যোগ দেবেন। দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সেখানে সৌজন্য সাক্ষা ৎ করবেন। পরে তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষা ৎ করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি। বিকেলে তিনি ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শন করবেন। এরপর সোনিয়া গান্ধী বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের কাছ থেকে ইন্দিরা গান্ধীর সম্মাননা গ্রহণ করবেন। সেখান থেকে তিনি রূপসী বাংলা হোটেলে তাঁর সম্মানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া নৈশভোজে যোগ দেবেন।
আজ রাত আটটা ৪৫ মিনিটে সোনিয়া গান্ধীর দিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে।
বঙ্গভবনের প্রস্তুতি: বাসস জানায়, মহান মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় অবদানের জন্য ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে সম্মাননা জানাতে বঙ্গভবনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের কাছ থেকে ইন্দিরা গান্ধীর পক্ষে বিদেশিদের জন্য বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সম্মাননা’ (মরণোত্তর) পদক গ্রহণ করবেন তাঁর পুত্রবধূ সোনিয়া গান্ধী।
জানা গেছে, বিকেল সাড়ে পাঁচটায় বঙ্গভবনের দরবার হলে এক ঘণ্টার এ অনুষ্ঠান চলবে। এতে দেশি-বিদেশি সাত শতাধিক অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করবে বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতার।
‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সম্মাননা’ হিসেবে ১৮ ক্যারেটের ২০০ ভরি ওজনের স্বর্ণ দিয়ে তৈরি পদক ও তিন পৃষ্ঠার একটি মানপত্র দেওয়া হবে। সৌহার্দ্য, শান্তি ও অর্জনের প্রতীক হিসেবে কদমগাছের নকশাসংবলিত ষোড়শ শতাব্দীর টেরাকোটার আদলে তৈরি পদকের নকশা করেছেন শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী ও হাশেম খান।
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ইন্দিরা গান্ধীর দুর্লভ কিছু মুহূর্তের সাক্ষ্য নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হবে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে ইন্দিরা ছিলেন সংকল্পবদ্ধ: একাত্তর সালে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ জেনারেল জ্যাক জেকব গতকাল প্রথম আলোকে পাঠানো এক ই-মেইল বার্তায় বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের পুরো সময় জুড়ে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার স্বাক্ষর রাখেন। বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত হওয়া এবং সব থেকে বেশি গৌরব তাঁরই প্রাপ্য। কারণ যে করেই হোক, বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশের অভ্যুদয় নিশ্চিত করতে তিনি ছিলেন দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।
জেকবের মতে, ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অমিততেজ, সাহস ও দৃঢ়তা প্রদর্শন করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা তাঁর শ্রেষ্ঠ কীর্তি।
জেনারেল জ্যাক জেকব বলেন, ‘বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অসমসাহসিকতায় অর্জিত স্বাধীনতার ৪০তম বছরে ইন্দিরা গান্ধীর পক্ষে তাঁরই পুত্রবধূ সোনিয়া গান্ধী যে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা গ্রহণ করতে যাচ্ছেন, তা জেনে আমি আনন্দিত।’
সংশোধনী: গতকাল প্রথম আলোর শেষ পৃষ্ঠায় ‘সোনিয়া গান্ধী আজ আসছেন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে ‘বন মন্ত্রণালয়ের কাছে মজুদ থাকা প্রায় ৫০ বছরের পুরোনো কাঠ ব্যবহূত’ ছাপা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ওই ফ্রেমের কাঠ গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন গৃহায়ণ অধিদপ্তর সরবরাহ করেছে। অনিচ্ছাকৃত এ ভুলের জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
 প্রথম আলো

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More