Total Pageviews

Feedjit Live

This is default featured post 1 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured post 2 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured post 3 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured post 4 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured post 5 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

Tuesday, March 20, 2012

অশালীন বক্তব্যে সংসদ আবারও উত্তপ্ত

বিরোধীদলীয় সাংসদেরা আবারও অশালীন বক্তব্য দিয়ে সংসদে উত্তেজনা ছড়িয়েছেন। গতকাল সোমবার তাঁদের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে সংসদে উত্তেজনার সৃষ্টি হলে স্পিকার আবদুল হামিদ হাতুড়ি পিটিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবসম্পর্কিত আলোচনার সময় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় বিরোধীদলীয় সাংসদ সৈয়দা আসিফা আশরাফি রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনকে নিয়ে অসংসদীয় বক্তব্য দেন।
গতকাল সংসদে প্রায় পুরোটা সময়ই সংসদ ছিল উত্তপ্ত। সরকারি ও বিরোধী দলের সাংসদেরা এ উত্তাপ ছড়ান। এক পক্ষের বক্তব্যের সময় অন্য পক্ষ হইচই করতে থাকে। পরিস্থিতি শান্ত করতে স্পিকার দুবার হাতুড়ি পেটান, যা সচরাচর সংসদে দেখা যায় না। তিনি গঠনমূলক ও সুন্দর ভাষায় সমালোচনা করতে সাংসদদের প্রতি আহ্বান জানান।
সংসদে এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন। তবে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া গতকাল সংসদে আসেননি।
গতকাল বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খানের বক্তব্যকে কেন্দ্র করেও বিরোধী দলের নেতারা উত্তেজনার সৃষ্টি করেন। বিরোধী দলের সাংসদদের হইচইয়ের মধ্যে ফারুক খান বক্তব্য শেষ করেন।
সংসদে গতকাল বিরোধীদলীয় সাংসদেরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি জানান। তাঁরা বলেন, এই ব্যবস্থা ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না।
রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় আসিফা আশরাফি রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানকে ‘মেরুদণ্ডহীন রাষ্ট্রপতি’ বলে মন্তব্য করেন। স্পিকার সঙ্গে সঙ্গে আশরাফির এই বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করেন। এ সময় আওয়ামী লীগের সাংসদেরা চিৎকার করে ‘অসত্য বক্তব্য, অসত্য বক্তব্য’, ‘চুপ কর, চুপ কর’ বলতে থাকেন।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে আসিফা আশরাফি বলেন, ‘১৯৮৬ সালে এরশাদের কোলে বসেছিলেন, লং ড্রাইভে গিয়েছেন। গোলাম আযমের কোলে বসে ছিয়ানব্বইয়ে ক্ষমতায় গিয়েছেন। সর্বশেষ মইন উদ্দিন-ফখরুদ্দীনের কোলে বসে ক্ষমতা দখল করেছেন। যৌবনে আর কার কার কোলে বসেছেন? মতিউর রহমান রিন্টুর বইয়ে পড়েছি, কোন বেয়াইয়ের কোলে আপনার বসার দৃশ্য দেখে চাকর আত্মহত্যা করেছে।’
প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় মাতাল হওয়া ও অবৈধ অস্ত্র রাখার জন্য আমেরিকায় পুলিশের হেফাজতে ছিলেন বলেও দাবি করেন আসিফা আশরাফি। এ সময় সরকারি দলের সাংসদ ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পী ও ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা হইচই করেন। তাঁরা বলেন, ‘অসত্য বক্তব্য। চুপ কর।’ কয়েকজন সাংসদ মাইক বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানান। সরকারি দলের হুইপ আ স ম ফিরোজ এবং বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন উঠে গিয়ে তাঁদের নিবৃত্ত করেন। এ সময় স্পিকার আসিফা আশরাফির মাইক বন্ধ করে দিয়ে টেবিলে হাতুড়ি ঠুকে সবাইকে শান্ত হতে বলেন। তিনি বলেন, ‘কোনো অশ্লীল বক্তব্য দেবেন না।’
এরপর মাইক চালু হলে আসিফা আশরাফি পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির আগের দিনে দেওয়া বক্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘যারা নিষিদ্ধ পল্লির সদস্য, তাঁরাই নিষিদ্ধ পল্লির ভাষা বলতে পারে।’
খালেদ মোশাররফের মরণোত্তর বিচার দাবি করে আসিফা আশরাফি বলেন, ‘মোশতাক আহমেদকে ক্ষমতাচ্যুত করে আওয়ামী লীগ নেতা খালেদা মোশাররফ ক্ষমতা দখল করেন। ক্ষমতা নিষ্কণ্টক করার জন্য তিনি জিয়াউর রহমানকে বন্দী করেন এবং মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করেন। সে জন্য তাঁর বিচার দাবি করছি।’
