Total Pageviews

Feedjit Live

This is default featured post 1 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured post 2 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured post 3 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured post 4 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured post 5 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

Sunday, November 27, 2011

সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে: খালেদা


  বিরোধী দলের রোড মার্চে জনগণের সাড়ায় সরকার দিশেহারা হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া।

রোববার বিকালে খুলনা সার্কিট হাউজ মাঠে জনসভায় খালেদা বলেন, “রোড মার্চের গণজাগরণে সরকারের মাথা খারাপ হয়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী নিজের কাজ-কর্ম বাদ দিয়ে গাড়ির হিসাব কষতে কাগজ-কলম নিয়ে বসেছেন।”

তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পুনর্বহাল ও সরকারের পদত্যাগ দাবিতে এ জনসভার মধ্য দিয়ে খুলনা অভিমুখে রোডমার্চের সমাপ্তি টানেন বিরোধী দলের নেতা।

এর আগে সাড়ে চার ঘণ্টা রোড মার্চ শেষে বিকাল ৪টার দিকে গাড়িবহর নিয়ে খুলনা সার্কিট হাউজের জনসভাস্থলে পৌঁছেন খালেদা জিয়া। বিকাল ৪টা ৪০ মিনিটে তিনি বক্তব্য শুরু করেন।

এখানে পৌনে এক ঘণ্টার বক্তব্যে তিনি সরকারের ব্যর্থতা, অপশাসন, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা, টিপাইমুখ বাঁধ প্রকল্প, খুলনার রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ প্রকল্প, সরকার বিরোধী আন্দোলনসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেন।

সরকারের উদ্দেশে বিএনপি চেয়ারপার্সন বলেন, “ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার জন্য তারা সংবিধান সংশোধন করেছেন। মিলন হত্যাকারী খুনি এরশাদকে পাশে নিয়ে বিরোধী দল বানাবেন, তা হতে দেওয়া হবে না।”

দল ক্ষমতায় গেলে ডা. মিলনসহ অন্যান্য হত্যার বিচার করার প্রতিশ্র“তি দেন তিনি।

মহানগর বিএনপির উদ্যোগে এই জনসভা হয়।

সরকারের সমালোচনা এবং শেখ হাসিনার প্রতি ইঙ্গিত করে খালেদা বলেন, “এই সরকার লুটপাট ছাড়া কোনো উন্নয়ন করেনি। আওয়ামী লীগ চিরস্থায়ীভাবে ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়। এজন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বাতিল করেছে। ক্ষমতায় থাকতে না পারলে তারা দেশ থেকে চলে যাবে। কারণ সহায়-সম্পত্তি, ছেলে-মেয়ে সব কিছু তাদের বিদেশে।’’

বক্তৃতায় বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান বিরোধী দলীয় নেতা।

গত ৩০ জুন পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল হয়। এর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি বিষয়ক সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী বাতিল করে সর্বোচ্চ আদালত।

বিএনপি শুরু থেকেই তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের বিরোধিতা করে আসছিল।

রামপালে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প নয়

খুলনার রামপালে ভারত থেকে কয়লা এনে বিদ্যুৎ প্রকল্প করার বিরোধিতা করে খালেদা জিয়া বলেন, “এই প্রকল্প হলে আমাদের সুন্দরবন শেষ হয়ে যাবে। সেখানকার জীব-বৈচিত্র, পশু-পাখি সব কিছু মরে যাবে। এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। রামপালে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প হতে দেওয়া হবে না।”

খুলনার বিভিন্ন সমস্যার কথা উল্লেখ করে সাবেক প্রধানমন্ত্রী এই অঞ্চলের আইলা ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন, সাতক্ষীরা ও খুলনার জলাবদ্ধাা দূর করার দাবি জানান।

তিনি বলেন, “বিএনপি ক্ষমতায় গেলে খুলনা অঞ্চলে অতীতের মতো আরো উন্নয়ন করবো।”

