Total Pageviews

Feedjit Live

Tuesday, July 26, 2011

ইন্দিরা গান্ধীকে স্বাধীনতা সম্মাননা

একাত্তরে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার জন্য ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত ইন্দিরা গান্ধীকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সম্মাননা অর্পণ করা হয়েছে গণপ্রজাতন্ত্র্রী বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে। গতকাল সোমবার বঙ্গভবনে এক অনাড়ম্বর ও সৌহার্দ্যপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ইন্দিরা গান্ধীর পুত্রবধূ ও ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের প্রধান সোনিয়া গান্ধীর হাতে এই সম্মাননা তুলে দেন রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান। সোনিয়া গান্ধী গত রোববার ঢাকায় আসেন অটিজম-বিষয়ক এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগ দিতে। বাংলাদেশ সরকার আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তাকারী প্রায় পাঁচ শ বিদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এই সম্মাননা দেওয়া হবে। ইন্দিরা গান্ধীকে সম্মাননা দেওয়ার মধ্য দিয়ে তার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলো। আমরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।
যে রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আমাদের মুক্তিযুদ্ধে সর্বতোভাবে সহায়তা করেছেন, প্রায় এক কোটি শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছেন, স্বাধীনতার পক্ষে বিশ্ব জনমত গড়ে তুলতে সারা বিশ্বে কূটনৈতিক তৎ পরতা চালিয়েছেন, তাঁকে সম্মানিত করতে পেরে দেশবাসীও গৌরববোধ করছে। এমন একটি সময়ে এই সম্মাননা দেওয়া হলো, যখন সব সংশয় ও সন্দেহ পেছনে ফেলে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে নবযুগের সূচনা হতে যাচ্ছে। আগামী সেপ্টেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের বাংলাদেশ সফরকালে সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি ও তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি সই হওয়ার কথা। একই সঙ্গে আঞ্চলিক কাঠামোর মধ্যে দুই দেশের মধ্যে স্থল ও রেলওয়ে ট্রানজিটসুবিধা বিনিময়েরও প্রস্তুতি চলছে। এই দুটি দেশের ভৌগোলিক অবস্থান এমনভাবে বিন্যস্ত যে পারস্পরিক উন্নয়ন ও অগ্রগতির স্বার্থে আন্তযোগাযোগ বাড়ানোর বিকল্প নেই।
বিলম্বে হলেও ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী দেশের এই রাষ্ট্রনেতাকে স্বাধীনতা সম্মাননা প্রদানের মধ্য দিয়ে আমাদের মুক্তিযুদ্ধে তাঁর অবদানের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি জানানো হলো। উত্তম হতো, যদি স্বাধীনতার সম্মাননা জানানোর বিষয়টিও আমরা জাতীয় মতৈক্যের ভিত্তিতে করতে পারতাম, এ নিয়ে জাতীয় সংসদে আলোচনা হতো। আরও আনন্দের হতো, যদি এ রকম একটি বিরল ও ব্যতিক্রমী অনুষ্ঠানে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা যেত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক যে আমাদের বৈরী রাজনীতির কারণে সেটা সম্ভব হলো না। তবে প্রধান বিরোধী দল সোনিয়া গান্ধীর বাংলাদেশ সফর দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কোন্নয়নের সহায়ক হবে বলে যে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে, তা ইতিবাচক। রাজনৈতিক পথ ও মতের ভিন্নতা সত্ত্বেও পররাষ্ট্রনীতি তথা নিকট প্রতিবেশীর সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে আমাদের জাতীয় নেতৃত্ব একযোগে কাজ করবে—এটাই প্রত্যাশিত।
বিদেশি নাগরিকদের সম্মাননা জানানোর পাশাপাশি যে লক্ষ্য ও আদর্শ সামনে রেখে একাত্তরে এ দেশের মানুষ জীবন বাজি রেখে জাতীয় মুক্তির মহাসমরে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল, সেই লক্ষ্য ও আদর্শ কতটা বাস্তবায়িত হয়েছে, সেই আত্মজিজ্ঞাসাও জরুরি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা কেবল মুখে উচ্চারণই যথেষ্ট নয়, আমাদের চিন্তা ও কর্মে এর যথাযথ প্রতিফলন থাকতে হবে। স্বাধীনতার চল্লিশ বছরে এটাই দেশবাসীর ঐকান্তিক প্রার্থনা।

0 comments:

Post a Comment

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More