যাঁরা তারেক রহমানকে টাকা পাচার এবং মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে জড়িত বলে মন্তব্য করেছেন, তাঁদের উদ্দেশে আসিফা আশরাফি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ মদ্যপ অবস্থায় দুবার গুলশান ও ধানমন্ডি থানায় আটক হয়েছিলেন। ২০০০ সালে আমেরিকার ভার্জিনিয়াতে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি ড্রাইভ করার জন্য তাঁকে কারাবরণ করতে হয়েছিল। এ রকম চরিত্রের ছেলেকে দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে না।’
আসিফা আশরাফির বক্তব্য শেষে আবদুল হামিদ বলেন, ‘এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া ঠিক নয়।’
আসিফা আশরাফির আগে আওয়ামী লীগের সাংসদ নাজমা আক্তার বলেন, সংসদে যে ভাষায় কথা বলা হচ্ছে, কোনো ভদ্রঘরের সন্তান এ ভাষায় কথা বলতে পারে না।
বিরোধী দলের সাংসদ রাশেদা বেগম বলেন, প্রশাসনে কিছু হিন্দু কর্মকর্তা বসিয়ে দলীয়করণ করে আর এরশাদকে গৃহপালিত বিরোধীদলীয় নেতা করে সরকার নির্বাচন করার পরিকল্পনা করছে। তিনি ভারতের টাইমস অব আসাম-এর সংবাদ পড়ে শোনান। তিনি বলেন, ওই প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রী, তাঁর ছেলে ও উপদেষ্টাদের দুর্নীতির কথা বলা হয়েছে।
জমির উদ্দিন সরকার বলেন, দেশের অবস্থা নাজুক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষিত হচ্ছে না। খুন, গুম অহরহ হচ্ছে। থানায় গেলে অনেক ক্ষেত্রে ডায়েরি করা যায় না। দারোগা বলেন, কোর্টে যান। এভাবে চললে দেশে খুনখারাবি বেড়ে যাবে। সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এ বিষয়ে নজর দিতে হবে।
ফারুক খান বলেন, বিরোধী দল সংসদে কথা বলবে জেনে আজ দেশের অনেকেই তাঁদের রেডিও বন্ধ রেখেছেন। কারণ, যে ভাষায় বিরোধী দলের সদস্যরা কথা বলেন, তা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শোনা যায় না। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ খাতে এই সরকারের সময় উন্নতি হয়েছে, বিগত সরকারের মতো লুটপাট হয়নি। এ সময় বিরোধী দলের সাংসদেরা বলেন, ‘সামিট গ্রুপের কথা বলেন।’ কয়েকজন ফারুক খানকে ‘সামিট গ্রুপের চোর’ বলে চিৎকার করতে থাকেন।
বিজেপির সাংসদ আন্দালিব রহমান বলেন, ‘রাজনীতিবিদদের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হয়েছে। এ জন্য দোষ বিরোধী দলের নয়, সরকারি দলেরও নয়। দোষ জনগণের। কেননা তাঁরা বারবার আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন।’ তিনি বলেন, এই সরকারের আমলে ডিজিটাল দুর্নীতি হয়েছে। দরবেশখ্যাত এক ব্যক্তি তাঁর মুরিদদের নিয়ে লুটপাট করেছেন। অথচ তাঁর কোনো শাস্তি হয়নি। তিনি অর্থ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও যোগ্য লোকদের দিয়ে পরিচালনার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমানকে ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। তাঁকে শেয়ারবাজার ধ্বংসের জন্য পুরস্কার দেওয়া উচিত ছিল।
আন্দালিব রহমান বলেন, বিদ্যুৎ খাতে দুই খেলোয়াড় রয়েছেন। এঁদের মধ্যে সামিট গ্রুপ হলো ম্যারাডোনা আর ওরিয়ন গ্রুপ হলো মেসি। এই দুই পরিবারের হাতে বিদ্যুৎ খাত এবং দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য জিম্মি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এখন ব্যাংকারদের দল। যাঁরা ব্যাংকের অনুমতি পাচ্ছেন, তাঁদের কেউ কেউ নির্বাচনের সময় আয় দেখিয়েছেন ৩৯ লাখ থেকে এক কোটি টাকা। অথচ, এখন তাঁরা ৪০০ কোটি টাকা দিয়ে ব্যাংক দিচ্ছেন।
বিএনপির সাংসদ এম কে আনোয়ার বলেন, এ সরকার কোনো প্রতিশ্রুতি পূরণ করেনি। কুইক রেন্টালের মাধ্যমে দেশকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী চাইলে দলীয় লোকদের লুটপাট, সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজি বন্ধ হওয়া সম্ভব।
সরকারি দলের জহিরুল হক ভূঁইয়া বলেন, সংসদে যে ভাষায় কথা হয়, তাতে সাংসদ হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জা হয়। পরিবারের সদস্যরা বলে, ‘এই তোমাদের সংসদ’!
সরকারি দলের শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘গত রোববার বিরোধী দলের একজন নারী সাংসদ সরকারি দলের একজন সাংসদের কাপড় খুলতে চেয়েছেন। একজন নারী কখন একজন সক্ষম পুরুষের কাপড় খুলতে চান, তা সবাই জানে।’
এ ছাড়া গতকাল এলডিপির সভাপতি অলি আহমদ বক্তব্য দেন।
সামিটের বক্তব্য: সংসদে সামিট গ্রুপ নিয়ে বক্তব্য প্রসঙ্গে সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান বলেন, ‘আমরা ১৯৯৮ সালে দেশে সর্বপ্রথম বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎকেন্দ্র করেছি। বর্তমানে মোট ৫৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সুষ্ঠু ও নিরবচ্ছিন্নভাবে উৎপাদন করছি। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের কোম্পানি দেশের একটি সম্পদ। কোম্পানিটি দেশের উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে ও রাখবে।’ prothom-alo

