Total Pageviews

Feedjit Live

This is default featured post 1 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured post 2 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured post 3 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured post 4 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured post 5 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

Friday, September 23, 2011

 উগ্র ইহুদিবাদী ওবামা!

পরিবর্তনের অঙ্গীকার করে ক্ষমতায় এসেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বরাক ওবামা। কিন্তু গত বুধবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে তিনি যে ভাষণ দিয়েছেন, তা অনেককেই অবাক করেছে। ওই ভাষণে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বিপক্ষে তাঁর অনড় অবস্থানের কথা জানিয়ে দিয়েছেন। ইসরায়েলের জন্য ওবামার এই ‘দরদ’কে অনেকেই উগ্র ইহুদিবাদের সঙ্গে তুলনা করছেন।
বিখ্যাত মার্কিন ম্যাগাজিন ‘নিউইয়র্ক’ তাদের চলতি সংখ্যার প্রচ্ছদ প্রতিবেদনে ওবামাকে আমেরিকার ‘প্রথম ইহুদি প্রেসিডেন্ট’ হিসেবে অভিহিত করেছে। প্রতিবেদনে মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মধ্যে ওবামাকে সবচেয়ে কট্টর ইসরায়েল সমর্থক বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
জাতিসংঘে দেওয়া ভাষণে ওবামা প্রকাশ্যে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। সেই সঙ্গে দেশটির প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাসকে তিনি সরাসরি জানিয়ে দিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনের প্রস্তাবে অবশ্যই ভেটো দেবে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি ওবামার উগ্র ইহুদিবাদী মনোভাবেরই প্রতিফলন। যুক্তরাষ্ট্র এমনকি ইসরায়েলের ইহুদিরাও এতটা উগ্র মনোভাব পোষণ করেন না। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এদিক দিয়ে ওবামা তাঁর পূর্বসূরিদেরও অবাক করে দিয়েছেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টদের মধ্যে জর্জ বুশ ছিলেন ইসরায়েলের গোড়া সমর্থক। কিন্তু এবার ওবামা তাঁকেও ছাড়িয়ে গেলেন।
বিশ্লেষকেরা বলছেন, জাতিসংঘের মাধ্যমে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের বিরোধিতা করে প্রকারান্তরে ওবামা সেখানকার জনগণের ওপর ইসরায়েলের চলমান আগ্রাসনকেই সমর্থন দিলেন। তাই প্রশ্ন ওঠে, যে ওবামা পরিবর্তনের পক্ষে কথা বলেন, শান্তিতে নোবেল পেলেন, তিনি কেন ফিলিস্তিনের জনগণের ওপর অবিচার চাপিয়ে দিচ্ছেন!
বিশ্লেষকদের জুতসই উত্তর—সামনে নির্বাচন, তাই ওবামা কোনোভাবেই ইসরায়েলকে ক্ষুব্ধ করতে চান না। তা ছাড়া শিকাগোতে ওবামার কর্মজীবন কেটেছে ইহুদিদেরই সংস্পর্শে। তাঁর দলের তহবিলের অধিকাংশ অর্থই জোগান দেয় ইহুদি লবিস্ট ও শিকাগোর বর্তমান মেয়র রাহেম ইমেনুয়েল। তিনি হোয়াইট হাউসে ওবামার চিফ অব স্টাফ হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন।
তবে কোনো কোনো বিশ্লেষকের মতে, ওবামার ফিলিস্তিন বিরোধিতা কেবল অর্থের বিষয় নয়। এখানে মার্কিন রাজনীতিও জড়িত। অভ্যন্তরীণ বেশ কিছু বিতর্কিত বিষয়ে কংগ্রেসে ওবামার সমর্থন দরকার। সেসব ক্ষেত্রে ওবামা ব্যর্থ হলে, তাঁর রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা তাসের ঘরের মতো ভেঙে যেতে পারে। এমনকি মার্কিন রাজনীতিতে সক্রিয় ইসরায়েলি লবি তাঁর জীবনকে দুর্বিষহও করে তুলতে পারে।
বিশ্লেষকদের মতে, পরিবর্তনের কথা বলে ক্ষমতায় এসে ওবামা এখন যেটা করছেন, তা প্রতারণা। তিনি ন্যায়বিচারের কথা বলেন, কিন্তু অন্যায় নীতির জন্য ফিলিস্তিনকে চাপ দিচ্ছেন। কথা বলছেন নিপীড়ক ইসরায়েলের পক্ষে। তিনি স্বাধীনতার কথা বলেন, কিন্তু এখন ইসরায়েলের আগ্রাসনকে সমর্থন করছেন। এর সবকিছুই তিনি করছেন নিজের রাজনৈতিক স্বার্থে।
ইসরায়েলপন্থী ইহুদি লবিস্ট জে স্ট্রিটের মতে, ‘আমেরিকান রাজনীতিবিদেরা তাঁদের রাজনৈতিক স্বার্থে ইসরায়েলের জন্য সীমাহীন কাজ করতে পারেন।’
ইসরায়েলের জন্য নিজের স্বার্থে ওবামা না হয় একটু বেশিই করছেন! আল-জাজিরা টেলিভিশনের অনলাইন অবলম্বনে

Tuesday, September 20, 2011

পুলিশের হিসাবে ক্ষতি একশ কোটি টাকা


ঢাকা, সেপ্টেম্বর ২০ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- জামায়াতে ইসলামীর কর্মীদের সঙ্গে সোমবারের সংঘর্ষ ও ভাংচুরের ঘটনায় প্রায় একশ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ।

ওই ঘটনায় পল্টন থানায় পুলিশের দায়ের করা দুটি মামলায় ক্ষতির এই পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলার বাদী পুলিশের উপপরিদর্শক আহসান হাবিব খান দুটি এজাহারেই বলেছেন, জামায়ত-শিবির কর্মীরা সোমবার ধারালো অস্ত্র এবং বিস্ফোরক দ্রব্য নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। তারা বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে আহত করে এবং পুলিশের ও একটি পত্রিকার গাড়িসহ বেশ কয়েকটি বাহনে ভাংচুর-অগ্নিসংযোগ করে।

"এছাড়া তারা সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তিতে ভাংচুর-অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে ক্ষতিসাধন করে যাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় একশ কোটি টাকা।"

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ শটগান থেকে ৩২৬টি গুলি এবং ২৬২টি টিয়ার শেল নিক্ষেপ করে বলেও বাদী উল্লেখ করেছেন।

সোমবার ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রামেও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায় জামায়াত ও শিবির কর্মীরা। এ ঘটনায় জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম, প্রচার সম্পাদক তাসনীম আলমসহ তিন কেন্দ্রীয় নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর রাতভর অভিযান চালায় র‌্যাব ও পুলিশ। মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত ঢাকাতেই ২৬১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ওই ঘটনায় জামায়াতের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাসহ গ্রেপ্তারকৃতদের আসামি করে ঢাকা ও চট্টগ্রমে মোট ৯টি মামলা করেছে পুলিশ। এর মধ্যে ঢাকার রমনা থানায় ছয়টি এবং পল্টন থানায় দুটি মামলা হয়। এ ছাড়া চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানায় হয়েছে একটি মামলা।

পল্টন থানায় পুলিশের দায়ের করা মামলায় বলা হয়, জামায়াত-শিবিরের অনেক নেতা-কর্মী নেপথ্যে থেকে ঘটনাস্থলে সংঘর্ষে লিপ্ত কর্মীদের প্ররোচণা ও সহায়তা দিয়েছে বলে 'নির্ভরযোগ্য' সূত্রে জানতে পেরেছে পুলিশ।

পল্টন ও রমনা থানা পুলিশের আবেদনে আদালত মঙ্গলবার এ টি এম আজহারুল ইসলামসহ ১৮৩ জামায়াত নেতা-কর্মীকে চারটি মামলায় মোট ১৯ দিন করে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর রডটকম/

 তিস্তা চুক্তি বিলম্বিত হওয়ার আশঙ্কা পানিপ্রবাহের ১৫ বছরের উপাত্ত চায় ভারত

তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সই করতে বাংলাদেশের কাছে ১৯৯৫-৯৬ সাল থেকে পরবর্তী ১০-১৫ বছরের পানিপ্রবাহের উপাত্ত চেয়েছে ভারত।
পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ মো. ওয়াহিদ-উজ-জামান গতকাল মঙ্গলবার প্রথম আলোকে বলেন, ভারতের অনুরোধে সাড়া দিয়ে বাংলাদেশ শিগগিরই পানিপ্রবাহের উপাত্ত পাঠাবে।
ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্র অনুযায়ী, বাংলাদেশের ডালিয়ায় অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজ পয়েন্টের ’৯৫-৯৬ সাল থেকে পরবর্তী ১০ থেকে ১৫ বছরের ১০ দিন অন্তর পানিপ্রবাহের উপাত্ত চেয়েছে ভারত। ১৫ সেপ্টেম্বর ভারতের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম কমিশনার-১ (গঙ্গা) টি এস মেহরা যৌথ নদী কমিশনের সদস্য (জেআরসি) মীর সাজ্জাদ হোসেনকে এ ব্যাপারে চিঠি লেখেন।
তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, নতুন করে নদীর পানিপ্রবাহ বিনিময় হলে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সইয়ের প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হবে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শেষ মুহূর্তে বেঁকে বসায় মনমোহনের সফরে বহুল প্রতীক্ষিত চুক্তিটি সই হয়নি। মমতার ভাষ্য অনুযায়ী, খসড়া চুক্তি সম্পর্কে কেন্দ্রীয় সরকার তাঁকে জানায়নি। খসড়ায় বাংলাদেশকে যে পরিমাণ পানি দেওয়ার প্রস্তাব রয়েছে, তাতে বঞ্চিত হবে পশ্চিমবঙ্গ। তাই তিনি এ চুক্তির পক্ষে নন।
চিঠিতে টি এস মেহরা লিখেছেন, ‘৬-৭ সেপ্টেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরে তিস্তা ও ফেনীর অন্তর্বর্তীকালীন পানিচুক্তি সই হয়নি। যত শিগগির সম্ভব চুক্তি দুটি সইয়ের প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে যৌথ বিবৃতিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’
বাংলাদেশের জেআরসির সদস্যকে লেখা চিঠিতে ভারতের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘আপনি জানেন যে, চুক্তিটি বাস্তবায়ন করবে পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকার। তাই এ প্রক্রিয়ায় তাদের আস্থায় নেওয়াটা জরুরি। এই প্রেক্ষাপটে যত শিগগির সম্ভব ডালিয়া পয়েন্টে ’৯৫-৯৬ সাল থেকে পরবর্তী ১০-১৫ বছরের পানিপ্রবাহের উপাত্ত জানাটা জরুরি। তাই ওই সময়ে প্রতি ১০ দিন পরপর ডালিয়া পয়েন্টে তিস্তার পানি কতটা প্রত্যাহার করা হয়েছে, তা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব জানালে খুশি হব।’
টি এস মেহরার চিঠির অনুলিপি ভারতের পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একাধিক কর্মকর্তা, ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং ঢাকায় ভারতীয় হাইকমিশনে পাঠানো হয়েছে।
ভারতের এ চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে জেআরসির সদস্য মীর সাজ্জাদ হোসেন ১৯ সেপ্টেম্বর পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি লেখেন। ভারতের চিঠির সাড়া দেওয়ার অনুমতি চেয়ে তিনি ওই চিঠি লেখেন।
গতকাল সন্ধ্যায় মুঠোফোনে জানতে চাইলে ভারতের চিঠি পাওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যান মীর সাজ্জাদ হোসেন। তবে তিনি বলেন, ‘ভারত যেহেতু অনুরোধ জানিয়েছে, আমরা ডালিয়া পয়েন্টে পানিপ্রবাহের উপাত্ত তাদের পাঠাব।’
তিস্তার অন্তর্বর্তী চুক্তির খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে—দুই সরকারের পক্ষ থেকেই এমন দাবি করা হয়েছে সব সময়। তবে কি পানিপ্রবাহের উপাত্ত নিয়ে কথা হয়নি? এ প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, পানিপ্রবাহের উপাত্তের ওপর আগে খুব একটা জোর দেওয়া হয়নি। কারণ চুক্তি হবে এটা ভারত বেশ জোর দিয়েই বলছিল। তাই ভারতের কথায় ভরসা করা ছাড়া তো উপায় ছিল না।
যোগাযোগ করা হলে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আইনুন নিশাত প্রথম আলোকে বলেন, তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তির আলোচনায় দুটি অংশ রয়েছে। একটি হচ্ছে কারিগরি, অন্যটি রাজনৈতিক। কারিগরি বিষয়টি হচ্ছে কীভাবে, কোথায় ও কখন মানে কোন সময় ধরে পানির ভাগ হবে। দুই পক্ষ থেকে ধারণা দেওয়া হয়েছিল, কারিগরি বিষয়গুলো চূড়ান্ত হয়েছে। বাকি ছিল পানির হিস্যা, যা রাজনৈতিক পর্যায়ে চূড়ান্ত হওয়ার কথা। এ পর্যায়ে পানিপ্রবাহের উপাত্ত বিনিময়ের অর্থ হচ্ছে, আবার প্রথম থেকেই আলোচনা শুরু করা। ফলে স্বাভাবিকভাবেই চুক্তি সইয়ের প্রক্রিয়া দীর্ঘায়িত হবে।
তিস্তা চুক্তি চূড়ান্ত করতে মনমোহনের সফরের মাত্র দুই দিন আগে ঢাকায় সংক্ষিপ্ত সফরে আসেন ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশংকর মেনন। তিনি ওই দিন পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন এবং প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টা মসিউর রহমান ও গওহর রিজভীর সঙ্গে বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে উপস্থিত একজন এ প্রতিবেদককে ৩ সেপ্টেম্বর জানান, খসড়া অনুযায়ী ভারত গজালডোবা বাঁধের সামনে থেকে ৫০ ভাগ পানি তুলে নিয়ে বাকি পানি বাংলাদেশের জন্য ছেড়ে দেবে। প্রথমে ১৫ বছর মেয়াদি অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি হবে। পরে পানিপ্রবাহ পর্যবেক্ষণ করে একটি দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি সই হবে।

 সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখল নিয়ে গুঞ্জন

আড়াই লাখ মার্কিন তারবার্তা ফাঁস করেছে উইকিলিকস। মার্কিন কূটনীতিকদের ভাষ্যে এসব তারবার্তায় বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশের রাজনীতি ও ক্ষমতার অন্দরমহলের খবর

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, জ্বালানি ঘাটতি এবং বন্যাদুর্গতদের সাহায্যার্থে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ‘ব্যর্থতার’ পরিপ্রেক্ষিতে ২০০৭ সালের প্রথম থেকেই গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল দেশের রাজনৈতিক ও সরকারব্যবস্থায় পরিবর্তন আসছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ সম্প্রসারণ থেকে শুরু করে সেনাবাহিনীর সরাসরি ক্ষমতা গ্রহণের কথা তখন বলা হচ্ছিল। কারাবন্দী দুই নেত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার ভাগ্যে কী ঘটতে যাচ্ছে, তা-ও পরিষ্কার নয়। এ অবস্থায় গুজব ছড়িয়ে পড়ে, রাজনৈতিক কাঠামোয় একটি বড় ধরনের পরিবর্তনের পরিকল্পনা করা হচ্ছে সেনানিবাসে।
ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসের তৎকালীন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স গীতা পাসি ওই সময় ওয়াশিংটনকে এসব কথা জানান। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভুল পদক্ষেপের কারণে আরেকটি রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হতে পারে। তবে ওই অবস্থায় সেনাবাহিনী কোনো জোরালো পদক্ষেপ নিতে পারে বলে তাঁর মনে হয়নি। ২০০৭ সালের ১৬ আগস্ট গীতা পাসির পাঠানো ওই তারবার্তা গত ৩০ আগস্ট উইকিলিকসের ফাঁস করা বার্তাগুলোর একটি।
তারবার্তায় বলা হয়, ওই গুঞ্জন নিয়ে সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ফারুক সোবহানের সঙ্গে কথা বলেন দূতাবাসের কর্মকর্তা। তাঁদের মত ছিল, সেনাবাহিনীর সক্রিয় হওয়ার একটি সম্ভাব্য কারণ হতে পারে শেখ হাসিনাকে মুক্তি দেওয়া। এ প্রসঙ্গে ফারুক সোবহান বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অনেক মামলা বিচারাধীন।
তারবার্তার ভাষ্য অনুযায়ী, ফারুক সোবহান বলেন, সেনাপ্রধানের চারপাশে ঘিরে আছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আতাউর রহমানের মতো স্বনিয়োজিত কিছু উপদেষ্টা। তাঁরা বিভিন্ন ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত হওয়ার জন্য সেনাপ্রধানকে উৎসাহিত করছেন। সব মিলিয়ে এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাইছেন, যেখানে মনে হবে কেবল সেনাপ্রধানই দেশকে ‘রক্ষা’ করতে পারেন।
তবে ফারুক সোবহান স্বীকার করেন, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, জ্বালানি ঘাটতি, বন্যাসহ অনেক সমস্যাই মোকাবিলা করতে হচ্ছে তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে। প্রধান উপদেষ্টার চেয়ে সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদের অধিকতর সক্রিয়তা নিয়ে যেসব আলোচনা হচ্ছিল, সে সম্পর্কে তিনি বলেন, সেনাপ্রধানই সরকারের মূল দায়িত্বে—এ ধারণা যে সত্যি নয়, তা বোঝানোর জন্য গণমাধ্যমে আরও বেশি কথা বলার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
তারবার্তায় বলা হয়, এ বিষয়ে মার্কিন কর্মকর্তারা ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ টি এম মো. আমিনের সঙ্গেও কথা বললে তাঁর সোজাসাপ্টা প্রশ্ন, ‘দেশের সব সমস্যার বোঝা কেন আমাদের ঘাড়ে নিতে যাব?’ তাঁর মতে, সেনাবাহিনী এখন যে কাজ করছে তার জন্য তারা একদিন বীর হিসেবে বিবেচিত হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মতো সেনাবাহিনীও ২০০৮ সালের শেষ নাগাদ নির্বাচন দেখতে চায়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফারুক সোবহান প্রথম আলোর কাছে তারবার্তার বক্তব্য অস্বীকার করে বলেন, ‘তাদের সঙ্গে অবশ্যই কথা হয়েছে। কিন্তু এখানে আমাকে ভুলভাবে উদ্ধৃত করা হয়েছে।’

মার্কিন দূতাবাসকে কারা মহাপরিদর্শক: ভিআইপি বন্দীদের নিয়ে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল

সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেপ্তার হওয়া ভিআইপি বন্দীদের নিয়ে ‘কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি’ হয়েছিলেন তৎকালীন কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাকির হাসান। বিশেষ করে, সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে নিয়ে। কারা মহাপরিদর্শক মার্কিন দূতাবাসকে এ কথা জানিয়েছিলেন।
২০০৭ সালের শেষ দিকে ঢাকায় নিযুক্ত একজন মার্কিন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকে জাকির হাসান এ কথা বলেন। উইকিলিকসের ফাঁস করা মার্কিন তারবার্তায় এ তথ্য পাওয়া গেছে।
তারবার্তায় বলা হয়, কারা মহাপরিদর্শক জাকির হাসান বলেন, দুই সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে বিশেষ সতর্ক থাকতে হয়, যা তাঁকে কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়। তিনি জানান, দুই নেত্রীকে দেখতে তিনি সাব-জেলে গিয়েছিলেন। এটা খুবই স্বাভাবিক বিষয় যে, দুই নেত্রী কারাগারে থাকতে কখনোই ভালো বোধ করবেন না। অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও কারা কর্তৃপক্ষ তাঁদের প্রতি সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার চেষ্টা করে।
তারবার্তায় বলা হয়, শেখ হাসিনার একজন আইনজীবী দাবি করেন, জেল কোড অনুযায়ী তিনি (শেখ হাসিনা) মুঠোফোন ব্যবহার করতে পারবেন। কারা মহাপরিদর্শক জানান, তিনি আইনজীবীর এমন দাবি নাকচ করে দেন। হাসিনার ওই আইনজীবীর যুক্তি, জেল কোড অনুযায়ী বন্দীরা ‘মৌখিকভাবে যোগাযোগ’ করতে পারে। এ যুক্তিতে শেখ হাসিনা মুঠোফোন ব্যবহার করতে পারেন। জাকির হাসান ওই যুক্তি খণ্ডন করে বলেন, ‘মৌখিক যোগাযোগ’ বলতে সামনাসামনি কথা বলাকে বোঝানো হয়েছে, ফোনের মাধ্যমে নয়। কোনো বন্দীরই ফোন ব্যবহারের নিয়ম নেই।
কারা মহাপরিদর্শক জানান, মানবাধিকারকর্মী সিগমা হুদা কারারক্ষীদের ঘুষ দিয়ে ফোন ব্যবহার করেন। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছিলেন। পরে তাঁর নির্দেশে ওই ফোন এবং সংশ্লিষ্ট কারারক্ষীদের সরিয়ে দেওয়া হয়। কারাগারে সিগমা হুদার প্রতি যথেষ্ট মনোযোগ না দেওয়ার কথা অস্বীকার করে জাকির হাসান বলেন, তাঁর (সিগমা) প্রতি কারা কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় নজর ছিল। সিগমা হুদা তাঁর আইনজীবীদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কথা বলেছেন, চিকিৎসার জন্য সুযোগ-সুবিধাও পেয়েছেন।
তারবার্তায় বলা হয়, সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে কাজ করতে গিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন কারা মহাপরিদর্শক জাকির হাসান। তিনি জানান, বিগত জোট সরকারের আমলে তিনি কোনো কাজের জন্য সরাসরি তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারতেন, কিন্তু এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দীন আহমদের অধীনে। কারা মহাপরিদর্শক হলেও খুব সহজে তিনি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন না। এর ফলে আগে কোনো কাজ কয়েক দিনে করতে পারলেও এখন একই কাজের জন্য কয়েক সপ্তাহের প্রয়োজন হয়।
তারবার্তায় বলা হয়, ব্রিগেডিয়ার জাকির হাসান জানান, ওই সময়ে সারা দেশের কারাগারের ধারণক্ষমতার চেয়ে বন্দীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন গুণ বেশি ছিল। তিনি আরও জানান, ২০০৫ সালে কারা মহাপরিদর্শক হিসেবে যোগ দেওয়ার পর বিভিন্ন সংস্কার করেন তিনি। কারাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির বিষয়টি জানতে পেরে কারাগারের মধ্যে তিনি গোয়েন্দা সার্ভিস গঠন করেন। এ সার্ভিসের মাধ্যমে কারাগারের অবস্থাও পর্যবেক্ষণ করা হতো।
কারা মহাপরিদর্শক জানান, কারাগারে বিভিন্ন পণ্য সরবরাহের জন্য একটি সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে। কয়েকজন সাংসদ ওই সিন্ডিকেটে জড়িত ছিলেন। জানা গেছে, সিন্ডিকেট ভাঙায় ক্ষুব্ধ সাংসদেরা কারা মহাপরিদর্শক পদ থেকে জাকির হাসানকে সরিয়ে দিতে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছিলেন। কারাগারে ঘুষ ও ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ হওয়ায় কারারক্ষী ও কর্মকর্তাদের অনেকে ক্ষুব্ধ ছিলেন। কারা মহাপরিদর্শককে সরিয়ে দেওয়ার জন্য তাঁরাও তৎপর ছিলেন।

Sunday, September 18, 2011

 ‘বাংলা ভাইয়ের সহযোগীর মুক্তির ব্যবস্থা করেন তারেক রহমান’

তারেক রহমান তারেক রহমান
উগ্রপন্থী দল জেএমবি নেতা সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইয়ের সহযোগী খামারু আটক হওয়ার পর তাঁর মুক্তির ব্যবস্থা করেছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান। তাঁর হস্তক্ষেপে খামারুকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎ ফুজ্জামান বাবর। উইকিলিকসের ফাঁস করা বার্তা অনুযায়ী, ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের তখনকার চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স জুডিথ চামাসকে একথা জানান প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল সিদ্দিকী।
দূতাবাসের তারবার্তায় বলা হয়, ২০০৫ সালের ১৪ ডিসেম্বর চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স জুডিথ চামাসের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় মুখ্য সচিব কামাল সিদ্দিকীর। পরদিন ১৫ ডিসেম্বর ওয়াশিংটনে গোপন তারবার্তাটি পাঠান চামাস।
তারবার্তার তথ্য অনুযায়ী, কামাল সিদ্দিকী মার্কিন কূটনীতিককে জানান, জেএমবি নেতা খামারুকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর ছেলে তারেক রহমানের হস্তক্ষেপে তাঁকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর। ভূমি প্রতিমন্ত্রী রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর পরামর্শে তারেক রহমান এ কাজ করেছেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব।
কামাল সিদ্দিকী মার্কিন দূতাবাসকে বলেন, জেএমবির বিষয়ে সরকার ভুল পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকার জেএমবির সম্ভাব্য হুমকির বিষয়টি অনুধাবন করতে পারছে না। বিএনপির কিছু প্রভাবশালী নেতা জেএমবির বড় বড় সন্ত্রাসীকে নিরাপত্তা দিচ্ছেন।
কামাল সিদ্দিকী বলেন, জেএমবির পক্ষে যাঁরা কাজ করছেন তাঁদের বেশির ভাগ একসময় জামায়াতে ইসলামীর সদস্য ছিলেন। জামায়াত বিএনপির সঙ্গে যোগ দেওয়ার পর তাঁরা দল ছেড়ে দেন। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আরও বলেন, ‘এ নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই যে কিছু বিদেশিও জেএমবিকে সহযোগিতা করছে।’
মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স কামাল সিদ্দিকীকে বলেন, জেএমবির সঙ্গে ভারত কিংবা আওয়ামী লীগের যোগসাজশের ঢালাও অভিযোগ তোলায় সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশ সরকারের বিশ্বাসযোগ্যতা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ দিয়েই কেবল সরকারের অবস্থান মূল্যায়ন করা হবে। যেমন জেএমবির বড় নেতাদের গ্রেপ্তারে সরকারের সক্ষমতা, ভবিষ্যৎ হামলা প্রতিরোধ এবং জেএমবির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার জন্য ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা ইত্যাদি বিবেচনা করা হবে। জঙ্গিবাদবিরোধী প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারকে সহযোগিতা করতে চায় বলে জানান মার্কিন কূটনীতিক। তবে তিনি বলেন, জেএমবির বিষয়টি তদন্তে যুক্তরাষ্ট্র কারিগরি সহযোগিতার যে প্রস্তাব দিয়েছে তা গ্রহণে বাংলাদেশ সরকার অনাগ্রহ দেখিয়েছে।
মার্কিন কর্মকর্তাকে কামাল সিদ্দিকী আরও জানান, জামায়াতের সঙ্গে জোটের কারণে বিএনপির মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছে। দলের কমপক্ষে ৫০ জন সাংসদ জামায়াতের সঙ্গে জোটে থাকতে চান না। বিষয়টি তিনি প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে জানিয়েছেন বলে উল্লেখ করেন কামাল সিদ্দিকী।
২১ ডিসেম্বর পাঠানো আরেকটি তারবার্তায় বলা হয়েছে, কামাল সিদ্দিকীর সঙ্গে ওই সাক্ষাতের পাঁচ দিন পর ১৯ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবরের সঙ্গে তাঁর কার্যালয়ে সাক্ষাৎ করেন মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ও দূতাবাসের আরেক কর্মকর্তা। এ সময় বাবর দাবি করেন, খামারুর মুক্তির বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। তিনি তখন সিঙ্গাপুরে ছিলেন। বাবর বলেন, তিনি পরে জানতে পারেন একজন তরুণ কর্মকর্তা জেলার সব থানায় খোঁজ নিয়ে খামারুর বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ না পেয়ে তাঁকে ছেড়ে দেন।
বাবর বলেন, একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা কুয়েতভিত্তিক এনজিও রিভাইভাল অব ইসলামিক হেরিটেজ সোসাইটির বন্ধ করে দেওয়া ব্যাংক হিসাব চালুর অনুমোদন দেওয়ায় তিনি খুব ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। উগ্রপন্থী আহলে হাদিস মসজিদে সহায়তা দেওয়ার কারণে ২০০৪ সালে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল হিসাবটি।
তারবার্তার ভাষ্যমতে, বাবর আরও বলেন জেএমবির সঙ্গে কোনো সরকারি কর্মকর্তা জড়িত থাকলে ছাড় পাবেন না। তবে তিনি স্বীকার করেন, রাজশাহী এলাকায় স্থানীয় সন্ত্রাস দমনে কাজ করার সময় বাংলা ভাইকে সরকারের কয়েকজন মন্ত্রী সহযোগিতা করেছিলেন।
প্রথম আলোর পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে কামাল সিদ্দিকীর বক্তব্য জানার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তিনি দেশের বাইরে থাকায় তা সম্ভব হয়নি।