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বিএনপিও চায়

স্বাধীনতা ও মানবতাবিরোধীদের বিচার বিএনপি চায়- এ মন্তব্য করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, “তবে এখন যাদের আটক করে দলীয় লোকজনকে দিয়ে ট্রাইব্যুনালে বিচার হচ্ছে, তা গ্রহণযোগ্য নয়।”

এ সময় তিনি জামায়াত নেতাসহ সব রাজবন্দিদের মুক্তি দাবি করেন।

আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন নয়

বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, “ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে তারা সংবিধান সংশোধন করেছে। সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ও আল্লাহর ওপর আস্থা-বিশ্বাস উঠিয়ে দিয়েছে। এখন আওয়ামী লীগ বলছে, তাদের অধীনে নির্বাচন করতে হবে। আমি বলে দিতে চাই- আওয়ামী লীগের অধীনে এদেশে আর কোনো নির্বাচন হবে না।”

সব দলের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচন কমিশন গঠন করার দাবিও জানান তিনি।

টিপাইমুখ বাঁধ

খালেদা জিয়া সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, “এই বাঁধ হলে দেশের মহাসর্বানাশ হয়ে যাবে। এ বাঁধ নিয়ে সিলেট উত্তাল হয়ে উঠেছে। সরকার কোনো কথা বলছে না। আমরা সরকারকে বলবো, টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে শক্ত অবস্থান নিন। নইলে ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান।”

“ভারতের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্ব আছে, থাকবে। কিন্তু টিপাইমুখ বাঁধ নির্মাণ ও ভারতের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে গ্যাস উত্তোলনে কোনো ভারি যন্ত্রাংশ বাংলাদেশ দিয়ে যেতে দেওয়া হবে না”, যোগ করেন তিনি।

মহানগর বিএপির সভাপতি কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক সাংসদ নজরুল ইসলাম মঞ্জু সভাপতিত্বে জনসভায় অন্যদের মধ্যে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির সভাপতি অলি আহমেদ, জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমীর এ কে এম নাজির আহমেদ, খেলাফত মজলিশের চেয়ারম্যান মওলানা মুহাম্মদ ইসহাক, ইসলামী ঐক্যজোটের মহাসচিব আবদুল লতিফ নেজামী, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির মহাসচিব শামীম আল মামুন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানি প্রমুখ নেতারা বক্তব্য দেন।

এ ছাড়া বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমেদ, তরিকুল ইসলাম, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় প্রমুখ নেতা বক্তব্য দেন।

সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে খালেদা জিয়া ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দেন।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

সাক্ষাত্কারে সাদেক হোসেন খোকা সরকার উল্টাপাল্টা কাজ করে যাচ্ছে, অতীতে বিএনপিও করেছিল


সাক্ষাত্কারে সাদেক হোসেন খোকা

প্রথম আলো: সরকার ঢাকা সিটি করপোরেশনকে (ডিসিসি) দুই ভাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?
সাদেক হোসেন খোকা: সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক চতুর্দশ শতকে অযাচিতভাবে দিল্লি থেকে ৭০০ মাইল দক্ষিণের দেবগিরিতে রাজধানী স্থানান্তর করে সে সময়ে লাখ লাখ মানুষের দুর্ভোগ বাড়িয়েছিলেন। বর্তমানে সরকার সেই রকম তুঘলকি সিদ্ধান্তই নিয়েছে। কারও দাবি বা প্রত্যাশা ছাড়া এ ধরনের সিদ্ধান্ত কোনো মানদণ্ডেই পড়ে না। আসলে সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে কোনো দলেরই মাথা ঠিক থাকে না। নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার কারণেই সরকার উল্টাপাল্টা কাজ করে যাচ্ছে। অতীতে বিএনপিও তা করেছিল।