ডার্টি পিকচার ও আমাদের গণতন্ত্র

বলিউডের আলোড়ন সৃষ্টিকারী হিন্দি ছবি ডার্টি পিকচার। দুই প্রজন্মের দুই তারকা অভিনেতা-অভিনেত্রী নাসিরুদ্দিন শাহ ও বিদ্যা বালান ছবিটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন। ছবিটি আমার দেখা হয়নি। আকাশ টিভির সৌজন্যে ছবিটির কিছু দৃশ্য এবং দুটো গানের ভিডিওচিত্র দেখেছি। তাতেই বোঝা হয়ে গেছে, কেন ছবিটির নাম ডার্টি পিকচার। নানা কারণে ছবিটি আলোচিত-সমালোচিত। ডার্টি পিকচার-এর একটি গান ‘ও লা লা, ও লা লা’ এখন বেশ হিট।
মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের সম্পর্ক নিয়ে ক্লাসে আলোচনার সময় আমি ছাত্রছাত্রীদের জিজ্ঞাসা করি, ডার্টি পিকচার নিয়ে আলোচনায় তোমরা যে সময় ব্যয় করো, ততটুকু সময় কি বাংলাদেশের গণতন্ত্র নিয়ে ব্যয় করো? উত্তর আসে, না। আমার প্রশ্ন, কেন? ছাত্রছাত্রীরা সমস্বরে জবার দেয়, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ডার্টি পিকচার-এর চেয়েও ডার্টিয়ার। উত্তর শুনে নড়েচড়ে উঠি। উৎসাহ বোধ করি ব্যাখ্যা শোনার জন্য। তাদের জবাব, বাংলাদেশের গণতন্ত্র ক্ষমতার পালাবদলের (জ্বলন্ত উনুন থেকে ফুটন্ত কড়াইয়ে) অর্থাৎ যেকোনো মূল্যে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার ফাঁদে আটকা পড়েছে। এখানে দলীয় আদর্শ, নীতিনৈতিকতা, জনগণের চাওয়া মুখ্য বিষয় নয়। আর তাই ১৯৯১ সালে সংসদীয় গণতন্ত্রের পুনর্জন্ম হলেও সেই থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হওয়া নির্বাচনকে সূক্ষ্ম, স্থূল কিংবা ডিজিটাল কারচুপি আখ্যা দিয়ে বিরোধী দল বছরের পর বছর সংসদে অনুপস্থিত থেকেছে। জাতীয় সংসদে অংশগ্রহণ না করলেও জনগণের ট্যাক্সের পয়সায় সব ভাতা গ্রহণ করেছে। বিনা শুল্কে গাড়ি আমদানি করেছে। বিদেশ ভ্রমণ করেছে। এটি কি শ্লীল গণতন্ত্রচর্চা হতে পারে? আর বিরোধী দল যখন উপস্থিত হয়েছে তখন সরকারি ও বিরোধী দলের অনেক সংসদ সদস্যের মধ্যে যে অশ্রাব্য বাক্যবিনিময় হয়েছে, তাকে কি ডার্টিয়ার ডেমোক্রেসি বলা অন্যায় হবে? দীর্ঘদিন পর রোববার বিরোধী দল সংসদে ফিরে এসেছে। বিরোধী দলের একজন সংসদ সদস্য সংসদ অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাব দিতে গিয়ে যে বক্তব্য রেখেছেন, তা শুনে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে দ্বিমত করার অবকাশ নেই। সম্মানিত(!) সংসদ সদস্য প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘তিনি মইন উ আহমেদের কোল ছাড়া আর কোথায় কোথায় বসেছেন, তা তদন্ত করে দেখতে হবে।’ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সম্পর্কে বলেছেন, ‘টেলিভিশনে তাঁর বিশ্রী হাসি দেখে ভয়ে মানুষ টেলিভিশন বন্ধ করে দেয়।’ আইন প্রতিমন্ত্রী সম্পর্কে বলতে গিয়ে সাংসদ বলেছেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় গেলে তাঁর কাপড়চোপড় খুলে দেশ থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হবে।’ ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী কর্তৃক বাংলাদেশিদের নির্যাতন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দুইজন মন্ত্রীর লুঙ্গি তুলে ভারতের মহিলা পুলিশ দিয়ে পেটানো হবে।’
বাংলাদেশের ১৬ কোটি মানুষ যখন সুন্দর কাপড় পরা পরিপাটি গণতন্ত্রের স্বপ্ন দেখে, তখন সাংসদ রেহেনা আক্তার রানু মন্ত্রীদের কাপড় খোলার হুমকি দিয়ে কি আমাদের গণতন্ত্রের কাপড় খুলে ফেলেননি? ডার্টি পিকচার-এর ‘ও লা লা, ও লা লা’ গানটি যেমন পরিবারের সব সদস্য নিয়ে দেখার মতো নয়, একজন মহিলা সাংসদের গণতন্ত্রের কাপড় খোলা বক্তব্যও কি পরিবারের সব সদস্য নিয়ে শোনার মতো! গণতন্ত্র বেঁচে থাকার জন্য অক্সিজেন তৈরির কারখানা হলো পার্লামেন্ট। অক্সিজেন তৈরির কারখানাকে অকার্যকর রেখে কি গণতন্ত্রচর্চা সম্ভব?
ছাত্রছাত্রীদের কথা শুনে আমার একটা গল্প মনে পড়ে যায়। এক আমেরিকানের চায়নিজ বন্ধু অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। আমেরিকান বন্ধু চায়নিজ বন্ধুকে হাসপাতালে দেখতে যায়। হাসপাতালে শয্যার পাশে আমেরিকান বন্ধু দাঁড়ানোর পর চায়নিজ বন্ধু ‘নি চাদোয়ান লা উয়াদা ইয়াংজি গুয়ান’ বলেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। আমেরিকান বন্ধু চায়নিজ ভাষা জানত না। মৃত্যুর আগে বন্ধু তাকে কী বলেছে, তা জানার জন্য আমেরিকান বন্ধু আরেকজন চায়নিজের শরণাপন্ন হলে চায়নিজ ব্যক্তিটি তাকে জানান, এর অর্থ হলো, ‘যে অক্সিজেন পাইপ দিয়ে আমার শ্বাস-প্রশ্বাস সচল রাখা হয়েছে, তুমি তার ওপর দাঁড়িয়ে আছ, আমি মরে যাচ্ছি। গণতন্ত্রের পরম বন্ধু আমাদের রাজনীতিবিদেরাও কি জনগণের ভাষা বুঝতে অক্ষম হয়ে গণতন্ত্রের অক্সিজেন পাইপের ওপর দাঁড়িয়ে আছেন?
ছাত্রছাত্রীদের নির্মোহ বিশ্লেষণ আমাকে আরও আগ্রহী করে তোলে। আমি আরও শুনতে চাই। তারা বলে, বাংলাদেশের গণতন্ত্র হাতেগোনা কয়েকজন ব্যক্তির সমার্থক হয়ে উঠেছে। ব্যক্তি যখন গণতন্ত্রের সমান হয়ে ওঠে, তখন আর তা গণতন্ত্র থাকে না। শাসনব্যবস্থা তখন শ্লীলতার সীমা ছাড়িয়ে যায় এবং তার কাছে আইনের শাসন পরাজিত হয়। মানবাধিকার অপসৃত হয়। জনগণের স্বপ্নের পশ্চাদপসরণ ঘটে। ন্যায়বিচার নিজেই অবিচারের শিকার হয়ে পড়ে।
ডার্টিয়ার ডেমোক্রেসি সম্পর্কে ছাত্রছাত্রীদের বিশ্লেষণ শেষ হয় না। তাদের ক্ষোভমিশ্রিত বিশ্লেষণ চলতে থাকে। এক ছাত্র দাঁড়িয়ে বলে, ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকেরা ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল’ পলিসির মাধ্যমে আমাদের যেভাবে বিভক্ত করেছিল, আমাদের ডেমোক্রেসি তার চেয়ে বহুগুণে এবং বহুমাত্রিকে বিভক্ত করে ফেলেছে। পিয়ন থেকে শুরু করে অফিসের বড় কর্তা আজ ভয়াবহ রাজনৈতিক বিভক্তির শিকার। সরকারি চাকরিজীবী, বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক, আমলা, শিক্ষকের নামের আগে আজকাল আওয়ামীপন্থী, বিএনপিপন্থী, জামায়াতপন্থী কিংবা বামপন্থী যোগ করে পরিচিত করা হয়। নেতা-নেত্রীদের লাগামহীন অশোভন ও আক্রমণাত্মক বক্তৃতা-বিবৃতি নাগরিকদের ক্রমাগতভাবে হিংসা, বিদ্বেষ ও সংঘর্ষের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এরূপ হিংসা-বিদ্বেষ আর প্রতিশোধের গণতন্ত্র ডার্টিয়ার নয় কি?
নাগরিকদের বিভক্তির কথা মনে পড়লেই একটি ঘটনা আমার চোখের সামনে ভেসে ওঠে। আমি যে ভবনে থাকি, সেই ভবনের নিচতলায় একদিন অত্যন্ত অল্প বয়সের দুটো শিশু, যাদের বয়স বড়জোর পাঁচ বছর হবে, তাদের কথোপকথন শুনে থমকে দাঁড়াই। এদের একজন আরেকজনকে বলছিল, আমি তোমার সঙ্গে খেলব না। কারণ, তোমরা অমুক দল করো। শিশুটি আমাদের দুটো বড় দলের একটির নাম উচ্চারণ করে তার সমবয়সীর সঙ্গে খেলতে অস্বীকার করে।
ক্লাস শেষে বাসায় ফেরার পথে আমার কেবলই মনে হতে থাকে, তরুণ প্রজন্মের মুখ ফিরিয়ে নেওয়া আমাদের ডার্টিয়ার ডেমোক্রেসি কি তাহলে ডার্টিয়েস্ট কিছু নিয়ে অপেক্ষা করছে?
আইন অনুষদের ডিন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।
zhossain@justice.com prothom alo

