শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভারতের কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীকে স্বাগত জানান সায়মা হোসেন
ছবি: হাবিবুর রহমান
সোনিয়া গান্ধী ভারতের ক্ষমতাসীন জোট সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চার (ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স—ইউপিএ) চেয়ারপারসন। আজ সকালে রূপসী বাংলা হোটেলে অটিজম-বিষয়ক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন তিনি। বিকেলে বঙ্গভবনে ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে দেওয়া বিশেষ সম্মাননা গ্রহণ করবেন তাঁর পুত্রবধূ সোনিয়া গান্ধী। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য ইন্দিরা গান্ধীকে ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সম্মাননা’ (মরণোত্তর) পদক দেওয়া হচ্ছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, সোনিয়াকে বহনকারী ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ বিমান গতকাল রাত আটটা ৪৫ মিনিটে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানান আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, স্বাস্থ্যমন্ত্রী আ ফ ম রুহুল হক, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি এবং মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী এ বি তাজুল ইসলাম। এ সময় বিমানবন্দরে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে সায়মা হোসেন ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রাণ গোপাল দত্ত।
সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে ঢাকায় এসেছেন ভারতের গৃহায়ণ, দারিদ্র্য বিমোচন ও সংস্কৃতিমন্ত্রী কুমারী সাইলেজা।
বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে সোনিয়া গান্ধী সরাসরি সোনারগাঁও হোটেলে যান। বাংলাদেশ সফরের সময় তিনি এখানেই থাকবেন।
দিনের কার্যসূচি: আজ সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের মাধ্যমে দিনের কার্যসূচি শুরু করবেন সোনিয়া গান্ধী। সাভার থেকে তিনি রূপসী বাংলা হোটেলে অটিজম-বিষয়ক সম্মেলনের উদ্বোধনী অধিবেশনে যোগ দেবেন। দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সেখানে সৌজন্য সাক্ষা ৎ করবেন। পরে তাঁর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষা ৎ করবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি। বিকেলে তিনি ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শন করবেন। এরপর সোনিয়া গান্ধী বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের কাছ থেকে ইন্দিরা গান্ধীর সম্মাননা গ্রহণ করবেন। সেখান থেকে তিনি রূপসী বাংলা হোটেলে তাঁর সম্মানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেওয়া নৈশভোজে যোগ দেবেন।
আজ রাত আটটা ৪৫ মিনিটে সোনিয়া গান্ধীর দিল্লির উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে।
বঙ্গভবনের প্রস্তুতি: বাসস জানায়, মহান মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় অবদানের জন্য ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে সম্মাননা জানাতে বঙ্গভবনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের কাছ থেকে ইন্দিরা গান্ধীর পক্ষে বিদেশিদের জন্য বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সম্মাননা’ (মরণোত্তর) পদক গ্রহণ করবেন তাঁর পুত্রবধূ সোনিয়া গান্ধী।
জানা গেছে, বিকেল সাড়ে পাঁচটায় বঙ্গভবনের দরবার হলে এক ঘণ্টার এ অনুষ্ঠান চলবে। এতে দেশি-বিদেশি সাত শতাধিক অতিথিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করবে বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতার।
‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা সম্মাননা’ হিসেবে ১৮ ক্যারেটের ২০০ ভরি ওজনের স্বর্ণ দিয়ে তৈরি পদক ও তিন পৃষ্ঠার একটি মানপত্র দেওয়া হবে। সৌহার্দ্য, শান্তি ও অর্জনের প্রতীক হিসেবে কদমগাছের নকশাসংবলিত ষোড়শ শতাব্দীর টেরাকোটার আদলে তৈরি পদকের নকশা করেছেন শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী ও হাশেম খান।
অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ইন্দিরা গান্ধীর দুর্লভ কিছু মুহূর্তের সাক্ষ্য নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হবে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে ইন্দিরা ছিলেন সংকল্পবদ্ধ: একাত্তর সালে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ জেনারেল জ্যাক জেকব গতকাল প্রথম আলোকে পাঠানো এক ই-মেইল বার্তায় বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের পুরো সময় জুড়ে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতার স্বাক্ষর রাখেন। বিশেষ সম্মাননায় ভূষিত হওয়া এবং সব থেকে বেশি গৌরব তাঁরই প্রাপ্য। কারণ যে করেই হোক, বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশের অভ্যুদয় নিশ্চিত করতে তিনি ছিলেন দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ।
জেকবের মতে, ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অমিততেজ, সাহস ও দৃঢ়তা প্রদর্শন করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা তাঁর শ্রেষ্ঠ কীর্তি।
জেনারেল জ্যাক জেকব বলেন, ‘বাংলাদেশের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অসমসাহসিকতায় অর্জিত স্বাধীনতার ৪০তম বছরে ইন্দিরা গান্ধীর পক্ষে তাঁরই পুত্রবধূ সোনিয়া গান্ধী যে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা গ্রহণ করতে যাচ্ছেন, তা জেনে আমি আনন্দিত।’
সংশোধনী: গতকাল প্রথম আলোর শেষ পৃষ্ঠায় ‘সোনিয়া গান্ধী আজ আসছেন’ শীর্ষক প্রতিবেদনে ‘বন মন্ত্রণালয়ের কাছে মজুদ থাকা প্রায় ৫০ বছরের পুরোনো কাঠ ব্যবহূত’ ছাপা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ওই ফ্রেমের কাঠ গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন গৃহায়ণ অধিদপ্তর সরবরাহ করেছে। অনিচ্ছাকৃত এ ভুলের জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।
প্রথম আলো
0 comments:
Post a Comment