প্রথম আলো: ডিসিসির কাউন্সিলর, কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিষয়টিকে কীভাবে নিয়েছেন?
সাদেক হোসেন: ডিসিসির বোর্ডের সভায় সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে বলা হয়েছে, সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়নি। কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রতিবাদের মাধ্যমে তাঁদের ভাষাও এরই মধ্যে পরিষ্কার হয়ে গেছে।

প্রথম আলো: সরকার কী উদ্দেশ্যে কাজটি করতে যাচ্ছে বলে আপনি মনে করেন?
সাদেক হোসেন: ভালো কোনো উদ্দেশ্য নেই। ঢাকার ৪০০ বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও গর্বকে দুই টুকরো করার নকশামাত্র। আসলে ক্ষমতাসীন দল মনে করে, মেয়র হিসেবে আমি সরকারবিরোধী বলয়ে বড় ভূমিকা রাখছি। মূলত আমাকে কাবু করার জন্যই সরকার ঢাকাকে ভাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দুই ভাগ করা হলে আমার জায়গায় প্রশাসক নিয়োগ করা সম্ভব হবে। এর একটাই অর্থ হতে পারে—সরকার নির্বাচনের আগেই আমাকে বিজয়ী ঘোষণা করেছে। ভেবে ভালো লাগছে যে আমি সরকারের কাছে ফ্যাক্টর। বিষয়টি আমার জন্য একদিকে যেমন বিজয়ের, অন্যদিকে হতাশার। কারণ আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা ঢাকা শহরে। আমার চোখের সামনেই একসময়ের ছোট শহর ঢাকা এখন বিশাল মহানগরী। ৪০০ বছরের পুরোনো এই শহর কেবল বাংলাদেশের রাজধানীই নয়, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের লীলাভূমিও বটে। অথচ এখন আমার কারণেই সেই শহরকে ভেঙে দুই ভাগ করা হচ্ছে। সে জন্যই আমি এরই মধ্যে ঘোষণা দিয়েছি, প্রয়োজনে আমি নির্বাচন করব না। তবুও সরকার যেন এ ধরনের হীন কাজ থেকে বিরত থাকে।

প্রথম আলো: আপনি কি মনে করেন, অখণ্ড ঢাকাতে নির্বাচন হলে আপনিই জিতবেন?
সাদেক হোসেন: এটা সত্য, ডিসিসি নির্বাচনে আমাকে পরাজিত করার মতো কোনো প্রার্থী বা জনমত আওয়ামী লীগের নেই। সে জন্যই তারা রাজধানীবাসী, সুশীল সমাজ ও গণমাধ্যমের বিরোধিতা সত্ত্বেও রাজধানী শহরকে দ্বিখণ্ডিত করার মতো আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পুরো বিষয়টিই রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপ্রসূত।

প্রথম আলো: বিদ্যমান আইনে প্রশাসক নিয়োগের সুযোগ থাকলে সরকার কি রাজধানীকে ভাগ করার চিন্তাভাবনা করত?
সাদেক হোসেন: প্রশ্নই আসে না। প্রশাসক নিয়োগের সুযোগ থাকলে সময় নষ্ট না করে তারা আমাকে সরিয়ে সঙ্গে সঙ্গে প্রশাসক নিয়োগ করে দিত। মূলত আমাকে সরিয়ে প্রশাসক নিয়োগ করার জন্যই ডিসিসিকে দুই ভাগ করা হচ্ছে। এটা হলো একধরনের স্থূল রাজনৈতিক কৌশল।