দয়া করে অপ্রাপ্তবয়স্করা এই লেখা পড়বেন না

রোববার আমি গিয়েছিলাম টাঙ্গাইলে। ফেরার পথে গাড়িতে খেলার ধারাবিবরণী শোনার জন্য রেডিও অন করলাম। বাংলাদেশ বেতার কিছুক্ষণ ভারত-পাকিস্তানের খেলা প্রচার করে চলে গেল মহান জাতীয় সংসদের কার্যক্রমের সরাসরি প্রচারে। হাইওয়েতে গাড়ি চলছে। ড্রাইভারকে বলব, রেডিও কেন্দ্র বদলে খেলারটা দিতে, সাহস পাই না। হঠাৎ যদি অ্যাকসিডেন্ট হয়ে যায়।
এর চেয়ে অ্যাকসিডেন্ট হওয়াই বোধ হয় ভালো ছিল। যা শুনলাম, তাতে শরীরের ওপর দিয়ে যায়নি বটে, কানের ওপর দিয়ে, সেই সুবাদে রুচির ওপর দিয়ে যেন স্টিমরোলার চলে গেল।
বিএনপিদলীয় একজন সদস্যা যা বলেছেন, তার সবই আমি শুনেছি। ভালো যে টেলিভিশনের সামনে ছিলাম না, তা হলে তাকে দেখতেও হতো। তিনি কী কী বলেছেন, তা আমি আরেকবার বলতে পারব না। আমার পক্ষে সম্ভব না। এসব কথা প্রথম আলোর মতো পত্রিকায় ছাপা উচিতও না। আমার ধারণা, প্রথম আলো কাগজটা ভদ্রলোকেরাই পড়েন। আমার লেখা আবার শিশু-কিশোরেরাও পড়ে বলে জানি।
কিন্তু প্রিয় পাঠক, আপনারা যারা এ বক্তব্য সরাসরি শোনেননি, তাঁদের আমি বোঝাব কেমন করে যে তিনি কী বলে থাকতে পারেন।
আচ্ছা, আকারে-ইঙ্গিতে বলি।
ধরা যাক, ক হলেন একজন পুরুষ। তিনি এখন অবসরপ্রাপ্ত। আগে খুবই ক্ষমতাধর ছিলেন।
খ হলেন একজন নারী। তিনি এখন খুবই ক্ষমতাশালী।
তিনি বলছেন, খ ক-এর কেবল কোলে নয়, আর কোথায় কোথায় বসেছিলেন...
নাহ্, আমার পক্ষে এসব কথা লেখা সম্ভব নয়। এতটুকুন লিখেই খুবই মর্মপীড়া হচ্ছে।
কাগজে পড়লাম, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বলেছেন, এ ভাষা তো নিষিদ্ধ পল্লিতেও বেমানান।
মাননীয় সংসদ সদস্যদের করজোড়ে কি একটা নিবেদন করতে পারি, নিষিদ্ধ পল্লি তো নিষিদ্ধই। সেখানে কী বলা হয়, না বলা হয়, তা রেডিও-টেলিভিশনে সরাসরি প্রচার করা হয় না। অসম্পাদিত অবস্থায় সরাসরি তা দেশের আপামর মানুষের কাছে কখনোই পৌঁছায় না। কিন্তু মহান জাতীয় সংসদে কোনো সদস্য যা বলেন, তা সরাসরি প্রচার করা হয়। রেডিওতে শোনা যায়, টেলিভিশনে শোনা ও দেখা যায়। আপনাদের বাসায় কি শিশু-কিশোর নেই? আপনাদের বাসায় কি ময়-মুরব্বি নেই?
বিএনপির ওই নারী সংসদ সদস্য যা বলেছেন, তা যদি তাঁর সন্তান-ভাগনে-ভাগনিরা শুনে ফেলে? যদি তাঁর মা-খালারা শোনেন? যদি তাঁর বাবা-চাচারা শোনেন?


বিএনপির একজন সংসদ সদস্য, যার নাম আমি মনে রাখারও প্রয়োজন বোধ করি না, তার মুখে এসব কথা শুনে আমি খুবই কষ্ট পেয়েছি। আমার কাছে অরুচিকর, অরাজনৈতিক, অনভিপ্রেত বলে মনে হয়েছে। মনে হয়েছে, এটা সভ্যতার সঙ্গে যায় না, ভদ্রতা-শিষ্টতা-শালীনতার সঙ্গে তো নয়ই। সভ্যতার সঙ্গে কিন্তু রেখে-ঢেকে চলার একটা সম্পর্ক আছে। মানুষ বনে ছিল। কোনো পোশাক পরতে জানত না। প্রথম দিকে সে গাছের ছালবাকল, লতাপাতা দিয়ে অঙ্গ ঢেকে রাখতে শুরু করে, পশুর চামড়া দিয়ে লজ্জা নিবারণ করতে শেখে, তারপর কাপড় আবিষ্কার করে। আপনি কোথায় কী বলবেন, কোথায় কী করবেন, এসব মেনে চলাও সভ্যতারই অংশ। যে কথা ইয়ার-দোস্তরা বলাবলি করে, তা কেউ প্রার্থনাসভায় বলবে না, জনসভায়ও বলবে না। সব প্রাণীকেই কতগুলো প্রাকৃতিক জৈবিক কাজ প্রতিদিন করতে হয়, সেসব বিষয়ে আমরা গোপনীয়তা বজায় রেখেই চলি। এটাই সভ্যতা।


বিএনপির একজন সংসদ সদস্য, যার নাম আমি গতকালই প্রথম জানলাম এবং আগামীকাল মনে রাখব বলে মনে করি না, তার মুখে এসব শুনে আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে, আমার লজ্জাবোধ হয়েছে। আমি আসলে এসব নিয়ে কথা বলতেও লজ্জা পাচ্ছি।
কিন্তু তার চেয়ে অনেক বড় পদে আছেন, অনেক বড় যাঁর মর্যাদা, আর স্থান, যিনি আমাদের সবাইকে প্রতিনিধিত্ব করেন, তিনি যখন তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীর ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে অকারণ, অপ্রয়োজনীয় কথা বলতে থাকেন, তখন অধিক শোকে পাথর হয়ে যাওয়া ছাড়া আমাদের আর কীই বা বলার থাকে।
বিরোধী দলের তৃতীয় সারির নেতার মুখে যা মানায় না, সরকারি দলের প্রথম সারির নেতার মুখে তার এক শতাংশ কথাও কি কেউ আশা করে?