 খালেদার সঙ্গে যোগাযোগ: মওদুদকে দূত করতে চেয়েছিলেন হাসিনা

আড়াই লাখ মার্কিন তারবার্তা ফাঁস করেছে উইকিলিকস। মার্কিন কূটনীতিকদের ভাষ্যে এসব তারবার্তায় বেরিয়ে এসেছে বাংলাদেশের রাজনীতি ও ক্ষমতার অন্দরমহলের খবর

প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে জানিয়েছিলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেপথ্যে খালেদা জিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। এ জন্য সম্ভাব্য দূত হিসেবে বিএনপির নেতা মওদুদ আহমদের নাম উল্লেখ করেন তিনি।
উইকিলিকস প্রকাশিত মার্কিন কূটনৈতিক তারবার্তায় এ কথা বলা হয়েছে। বার্তায় বলা হয়, ২০০৯ সালের ২৬ মে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মরিয়ার্টির সঙ্গে বৈঠক করেন রিজভী। বৈঠকের বিষয়বস্তু নিয়ে ২৮ মে ওয়াশিংটনে তারবার্তা পাঠান মরিয়ার্টি।
মার্কিন রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে গওহর রিজভী আরও বলেছিলেন, ২০০৯ সালের জানুয়ারি মাসে গঠিত মহাজোট সরকারের শুরুতে আমলাদের অদক্ষতা ও সিভিল-মিলিটারি সম্পর্কের সীমাবদ্ধতাসহ বিভিন্ন সমস্যা কাঙ্ক্ষিত পদক্ষেপ গ্রহণে বাধার সৃষ্টি করে।
তারবার্তায় বলা হয়, বৈঠকে আমলাদের অদক্ষতা বিষয়ে একটি উদাহরণ তুলে ধরেন রিজভী। তিনি বলেন, দরিদ্র জনগণের জন্য সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী গড়ে তুলতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিশ্বব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একমত হয়েছিলেন। এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু পরে জানা যায়, সরকারের জড়তার কারণে ওই প্রকল্পের উদ্যোগ ভেস্তে যায়।
রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁর আগের আমলের (১৯৯৬-০১) আমলাদের তুলনায় এ দফার আমলাদের দক্ষতার লক্ষণীয় অবনমনের কথা বলেছেন। তবে রিজভীর মন্তব্য, ‘আমলাদের অনিচ্ছা বা সহায়তা না করার মানসিকতা নেই। আসলে তাঁদের কাজ করার সামর্থ্য নেই।’
তারবার্তায় বলা হয়, রিজভী সরকারের একটি ইতিবাচক কার্যক্রম হিসেবে ইউএনডিপি ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ উদ্যোগে গৃহীত ই-গভর্নেন্সের বিষয়টির উল্লেখ করেন। তিনি জানান, বিদেশে পড়াশোনা করা তরুণ বাংলাদেশিদের একটি দল প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এ বিষয়ে দপ্তর স্থাপন করেছে। ইউএনডিপির সহায়তায় তাঁরা সরকারের সেবা দেওয়ার পথগুলোর উন্নতি করেছেন।
গওহর রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে সিভিল-মিলিটারি সম্পর্কের বিষয়টিও সতর্কতার সঙ্গে মোকাবিলা করতে হচ্ছে। রিজভীর পর্যবেক্ষণে ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিডিআর বিদ্রোহের সময়টি সিভিল-মিলিটারি সম্পর্কের সবচেয়ে কঠিন সময় ছিল।
বৈঠকে মার্কিন রাষ্ট্রদূত অর্থনৈতিক বিষয়ে জাতীয়করণ ধরনের কয়েকটি সরকারি পদক্ষেপে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। রিজভী বলেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূতের উদ্বেগের বিষয়টি তিনি প্রধানমন্ত্রীকে জানাবেন।
বৈঠকে মরিয়ার্টি ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে তাগিদ দেন। বাংলাদেশের প্রতি ভারতের আস্থা বাড়াতে উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে নয়াদিল্লির কাছে হস্তান্তরের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন তিনি। ২৮ মে রিজভী মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে জানান, অনুপ চেটিয়ার প্রসঙ্গ তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলেছেন। প্রধানমন্ত্রী দৃশ্যত আগ্রহী হলেও বলেছেন, অনুপ চেটিয়া কোথায় তা তিনি জানেন না। তবে জানার চেষ্টা করবেন।
তারবার্তায় বন্ধনীর মধ্যে টীকা দিয়ে বলা হয়, অনুপ চেটিয়া ১৯৯৭ সালে বাংলাদেশে গ্রেপ্তার হন। এরপর থেকে তিনি বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের হেফাজতে আছেন বলে জানা যায়। তারবার্তার মন্তব্য অংশে বলা হয়, রিজভী স্বীকার করেন, সরকারের কিছু বড় ইস্যু ধীরগতিতে এগোচ্ছে। এর কারণ হিসেবে স্বামীর মৃত্যুতে প্রধানমন্ত্রীর মানসিক অবস্থা ও বিডিআর বিদ্রোহ মোকাবিলা নিয়ে ব্যস্ত থাকার কথা উল্লেখ করেন তিনি। তবে এর পরও রিজভীকে আশাবাদী মনে হয়েছে বলে লিখেছেন রাষ্ট্রদূত।
এ ব্যাপারে মন্তব্য জানার জন্য গওহর রিজভীর সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। তবে তাঁকে পাওয়া যায়নি

গাদ্দাফি-ব্লেয়ার গোপন বৈঠক ফাঁস

লিবিয়ার ক্ষমতাচ্যুত নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফি এবং ব্রিটেনের সাবেক প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার গোপনে বৈঠক করেছিলেন। ব্লেয়ারকে লিবিয়ায় নিতে ব্রিটেনে উড়ে আসে গাদ্দাফির বিলাসবহুল ব্যক্তিগত বিমান। এর কিছুদিন পরই মুক্তি পান লকারবি বোমা হামলায় সাজাপ্রাপ্ত লিবীয় নাগরিক আবদেলবাসেত আল-মেগরাহি।
ব্লেয়ারের ডাউনিং স্ট্রিটের কার্যালয়, ত্রিপোলির ব্রিটিশ দূতাবাস এবং লন্ডনে লিবীয় দূতাবাসের মধ্যে চালাচালি হওয়া চিঠি ও ই-মেইল বার্তার মাধ্যমে ব্লেয়ার ও গাদ্দাফির গোপন বৈঠকের বিষয়টি ফাঁস হয়। এতে গাদ্দাফির সঙ্গে ব্লেয়ারের সম্পর্ক এবং মেগরাহির মুক্তির ব্যাপারে তাঁর ভূমিকা নিয়ে নতুন প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। ব্রিটেনের দ্য সানডে টেলিগ্রাফ ওই চিঠি ও ই-মেইল বার্তা হাতে পেয়েছে বলে জানিয়েছে।
দ্য টেলিগ্রাফের খবরে বলা হয়, লিবিয়ায় তাঁদের বৈঠকের আগে ব্লেয়ারের জন্য গাদ্দাফি তাঁর ব্যক্তিগত বিমান পাঠান। গাদ্দাফির খরচেই ব্লেয়ার ২০০৮ সালের জুন এবং ২০০৯ সালের এপ্রিলে লিবিয়া সফর করেন। যদিও ওই সময় দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছিল। লিবিয়া তখন হুমকি দিয়ে বলেছিল, মেগরাহিকে মুক্তি না দিলে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে তারা সব ধরনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করবে।
ব্লেয়ারের ওই বৈঠক সম্পর্কে সরকারি কোনো ওয়েবসাইটে তথ্যপ্রমাণ নেই। তবে লকারবি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একজনের পরিবারের ফোন কলের সূত্র ধরে বিষয়টি ফাঁস হয়। ক্ষতিগ্রস্ত ওই ব্যক্তি গাদ্দাফির সঙ্গে ব্লেয়ার শাসনামলে করা সব গোপন চুক্তি প্রকাশ করার আহ্বান জানান।
ফাঁস হওয়া তথ্যে জানা যায়, ওই বৈঠকে ব্লেয়ারের সঙ্গী হয়েছিলেন একজন মার্কিন ধনকুবের। শুধু তা-ই নয়, তাঁদের জন্য লিবিয়ার উপকূলে অবকাশযাপনকেন্দ্র নির্মাণ করতে বলেছিলেন গাদ্দাফি।
ওই সফরের ব্যাপারে কঠোর গোপনীয়তা রক্ষা করে ব্লেয়ারের ব্যক্তিগত কার্যালয়। ব্লেয়ার সরকার লিবিয়া সফরের আলাপ-আলোচনায় গাদ্দাফির নাম উল্লেখ করেননি। গাদ্দাফিকে তারা ‘দ্য লিডার’ বা নেতা হিসেবে অভিহিত করেছেন।
গাদ্দাফির সঙ্গে ব্লেয়ারের গোপন বৈঠকের বিষয়টি ফাঁস হওয়ায় লকারবি বোমা হামলায় নিহত লোকজনের পরিবারে তীব্র ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। ১৯৮৮ সালের ওই হামলায় নিহত হয়েছিলেন প্যান ডিক্সের ভাই। ব্লেয়ারের সফর সম্পর্কে ডিক্স টেলিগ্রাফকে বলেন, ‘ব্লেয়ারের সফরের খরচ বহন করেছেন গাদ্দাফি। এটা জেনে আমি হতভম্ব হয়েছি। এ সুযোগ গ্রহণ করে ব্লেয়ার অপরাধ করেছেন। আর তাঁরা ওই বৈঠকে যেসব গোপন চুক্তি করেছেন, সেগুলো জনগণের সামনে প্রকাশ করা উচিত।’
লিবিয়ায় নিযুক্ত সাবেক ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত অলিভার মাইলস এ প্রসঙ্গে বলেন, ব্লেয়ার তাঁর ডাউনিং স্ট্রিটের যোগাযোগকে ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেছেন।
মেগরাহির মুক্তির ব্যাপারে ব্লেয়ার তাঁর সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি বরাবরই অস্বীকার করে আসছেন। তিনি বলেছেন, স্কটল্যান্ডের নির্বাহী কর্মকর্তারাই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রসঙ্গত, ব্লেয়ার ও গাদ্দাফির ওই গোপন বৈঠকের সময় মেগরাহির মুক্তি নিয়ে দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছিল। মেগরাহি প্যান অ্যাম বিমানের ফ্লাইটে বোমা হামলা চালিয়ে ২৭০ জনকে হত্যা করেছিলেন। ওই ঘটনায় মেগরাহি দোষী সাব্যস্ত হন। এরপর মেগরাহি ক্যানসারে আক্রান্ত হলে ২০০৯ সালে তাঁকে যুক্তরাজ্যের কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। যদিও মেগরাহি আর তিন মাস বাঁচবেন বলে তখন চিকিত্সকেরা জানিয়েছিলেন।