প্রথম আলো: ঢাকাকে ভাগ করা হলে কী ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন?
সাদেক হোসেন: দেখুন, ঢাকার কোনো প্রাকৃতিক সীমানা নেই, যা দিয়ে ভাগ করা যায়। কোন মানদণ্ডে ভাগ করা হবে? রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, পানি, গ্যাস, বিদ্যুত্সহ অন্যান্য সেবা খাতের জন্যই কি দুটি করে কর্তৃপক্ষ হবে? রাজধানীতে যেসব যানবাহন আছে, তাদের নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ কে হবে? সংবিধানের ৫ অনুচ্ছেদে আছে, বাংলাদেশের রাজধানী হবে ঢাকা। রাজধানীর সীমানা আইনের দ্বারা নির্ধারিত হবে। কিন্তু এখন দুই ভাগ হলে কোন অংশটি রাজধানী হিসেবে চিহ্নিত হবে? সুতরাং এ নিয়ে সাংবিধানিক সংকট সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা আছে। সচিবালয়, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, বঙ্গভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ভবনগুলো কোথায় থাকবে? এ নিয়ে যদি রাজধানীর উত্তর এবং দক্ষিণের বাসিন্দাদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়, তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। আরও যা ঘটতে পারে, ঢাকায় জনসংখ্যার চাপ বাড়বে। কৃষিজমি, জলাশয়, খাল, নদী ভরাট হবে। তারপর একসময় রাজধানী বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়বে—সবই আশঙ্কা। ভবিষ্যত্ই বলবে, কী ঘটতে যাচ্ছে। তবে পরিণতি যে ভয়াবহ হবে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।

প্রথম আলো: ঢাকা ভাগ না করে সরকারের কী করা উচিত ছিল বলে আপনি মনে করেন?
সাদেক হোসেন: আওয়ামী লীগের নেতা মেয়র হানিফ সাহেব যা চেয়েছিলেন, আমি তা-ই চেয়েছি। কিন্তু করতে পারিনি। আমরা চেয়েছিলাম ওয়াসা, রাজউক ও ঢাকার ট্রাফিক ব্যবস্থাকে ডিসিসির অধীনে নিতে। এতে প্রশাসনিক ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কমে যেত। জনগণের জন্য দেওয়া সেবার মান বাড়ত। এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর এ কাজটি করলে তাতে রাজধানীবাসী উপকৃত হতো। এ সরকার আরও যা করতে পারত, সিটিকে একাধিক অঞ্চলে ভাগ করে একাধিক ডেপুটি মেয়রের পদ তৈরি করতে পারত। তাতে সিটি করপোরেশন অনেক বেশি শক্তিশালী হতো।

প্রথম আলো: সরকারের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে বিএনপি থেকে বড় ধরনের কোনো আন্দোলন কর্মসূচির করার চিন্তাভাবনা আছে কি?
সাদেক হোসেন: এখনই তো ঢাকাবাসী বিচ্ছিন্নভাবে প্রতিবাদ করে যাচ্ছে। কাউন্সিলররা মানববন্ধন করছেন। এ বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো কর্মসূচি নেওয়া যায় কি না, সেটা দলীয় পর্যায়ে আলোচনা করে ঠিক করা হবে। একই সঙ্গে ঢাকাবাসীদের নিয়েও আন্দোলন-কর্মসূচি গ্রহণের সম্ভাবনার বিষয়টি আমি এবং আমাদের কাউন্সিলরদের চিন্তাভাবনায় রয়েছে।

পাকিস্তানের বিমানঘাঁটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরে যাওয়ার নির্দেশ