এসব বলে কি জনপ্রিয়তা বাড়ে?
নীরবতা হীরন্ময়। কথা কম বলুন, বিষোদ্গার কম করুন, কথা বলতে হলে মিষ্টি করে হেসে বলুন।
কাকের কর্কশ স্বর বিষ লাগে কানে,
কোকিল অখিল প্রিয় সুমধুর গানে।


২০০৬ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত একজন নেত্রী কী অসাধারণ পরিমিতিবোধই না প্রদর্শন করেছিলেন। তিনি কথা কম বলেছিলেন এবং তাঁর ভোট অনেক বেড়ে গিয়েছিল।
এখন তিনি কথা বলতে শুরু করেছেন।
জরিপ বলছে, তার জনপ্রিয়তা দ্রুত কমছে।
আশা করি, নিজের ভালোটা অন্তত এঁরা বুঝবেন। জনগণের ভালো পরে করুন, আগে নিজের জনপ্রিয়তা ধরে রাখার জন্য সচেষ্ট হোন। দয়া করে, কুৎসা, ব্যক্তিগত কাদা-ছোড়াছুড়ি, মন্ত্রীর ভাষায় ‘নিষিদ্ধ পল্লিতেও বেমানান’ কথাবার্তা বলা বন্ধ করুন।
আনিসুল হক: সাহিত্যিক ও সাংবাদিক।

Wednesday, March 7, 2012

আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ

আজ ঐতিহাসিক ৭ মার্চ। বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে এক অবিস্মরণীয় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) লাখো মানুষের সামনে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। তাঁর ঐতিহাসিক সেই ভাষণ এ দেশের জনগণকে দারুণভাবে আন্দোলিত করে। ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো’—স্লোগানে স্বাধীনতার জন্য উন্মুখ জাতি বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়েছিল।
সেদিন বঙ্গবন্ধু যুদ্ধের প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশও দিয়েছিলেন। ‘প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে, তা-ই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে...।’
রাষ্ট্রীয়ভাবে আজকের এই দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হবে।
বাণী: দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-ঘোষিত ‘ভিশন-২০২১’ বাস্তবায়নে সবাইকে কঠোর পরিশ্রম করার আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণীতে বলেন, বর্তমান সরকার ক্ষুধা, দারিদ্র্য, শোষণ, বঞ্চনা ও সন্ত্রাস চিরতরে দূর করতে এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এ অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সব শ্রেণী-পেশার মানুষের ঐকান্তিক সমর্থন ও সহযোগিতা প্রয়োজন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম সাতই মার্চের সব কর্মসূচি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য সংগঠনের সব শাখা, সহযোগী সংগঠন, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর নেতা-কর্মী, সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী, সর্বস্তরের জনগণ ও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

Monday, January 16, 2012

১০ দিন আগেই ভারতে হামলার ইঙ্গিত ‘মদ্যপ’ ইয়াহিয়ার !

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রায় ১০ দিন আগেই ভারতে হামলা চালানোর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন পাকিস্তানের তত্কালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। মদ্যপ অবস্থায় এক মার্কিন সাংবাদিকে তিনি এ কথা বলেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে বলে বার্তা সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে।
ওই খবরে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরুর প্রায় ১০ দিন আগে মার্কিন সাংবাদিক বব শাপলিকে মদ্যপ অবস্থায় পাকিস্তানের তত্কালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ভারতে হামলা চালানোর বিষয়ে তাঁর মনোভাবের কথা জানিয়ে একটি ইঙ্গিত দেন।
বৈঠকের সময় ইয়াহিয়া খান ওই মার্কিন সাংবাদিককে বলেছিলেন, তিনি ১০ দিনের মধ্যে ভারতে হামলা চালাবেন।
ইয়াহিয়া খানের এ ইঙ্গিত ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর সত্যে পরিণত হয়। ওই দিন বিকেলে ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সেনা লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালায় পাকিস্তান।
এ ঘটনার পরপরই ভারতের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দ্রিরা গান্ধী পাকিস্তানের এই বিমান হামলাকে যুদ্ধের ঘোষণা বলে উল্লেখ করেন। একই দিন মধ্যরাতে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে স্থল, নৌ ও বিমানপথে যুদ্ধ ঘোষণা করে ভারত।
পরের দিন দিল্লিতে নিযুক্ত মার্কিন দূত কেনেথ বার্নাড কেটিং ভারতের পররাষ্ট্রসচিব টি এন কাউলকে ইয়াহিয়ার ওই মন্তব্য সম্পর্কে অবহিত করেন। তিনি বলেন, মদ্যপ অবস্থায় ইয়াহিয়া খান মার্কিন সাংবাদিক বব শাপলিকে বলেছিলেন, পাকিস্তান ১০ দিনের মধ্যে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে যাবে। প্রথম আলো

তিন বোনকে সেনাক্যাম্পে দেন সাঈদী

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আজ সোমবার জবানবন্দি দিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের ১৩তম সাক্ষী। জবানবন্দিতে সাক্ষী তাঁর তিন বোনকে সাঈদীসহ রাজাকারদের পাকিস্তানি সেনাক্যাম্পে দেওয়ার এবং তাঁদের পুরো পরিবারকে জোর করে ধর্মান্তরিত করার বর্ণনা দেন।
বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১৩তম সাক্ষী এই জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে একদিন সাঈদী কয়েকজন রাজাকারকে নিয়ে পিরোজপুরে তাঁদের (সাক্ষীর) বাড়িতে যান। রাজাকাররা তাঁদের বাড়ি লুট করে এবং তাঁর তিন বোনকে ধরে নিয়ে পিরোজপুরে পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পে দিয়ে আসে। তিন দিন পর তিন বোনকে বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়। একাত্তরে তাঁর বয়স ছিল ২৭ বছর।
তিন বোনের ওপর পাকিস্তানি সেনাদের নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে সাক্ষী কান্নায় ভেঙে পড়েন। জবানবন্দিতে তিনি আরও বলেন, ওই ঘটনার কিছুদিন পর সাঈদী আবার কয়েকজন রাজাকার নিয়ে তাঁদের বাড়িতে যান। রাজাকাররা তাঁর মা-বাবা, ভাইবোনসহ পরিবারের সব সদস্যকে জোর করে ধর্মান্তরিত করে। তাঁর নাম দেওয়া হয় আবদুল গনি। তাঁদের মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তে বাধ্য করা হয়। এর কিছুদিন পর তিনি ছাড়া পরিবারের অন্য সবাই ভারতে চলে যান। স্বাধীনতার পর তিনি নিজ (হিন্দু) ধর্মে ফিরে আসেন।
জবানবন্দির এ পর্যায়ে সাক্ষী আবেগে চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে যান এবং কাঁদতে থাকেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁকে শান্ত হয়ে বসতে বলেন।
জবানবন্দিতে সাক্ষী বলেন, তাঁকে ছাড়া আরও এক-দেড় শ হিন্দুসম্প্রদায়ের লোককে রাজাকাররা ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য করে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন নারায়ণ সাহা, নিখিল পাল, গৌরাঙ্গ পাল, সুনীল পাল। তাঁদের অনেকে মারা গেছেন। অনেকে ভারতে চলে গেছেন।
জবানবন্দি শেষে সাক্ষীকে জেরা শুরু করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। তিনি এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের কয়েকজন সাক্ষীর নাম উল্লেখ করে সাক্ষীর কাছে জানতে চান, তাঁদের তিনি চেনেন কি না? সাক্ষী তাঁদের চেনেন বলে জানান। মিজানুল জানতে চান, সাক্ষীর তিন বোনকে নির্যাতন ও ধর্মান্তরিত করার ঘটনা ওই সাক্ষীরা জানেন কি না? জবাবে সাক্ষী বলেন, তাঁরা কী জানেন না-জানেন, তা তিনি বলতে পারবেন না।
বেলা একটায় এক ঘণ্টা বিরতির পর আবার জেরা শুরু হলে মিজানুল জানতে চান, সাক্ষী মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে লুট হওয়া জিনিসপত্রের কোনো তালিকা দিয়েছেন কি না? জবাবে সাক্ষী বলেন, ‘সবকিছু এমনকি ঘর ঝাড় দেওয়ার পিছা (ঝাড়ু) পর্যন্ত লুট হয়েছে।’ স্বাধীনতার পর নিজ ধর্মে ফিরতে কোনো প্রায়শ্চিত্ত করেছেন কি না—এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জীবনের মায়ায় ধর্মান্তরিত হয়েছি, এর জন্য প্রায়শ্চিত্ত দরকার নেই।’
বিকেল চারটার দিকে জেরা শেষ হলে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম কাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।