Wednesday, September 14, 2011

 আলোচনা সভায় নাজমুল হুদা মুজিবকে জাতির পিতা বলতে দ্বিধা বোধ করি না

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সাবেক সদস্য নাজমুল হুদা বলেছেন, ‘শেখ মুজিবুর রহমানের সাতই মার্চের ভাষণ আমাদের অনুপ্রেরণা দেয়। এই ভাষণের মধ্য দিয়েই এ দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে। তাই তাঁকে জাতির পিতা বলতে দ্বিধা বোধ করি না।’
জাতীয় প্রেসক্লাবে গতকাল মঙ্গলবার জাতীয়তাবাদী জিয়া ফ্রন্ট আয়োজিত ‘জনতার জিয়া’ শীর্ষক আলোচনা সভায় নাজমুল হুদা এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, শেখ মুজিব, জিয়াউর রহমানসহ জাতীয় নেতাদের যাঁর যা অবদান তা স্বীকার করতে হবে।
সদ্য প্রতিষ্ঠিত এই সংগঠনটির উদ্যোগে এটাই প্রথম কোনো আলোচনা সভা। সংগঠনের আহ্বায়ক আকবর আমিন সংগঠনের কার্যক্রম সম্পর্কে বলেন, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শ প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখাই সংগঠনের মূল কাজ।
সংগঠনের সঙ্গে নাজমুল হুদার সম্পর্ক জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, সভায় তিনি অতিথি হিসেবে এসেছেন। এই সংগঠনটি ভবিষ্যতে রাজনৈতিক দলে রূপান্তরিত হবে কি না, তা এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিরা বলতে পারবেন।
বিএনপির দপ্তরে কর্মরত এক নেতা বলেন, এ ধরনের সংগঠনের নাম আগে শুনিনি। জিয়াউর রহমানের নামে অনেকেই সংগঠন করেন। তবে এগুলো প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বিএনপির কাছ থেকে অনুমোদন নেওয়া হয় না।
সভায় নাজমুল হুদা বলেন, ‘আমাদের এখন সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন একটি সঠিক ইতিহাস। সরকার বদলের সঙ্গে ইতিহাস পরিবর্তনের সংস্কৃতি থেকে বের হয়ে আসতে হবে। সঠিক ইতিহাস লেখার জন্য দক্ষ ইতিহাসবিদ এবং এ দেশের জনগণকে কাজে লাগাতে হবে।’
জোট সরকারের সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, এ দেশে অনেক সমস্যা। সংসদ অকার্যকর, ছাত্ররাজনীতি বিপথে চলে গেছে, রপ্তানি খাতগুলোতে নানা সমস্যা। অথচ এসব জাতীয় সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে রাজনীতিবিদেরা সর্বক্ষেত্রে বিভেদ সৃষ্টি করে চলেছেন। তাঁরা মুখোমুখি ও সাংঘর্ষিক রাজনীতির পথে চলছেন। এভাবে চলার কারণে দেশের কোনো উন্নয়ন হচ্ছে না। দেশ পেছনের দিকে চলছে।
সংগঠনের আহ্বায়ক আইনজীবী আকবর আমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন নিউ নেশন পত্রিকার সম্পাদক মোস্তফা কামাল মজুমদার, ন্যাশনাল সিকিউরিটি পার্টির চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।

Wednesday, September 7, 2011

 আ.লীগ পাবে ১৮০ আসন, বিএনপি ৮০

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণা ছিল আওয়ামী লীগ নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৮০টি ও বিএনপি ৮০টি আসনে জয় পাবে। বাকি ৪০টি আসন পাবে জাতীয় পার্টি, জামায়াতসহ অন্যান্য ছোট রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।
২০০৮ সালের ২৮ ডিসেম্বর ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টির ওয়াশিংটনে পাঠানো একটি তারবার্তায় এমন তথ্যই উঠে এসেছে। গত ৩০ আগস্ট সাড়া জাগানো ওয়েবসাইট উইকিলিকস এই তারবার্তাটি ফাঁস করে।
তারবার্তা থেকে জানা যায়, নির্বাচনের এক দিন আগে ২০০৮ সালের ২৭ ডিসেম্বর মরিয়ার্টি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের তত্কালীন যোগাযোগ উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) গোলাম কাদেরের সঙ্গে নির্বাচনের প্রস্তুতি ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে প্রায় এক ঘণ্টার সৌজন্য বৈঠকে মিলিত হন। সেখানে মরিয়ার্টির কাছে উপদেষ্টা গোলাম কাদের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জরিপের পাওয়া নির্বাচনের ফলাফলের এ পূর্বাভাস ব্যক্ত করেন। গোলাম কাদের মরিয়ার্টিকে বলেন, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জিতলে তাদের ইচ্ছানুযায়ী ২০০৯-এর ১০ জানুয়ারি সরকার গঠিত হবে। (বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস হওয়ায় এ তারিখটি আওয়ামী লীগের কাছে অন্য রকম গুরুত্ব বহন করে)। তবে বিএনপি জিতলে যত দ্রুত সম্ভব তাদের সরকার গঠনের আহ্বান জানানো হবে বলে গোলাম কাদের জানান।
এ প্রসঙ্গে মরিয়ার্টি তাঁর তারবার্তায় লিখেছেন, ‘বিএনপি জিতলে ৩০ ডিসেম্বরের পরপরই সরকার গঠনের ব্যাপারটি আমার কাছে একটু অতিশয়োক্তি মনে হচ্ছে। কারণ, ৩০ ডিসেম্বর তো নির্বাচনের সরকারি ফলই প্রকাশিত হবে না।’
গোলাম কাদের মরিয়ার্টিকে বলেছিলেন, নির্বাচনের পরপর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কোনো অস্তিত্বই থাকবে না। গোলাম কাদের মরিয়ার্টিকে আরও বলেন, আগামীকাল (২৮ ডিসেম্বর) তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টারা শেষ বৈঠকে মিলিত হয়ে মন্ত্রণালয়গুলোর কাজ-কর্মগুলো পর্যালোচনা করবেন।
মরিয়ার্টি তাঁর সেই তারবার্তায় লিখেছেন, ২৭ ডিসেম্বর তিনি যখন গোলাম কাদেরের সঙ্গে দেখা করেন, তাঁকে তখন বেশ নির্ভার দেখাচ্ছিল। তিনি সেদিন একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রস্তুতি নিয়েও আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। তিনি নির্বাচনের দিন মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক বন্ধ রাখা হবে কি না, সে ব্যাপারেও মরিয়ার্টির সঙ্গে কথা বলেন। মরিয়ার্টি তারবার্তায় লিখেছেন, গোলাম কাদের ব্যক্তিগতভাবে নির্বাচনের দিন মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক বন্ধ করে দেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন এবং এ ব্যাপারে তিনি নিজের মতামত মরিয়ার্টির কাছে তুলের ধরেন। তবে তিনি স্বীকার করেছিলেন, মোবাইল ফোন নেটওয়ার্ক বন্ধ না করেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আরও বিকল্প রয়েছে।

‘বিমান পাঠাও, তোমার জন্য জুতা নিয়ে আসব’

ঢিল মারলে যে পাটকেলটি খেতে হয়, ভারতের উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতীর বোধ হয় জানা ছিল না। তাই তো তিনি উইকিলিকসে ফাঁস হওয়া তথ্যে ক্ষুব্ধ হয়ে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে আগ্রার পাগলা গারদে পাঠানোর কথা বলেছেন। খেপা মানুষ অ্যাসাঞ্জও কম যান না। মায়াবতীকে যুক্তরাজ্যে বিমান পাঠাতে বলেছেন। ভারতে আসার সময় মায়াবতীর জন্য ভালো জুতাও আনবেন বলে জানিয়েছেন অ্যাসাঞ্জ।
ঘটনার সূত্রপাত কয়েক দিন আগে। মার্কিন গোপন তারবার্তা ফাঁস করে মায়াবতীর ব্যাপারে উইকিলিকস একটা বোমাই ফাটিয়েছিল। অভিযোগ গুরুতর। ২০০৮ সালের ২৩ অক্টোবরের এক তারবার্তায় বলা হয়, যখন মায়াবতীর নতুন স্যান্ডেলের দরকার হয়, তখন তাঁর পছন্দের ব্র্যান্ডের স্যান্ডেল আনতে মায়াবতীর ব্যক্তিগত বিমান মুম্বাইয়ে উড়ে যায়।
শুধু তা-ই নয়; ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত মার্কিন কূটনৈতিক তারবার্তায় বহুজন সমাজ পার্টির (বিএসপি) প্রধান মায়াবতীকে (৫৫) প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ভাবনায় আচ্ছন্ন ‘প্রথম শ্রেণীর অহং-সর্বস্ব’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে।
উইকিলিকসে প্রকাশিত তারবার্তায় বলা হয়, দলের সদস্য, সরকারি চাকরিজীবী ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে লাখ লাখ ডলার উপহার নেওয়ার মাধ্যমে প্রতিবছর জন্মদিন পালন করেন দলিত সম্প্রদায়ের মায়াবতী। জন্মদিন পালনের সময় তাঁকে কেক খাওয়ানোর জন্য প্রতিযোগিতা শুরু হয় কর্মকর্তাদের মধ্যে। তারবার্তায় বলা হয়, মায়াবতী নিজের বাড়ি থেকে অফিস পর্যন্ত একটি ব্যক্তিগত সড়ক নির্মাণ করেছেন।
উইকিলিকসে প্রকাশিত ওই তারবার্তার তথ্যের প্রতিক্রিয়ায় মায়াবতী ক্ষুব্ধ হয়ে গতকাল মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে উইকিলিকসের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জকে মানসিক পুনর্বাসন কেন্দ্র পাঠানো উচিত বলে মন্তব্য করেন। মায়াবতী উইকিলিকসের এ অভিযোগকে নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করেছেন। মায়াবতী বলেন, ‘উইকিলিকসপ্রধান হয় পাগল হয়ে গেছেন, অথবা আমাদের বিরোধীদের সমর্থন করছেন।’ তিনি অ্যাসাঞ্জকে আগ্রার মানসিক পুনর্বাসন কেন্দ্রে ভর্তিরও প্রস্তাব দেন।
মায়াবতীর এ মন্তব্যের কয়েক ঘণ্টা পরই উইকিলিকস প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ এ ব্যাপারে গণমাধ্যমে একটি বিবৃতি পাঠান। অ্যাসাঞ্জ বলেছেন, ‘মায়াবতী যুক্তিসংগত বিচারবুদ্ধির সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। প্রশ্ন হলো, তিনি কি দলিতদের সঙ্গেও প্রতারণা করেছেন? কোনো সন্দেহ নেই যে এই দলিলগুলো মার্কিন দূতাবাসের। এই দলিল বিশ্বব্যাপী প্রমাণিত। এমনকি ওয়াশিংটন কর্তৃকও।’
মায়াবতী উদ্দেশে অ্যাসাঞ্জ বলেন, ‘হিলারির সঙ্গে মার্কিন রাষ্ট্রদূতদের যোগাযোগে এ অভিযোগ করা হয়েছে। তাঁর যদি এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ থাকে, তা নিয়ে হিলারির সঙ্গে কথা বলা উচিত। আমি তাঁকে তাঁর ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানাই।’
অ্যাসাঞ্জ আরও বলেন, ‘তিনি যদি তা করতে ব্যর্থ হন, তবে আমাকে যুক্তরাজ্য থেকে নিয়ে যেতে তাঁর ব্যক্তিগত বিমান পাঠানোকে স্বাগত জানাই, আমি যেখানে আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে গত ২৭২ দিন ধরে গৃহবন্দী আছি। ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে আমি আনন্দিত হব, দেশটিকে আমি ভালোবাসি। ভারতে যাওয়ার সময় আমি মায়াবতীর জন্য যুক্তরাজ্যের সবচেয়ে ভালো জুতা নিয়ে যাব।