হিনা রাব্বানি খার হিনা রাব্বানি খার
পাকিস্তানের শামসি বিমানঘাঁটি থেকে ১৫ দিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে চলে যেতে নির্দেশ দিয়েছে ইসলামাবাদ। একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র এবং সামরিক জোট ন্যাটোর সঙ্গে সব ধরনের কর্মসূচি ও সহযোগিতার বিষয়টি পুনর্বিবেচনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা।
গত শনিবার পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের একটি তল্লাশি চৌকিতে ন্যাটোর হেলিকপ্টার হামলায় ২৮ সেনা নিহত হন। এর পরিপ্রেক্ষিতে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের মন্ত্রিসভার প্রতিরক্ষা কমিটির সভায় এসব সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ওই হামলার পর ইসলামাবাদে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করেছে পাকিস্তান সরকার। এর আগে পাকিস্তান থেকে আফগানিস্তানে নিয়োজিত ন্যাটো বাহিনীর জন্য রসদ সরবরাহের পথ বন্ধ করে দেওয়া হয়।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানির দপ্তর থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয়, মন্ত্রিসভার প্রতিরক্ষা কমিটির সভায় প্রধানমন্ত্রী সভাপতিত্ব করেন। সেনাপ্রধান জেনারেল আশফাক পারভেজ কায়ানিসহ জ্যেষ্ঠ মন্ত্রীরা বৈঠকে যোগ দেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, পাকিস্তানের শামসি বিমানঘাঁটি থেকে ১৫ দিনের মধ্যে সরে যেতে যুক্তরাষ্ট্রকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাকিস্তানের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা নিজেদের দেশের জনগণ ও সেনাবাহিনীই নিশ্চিত করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ) পাকিস্তানের প্রত্যন্ত অঞ্চলের শামসি বিমানঘাঁটি ব্যবহার করত। এই ঘাঁটি থেকে মনুষ্যবিহীন বিমান থেকে তালেবান ও আল-কায়েদাবিরোধী অভিযান চালানো হতো। আগেও পাকিস্তান ওই ঘাঁটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের সেনারা ইতিমধ্যে সেই ঘাঁটি ছেড়ে গেছে।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার ন্যাটোর হামলার বিষয়ে টেলিফোনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের সঙ্গে কথা বলেন। তিনি টেলিফোনে হিলারিকে বলেন, এ ঘটনা দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়নে বাধার সৃষ্টি করবে এবং পাকিস্তান বিভিন্ন ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে কাজ করার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে বাধ্য হবে। হিনা আরও বলেন, পাকিস্তান চায় শামসি বিমানঘাঁটি থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে যাক।
এর আগে শনিবার রাতে যৌথ বিবৃতি দিয়েছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী লিওন প্যানেট্টা। এতে বলা হয়, পাকিস্তানে ন্যাটোর হামলায় হতাহতের ঘটনায় আমরা গভীরভাবে শোকাহত। এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্তে সমর্থন দেবে যুক্তরাষ্ট্র। বিবৃতিতে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের প্রতি গুরুত্বারোপ করে বলা হয়, দেশ দুটি জনগণের স্বার্থে কাজ করছে।
ন্যাটোর হামলার প্রতিবাদে পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে মার্কিনবিরোধী বিক্ষোভ হয়েছে। পাকিস্তানের জামায়াতে ইসলামি গতকাল মোহামন্দ এলাকায় বিক্ষোভ করেছে। এএফপি, বিবিসি, রয়টার্স।

আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ঢাকা সম্মেলন "লড়াই করেই পৃথিবী গড়তে হবে"

সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন, লুণ্ঠন, দখল ও অবরোধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে ঢাকায় শু সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন, লুণ্ঠন, দখল ও অবরোধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে ঢাকায় শুরু হয়েছে তৃতীয় আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদবিরোধী সম্মেলন। বিশ্বের ২৫টি দেশের প্রতিনিধিরা এ সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। গতকাল উদ্বোধনী অধিবেশনের ছবি
প্রথম আলো
দেশে দেশে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসন, লুণ্ঠন, দখলদারি ও অবরোধের বিরুদ্ধে বিশ্ববাসীকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শুরু হয়েছে ‘তৃতীয় আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ঢাকা সম্মেলন-২০১১’।
সম্মেলনে বলা হয়, বিশ্বের মানুষ শান্তি চায়। আর সেই শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে হলে সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে লড়াই করতে হবে। লড়াই করেই পৃথিবীটা গড়তে হবে।
গতকাল রোববার দিনব্যাপী এই সম্মেলন শুরু হয়। বিশ্বের ২৫টি দেশের দেড় শতাধিক নেতাসহ ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ এই সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন।
ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্টি ইম্পেরিয়ালিস্ট অ্যান্ড পিপলস সলিডারিটি কো-অর্ডিনেটিং কমিটির (আইএপিএসসিসি) সঙ্গে যৌথভাবে এই সম্মেলনের আয়োজন করছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)। এর আগে ২০০৭ সালে ভারতের কলকাতায় প্রথম এবং ২০০৯ সালে লেবাননের বৈরুতে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
ঢাকা মহানগর নাট্যমঞ্চ থেকে গতকাল সকালে শোভাযাত্রার মাধ্যমে এই সম্মেলন শুরু হয়। বিকেলে নাট্যমঞ্চের খোলা ময়দানে সুবিশাল একটি মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় উদ্বোধনী অধিবেশন। মুহুর্মুহ করতালি ও স্লোগানের মাধ্যমে এ সময় নাট্যমঞ্চ এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে।
উদ্বোধনী সমাবেশে বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান বলেন, ‘সাম্রাজ্যবাদী বহুজাতিক কোম্পানি ও সাম্রাজ্যবাদের কাছে নতজানু শাসকগোষ্ঠীর কবল থেকে তেল-গ্যাস-কয়লাসহ প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ রক্ষার দাবিতে আমরা লড়াই করছি। আর যুক্তরাষ্ট্রে মানুষ লড়ছে বিশ্ব পুঁজিবাদী-সাম্রাজ্যবাদী অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র ওয়াল স্ট্রিট দখল করার ডাক দিয়ে। এই দুই আন্দোলনের লক্ষ্য একটাই—শোষণ থেকে মুক্তি, সাম্রাজ্যবাদের যুদ্ধ-লুটতরাজ-দখলদারি থেকে মুক্তি।
আইএপিএসসিসির সভাপতি যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল রামজে ক্লার্কের লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার্কার্স ওয়ার্ল্ড পার্টির সম্পাদক-মণ্ডলীর সদস্য সারা ফ্লাউন্ডার্স। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র মানবতা, শান্তি ও সভ্যতার শত্রু। দেশের অভ্যন্তরেই আমরা মার্কিন শাসিতদের সাম্রাজ্যবাদী নীতির বিরুদ্ধে লড়ছি।’
আইএপিএসসিসির সাধারণ সম্পাদক ও সোশ্যালিস্ট ইউনিটি সেন্টার অব ইন্ডিয়ার (কমিউনিস্ট) পলিটব্যুরোর সদস্য মানিক মুখার্জি বলেন, এমন একটি সময়ে এই সম্মেলন হচ্ছে, যখন তিউনিসিয়া থেকে মিসর, ওয়াল স্ট্রিট—সর্বত্র পুঁজিবাদ-সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে মানুষ বিক্ষুব্ধ।
মানিক মুখার্জি বলেন, ‘সাম্রাজ্যবাদী শক্তি যত দিন টিকে থাকবে, তত দিন শান্তি প্রতিষ্ঠা সম্ভব নয়। কাজেই বিশ্বশান্তি চাইলে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী লড়াই শুরু করতে হবে। তবে সেটি কেবল মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ নয়, ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধেও লড়তে হবে। প্রয়োজনে সারা বিশ্বে সাম্রাজ্যবাদবিরোধী শক্তির ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
সম্মেলনে নেপালের ঐক্যবদ্ধ কমিউনিস্ট পার্টির (মাওবাদী) চেয়ারম্যান পুষ্প কমল দহল প্রচণ্ডের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও দেশটির সংবিধান প্রণয়নের শেষ মুহূর্তের কাজের জন্য তিনি আসতে পারেননি। তাঁর লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান মাওবাদী আরেক নেতা এবং দেশটির সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী কৃষ্ণ বাহাদুর মাহারা। প্রচণ্ডের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ‘আমি এই সম্মেলনে এই বার্তাই পৌঁছে দিতে চাই, শোষণ-নিপীড়নের বিরুদ্ধে যেকোনো আন্দোলনে আমরা এক কাতারে থাকতে অঙ্গীকারবদ্ধ।’
উদ্বোধনী অধিবেশনে আরও বক্তব্য দেন ভেনেজুয়েলার শ্রমিক নেত্রী মারিয়া মারসেলা মাসপেরো ফার্নান্দেজ, আরব ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর কমিউনিটি অ্যান্ড সলিডারিটির সভাপতি মান বাছুর, পাকিস্তানের কমিউনিস্ট পার্টির নেতা মোহাম্মদ ইকবাল, কোরিয়ান কমিটি ফর আফ্রো-এশিয়ান সলিডারিটির সাধারণ সম্পাদক রি ছং, ফিলিস্তিনের আলদামির অ্যাসোসিয়েশন ফর হিউম্যান রাইটসের সংগঠক খলিল এম জে আবু সামলা এবং বাংলাদেশের তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক শেখ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে মঞ্চের পাশে নির্মিত শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে এবং সাম্রাজ্যবাদ ও গণতন্ত্রের লড়াইয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। পরে সম্মেলনে অংশ নেওয়া প্রতিটি দেশের পক্ষ থেকে বেলুন উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন ঘোষণা করা হয়। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বজলুর রশিদ।
সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুবিনুল হায়দার চৌধুরী, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মনজুরুল আহসান খান, সাধারণ সম্পাদক মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, ভাষাসৈনিক আবদুল মতিন, কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, আনু মুহাম্মদ প্রমুখ।
আয়োজকেরা জানান, আজ ও আগামীকাল নাট্যমঞ্চের কাজী বশির মিলনায়তন ও শিল্পকলা একাডেমী মিলনায়তনে বিষয়ভিত্তিক সেমিনার চলবে। আগামীকাল বিকেলে ঢাকা ঘোষণার মধ্য দিয়ে এই সম্মেলন শেষ হবে। prothom-alo