(প্রথম আলোর নীতি অনুসারে সাক্ষী ও তাঁর বোনদের নাম প্রকাশ করা হলো না।) prothom-alo

Sunday, January 15, 2012

’৭১ থেকে শিক্ষা নেয়নি পাকিস্তান: ইমরান খান

পাকিস্তানের ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ হওয়া ইমরান খান বলেছেন, ১৯৭১ সালের ঘটনা থেকে পাকিস্তান কিছুই শিক্ষা নেয়নি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় অপরাধ সংঘটনকারীরা শাস্তি পেলে পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি অন্য রকম হতো।
ব্রিটিশ সাময়িকী ‘দ্য কারাভান’-এ চলতি বছরের জানুয়ারি সংখ্যায় প্রকাশিত একটি সাক্ষাত্কারে ইমরান খান এসব কথা বলেন।
ইমরান বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের ঘটনায় আইনের শাসনবিষয়ক একটি শিক্ষা রয়েছে। পাকিস্তানের তত্কালীন শাসক ও যুদ্ধাপরাধীদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তারা শাস্তি পেলে আমরা (পাকিস্তান) আবারও একই পথে হাঁটতাম না।’
সাক্ষাত্কারে ইমরান বলেন, ১৯৭১ সালে তিনি যখন ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে ঢাকায় ছিলেন, বাঙালিদের হত্যার নির্দেশনা দেওয়ার বিষয়টি তিনি শুনতে পেয়েছিলেন। তিনি দাবি করেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশে অভিযান শুরুর আগে তিনি শেষ বিমানে করে ঢাকা ছেড়েছিলেন।
১৯৭১ সালে বাঙালি হত্যায় পাকিস্তানি সামরিক শাসকদের নির্দেশ প্রদান প্রসঙ্গে ইমরান খান বলেন, ‘আমি নিজ কানে শুনেছি, তারা বলেছে, এই বামন ও কালোদের হত্যা করো। তাদের একটা শিক্ষা দাও।’
তবে কে বা কারা কাকে এই নির্দেশ দিয়েছিল, সে সম্পর্কে ইমরান কিছুই বলেননি।
পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ দলের নেতা ইমরান খান জানান, তিনি এখন পাকিস্তানের ভেতরেও একই ধরনের নির্দেশনা শুনছেন। তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক একই ধরনের ভাষা। একাত্তরে যা শুনেছিলাম, তা এবারও শুনছি।’ তিনি আরও বলেন, এখন পশতুনরা এই অবহেলার শিকার।
পাকিস্তানে পশতুনদের ওপর চলমান নির্যাতন সম্পর্কে ইমরান বলেন, ‘পিণ্ডি, লাহোর, করাচিতে তাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে এবং জেলে পাঠানো হচ্ছে। কারণ তারা পশতুন। এটা এক দুঃখজনক ধারাবাহিকতা।’
ইমরান জানান, তিনি বিশ্বাস করেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি অপরাধীরা শাস্তি পেলে পশতুনরা আজ হয়রানির শিকার হতো না।
ওই ম্যাগাজিনে বলা হয়, ১৯৭১ সালে ঢাকা সফরের আগ পর্যন্ত ইমরান খান পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় প্রচারণায় বিশ্বাস করতেন। ওই প্রচারণায় মুক্তিযোদ্ধাদের ভারত-সমর্থিত সন্ত্রাসী বলে অভিহিত করা হতো।
ইমরান বলেন, ‘ওই সময় প্রথমবার আমি বুঝতে পারি, সেখানে একটা বিচ্ছিন্নতার আন্দোলন চলছে।’ তিনি বলেন, ‘পূর্ব পাকিস্তানে কী হচ্ছে, তার কিছুই আমরা জানতাম না।’ prothom-alo