Tuesday, September 6, 2011

 হুজির আইডিপি প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেছে ডিজিএফআই

নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশের (হুজি-বি) রাজনৈতিক দল ইসলামী ডেমোক্রেটিক পার্টি (আইডিপি) সৃষ্টিতে সহায়তা করেছিল বাংলাদেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই। আর এ পদক্ষেপের পক্ষে মার্কিন রাষ্ট্রদূতের কাছে সাফাই করেছিলেন ডিজিএফআইয়ের তত্কালীন পরিচালক এ টি এম আমিন ।
বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি ওয়াশিংটনে পাঠানো গোপন তারবার্তায় এ কথা উল্লেখ করেছেন। সম্প্রতি ভিন্নধারার গণমাধ্যম উইকিলিকস এই তথ্য ফাঁস করে।
২০০৮ সালে ১৬ অক্টোবর ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটনে পাঠানো এক তারবার্তায় বলা হয়েছে, জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি-বি) রাজনৈতিক স্বীকৃতি চায়। এ লক্ষ্যে তারা ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টি (আইডিপি) নামে একটি রাজনৈতিক দলও ঘোষণা করেছে। ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির (আইডিপি) নেতারা দাবি করেছেন, ইসলামি শরিয়া আইনের অধীনে বাংলাদেশে তারা সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
হুজি-বির এ পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি তত্কালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বলেছেন, ‘হুজি-বি’কে অবশ্যই মূলধারার রাজনীতিতে আসার অনুমোদন দেওয়া উচিত নয়।
তারবার্তায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আইডিপি দেশব্যাপী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়েছে। যদিও দলটির নেতারা দাবি করেছেন, তাঁরা শান্তি ও গণতন্ত্রের পক্ষে কাজ করছেন। তবে সরকারি কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রদূতদের এ বিষয়ে ঘোরতর সন্দেহ রয়েছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া প্রতিবেদনে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, দলটি তাদের মূল সন্ত্রাসী সংগঠন ত্যাগ করেনি।
তারবার্তায় বলা হয়েছে, ২০০৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানী ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে দলটি আত্মপ্রকাশ করে। আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রায় দুই হাজার মানুষ অংশ নেয়।
ঢাকার অস্ট্রেলীয় দূতাবাসের কর্মকর্তাদের তথ্যের বরাত দিয়ে ওই তারবার্তায় বলা হয়, আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুজাহিদ কমান্ডার আবদুস সালাম আইডিপির আহ্বায়ক। দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে আবদুস সালাম বলেন, দলটি বাংলাদেশে ইসলামি শরিয়া আইন বাস্তবায়ন করতে চায়, তবে তা সন্ত্রাসী পন্থায় নয়।
১৬ অক্টোবর পাঠানো অপর এক মার্কিন তার বার্তায় বলা হয়েছে, তত্কালীন ডিজিএফআই-এর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ টি এম আমিন ১৫ অক্টোবর ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাউন্সেলর, এবং আঞ্চলিক কাউন্সেলরের সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন। ওই সাক্ষাতে এ টি এম আমিন আইডিপিকে মূলধারার রাজনীতিতে নিয়ে আসার পদক্ষেপের পক্ষে সাফাই করেন। তবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি এ পদক্ষেপের বিরোধিতা করেন। তিনি হুজির কর্মকাণ্ড নিয়ে বিশেষ করে সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে মার্কিন সরকারের উদ্বেগের কথা জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে এ টি এম আমিন জানান, তারা আইডিপিকে গভীর পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। তবে তিনি স্বীকার করেন, এ ক্ষেত্রে সতর্কতা দরকার।
জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশের (হুজি-বি) রাজনৈতিক দল ইসলামী ডেমোক্রেটিক পার্টির (আইডিপি) আত্মপ্রকাশ নিয়ে ২০০৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর দৈনিক প্রথম আলোতে ‘আইডিপি নামে এবার প্রকাশ্য রাজনীতিতে হুজি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ইসলামী ডেমোক্রেটিক পার্টি—আইডিপি’ নামে প্রকাশ্য রাজনীতি শুরু করেছে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী (হুজি)। রাজধানীর ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে ইফতার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে সাবেক আফগান মুজাহিদদের এ সংগঠন।
সংগঠনের আহ্বায়ক মাওলানা শেখ আবদুস সালাম তখন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের সংগঠন এ দেশে ১৯৯২ সালেই আত্মপ্রকাশ করে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ নামে। এরপর ১৯৯৮ সালে তা বিলুপ্তি ঘোষণার পর তাঁরা ‘ইসলামী গণ-আন্দোলন’ নামে সংগঠন করেন। সেই সংগঠন থেকে এখন তাঁরা আইডিপি নামে কাজ করছেন।
মাওলানা শেখ আবদুস সালামের সভাপতিত্বে আইডিপির ওই ইফতার ও আলোচনা সভায় সংগঠনের নেতারা ছাড়াও সংগঠনের ভাষায় ‘আন্ত-সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি উন্নয়নের স্বার্থে আমন্ত্রিত’ ইংরেজি সাপ্তাহিক ব্লিেজর সম্পাদক সালাহউদ্দিন শোয়েব চৌধুরী, দৈনিক আমার দেশের সহকারী নির্বাহী সম্পাদক ও হিউম্যান রাইটস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব চৌধুরী, বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের পি কে বড়ুয়া, খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি চিত্ত ফ্রান্সিস রিভেরু বক্তব্য দেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সালাহউদ্দিন শোয়েব চৌধুরী বলেন, আইডিপির আত্মপ্রকাশের মধ্য দিয়ে দেশে নতুন রাজনীতির জন্ম হলো। তিনি বলেন, আইডিপির সঙ্গে হরকাতুল জিহাদের নাম জড়িত। এটা এমন একটি সংগঠন, যার সম্পর্কে নানা আলোচনা রয়েছে। আইডিপিকে যারা সন্ত্রাসী সংগঠন বলে, ওই সব পত্রিকা বিদেশের টাকায় চলে। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধ এবং বালি বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত সত্ত্বেও হিযবুত তাহরীরের মতো সংগঠন যদি এ দেশে প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে পারে, তাহলে আইডিপি কেন পারবে না। যারা বাংলাদেশকে করদ রাজ্য বানাতে চায়, তারা আইডিপিকে হুমকি মনে করে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন আইডিপির সদস্যসচিব মাওলানা রুহুল আমিন, তিন যুগ্ম আহ্বায়ক কারি হোসাইন আহমদ, মাওলানা আবুল কাশেম রহমানী ও মাওলানা মাহবুবুর রহমান এবং মাওলানা মুফতি কামাল, মাওলানা মীর ইদ্রিস, মুফতি ফজলে এলাহি, মাওলানা মুফতি নোমান, খেলাফত মজলিসের (ইসহাক) নায়েবে আমির এমদাদুল হক আড়াইহাজারী, খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির ছফর উল্লাহ খান, জৈনপুরী পীর মাওলানা এহছানুল্লাহ আব্বাসী প্রমুখ। এ ছাড়া মরহুম হাফেজ্জী হুজুরের মেজ ছেলে হাফেজ মাওলানা হামিদুল্লাহ ও মাওলানা আতাউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
সমাপনী বক্তৃতায় মাওলানা আবদুস সালাম নিজেদের আন্তর্জাতিক মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে বলেন, তাঁরা মদিনা সনদের আলোকে একটি অসাম্প্রদায়িক কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ে তুলতে চান।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চাপসহ নানা কারণে সংগঠনটি বিভিন্ন সময় নাম পাল্টালেও এর নেতৃত্ব, সাংগঠনিক কাঠামো, মজলিশে শুরা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া প্রায় একই ছিল। ২০০৬ সালের আগস্টে প্রথম গোপন এ সংগঠনটি ইসলামি গণ-আন্দোলন নামে প্রকাশ্য রাজনীতিতে আসার চেষ্টা করে। এ লক্ষ্যে ওই বছরের ১৮ আগস্ট জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সচেতন ইসলামী জনতার ব্যানারে বড় একটি সমাবেশ করেছিল। তখন সচেতন ইসলামী জনতার আহ্বায়ক হিসেবে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন হাফেজ মাওলানা আবু তাহের। এই তাহের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। বর্তমানে তিনি কারাগারে। আবু তাহের হুজির ঢাকা মহানগর সভাপতি ও মজলিশে শুরার সদস্য ছিলেন।
বিভিন্ন নাশকতামূলক ঘটনার পর বাংলাদেশ সরকার ২০০৫ সালের ১৭ অক্টোবর হুজিকে নিষিদ্ধঘোষণা করে। ২০০২ সালের ২১ মে বাংলাদেশের হরকাতুল জিহাদকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। গত ৫ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডোলিত্সা রাইস এক নির্বাহী আদেশে বাংলাদেশের হুজিকে একটি ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ এবং একটি ‘বিশেষভাবে চিহ্নিত আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ হিসেবে ঘোষণা দেন।
হুজির সঙ্গে জড়িত মুফতি হান্নানসহ অনেকের বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগ আছে—এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘১৯৯৮ সালেই মুফতি হান্নানকে আমরা দল থেকে বহিষ্কার করি। বহিষ্কারের পর কেউ যদি ওই নামে নাশকতা করে থাকে, তার দায়-দায়িত্ব তাদেরই। আমাদের ওপর বর্তায় না। তবে সরকারকে ধন্যবাদ, তাদের ধরেছে। এখন তাদের বিচার চলছে।’

Monday, September 5, 2011

সাকার আশঙ্কাই সত্যি

উইকিলিকসে প্রকাশ্য

সাধারণ নির্বাচনের আগেই বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর (সাকা) আশঙ্কা ছিল তার জিতে আসা কঠিনই হবে এবার। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পাঁচ দিন আগে ঢাকা থেকে ওয়াশিংটনে পাঠানো এক গোপন বার্তায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি এ আশঙ্কার কথা প্রকাশ করেন, যা প্রকাশ করেছে উইকিলিকস।

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের ওয়েবসাইট উইকিলিকস গত ৩০ অগাস্ট প্রায় দেড় লাখ নতুন কেবল প্রকাশ করে। এর মধ্যে একটি ছিলো সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার সংসদীয় উপদেষ্টা সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর রাঙ্গুনীয় আসনে নির্বাচনকে ঘিরে।

তারবার্তায় মরিয়ার্টি সাকাকে 'চট্টগ্রামের গডফাদার' হিসেবে অভিহিত করে তার পুননির্বাচিত হওয়া অনেক কঠিন হবে বলে মন্তব্য করেন।

তিনি লিখেন, এই আসনে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পুননির্বাচিত হওয়া কঠিনতর হবে। আওয়ামী লীগ থেকে প্রথমবারের মতো মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীর সঙ্গে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে হাড্ডাহাড্ডি।

২০০৭ এর ১১ জানুয়ারি সামরিক হস্তক্ষেপে রাষ্ট্রপতি ইয়জউদ্দিন আহম্মদ দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন এবং ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেয়। এর প্রায় দুই বছর পর ২০০৮ এর ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মরিয়ার্টি ওই তারবার্তাটি পাঠান ২৪ ডিসেম্বর।

মরিয়ার্টি লিখেছেন, নির্বাচনের আগে ওই আসনে বিপুল সংখ্যক সেনা সদস্য মোতায়েন করার মাধ্যমে পরাজিত করার নীল নকশা সাজানো হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সাকা চৌধুরী। শুধু তাই নয়, পরাজিত হলে তিনি চুপ করে বসে থাকবেন না বলেও হুমকি দিয়েছেন। পরাজিত করার জন্য সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার উঠেপড়ে লেগেছে এমন অভিযোগ শুধু সাকার নয়, দলটির অন্যান্য প্রার্থীদেরও।

২০০১ এর নির্বাচনে রাঙ্গুনীয়ার এই আসনে সাকা চৌধুরী আওয়ামী লীগের প্রার্থী থেকে প্রায় ১০ হাজার ভোট বেশি পেয়ে জয়ী হয়েছিলেন।

তবে ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনকে ঘিরে সেনা সদস্য মোতায়েন হওয়ায় 'সুষ্ঠু' নির্বাচন নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন সাকার মতো বিএনপির অন্যান্য প্রার্থীরাও, যোগ করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ কূটনীতিক।

তিনি লিখেছেন, বিএনপি অভিযোগ করছে- এ নির্বাচনে ভোটে নয়, সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পছন্দের জয়ী করা হবে। বিএনপির প্রভাবশালী নেতা সাকা চৌধুরীও একই অভিযোগ করেছেন।

স্থানীয় সাংবাদিক ও কর্মকর্তাদের উদ্ধৃতি দিয়ে মরিয়ার্টি বলেন, তাদের ধারণা এ আসনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে। যদিও একটি দৈনিকের জরিপে দেখা গেছে- আওয়ামী লীগ দুই অঙ্কের ব্যবধানে নির্বাচনে জয়ী হচ্ছে। তবে সাকা এবং তার দলের অন্যান্য প্রার্থীরা ইঙ্গিত করেছেন, তারা পরাজিত হলেই ধরে নেওয়া হবে ভোট চুরির মাধ্যমে তাদের পরাজিত করা হয়েছে। আর সেনা মোতায়েনের বিষয়টি তুলে ধরে সাকা চৌধুরী সেদিকেই ইঙ্গিত করেন। পাশাপাশি তিনি একজন নির্বাচন পর্যবেক্ষককে এও বলেছেন- তিনি পরাজিত হলে চুপচাপ মেনে নেবেন না।

ওই জরিপের প্রসঙ্গ টেনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিখেছেন, জরিপের ফলাফল যদি সত্যি হয়ে যায়, সেক্ষেত্রে দুই বছরের জরুরি অবস্থার পর গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠায় বিএনপির মাধ্যমে বাধা সৃষ্টি হতে পারে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

'প্রশ্নবিদ্ধ মন্ত্রীর কাঁধে আ. লীগের ভবিষ্যৎ'


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্বাচনী অঙ্গীকার পূরণের দায়িত্ব এমন এক মন্ত্রীর কাঁধে, যার সততা প্রশ্নবিদ্ধ- যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন সম্পর্কে এমন মূল্যায়নই ওয়াশিংটনে পাঠিয়েছিলেন ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি, যা প্রকাশ করেছে উইকিলিকস।

গতবছর ১০ ফেব্র"য়ারি ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস থেকে পাঠানো এক গোপন তারবার্তায় মরিয়ার্টি লিখেছেন, "দুর্নীতির অভিযোগ এখনো যোগাযোগমন্ত্রীকে ঘিরে আছে। তিনি যে পদ্ধতিতে কাজ করেন, তার বেশ কিছু সমস্যার কথা বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তারা আমাদের জানিয়েছেন। তাছাড়া চীনের সঙ্গে মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের বিষয়টিও সবার জানা।"

প্রায় দেড় লাখ নতুন কেবলের সঙ্গে মরিয়ার্টির এ বার্তাটিও গত ৩০ অগাস্ট প্রকাশ করেছে জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের হৈ চৈ ফেলে দেওয়া ওয়েবসাইট উইকিলিকস। এর আগে গত বছর বিভিন্ন দেশে দূতাবাসের সঙ্গে ওয়াশিংটনের বিনিময় করা আড়াই লাখেরও বেশি গোপন বার্তা প্রকাশ করে এই ওয়েবসাইট যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে বিপাকে ফেলে দেয়।

মরিয়ার্টির পাঠানো এই বার্তার তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ এর ৩ ফেব্র"য়ারি যোগাযোগমন্ত্রীর দেওয়া এক ভোজসভায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি। সেখানেই আবুল হোসেনের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে তার কথা হয়। পদ্মা সেতু নির্মাণে ঋণদাতা সংস্থাগুলোর সহযোগিতার প্রশংসা করলেও জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সির (জাইকা) শর্ত নিয়ে আপত্তি তুলে এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রকে তদবির করতে অনুরোধ করেন মন্ত্রী।

ঢাকার সঙ্গে চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহের সড়ক ও রেল যোগাযোগের উন্নয়ন যে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়ের নিশ্চয়তার জন্য খুবই জরুরি- সে বিষয়টিও মরিয়ার্টিকে বুঝিয়ে বলেন আবুল হোসেন।

যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলোর জন্য কাজের অনেক সুযোগ আছে- এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে তিনি ঢাকায় উড়াল সড়ক (এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে) নির্মাণেও আমেরিকার সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।

