Total Pageviews

Feedjit Live

Tuesday, July 26, 2011

সরকারের কাছে আর কিছু চান না এরশাদ

মহাজোটের অন্যতম শরিক জাতীয় পার্টি আগামী সংসদ নির্বাচন এককভাবে করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আবার জোট-মহাজোটের রাজনীতি চালু থাকলে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটেই থাকতে চান দলটির প্রধান সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ। তবে রাজনৈতিক সতর্কতা হিসেবে জাতীয় পার্টি এখন আর সরকারের কাছ থেকে মন্ত্রিত্ব বা অন্য কোনো সুবিধা নিতে চায় না।
জাতীয় পার্টির একজন নেতা প্রথম আলোকে বলেন, এক বছর আগেও জাতীয় পার্টি থেকে আরেকজনকে মন্ত্রী করার জন্য অনুরোধ করে এইচ এম এরশাদ চিঠি লিখেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। কিন্তু এখন সরকার থেকে দেওয়া মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব সবিনয়ে ফিরিয়ে দিচ্ছেন তিনি। এটি জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক অবস্থানের একটি বড় ধরনের পরিবর্তন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল গত বৃহস্পতিবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এরশাদের সঙ্গে বৈঠক করে। বৈঠকে জাতীয় পার্টি তার এ অবস্থান স্পষ্ট করে জানায় আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদলকে। সূত্র জানায়, বৈঠকে এরশাদের পক্ষ থেকে বলা হয়, মহাজোটের অন্যতম শরিক হলেও জাতীয় পার্টিকে তেমন কিছু দেওয়া হয়নি। এতে জাতীয় পার্টির প্রতি ‘সাধারণ মানুষের এ ধরনের সহানুভূতি’ সৃষ্টি হয়েছে। এই সহানুভূতিকে এখন অন্য কিছু পাওয়ার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করছেন এরশাদ।
এইচ এম এরশাদের বারিধারার বাসভবনে গত ২১ জুলাই যান আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের ও স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক। তাঁরা মহাজোটকে শক্তিশালী করতে সরকারের জাতীয় পার্টির অংশগ্রহণ আরও বাড়ানোর ওপর গুরুত্ব দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে তাঁরা ওই আলোচনা করছেন বলে এরশাদকে জানান।
বৈঠক সূত্র জানায়, জাতীয় পার্টিকে মহাজোট সরকারে আরও এক থেকে দুটি মন্ত্রীর পদ দেওয়া ছাড়াও এরশাদকে একটি সম্মানজনক অবস্থান দেওয়া নিয়েও আলোচনা হয়। বর্তমান মহাজোট সরকারে জাতীয় পার্টির মন্ত্রী রয়েছে একজন। এরশাদের অনুজ জি এম কাদের, তিনি বেসরকারি বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন। সংসদে জাতীয় পার্টির আসন সংখ্যা ২৯।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠক সম্পর্কে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ প্রথম আলোকে বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে এ মুহূর্তে জাতীয় পার্টি বর্তমান সরকারে আর কোনো মন্ত্রিত্ব বা অন্য কোনো কিছু নিতে চায় না। কারণ, জাতীয় পার্টি আগামী নির্বাচনে এককভাবে অংশ নিতে চায়। এরশাদ বলেন, ‘দেশের যেখানেই যাই, মানুষ বলে, আগামী নির্বাচন যেন জাতীয় পার্টি এককভাবে করে।’
বিএনপির সঙ্গে যোগাযোগের প্রসঙ্গে এরশাদ বলেন, জাতীয় পার্টি জোটবদ্ধ রাজনীতি করলে মহাজোটেই থাকবে। বের হলে এককভাবে নির্বাচন করবে। সে ক্ষেত্রে জাতীয় পার্টির সামনে বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন তিনি। বিএনপির সঙ্গে যাওয়ার প্রশ্নই আসে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ সরকার কিছু ভালো কাজ করলেও তার জনপ্রিয়তা কমছে। তার মানে এই নয় যে, বিএনপির জনপ্রিয়তা বেড়েছে। বিকল্প হিসেবে মানুষ এখন জাতীয় পার্টির কথা ভাবে বলে দাবি করেন এরশাদ।
এরশাদের সঙ্গে বৈঠক সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের গতকাল সোমবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘মহাজোটকে আরও সক্রিয় করতেই ওই বৈঠক হয়েছিল। এরশাদ সাহেব আমাদের জানিয়েছেন, তিনি মহাজোটেই থাকবেন। তবে এর জন্য তিনি তাঁর দল থেকে নতুন করে কোনো মন্ত্রীর পদ বা অন্য কিছু নিতে চান না।’
এরশাদের একক নির্বাচনের পরিকল্পনা সম্পর্কে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘জোটে থাকলে তিনি মহাজোটেই থাকবেন। নইলে একক নির্বাচন করবেন—এ কথা তিনি আমাদের বলেছেন।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, আওয়ামী লীগ পরবর্তী নির্বাচন নয়, পরবর্তী প্রজন্মের কথা চিন্তা করে কাজ করছে। সে কারণে দারিদ্র্য, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদসহ অভিন্ন কিছু ইস্যু নিয়ে সব দল-মতের মানুষের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছে।
জাতীয় পার্টি সূত্রে জানা গেছে, জাতীয় পার্টি এককভাবে নির্বাচন করার প্রাথমিক প্রস্তুতি শুরু করেছে। ইতিমধ্যে ৬০টি জেলায় দলের কমিটি গঠনের কাজ শেষ হয়েছে। অধিকাংশ উপজেলায়ও কমিটি গঠনের কাজ শেষ করেছে তারা। ৩০০ নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থীর তালিকা প্রণয়নের প্রাথমিক কাজও শুরু হয়েছে বলে জানান দলের একাধিক নেতা।
জাতীয় পার্টির এই নেতাদের মতে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে। আর ওই নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা কম। ফলে ওই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি এককভাবে অংশ নিয়ে বিরোধী দল হোক, এটা আওয়ামী লীগও চাইবে। আর এ সুযোগ কাজে লাগাতে চায় জাতীয় পার্টি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন নেতা বলেন, বর্তমানে সরকারের বিরুদ্ধে মানুষের যে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে, তাতে আগামী নির্বাচনে জাতীয় পার্টি নিজস্ব ভোটের পাশাপাশি অনেক ‘নেগেটিভ ভোট’ও পাবে। আর বিএনপি অংশ না নিলেও জাতীয়তাবাদী ওই অংশের ভোটও জাতীয় পার্টির বাক্সে পড়ার সম্ভাবনা বেশি। এসব ঘটলে ভোটের ফলাফল অনেক কিছুই বদলে দিতে পারে বলে মনে করছেন জাতীয় পার্টির এ নেতারা।

0 comments:

Post a Comment

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More