Saturday, January 14, 2012

বিকৃত গণতন্ত্রের বিড়ম্বনা

সহজভাবে বলতে গেলে গণতন্ত্র এমন এক শাসনপদ্ধতি, যার মাধ্যমে জনগণ নিজেরাই নিজেদের দেশ শাসন করতে পারে। এই শাসনব্যবস্থার মাধ্যমে সমাজে সবার অধিকার ও সুযোগের সমতা নিশ্চিত করা যায়। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে সুশাসন ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সহজতর হয়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনো একক ব্যক্তির নিজেকে রাজা বা দেশের মালিক ভাবা ও সেই হিসাবে খেয়ালখুশি মোতাবেক দেশ পরিচালনার কোনো সুযোগ নেই। মালিক ও শাসক জনগণ; ফলে এখানে কেউ রাজা ও কেউ প্রজা এ অসমতা গ্রহণযোগ্য নয়। উত্তরাধিকার সূত্রে ক্ষমতা হস্তান্তরের কোনো সুযোগও নেই।
‘আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে’—কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ গানে রয়েছে গণতন্ত্রের মূল বিষয়বস্তু। তবে প্রতিটি নাগরিক দেশ শাসন করবে, এটা বাস্তবসম্মত নয়। তাই জনগণের পক্ষে তাদের প্রতিনিধি মনোনীত এবং নির্বাচিত করার ব্যবস্থা চালু করা হয়। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা জনগণের প্রতিনিধি ও সেবক হিসেবে দেশ পরিচালনা করবে যতদূর সম্ভব নাগরিকের মতামত ও ইচ্ছানুসারে। এক কথায়, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য হলো শাসনকার্যে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
১৯৯০ সালে আন্দোলনরত দেশের সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এরশাদের জাতীয় পার্টি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে। এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগ ছিল এটি অগণতান্ত্রিক, স্বৈরাচারী ও দুর্নীতিবাজ সরকার এবং নির্বাচনে জালিয়াতির আশ্রয় নেয়। তাই অপরাপর রাজনৈতিক দল দেশকে স্বৈরাচার, দুর্নীতি এবং নির্বাচন জালিয়াতি থেকে মুক্ত করার জন্য অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। একই সঙ্গে তারা তিনজোটের রূপরেখা গ্রহণের মাধ্যমে দেশের রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি চালু করতে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে। সে সময় সংবিধান সংশোধন করে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থার পরিবর্তে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার পুনঃপ্রবর্তন করা হয়।
১৯৯০-এর পর থেকে অদ্যাবধি দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল কখনো এককভাবে, কখনো অন্য ছোট দলগুলোর মধ্যে জোটবদ্ধভাবে পালাক্রমে একজনের পর আর একজন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে ও পরস্পর স্থান পরিবর্তন করে বিরোধী দল হিসেবে কাজ করে আসছে। দেখা যায়, ওই সময়ের পর থেকে সরকারগুলো তাদের পছন্দের ব্যক্তিদের নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দেয়। যখন যে বিরোধী দলে থাকে তখন এ বিষয়ে তাদের অভিযোগ ক্ষমতাসীন দলগুলোর প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করানোর অভিপ্রায় নিয়েই নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়ে থাকে। বিগত ২১ বছরে কোনো সরকারের সময়ই সব প্রতিদ্বন্দ্বী দলের মতৈক্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এ সময়কালে কোনো জাতীয় নির্বাচন প্রশ্নাতীতভাবে সুষ্ঠু বলে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেনি।
অনেকেই বিশ্বাস করেন যে পেশিশক্তির দৌরাত্ম্য, অত্যধিক অর্থের ব্যবহার এবং ভয়ভীতি প্রদর্শনের সংস্কৃতির কারণে দেশের নির্বাচনগুলোতে প্রায় সময়ই জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটে না।
অনেকেই বিশ্বাস করেন যে এ অবস্থার কারণে দেশপ্রেমিক এবং যোগ্য ব্যক্তিরা যাঁরা সরকার ও রাজনীতি ভালোভাবে পরিচালনা করতে পারতেন তাঁরা নির্বাচনে জয়ী হতে পারেন না। অপরদিকে, যারা ভোটযুদ্ধে জয়ী হয়ে আসছেন তাঁরা সরকার বা রাজনীতি সঠিকভাবে পরিচালনা করতে সমর্থ নন। এমনকি তাঁদের অনেকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা, বেআইনি কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ দেখা যায়। স্বভাবতই ওই সব রাজনীতিবিদের দেশ পরিচালনার যোগ্যতা ও দেশপ্রেম প্রশ্নবিদ্ধ।
গণতন্ত্র চর্চা করতে হলে সরকারকে জনগণের মতামত নিয়ে তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী সরকার পরিচালনা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে জনগণের মতামত জানার প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা থাকতে হবে। তা ছাড়া মতামত কার্যকর করার পদ্ধতি এবং সদিচ্ছা আবশ্যক। এগুলো নিশ্চিত করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতা থাকা বাঞ্ছনীয়।
সংসদীয় পদ্ধতির সরকারে ‘সংসদ’ এসব কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান। সংসদে তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা উপস্থাপিত করা হবে। সরকার বা নির্বাহী বিভাগ সেগুলোকে আমলে নেবে ও বাস্তবায়নে অগ্রসর হবে, এটাই কাম্য। সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলো তত্ত্বাবধানকারী হিসেবে সর্বদা বিষয়গুলো দেখাশোনা করবে। এভাবেই ‘সংসদ’-এর দায়িত্ব পালনের কথা।
সংসদীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তনের পর এ পর্যন্ত সব সরকারের আমলেই বিরোধী দলগুলো অধিকাংশ সময়ই সংসদ বর্জন করে এসেছে। তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সংসদ বর্জনের কারণে দেশের প্রায় অর্ধেক জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা বা তাদের কথাগুলো সংসদে আলোচিত হচ্ছে না। কাজেই জনগণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দেশের শাসনব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারছে না।
সংসদ বর্জনের কারণ হিসেবে বিরোধী দল বলে আসছে যে, দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির স্পিকাররা সংসদে তাদের কথা বলতে দেন না। বিরোধী দলগুলোর আরেকটি অভিযোগ হলো যে অনেক ক্ষেত্রে তাদের কথা বলতে দেওয়া হলেও তাদের মতামতকে কোনো সময় গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এ অবস্থায় তাদের সংসদে যোগদান দেশ পরিচালনায় খুব গুরুত্ব বহন করে না। তাঁরা বলে থাকেন সরকার স্বৈরতান্ত্রিকভাবে একাই দেশ পরিচালনা করে যাচ্ছে। যে দল ক্ষমতায় থেকে সংসদকে কার্যকর করার জন্য বিরোধী দলকে সংসদে যোগদান করার আহ্বান জানিয়েছিল, সে দলই বিরোধী দলে গিয়ে সংসদ বর্জনের পক্ষে সাফাই গেয়ে যায়। যেহেতু দুই প্রতিপক্ষই সংসদ বর্জনের পক্ষে যুক্তি দিচ্ছে, ফলে সে যুক্তি সঠিক ধরে নেওয়া যায়।
আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ। এই বিতর্কিত অনুচ্ছেদের কারণে সংসদ সদস্যরা সংসদে তাঁদের দলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারেন না। দলীয় সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করে কেউ সংসদে ভোট দিলে সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্যের সদস্যপদ বাতিল হয়। প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে দলীয় প্রধান এবং ক্ষমতাসীন দলের সংসদীয় দলের নেতা। তাই সংসদীয় পদ্ধতির সরকার পুনঃপ্রবর্তনের পর থেকে প্রধানমন্ত্রীরা তাঁদের দলের সব সংসদ সদস্যের ওপর নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয়েছেন। তাঁর আদেশ অমান্য করলে সংসদ সদস্যরা সংসদ থেকে বহিষ্কৃত হন। সংসদের সব সিদ্ধান্তই সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নেওয়া হয়। যেহেতু ক্ষমতাসীন দলের সর্বোচ্চ সংখ্যক সংসদ সদস্য থাকেন, সেহেতু প্রধানমন্ত্রী বা সংসদীয় দলের নেতা যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন সেটাই সংখ্যাধিক্যের ভোটে সংসদে অনুমোদিত হয়। আর এ কারণেই উল্লিখিত সংশোধনী পরবর্তী যেকোনো সরকারের প্রধানমন্ত্রী মোটামুটি তাঁর ইচ্ছা-অনিচ্ছা বাস্তবায়নে সংসদের নিশ্চিত সমর্থন লাভ করেন। ফলে বলা যায়, সংসদ অকার্যকর হওয়ার একমাত্র কারণ বিরোধী দলের সংসদ বর্জন নয়। সংসদ সচল থাকলেও তা স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থার সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করে নির্বাহী বিভাগ। ‘জনগণ’ বলতে এখানে দলমত নির্বিশেষে সব নাগরিককে বোঝায়, কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে বোঝায় না। কিন্তু সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তনের পর থেকে আজ পর্যন্ত সব সরকারের আমলেই প্রায় সব উন্নয়ন প্রকল্প বা জনস্বার্থবিষয়ক কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে দলীয় নেতা-কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার জন্য। প্রশাসনে নিয়োগ, পদোন্নতি, ব্যবসা, ভূমি এবং সরকারি সম্পত্তি ইজারা প্রদান, সামাজিক নিরাপত্তামূলক সুযোগ-সুবিধা সবই প্রধানত দলীয় লোকদের দেওয়া হয়। আর এ জন্য টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি ইত্যাদি করা হয় বলে অভিযোগ আছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিরোধী দল বা কোনো সাধারণ নাগরিক এ ধরনের কোনো রাষ্ট্রীয় সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন।
১৯৯১ সালের পর থেকে যাঁরা বিরোধী দলে ছিলেন তাঁরা অভিযোগ করে আসছেন সরকার তাঁদের পছন্দের বা দলীয় লোকদের বিচারক হিসেবে নিয়োগ দিচ্ছেন। আর এর উদ্দেশ্য হলো বিচারিক প্রক্রিয়ার ফলাফল ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে নেওয়া। এভাবেই প্রতিনিয়ত গণতন্ত্রের অন্যতম শর্ত বিচার বিভাগের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়ছে এবং জনগণ বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারাতে বসেছে।
সরকারি কর্মকমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, তথ্য কমিশনসহ সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব হচ্ছে দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে সহায়তা করা। কিন্তু এ লক্ষ্যে আমাদের বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা এখন পর্যন্ত চোখে পড়ার মতো কিছু না। তা ছাড়া, এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের মুখ্য পদগুলোতে দলীয়করণের মাধ্যমে দলীয় স্বার্থে ব্যবহারের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয় বলে বিরোধী দলের অভিযোগ আছে।
প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো কোনোটির কর্মকাণ্ড প্রায়ই গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করার পরিবর্তে তা নষ্ট করে চলছে বলে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো অভিযোগ করে আসছে। অন্যতম উদাহরণ সরকারি কর্মকমিশনের কর্মকাণ্ড। অভিযোগ আছে যে ক্ষমতাসীন দল তাদের নিজস্ব ব্যক্তিদের সরকারি কর্মকমিশনে নিয়োগ প্রদান করে। ফলে এই পছন্দের ব্যক্তিরা মেধা বা যোগ্যতার পরিবর্তে দলীয় সুপারিশের ভিত্তিতে সরকারি নিয়োগের ব্যবস্থা করেন। এভাবেই গণতন্ত্রের অন্যতম লক্ষ্য ‘সবার জন্য সমান সুযোগ’—এই শর্ত লঙ্ঘিত হয়। আর এর অন্যতম ফলাফল হলো সুশাসনের অভাব বা দুঃশাসন।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল পর পর পাঁচবার (২০০১-০৫) বিশ্বে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ বলে বাংলাদেশকে আখ্যায়িত করে। এখন শীর্ষে না থাকলেও বাংলাদেশ বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর দলে। জনগণ এখন ভাবতে শুরু করেছে যে পাঁচ বছর পর পর নির্বাচন করে সরকার গঠনের বৈধতা দেওয়া মানে কি ক্ষমতাসীন দলকে জনগণের সম্পদ লুট করতে দেওয়ার ন্যায্য অধিকার দেওয়া এবং জনগণকে প্রজার মতো ব্যবহার করতে দেওয়া?
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, আশির দশকের শেষ দিকে সরকারবিরোধী আন্দোলনের যথার্থতার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে তারা কার্যকর সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু করবে ও রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতির চর্চা করবে। তাদের সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন গত দুই দশকেও হয়নি। বরং বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে (২০০১-২০০৬) দেশকে জঙ্গবািদী ইসলামিক মৌলবাদীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। বর্তমান মহাজোট সরকার দেশকে সেই কলঙ্কের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত সুষ্ঠু নির্বাচনী ব্যবস্থা চালু করতে পারেনি, গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি ও গণতন্ত্রের চর্চার মাধ্যমে স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার কাঠামো থেকে মুক্ত হতে পারেনি। অনেকেই মনে করেন নব্বই-পরবর্তী শাসনব্যবস্থা প্রকৃত প্রস্তাবে যেভাবে চর্চা করা হচ্ছে, তাতে গণতন্ত্রের মোড়কে স্বৈরতান্ত্রিক একনায়কতন্ত্র বিকশিত হচ্ছে। এমনকি সচেতন নাগরিকদের অনেকে গণতন্ত্রের মোড়কে স্বৈরতন্ত্র থেকে দেশ রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দিকে ধাবিত হচ্ছে কি না এটা ভেবে আতঙ্কিত। দুর্নীতির পরিমাপেও অবস্থার তেমন উন্নতি করতে পারেনি।
গণতন্ত্রের নামে চরম দুর্নীতি, ক্রমবর্ধমান সহিংসতা, মানুষের অধিকারের নিরন্তর লঙ্ঘন, ভিন্নমতের প্রতি অসহিষ্ণুতার সংস্কৃতি বাংলাদেশের রাজনীতি পরিচালনা করছে। আর এ কারণেই দেশে সংঘাতমূলক পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে এবং তা পুরো জাতিকে এক হতাশা ও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত, যত দ্রুত সম্ভব এ অবস্থা থেকে উত্তরণের সমাধান খুঁজে বের করা। অন্যথায় জনগণ গণতন্ত্রের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবে। ফলে, অনাকাঙ্ক্ষিত অগণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তির দিকে জনগণ আকৃষ্ট হতে পারে, যেমনটি অতীতে হয়েছিল।
গোলাম মোহাম্মদ কাদের: মন্ত্রী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য।

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More