বড় বড় প্রকল্প নিয়ে তদবির চালিয়ে গেলেও সময়মতো মহাসড়ক মেরামত না করায় আবুল হোসেন স¤প্রতি সরকারের ভেতরে-বাইরে কঠোর সমালোচনার মুখে পড়েন।

সড়কের নাজুক দশার কারণে গত রোজায় রাজধানীর মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে গাজীপুর হয়ে ১৩টি রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেন পরিবহন মালিকরা। এছাড়া দুর্ঘটনায় হতাহতের ঘটনা বাড়তে থাকায় সড়কগুলোর অবস্থা নতুন করে আলোচনায় আসে। বিভিন্ন মহল থেকে যোগাযোগমন্ত্রীকে অপসারণেরও দাবি ওঠে।

সময়মতো সড়ক মেরামত না করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এক বৈঠকে যোগাযোগমন্ত্রীকে তিরস্কার করেন। এরপর সড়ক ও জনপথ বিভাগের ঈদের ছুটি বাতিল করে জরুরি ভিত্তিতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক মেরামত শুরু হয়।

পদ্মা সেতু

পদ্মা সেতু প্রসঙ্গে আবুল হোসেন সেই ভোজসভায় রাষ্ট্রদূতকে বলেন, বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক এই প্রকল্পের জন্য ঋণ দিতে রাজি হলেও জাইকা চুক্তিটি দুটি ভাগে ভাগ করে দুই প্রতিষ্ঠানকে সেতুর সাব ও সুপার স্ট্রাকচার নির্মাণের দায়িত্ব দিতে বলছে। সেক্ষেত্রে জাইকা সাব স্ট্রাকচারের জন্য অর্থায়ন করবে।

কিন্তু এ প্রকল্পের অন্য উন্নয়নসহযোগীরা জাইকার এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করছে জানিয়ে মন্ত্রী রাষ্ট্রদূতকে বলেন, দুই কোম্পানিকে কাজ দিলে ভবিষ্যতে যে কোনো সমস্যার জন্য ঠিকাদাররা পরস্পরের ওপর দোষ চাপানোর সুযোগ পাবে। এতে জটিলতাও বাড়বে।

"জাইকা যাতে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে- সেজন্য জাপানে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস ও আমেরিকা সরকারের সহযোগিতা চান মন্ত্রী", বলা হয় মরিআর্টির তারবার্তায়।

২৯০ কোটি ডলারের পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের জন্য গত ২৮ এপ্রিল থেকে ৬ জুনের মধ্যে বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে ১২০ কোটি ডলার, এডিবির সঙ্গে সাড়ে ৬১ কোটি ডলার, ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের সঙ্গে (আইডিবি) ১৪ কোটি ডলার এবং জাইকার সঙ্গে ৪১ কোটি ডলারের ঋণ চুক্তি করেছে বাংলাদেশ সরকার। প্রকল্পের বাকি অর্থের যোগান সরকারই দেবে।

প্রকল্প প্রস্তাব অনুযায়ী, নদীর ওপর সেতুর মূল দৈর্ঘ্য হবে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। আর দুই পাশে সংযোগ সড়কের দৈর্ঘ্য ১২ কিলোমিটার।

সেতুর নির্মাণকাজ তদারকির জন্য ইতোমধ্যে একটি বিদেশি সংস্থাকে নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে এ সরকারের মেয়াদ শেষের আগেই দেশের দীর্ঘতম সেতু নির্মাণের কথা বলা হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে।

উইকিলিকসের ফাঁস করা বার্তায় বলা হয়েছে, "আবুল হোসেন ও রাষ্ট্রদূত আলোচনায় একমত হয়েছেন যে, অনেক কেম্পানিই পদ্মা সেতুর কাজ পেতে আগ্রহী হবে। মন্ত্রী জানিয়েছেন, এরইমধ্যে ১৩টি প্রতিষ্ঠান তাদের আগ্রহের কথা প্রকাশ করেছে। রাষ্ট্রদূত তাকে একটি মার্কিন কোম্পানির কথা বলেছেন যেটি সেতু প্রকল্পের জন্য নদী খননের কাজ পেতে আগ্রহী। এছাড়া দরপত্র ডাকা হলে যুক্তরাষ্ট্রের আরো কোম্পানি নিশ্চিতভাবেই এ বিষয়ে আগ্রহ দেখাবে।"

'চাক্ষুস প্রমাণ'

মরিয়ার্টি তার সরকারকে পাঠানো ওই বার্তায় বলেন, "নির্বাচনে জয় নিশ্চিত করতে যোগাযোগমন্ত্রীর অন্য দুটি পরিকল্পনা হলো ঢাকা-চট্টগ্রাম এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক স¤প্রসারণ। এর মধ্যে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক স¤প্রসারণের ২০ কোটি ডলারের কাজের জন্য ১০টি দরপত্রে সাতটি বিদেশি ও তিনটি স্থানীয় প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হয়েছে।"

এছাড়া একটি উড়াল সড়ক (এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে) নির্মাণের পরিকল্পনার কথাও মন্ত্রী মরিয়ার্টিকে জানান, যেটি বাস্তবায়ন করা হবে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) ভিত্তিতে।

এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের সহযোগিতা চেয়ে আবুল হোসেন রাষ্ট্রদূতকে বলেন, "মহানগরীতে যুক্তারাষ্ট্রের অর্থায়নে আমরা এমন একটি প্রকল্প চাই, যা হবে দুই দেশের সম্পর্কের 'চাক্ষুস' প্রমাণ।"

রেলের বেসরকারিকরণ

বাংলাদেশ রেলওয়ের উন্নয়নে বর্তমান সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের বিবরণ দিয়ে আবুল হোসেন মরিয়ার্টিকে জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম রেললাইন স¤প্রসারণের পাশাপাশি এই রেলপথকে 'ডাবল লাইন' করার কাজও শিগগির শুরু হবে।

এছাড়া ঢাকার যনজট নিরসনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এলিভেডেট রেল ব্যবস্থা চালুর দায়িত্ব দিয়েছেন জানিয়ে আবুল হোসেন বলেন, জাইকা ইতোমধ্যে এ প্রকল্পে ৩০০ কোটি ডলার ঋণ দেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে।

রাষ্ট্রদূতকে মন্ত্রী জানান, তিনি রাষ্ট্রায়ত্ত বাংলাদেশ রেলওয়েকে একটি স্বাধীন 'কর্পোরেট' প্রতিষ্ঠানে রূপান্তর করতে চান, যার পরবর্তী ধাপ হবে বেসরকারিকরণ। এতে প্রতিষ্ঠানটির দক্ষতা ও কাজের মান বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

মরিয়ার্টি তার বার্তা শেষ করেছেন এভাবে- "যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের ভোট নিশ্চিত করার মিশন সফল করতে মন্ত্রী দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। তিনি যেসব বড় বড় অবকাঠামো প্রকল্পের কথা বলেছেন, তাতে যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও ব্যবসার বিপুল সুযোগ রয়েছে। ঢাকা দূতাবাস এই সুযোগের বিষয়টি প্রচার করার পাশাপাশি আগ্রহী মার্কিন কোম্পানিগুলো যাতে বৈধ ও স্বচ্ছতার সঙ্গে এসব কাজ পেতে পারে, সেই চেষ্টা করবে।"

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

'হাসিনা-খালেদা চক্র ভাঙার পথ ইউনূস'

উইকিলিকসের তথ্য

- মুহাম্মদ ইউনূসের রাজনীতিতে প্রবেশকে বাংলাদেশে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার ক্ষমতা বলয় ভাঙার উপায় হিসেবে দেখেছিলো যুক্তরাষ্ট্র। উইকিলিকসের ফাঁস করা একটি কূটনৈতিক তার বার্তায় বেরিয়ে এসেছে এ তথ্য।

ভারতের প্রভাবশালী দৈনিক হিন্দুতে প্রকাশিত ওই বার্তা থেকে জানা গেছে, রাজনীতিতে প্রবেশের সময় ইউনূস ধারণা করেছিলেন যে, তিনি দুই নেত্রীর বাজে প্রতিক্রিয়ার শিকার হতে পারেন।

২০০৭ সালের ১৩ ফেব্র"য়ারি যুক্তরাষ্ট্রের কলকাতা কনস্যুলেট থেকে ওয়াশিংটনে পাঠানো এক গোপন বার্তায় এ সব কথা বলেন কনস্যুলার জেনারেল হেনরি জারদাইন।

এর মাত্র দুদিন আগে জরুরি অবস্থার মধ্যে শান্তিতে নোবেল জয়ী ইউনূস রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দেন।

'নাগরিক শক্তি' নামের রাজনৈতিক দল গঠনের ঘোষণা দেওয়ার পর তিনি কলকাতা সফরে যান। ১১-১২ ফেব্র"য়ারি কলকাতা চেম্বার অব কমার্সের (সিসিসি) ১৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দেন গ্রামীণ ব্যাংক ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

সফরে কলকাতা চেম্বার অব কমার্স আয়োজিত মধ্যাহ্নভোজে জারদাইন ও ইউনূসের মধ্যে আলোচনার খুঁটিনাটি তুলে ধরা হয়েছে এই তার বার্তায়।

এতে বলা হয়, ওই ভোজসভায় ইউনূসের রাজনৈতিক পরিকল্পনার বিষয়ে জানতে চান হেনরি জারদাইন। জবাবে ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী ইউনূস ঝুঁকি আঁচ করতে পারছেন বলে জানান।

তিনি স্বীকার করেন, এজন্য দুই নেত্রীসহ ( শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া) প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের কাছ থেকে 'বাজে প্রতিক্রিয়া' আসতে পারে।

তবে 'দুঃশাসন আর দুর্নীতির' কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি সত্যিকারের পরিবর্তন আনার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করতে পারছেন বলে জানান তিনি।

২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনাবাহিনীর সমর্থনে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যাপক পরিবর্তন ও দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারির ঠিক এক মাসের মাথায় ইউনূস রাজনৈতিক দল খোলার ঘোষণা দিলে দেশজুড়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। ব্যাপকভাবে বিশ্বাস করা হয়, সামরিক বাহিনীর মদদেই তিনি নাগরিক শক্তি নামের এ দল খোলার উদ্যোগ নিয়েছেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে ওই বছরের ৩ মে দল গড়ার পরিকল্পনা থেকে সরে আসার ঘোষণা দেন ইউনূস।

'জারদাইনের কাছে ইউনূস বলেন, দেশের শক্তিশালী দুই দলের নেতা শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়ার কারণে দেশে রাজনীতিতে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে এ থেকে পরিত্রাণ পেতে বহু মানুষের অনুরোধের কারণে তিনি রাজনীতিতে নামার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন,' বলা হয় ওই তার বার্তায়।

'ইউনূসের রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার পরিকল্পনার কথা জানতে পেরে কলকাতা চেম্বারের সভাপতি মনোজ মহাঙ্কা বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ইউনূসের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে কথা তোলেন।

'এর তাৎক্ষণিক জবাবে ইউনূস বলেন, রাজনীতিতে পা রাখার ঝুঁকি তিনি আঁচ করতে পারছেন। তবে দুঃশাসন আর দুর্নীতির কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়া বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি সত্যিকারের পরিবর্তন আনার দায়িত্বশীল কাউকে না কাউকে তো এগিয়ে আসতেই হবে।'

গ্রামীণ ব্যাংকের তৎকালীন প্রধান ইউনূস বাংলাদেশে জরুরি অবস্থা জারির পক্ষে সাফাই গেয়ে বলেন, এর মাধ্যমে দেশে একটি সম্ভাব্য গৃহযুদ্ধ এড়ানো গেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ওই কূটনীতিককে ইউনূস বলেন, বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ ধর্মীয় মৌলবাদীদের সমর্থন না করলেও প্রভাবশালী দলগুলো রাজনৈতিক স্বার্থেই তাদের সঙ্গে জোট গড়েছে।

২০০৬ সালের ডিসেম্বরে মৌলবাদী দল বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের (বিকেএম) সঙ্গে আওয়ামী লীগের 'চুক্তি' নিয়েও সমালোচনা করেন তিনি।

"এই সমঝোতার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নৈতিক ক্ষয় প্রতিফলিত হয়েছে, যা ছিলো অতিরিক্ত কিছু ভোট হাতিয়ে নেওয়ার বিশুদ্ধ রাজনৈতিক সমীকরণ। এবং এটি ছিল তার (ইউনূস) দল গঠনের পরিকল্পনার একটি কারণ কারণ।"

প্রসঙ্গ: বন্দর

ভোজসভার আলোচনায় আঞ্চলিক বাণিজ্যের স্বার্থে ভারত, মিয়ানমার, ভূটান ও চীনের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর উন্মুক্ত করে দেওয়ার পক্ষে মত দেন ইউনূস।

আঞ্চলিক প্রয়োজনীয়তা মেটাতে গ্রামীণ ব্যাংক চট্টগ্রামে একটি নতুন 'মেগা পোর্ট' প্রকল্পে অর্থায়নের সম্ভাব্যতা পর্যালোচনা করছে বলেও জানান ইউনূস।

বিভিন্ন বিষয়ে ড. ইউনূসের দৃষ্টিভঙ্গী তুলে ধরে তার বার্তার উপসংহারে বলা হয়, "তিনি একজন উচ্চ নৈতিকতা সম্পন্ন এবং সাংগঠননিকভাবে অত্যন্ত দক্ষ" মানুষ। আর ইউনূসের রাজনীতিতে প্রবেশ হতে পারে বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার পথ রূদ্ধ করে রাখা 'হাসিনা-খালেদা চক্র' ভাঙার একটি উপায়।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/

