Total Pageviews

Feedjit Live

Tuesday, July 26, 2011

এ সম্মান সবার(ইন্দিরা গান্ধীকে দেওয়া পুরস্কার হাতে সোনিয়া)

রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের কাছ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অনন্য অবদান রাখার জন্য গতক� রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের কাছ থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অনন্য অবদান রাখার জন্য গতকাল ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধীকে দেওয়া ‘বাংলাদেম স্বাধীনতা সম্মাননা পুরস্কার’ গ্রহণ করেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী
ছবি: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সৌজন্যে
বঙ্গভবনের হলওয়ে আর ক্রেডেনশিয়াল হলের দেয়ালে শোভা পাচ্ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ইন্দিরা গান্ধীর দুর্লভ কিছু ছবি। সেই সঙ্গে ফ্রেমে বন্দী ছিল সেই সময়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত বাংলাদেশের মুক্তিসংগ্রাম ও ভারতের ভূমিকার আখ্যান।
দুটি কক্ষেই প্রতিফলিত হচ্ছিল বন্ধুর লড়াইয়ে বন্ধুর হাত বাড়িয়ে দেওয়া। ফিরে এসেছিল চার দশক আগের দুনিয়া কাঁপানো সেই সব দিন। তাই কাল বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে বঙ্গভবনে পা রেখেই চার দশক আগে ফিরে গিয়েছিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। উপলক্ষ, শাশুড়ি ইন্দিরা গান্ধীর পক্ষে ‘বাংলাদেশ স্বাধীনতা সম্মাননা’ গ্রহণ। মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য অবদানের জন্য গতকাল সোমবার বিকেলে ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে দেওয়া হয় এই সম্মাননা।
ইন্দিরা গান্ধীর পুত্রবধূর হাতে পুরস্কার তুলে দিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান বলেন, তাঁকে সম্মান জানিয়ে এ দেশ নিজেও সম্মানিত হচ্ছে। আর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমাদের দুঃসময়ে ইন্দিরা গান্ধী অভিভাবক হিসেবে অমূল্য সহায়তা দিয়ে আমাদের চিরকৃতজ্ঞ করেছেন।’
বঙ্গভবনের দরবার হলে গতকাল এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি বিদেশিদের জন্য বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘বাংলাদেশ স্বাধীনতা সম্মাননা’ (মরণোত্তর) তুলে দেন সোনিয়া গান্ধীর হাতে। ‘বাংলাদেশ স্বাধীনতা সম্মাননা’ হিসেবে ১৮ ক্যারেটের ২০০ ভরি ওজনের স্বর্ণ দিয়ে তৈরি পদক ও তিন পৃষ্ঠার একটি মানপত্র দেওয়া হয়। সৌহার্দ্য, শান্তি ও অর্জনের প্রতীক হিসেবে কদমগাছের নকশাসংবলিত ষোড়শ শতাব্দীর টেরাকোটার আদলে তৈরি পদকের নকশা করেছেন শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী ও হাশেম খান।
পুরস্কার গ্রহণের পর আবেগাপ্লুত সোনিয়া ফিরে যান চার দশক আগের বিশেষ এক দিনে। তিনি বলেন, ‘১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি লন্ডন থেকে ঢাকায় ফেরার পথে দিল্লিতে যাত্রাবিরতি করেন বঙ্গবন্ধু। স্বামী রাজীব গান্ধীর সঙ্গে বিমানবন্দরে আমি উপস্থিত ছিলাম।’
সোনিয়া গান্ধী বলেন, ‘আজ যদি ইন্দিরা গান্ধী আমাদের মাঝে থাকতেন, আমি জানি, যে আসামান্য সম্মান আপনারা তাঁকে দিয়েছেন, তাতে তিনি অসম্ভব খুশি হতেন। বঞ্চিত মানুষের স্বাধীনতা এবং একটি দেশের অভ্যুদয়ে অবদানের জন্য স্বীকৃতির চেয়ে মূল্যবান আর কিছুই হতে পারে না। তাই তাঁর পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করার সুযোগ পেয়ে নিজেকে গর্বিত মনে করছি।’
সোনিয়া বলেন, নানা হুমকি ও চাপের পরও অবিচল থেকে বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের প্রতি সব সময় বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে রেখেছিলেন ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী। তিনি বলেন, ‘আপনাদের বিজয় ও মুক্ত বাংলাদেশ ইন্দিরা গান্ধীর শ্রেষ্ঠতম অর্জন। এই সম্মান ইন্দিরা গান্ধীর একার নয়, ভারতের সবার।’
রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধে মহান অবদানের জন্য শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধীকে সম্মান জানিয়ে আমরা নিজেদের সম্মানিত করি এবং আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের গৌরবোজ্জ্বল স্মৃতিগাথায় ফিরে যাই।’
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘আজ আমরা এখানে এক বিশাল ব্যক্তিত্বকে গভীর শ্রদ্ধা জানাতে সমবেত হয়েছি। আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধে তাঁর অবদান অনন্য, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও একক।’ তিনি বলেন, ‘তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা ও দূরদৃষ্টি দিয়ে তিনি ইতিহাসের ধারা এবং পরবর্তী প্রজন্মের ভাগ্যকে প্রভাবিত করেছেন। তিনি শুধু লাখ লাখ বাংলাদেশির জন্য ভারতের দরজাই উন্মুক্ত করেননি, আমাদের প্রবাসী সরকারকে নৈতিক সমর্থন এবং সাজসরঞ্জাম দিয়ে সহায়তা করেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘মহান মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদানের জন্য ইন্দিরা গান্ধীকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সম্মাননা দিতে পেরে আমরা নিজেরাও সম্মানিত বোধ করছি। আমি ব্যক্তিগতভাবে এবং বাংলাদেশের জনগণের পক্ষ থেকে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, একাত্তরে ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে এবং পাকিস্তানে জেলে আটক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্তির লক্ষ্যে বিশ্ব জনমত গঠনের জন্য সারা বিশ্ব সফর করেছিলেন।
পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর অত্যাচার-নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সীমান্ত অতিক্রমকারী বাংলাদেশের প্রায় এক কোটি শরণার্থীকে ভারত শুধু আশ্রয়ই দেয়নি, বাংলাদেশ সরকারকে কূটনৈতিক, সামরিক ও মানসিক সহায়তাও দিয়েছিল। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ-ভারত মিত্রবাহিনীর যেসব ভারতীয় সেনাসদস্য আত্মদান করেছেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের মাত্র তিন মাসের মধ্যে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ থেকে ভারতীয় সেনাবাহিনী প্রত্যাহার করে নেন। সমসাময়িক বিশ্ব-ইতিহাসে এটি একটি নজিরবিহীন ঘটনা। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের জন্য ভারতের অসামান্য অবদান ভুলবার নয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট ঘাতকেরা আমার বাবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার পর ইন্দিরা গান্ধী আমার ছোট বোন শেখ রেহানা ও আমার পরিবারকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। আমাদের দুঃসময়ে ইন্দিরা গান্ধী অভিভাবক হিসেবে এই অমূল্য সহায়তা দিয়ে আমাদের চিরকৃতজ্ঞতার পাশে আবদ্ধ করেছেন।’
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বিদ্যমান সুসম্পর্ক ভবিষ্যতে আরও সুদৃঢ় হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
শেখ হাসিনার বক্তব্যের পর বঙ্গবন্ধু ও ইন্দিরা গান্ধীর দুর্লভ কিছু মুহূর্ত নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হয়।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এ বি তাজুল ইসলাম অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন। বাংলাদেশ স্বাধীনতা সম্মাননাপত্র পাঠ করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব আবদুল আজিজ।
অনুষ্ঠানে মন্ত্রী, সাংসদ, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষাবিদ, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, শিল্পী এবং পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাসহ দেশি-বিদেশি অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।

0 comments:

Post a Comment

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More