Total Pageviews

Feedjit Live

Tuesday, July 12, 2011

অবৈধভাবে সরকারি গাছ কাটলেন আ.লীগ নেতা

ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলা সদরের কামারগ্রামে ইজারা নেওয়া অর্পিত সম্পত্তি থেকে গত রোববার অবৈধভাবে ১৫টি সরকারি গাছ কাটা হয়েছে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এম মোশাররফ হোসেনের নির্দেশে গাছগুলো কাটা হয়েছে।
বোয়ালমারী সদর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বন্দোবস্ত নেওয়া অর্পিত সম্পত্তি থেকে গাছ কাটার কোনো নিয়ম নেই। ওই সম্পত্তি থেকে কীভাবে গাছ কাটা হচ্ছে, তা আমার অজানা।
উপজেলা ভূমি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কামারগ্রাম মৌজার এসএ ৮৮৪, ৪২৪, ৯৬৩ ও ৯৬৮ নম্বর খতিয়ানের এসএ ৮৩৭, ৮৩৮, ৮৩৯, ৮৪০ নম্বর দাগের মোট ৫৭ শতাংশ অর্পিত সম্পত্তি গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ শ্যামল কুমার সাহার নামে বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। আশির দশক থেকে জমিটি উপজেলা কৃষি বিভাগের অধীনে নার্সারি প্রকল্পের আওতায় ব্যবহূত হয়ে আসছিল। তৎকালীন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (বর্তমানে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয়ের শস্য উৎপাদন বিশেষজ্ঞ) রফিকুল হাসান বলেন, ‘ওই জমিতে কৃষি বিভাগের অবকাঠামো ও নার্সারি প্রকল্পের আওতায় লাগানো বিভিন্ন ফলবান গাছ রয়েছে। গত বছরের গোড়ার দিকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে মাসিক উন্নয়ন ও সমন্বয় সভায় আমার আপত্তি উপেক্ষা করে জমিটি ইজারা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।’
শ্যামল কুমার সাহা বলেন, ‘উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এম মোশাররফ হোসেনের প্রতিষ্ঠিত একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের (নিউ মডেল প্রি-ক্যাডেট সুু্কুল) জন্য জমিটি ইজারা নেওয়া হয়েছে। আমি ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সহসভাপতি। কাগজ-কলমে জমিটি আমার নামে বন্দোবস্ত দেখানো হয়েছে মাত্র। কিন্তু ওই জমিতে স্থাপনা নির্মাণসহ সবকিছুই তদারকি করেন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান।’ যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে জমি থেকে গাছ কাটার কথা স্বীকার করে তিনি আরও বলেন, ‘আমাকে অন্ধকারে রেখে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান গাছগুলো কেটেছেন। এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না।’
নিউ মডেল প্রি-ক্যাডেট স্কুলের অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম বলেন, গত রোববার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও স্কুল পরিচালনা পর্ষদের সভাপতির নির্দেশে ওই জমি থেকে নয়টি ফলবান নারকেলগাছ ছাড়াও ছোট ছোট কয়েকটি ফলের গাছ কাটা হয়েছে।
উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের সার্ভেয়ার গোলাম মোর্শেদ খান বলেন, গত ৮ মে ওই জমিতে বিদ্যালয়ের জন্য একটি অস্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ এবং চার-পাঁচটি মরা নারকেলগাছ ও কয়েকটি ফলের গাছ কাটার জন্য ইজারাগ্রহীতা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর লিখিত আবেদন করেন। তিনি আরও বলেন, পরবর্তী সময়ে সরেজমিনে ওই জমিতে বিভিন্ন স্থাপনা, ৪০টি ফলবান নারকেলগাছ, ১৩টি আমগাছ, দুটি মেহগনিগাছ, একটি কাঁঠালগাছ ও একটি পোয়াগাছ দেখা গেছে। তবে ওই জমিতে কোনো মরা গাছ নেই।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) দায়িত্বে থাকা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শাব্বির ইকবাল বলেন, ‘ইজারা দেওয়া অর্পিত সম্পত্তি থেকে গাছ কাটা এবং অন্য কোনোভাবে ভূমির কাঠামো পরিবর্তন হলে ইজারা বাতিলের বিধান রয়েছে। তবে ওই জমি থেকে গাছ কাটা হচ্ছে—এ খবর আমার জানা নেই। আমি এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বলেন, ‘স্কুলের ভবন নির্মাণের সুবিধার্থে আমার নির্দেশে গাছগুলো কাটা হয়েছে।’ এ ব্যাপারে উপজেলা ভূমি কার্যালয়ে কোনো অনুমতি না নেওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি আরও বলেন, ‘ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হলে আমরা নতুন করে গাছ লাগিয়ে দেব।’

0 comments:

Post a Comment

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More