আরেকটি ১৫ ফেব্রুয়ারি চেয়েছিলেন খালেদা

উইকিলিকসে প্রকাশ্য

২০০৭ সালের শুরুর দিনগুলোতে দেশজুড়ে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মুখে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্র"য়ারির মতো একটি একতরফা নির্বাচন করে বিরোধী দলহীন স্বল্পমেয়াদী একটি সরকার গঠনের কথা ভেবেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। কিন্তু ২২ জানুয়ারির নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেওয়া আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা এ ধরনের কোনো প্রস্তাব মেনে নিতে রাজি ছিলেন না। ঢাকা থেকে ওয়াশিংটনে পাঠানো যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক রাষ্ট্রদূত প্যাট্রিসিয়া এ বিউটেনিসের গোপন তারবার্তা থেকে জানা গেছে এ তথ্য; উইকিলিকস যা প্রকাশ করেছে।

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জের হৈ চৈ ফেলে দেওয়া ওয়েবসাইট উইকিলিকস গত ৩০ অগাস্ট প্রায় দেড় লাখ নতুন কেবলের সঙ্গে বিউটেনিসের এ সংক্রান্ত দুটি বার্তাও প্রকাশ করেছে।

২০০৭ এর ১১ জানুয়ারি সামরিক হস্তক্ষেপে রাষ্ট্রপতি ইয়জউদ্দিন আহম্মদ দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন এবং ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে 'ওয়ান ইলেভেন' হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ওই তারিখের মাত্র দুই দিন আগে ৮ ও ৯ জানুয়ারি ওয়াশিংটনে দুটি বার্তা পাঠান যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত।

বিউটেনিস লেখেন, সেনাবাহিনী 'বিশ্বাসভঙ্গ' করে অভ্যুত্থান করতে পারে, কিংবা দুই নেত্রীকে নির্বাসনে পাঠানো হতে পরে- এমন কোনো আশঙ্কা মনে ঠাঁই দিতে প্রস্তুত ছিলেন না সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।

এ দুটি 'গুজব' উড়িয়ে দিয়েছিলেন শেখ হাসিনাও। বরং তিনি রসিকতা করে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসন দিলে তার জন্য ভালোই হবে, কেননা তাতে তিনি নাতনির সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন।

তখনকার নির্বাচন কমিশনের তফশিল অনুযায়ী ২২ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে বিএনপির অনমনীয় অবস্থান; আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা সামাল দিতে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের ব্যর্থতার মধ্যে ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনা এবং ৭ জানুয়ারি খালেদা জিয়ার সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেন বাংলাদেশে তখনকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্যাট্রিসিয়া বিউটেনিস ও ব্রিটিশ হাই কমিশনার আনোয়ার চৌধুরী।

উইকিলিকসে প্রকাশিত বার্তায় বলা হয়েছে, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সামরিক হস্তক্ষেপ কিংবা সামরিক আইন জারি এবং দুই নেত্রীকে দেশত্যাগে বাধ্য করার মতো সম্ভবনাগুলো নিয়ে খালেদা ও হাসিনাকে 'সতর্ক' করে 'রাজনৈতিক সমঝোতার' প্রস্তাব দেন এই দুই কূটনীতিক।

দুই নেত্রীকেই তারা বলেন, বিএনপি ও আওয়ামী লীগের একটি অংশের অনুরাধে তারা সমঝোতার প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন এবং তাদের দেশ সামরিক অভ্যুত্থানের মতো কোনো অসাংবিধানিক ঘটনায় সমর্থন বা উৎসাহ দেবে না।

বিউটেনিস ও আনোয়ার এও বলেন- কেবল দুই নেত্রীর সাহসী পদক্ষেপের মাধ্যমেই এ রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসান হতে পারে। তাদের রাজনৈতিক সমঝোতা হলেই দেশজুড়ে সহিংসতা এবং সামরিক অভ্যুত্থানের মতো পরিস্থিতি এড়ানো সম্ভব।

'খালেদার প্রস্তাব'

৭ জানুয়ারির একান্ত বৈঠকে কোনো ধরনের সামরিক অভ্যুত্থানের আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে খালেদা জিয়া পাল্টা অভিযোগ তোলেন- কথিত সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যই এ ধরনের গুজব ছড়াচ্ছে। তবে দুই রাষ্ট্রদূতই এ অভিযোগ অস্বীকার করেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিউটেনিসের পাঠানো বার্তায়।

খালেদা দুই কূটনীতিকের কাছে দাবি করেন, তিনি সব সময়ই আওয়ামী লীগের সঙ্গে বসতে প্রস্তুত ছিলেন, কিন্তু শেখ হাসিনা কখনোই সাড়া দেননি।

"এখন অনেক 'দোরি হয়ে গেছে' উল্লেখ করে খালেদা জিয়া সমঝোতার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন এবং ২২ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করেন। এর বদলে খালেদা প্রস্তাব দেন, পুনর্র্নিবাচিত হয়ে ক্ষমতায় গেলে আওয়ামী লীগের দাবি অনুযায়ী ভোটার পরিচয়পত্র প্রবর্তনসহ নির্বাচন কমিশনের সংস্কার করে ১২ থেকে ১৫ মাসের মধ্যে তিনি আবারো নির্বাচন দিতে পারেন।"

এর আগে ১৯৯৬ সালেও এভাবে একতরফা নির্বাচন করে সংক্ষিপ্ত মেয়াদের জন্য সরকার গঠন করেছিলেন খালেদা জিয়া। সাংবিধানিকভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা চালুর দাবিতে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ওই বছর ১৫ ফেব্র"য়ারির নির্বাচন বর্জন করলে বিএনপি অবশ্যম্ভাবীভাবে পুনর্র্নিবাচিত হয়। ওই সরকারের সংক্ষিপ্ত মেয়াদে সংবিধান সংশোধন করে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা চালু করে এবং জুনে আবারো নির্বাচন দেয়, যাতে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ।

উইকিলিকসের প্রকাশিত বার্তায় বিউটেনিস লিখেছেন, ২০০৭ এর ২২ জানুয়ারি একতরফা নির্বাচন হলে অনেকেই যে প্রশ্ন তুলবে- সে বিষয়ে সচেতন ছিলেন খালেদা। তবে তার যুক্তি ছিল, প্রশ্ন উঠলেও তার সেই সম্ভাব্য সরকার হবে সাংবিধানিকভাবে বৈধ।

আলোচনার এক পর্যায়ে বিউটেনিস প্রশ্ন রাখেন, দেশের প্রায় অর্ধেক ভোটার যদি ২২ জানুয়ারির নির্বাচন মেনে না নেয়, সেক্ষেত্রে বিএনপি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে কি-না।

"কিন্তু দেশের মোট ভোটারের ৪০ শতাংশ আওয়ামী লীগকে সমর্থন দেবে- এমন সম্ভবনা হেসেই উড়িয়ে দেন খালেদা জিয়া। বড় ধরনের গণ আন্দোলন গড়ে তোলার ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সামর্থ্য নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি।"

দুই কূটনীতিক বিএনপি চেয়ারপার্সনকে জানান, সংবিধান পরিপন্থী যে কোনো ঘটনা এড়াতেই তারা রাজনৈতিক সমঝোতার প্রস্তাব নিয়ে এসেছেন। এসব বিষয়ে শেখ হাসিনার সঙ্গেও কথা বলেছেন তারা।

নিজের সরকারের কাছে পাঠানো বার্তায় মন্তব্যের অংশে বিউটেনিস লিখেছেন, বিএনপির একতরফা নির্বাচন পরিকল্পনার সমালোচনা করায় খালেদা জিয়া যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন বলে জানতে পেরেছেন তারা। খালেদা জিয়ার ধারণা হয়েছিল, আওয়ামী লীগের পিঠ এবার সত্যি সত্যি দেওয়ালে ঠেকে গেছে এবং এ অবস্থা থেকে তারা আর ফিরে আসতে পারবে না।

'তার চেয়ে সেনা হস্তক্ষেপ শ্রেয়'

খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনার আগের দিন শেখ হাসিনার সঙ্গে বসে তাকে একই বিষয়ে সতর্ক করে সমঝোতার প্রস্তাব দেন বিউটেনিস ও আনোয়ার চৌধুরী। কিন্তু নির্বাসনে পাঠানোর সম্ভবনার বিষয়টি হেসেই উড়িয়ে দেন হাসিনা। সামরিক অভ্যুত্থানের আশঙ্কা নিয়েও দুই কূটনীতিকের সঙ্গে হালকা মেজাজে কথা বলেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী।

৮ জানুয়ারি ওয়াশিংটনে পাঠানো বার্তায় বিউটেনিস লেখেন, "হাসিনা পুরো বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন। এমনকি দেশত্যাগে বাধ্য করার গুঞ্জনের বিষয়ে তিনি রনিসকতা করে বলেছেন, সেরকম কিছু হলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে নাতনির সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন। নিজের নিরাপত্তার বিষয়টিতেও খুব একটা গুরুত্ব দেননি তিনি। সরাসরি সেনা হস্তক্ষেপ বা জরুরি অবস্থা জারির সম্ভবনা প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, সেনাবাহিনী যদি হস্তক্ষেপ করেই এবং তারা যদি পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতেই পারে- তাহলে সেটা ভালোই হবে।"
একবার ক্ষমতায় আসলে সেনাবাহিনী স্বেচ্ছায় আবার রাজনীতিবিদদের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেবে- এমনটা কেন ভাবছেন জানতে চাইলে হাসিনা মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে বলেন, তেমন কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে না বলেই তার বিশ্বাস, কেননা অভ্যুত্থান করার মতো বলিষ্ঠ কোনো নেতা সেনাবাহিনীতে নেই বলে মনে করেন তিনি।

তাছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর করতে যে সময় প্রয়োজন তার বেশি সেনাবাহিনী ক্ষমতায় থাকতে চাইলে জনগণও তা মেনে নেবে না বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।

দুই কূটনীতিককে তিনি বলেন, তেমন কিছু ঘটার পর সেনাবাহিনী ক্ষমতা ছাড়তে রাজি না হলে 'দেশে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়বে, রক্তপাত হবে, পুরো রাষ্ট্রই ভেঙে পড়বে'।

২০০৬ সালের শেষ দিকে বিএনপি ক্ষমতা ছাড়ার পর রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব নিলে যে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা তৈরি হয়- সে জন্য বিএনপিকেই দায়ী করে শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, বিএনপি জানতো যে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগই জিতবে। এ কারণে তারা যাতে নির্বাচনে অংশ না নিতে পারে- সুপরিকল্পিতভাবে তেমনন পরিস্থিতিই সৃষ্টি করেছে বিএনপি।

রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ আবার বিএনপির হাতে ক্ষমতা তুলে দিতেই ২২ জানুয়ারি নির্বাচন আয়োজন করতে চাচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন হাসিনা।

আপাতত একতরফা নির্বাচন হলেও বিএনপি ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগের দাবি পূরণ করে এক বছরের মধ্যে আবারো নির্বাচন দিতে পারে- এমন সম্ভবনার কথা তুলে ধরে দুই কূটনীতিক শেখ হাসিনার কাছে জানতে চান- খালেদা জিয়া কোনো সমঝোতার প্রস্তাব দিলে আওয়ামী লীগ তা মানবে কি না।

"জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি বরং সামরিক হস্তক্ষেপের মতো বিকল্প নিয়ে ভাবতে রাজি, বিএনপিকে আবারো ক্ষমতায় যেতে দিতে নয়," লিখেছেন বিউটেনিস।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/

সেনা সমাধানে বিদেশি হস্তক্ষেপ চেয়েছিলো 'তারা'

ঢাকা, সেপ্টেম্বর ০৫ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- ২০০৭ সালে সংঘাতপূর্ণ রাজনৈতিক পরিস্থিতির সামরিক সমাধানে বিদেশি হস্তক্ষেপ চেয়েছিলো বিভিন্ন রাজনৈতিক গোষ্ঠী, সুশীল সমাজ ও ব্যবসায়ী সম্প্রদায়।

বাংলাদেশে জরুরি অবস্থা জারির দিন (২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি) ঢাকা থেকে ওয়াশিংটনকে এক তারবার্তায় এ কথাই জানিয়েছিলেন বাংলাদেশে তৎকালীন রাষ্ট্রদূত প্যাট্রিসিয়া এ বিউটেনিস।

ওইসময় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় দেশে সাংবিধানিকভাবে সেনাবাহিনী নিয়োজিত ছিল বলে বার্তায় জানান বিউটেনিস।

বার্তায় তিনি বলেন, 'জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তারা এখন পর্যন্ত বাহিনীকে রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ এবং অসাংবিধানিক কার্যক্রম থেকে বিরত রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।'

২০০৭ এর ১১ জানুয়ারি সামরিক হস্তক্ষেপে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ দেশে জরুরি অবস্থা জারি করেন এবং ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকার দায়িত্ব নেয়।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে 'ওয়ান ইলেভেন' হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ওই তারিখের মাত্র দুই দিন আগে ৮ ও ৯ জানুয়ারি ওয়াশিংটনে দুটি বার্তা পাঠান যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত।

বিউটেনিস লেখেন, সেনাবাহিনী 'বিশ্বাসভঙ্গ' করে অভ্যুত্থান করতে পারে, কিংবা দুই নেত্রীকে নির্বাসনে পাঠানো হতে পরে- এমন কোনো আশঙ্কা মনে ঠাঁই দিতে প্রস্তুত ছিলেন না সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া।

এ দুটি 'গুজব' উড়িয়ে দিয়েছিলেন শেখ হাসিনাও। বরং তিনি রসিকতা করে বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসন দিলে তার জন্য ভালোই হবে, কেননা তাতে তিনি নাতনির সঙ্গে সময় কাটাতে পারবেন।

তখনকার নির্বাচন কমিশনের তফশিল অনুযায়ী ২২ জানুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যাপারে বিএনপির অনমনীয় অবস্থান; আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটের নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা সামাল দিতে রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদের ব্যর্থতার মধ্যে ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনা এবং ৭ জানুয়ারি খালেদা জিয়ার সঙ্গে একান্তে বৈঠক করেন বাংলাদেশে তখনকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত বিউটেনিস ও ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী।

তিন গোষ্ঠীর প্রস্তাব

বিউটেনিস তার বার্তায় বলেন, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা মার্কিন দূতাবাসসহ অন্যান্য দেশের দূতাবাসে যোগাযোগ করেছেন। তারা বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সামরিক সমাধান চান; সুশীল সমাজ ও ব্যবসায়ী স¤প্রদায়েরও এ ক্ষেত্রে একই মত।

'তাদের মত হলো রাষ্ট্রপতি/প্রধান উপদেষ্টা ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে (ক) ছয় মাস থেকে দুই বছরের জন্য নির্বাচন পেছানোয় বাধ্য করা; (খ) তার তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধানের পদ ছাড়া এবং (গ) [তত্ত্বাবধায়ক সরকারের] নতুন একজন প্রধান ও সরকার এবং/কিংবা একটি জাতীয় ঐক্যের সরকার প্রতিষ্ঠা।'

এছাড়া একটি পরামর্শ ছিলো বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাকে বিদেশে নির্বাসনে পাঠানো। একইসঙ্গে এরকম পরামর্শও ছিলো যে দেশে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার বা ২২ জানুয়ারির নির্বাচনের পর নব নির্বাচিত বিএনপি সরকার জরুরি অবস্থা জারি করুক; যাতে সামরিক বাহিনীর এক বড় ধরনের রাজনৈতিক ভূমিকা থাকবে। এমনকি সামরিক শাসন কিংবা অভ্যুত্থানের পরামর্শও ছিলো।

বিউটেনিস তার বার্তায় বলেন, 'আমেরিকার সংকেত ছাড়া [এতে] যুক্ত হতে ইতস্তত বোধ করছে সামরিক বাহিনী।'

তবে বিউটেনিস এবং দূতাবাসের অন্য কর্মীরা রাজনীতিক ও সেনা কর্মকর্তাদের বলেন, তারা সামরিক বাহিনীর কোনো ধরনের অসাংবিধানিক ভূমিকা সমর্থন করেন না। যুক্তরাষ্ট্রের মতে, সেনাবাহিনীকে সংবিধানের আওতায় বেসামরিক সরকারের সমর্থনে ও অধীনে কাজ করতে হবে।

জরুরি অবস্থা জারির কয়েকদিন আগে (৭ জানুয়ারি) বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার মেজর জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে দেখা করেন রাষ্ট্রদূত বিউটেনিস।

তারবার্তায় বিউটেনিস জানান, ওই সাক্ষাতে [রাজনৈতিক ওই পরিস্থিতিতে] সামরিক হস্তক্ষেপের বিরুদ্ধে তাদের [যুক্তরাষ্ট্রের] অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করা হয়।

সেনাবাহিনীর দুই শীর্ষকর্তার সঙ্গে সাক্ষাৎ

ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের প্রতিরক্ষা বিষয়ক কর্মকর্তা ৯ জানুয়ারি তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন উ আহমেদের সঙ্গে দেখা করেন বলে বার্তায় জানান বিউটেনিস।

তিনি বলেন, দুই সেনা কর্মকর্তাই বলেছেন, ক্ষমতা, সামরিক শাসন বা অভ্যুত্থান বা অন্য কোনো ধরনের অসাংবিধানিক পন্থার প্রতি সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে আগ্রহ নেই। তারা এ ধরনের কোনো পদক্ষেপ সমর্থনও করবেন না।

'ঢাকায় বৃটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর সঙ্গে ৮ জানুয়ারি তার এ ধরনের আলোচনা হয়েছে বলেও জানান মইন উ আহমেদ।'

জরুরি অবস্থা জারি না করার অনুরোধ

ওয়াশিংটনে পাঠানো তারবার্তায় বিউটেনিস লেখেন, প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার জাহাঙ্গীর বলেছেন, তিনি রাষ্ট্রপতিকে বলেছেন তিনি যেন জরুরি অবস্থা জারি না করেন। কেননা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বেসামরিক বাহিনীকে সামরিক বাহিনীর সহায়তা এর মাধ্যমে আরো কার্যকর হওয়ার সুযোগ নেই।

জরুরি অবস্থা থেকে উত্তরণের কোনো স্পষ্ট পথও নেই বলে মনে করেন জাহাঙ্গীর।

বিউটেনিস তার বার্তায় লেখেন, [এ] রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে জরুরি অবস্থার প্রয়োজন নেই উল্লেখ করলেও সেনাবাহিনী জরুরি পরিস্থিতি মোকাবেলার পরিকল্পনা করছে বলে স্বীকার করেন মইন।

'কেবল নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হলেই জরুরি অবস্থা হতে পারে বলে মনে করেন মইন। তবে ২২ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে এমন হতে পারে বলে তার মনে হয় না। তিনি বরং নির্বাচনোত্তর গণ অসন্তোষ নিয়ে বেশি উদ্বিগ্ন।'

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের অনুরোধে তার সঙ্গে দেখা করেছিলেন বিউটেনিস- এ তথ্য উল্লেখ করে বার্তায় রাষ্ট্রদূত বলেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির সমাধান হিসেবে একটি সেনা সমর্থিত জাতীয় ঐক্যের সরকারের প্রস্তাব দিয়েছেন।

জবাবে বিউটেনিস বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সামরিক বাহিনীর কোনো ধরনের অসাংবিধানিক ভূমিকার তীব্র বিরোধী এবং এই রাজনৈতিক অচলাবস্থার সমাধান শুধু রাজনৈতিকভাবেই।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম/

সেনা হস্তক্ষেপের তথ্যে ক্ষুব্ধ হন খালেদা, উড়িয়ে দেন হাসিনা


মার্কিন তারবার্তার তথ্য
রাজনৈতিক দলগুলোর কিছু নেতা সামরিক বাহিনীর সহায়তায় দুই নেত্রীকে রাজনৈতিকভাবে নির্বাসনে পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছেন—এমন তথ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন খালেদা জিয়া। আর শেখ হাসিনা বিষয়টিকে রসিকতা করে উড়িয়ে দেন। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া আবার ক্ষমতায় আসার চেয়ে সেনাবাহিনী আসাই বরং ভালো।
২০০৭ সালের ৭ জানুয়ারি ঢাকায় নিযুক্ত তখনকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত প্যাট্রিসিয়া এ বিউটেনিস ও ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী খালেদা জিয়ার সঙ্গে বৈঠক করেন। এর আগের দিন তাঁরা বসেন শেখ হাসিনার সঙ্গে। উইকিলিকসের ফাঁস করা ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের তারবার্তায় এ তথ্য পাওয়া গেছে।
দুই কূটনীতিক খালেদাকে জানান, রাজনৈতিক দলগুলো থেকেই কিছু নেতা তাঁদের কাছে গিয়ে সামরিক বাহিনীর সহায়তায় দুই নেত্রীকে রাজনৈতিকভাবে নির্বাসনে পাঠানোর পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। তারবার্তায় বলা হয়েছে, বিষয়টি শুনে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখান খালেদা। তিনি যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও সুশীল সমাজকে এ ধরনের গুঞ্জনে উৎসাহ দেওয়ার দায়ে অভিযুক্ত করেন। উভয় কূটনীতিক এই অভিযোগ স্পষ্ট ভাষায় নাকচ করে দেন।
তারবার্তার ওই বৈঠকের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, বিরোধী দলের সঙ্গে রাজনৈতিক সমঝোতার জন্য আন্তর্জাতিক মহলের পরামর্শ সত্ত্বেও ২০০৭ সালের ২২ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচন করতে অটল ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তবে তিনি ক্ষমতায় গেলে নির্বাচনী আইন সংস্কার করে ১২ থেকে ১৫ মাসের মধ্যে নতুন নির্বাচনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তাঁদের কাছে।
তারবার্তায় বলা হয়েছে, খালেদা জিয়া কূটনীতিকদের কাছে স্বীকার করেন, তাঁর দলের অনেক নেতা ক্ষুব্ধ হয়ে থাকতে পারেন, কিন্তু তিনি তাঁদের দলের মধ্যকার ‘বাজে উপাদান’ বলে নাকচ করে দেন।
সামরিক অভ্যুত্থান ও সহিংসতা এড়াতে দুই প্রধান রাজনৈতিক দলের বড় ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে খালেদাকে জানানো হয়। বিউটেনিস ও আনোয়ার চৌধুরী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তাব দেন খালেদাকে। কিন্তু নির্বাচনের আগে শেখ হাসিনার সঙ্গে কোনো ধরনের আলোচনার সম্ভাবনা নাকচ করে দেন খালেদা জিয়া। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময় আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনায় প্রস্তুত, কিন্তু আওয়ামী লীগ আলোচনায় বসতে চায় না।’
খালেদা বলেন, তাঁরা সব সময় চেয়েছেন আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিক, কিন্তু এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে। ২২ জানুয়ারিতেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বিউটেনিস ও আনোয়ার চৌধুরী আগের দিন ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করেন। অভ্যুত্থান ও নির্বাসনে পাঠানোর আশঙ্কার তথ্য জানালে শেখ হাসিনাও তা নাকচ করে দেন, তবে ব্যক্তিগত নিরাপত্তার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসনে পাঠানো হতে পারে, এমন কথা শুনে রসিকতা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘সেখানে আমি আমার নাতনিকে দেখতে পাব।’
শেখ হাসিনা দুই কূটনীতিককে বলেন, সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে যদি ‘বর্তমান পরিস্থিতি ঠিক হয়ে যায়’ তা-ও ভালো। মার্কিন রাষ্ট্রদূতের এক প্রশ্নের জবাবে হাসিনা বলেন, এখন সামরিক অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়ার মতো ক্ষমতা কোনো সেনা কর্মকর্তার নেই। তা ছাড়া সেনাবাহিনী এলেও রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকলে জনগণ তা মেনে নেবে না। সেনাবাহিনী ক্ষমতা ছাড়তে না চাইলে সহিংসতা ও রক্তপাত হবে, দেশ ধ্বংস হয়ে যাবে।
শেখ হাসিনা মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও ব্রিটিশ হাইকমিশনারকে জানান, বিএনপি নির্বাচনে জেতার জন্য সব পরিকল্পনা করেছে। সেই পরিকল্পনামতো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ। এ বিষয়টি আওয়ামী লীগ তথা মহাজোটকে নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করেছে। শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি চায় না আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিক। কারণ, তারা জানে, নির্বাচনে আমরাই জয়ী হব।’
শেখ হাসিনা অভিযোগ করেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ও রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদ উপদেষ্টাদের কথা শুনছেন না, তিনি বিএনপির কথামতো চলছেন। রাষ্ট্রপতি শুধু একটি নির্বাচন করে খালেদা জিয়ার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে চান। এ অবস্থায় নির্বাচন বর্জন করা ছাড়া মহাজোটের বিকল্প কোনো পথ নেই।
বিএনপির প্রস্তাবমতো ২২ জানুয়ারি নির্বাচন হওয়ার পর নির্বাচনী সংস্কার শেষে এক বছরের মধ্যে নতুন নির্বাচনের সম্ভাবনার কথা জানানো হলে শেখ হাসিনা তা নাকচ করে দেন। শেখ হাসিনা বলেন, খালেদা জিয়ার ক্ষমতায় ফিরে আসার চেয়ে তিনি সেনাবাহিনীর সংশ্লিষ্টতায় বর্তমান সমস্যা সমাধানকে সমর্থন করবেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদকে নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার জন্য মহাজোট নির্বাচন বর্জন করেছে—এমন কথা নাকচ করে দেন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দিন আহম্মেদকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে প্রথমে মেনে নেওয়ায় দলের সমর্থকেরা তাঁকে দোষারোপ করেছেন।
এর আগে শেখ হাসিনা নির্বাচন পর্যবেক্ষণের আহ্বান জানিয়ে জাতিসংঘের মহাসচিবের কাছেও চিঠি লিখেছিলেন। prothom-alo.com

 খালেদার বড় ব্যর্থতা ‘দুর্নীতিগ্রস্ত’ ছেলেকে প্রশ্রয়

২০০৫ সালে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুখ্য সচিব কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী যুক্তরাষ্ট্রের তত্কালীন রাষ্ট্রদূত হ্যারি কে টমাসকে বলেন, দুর্নীতিগ্রস্ত ছেলেকে (তারেক রহমান) প্রশ্রয় ও মদদ দেওয়াই প্রধানমন্ত্রীর বড় রাজনৈতিক ব্যর্থতা। তিনি আরও বলেন, দেশটির গণতন্ত্রের এ নতুন পথচলায় পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতি ভালো নয়। সাড়া জাগানো ওয়েবসাইট উইকিলিকসে গত ৩০ আগস্ট ফাঁস হওয়া তথ্যে এ কথা জানা গেছে।
তথ্যে দেখা যায়, ২০০৫ সালের ১৩ মার্চ হ্যারি কে টমাসের সঙ্গে কামাল উদ্দিনের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ৪০ মিনিট কথা হয়। এ সময় টমাস কামালউদ্দিনকে অবহিত করেন, ‘ওয়াশিংটনে মার্কিন জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসার অনুরোধ করেছিলেন তারেক রহমান। তবে প্রটোকল ও অন্যান্য কারণে এ বৈঠক আয়োজন করা সম্ভব হবে না।’ Prothom-alo

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More