Wednesday, November 16, 2011

আদালতে এফবিআই কর্মকর্তা ডেবরার সাক্ষ্য সিঙ্গাপুর সিটি ব্যাংকের অর্থ ভিসা কার্ডে খরচ করেন তারেক

  • এফবিআইয়ের কর্মকর্তা ডেবরা লাপ্রেভেট এফবিআইয়ের কর্মকর্তা ডেবরা লাপ্রেভেট
1 2
বিদেশে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেনের মামলায় তারেক রহমান ও তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে আজ বুধবার সাক্ষ্য দিয়েছেন মার্কিন তদন্ত সংস্থা এফবিআইয়ের কর্মকর্তা ডেবরা লাপ্রেভেট। আদালতে সাক্ষীর কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তিনি প্রথমেই জানান, তিনি রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়ে নয় বরং স্বেচ্ছায় এ সাক্ষ্য দিচ্ছেন।
আদালতকে ডেবরা বলেন, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বাংলাদেশ সরকার এবং যুক্তরাষ্ট্র সরকারের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তত্কালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের আগে বিদেশে অর্থপাচার ও অবৈধভাবে লেনদেনের বিষয়ে তদন্ত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে ২০০৮ সালে অনুরোধ করা হয়। এর ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র সরকার এফবিআইকে বিষয়টি তদন্ত করতে নির্দেশ দেয়।
ডেবরা আরও জানান, তদন্তকালে বাংলাদেশের কয়েকজন ব্যক্তির অবৈধ অর্থ লেনদেনের তথ্য পাওয়া যায়। এর মধ্যে দেখা যায়, গিয়াসউদ্দিন আল মামুন সিঙ্গাপুরের সিটি ব্যাংকে নিজের পাসপোর্ট ইস্যু করে একটি হিসাব খোলেন। আর মামুনের ওই হিসাবের লেনদেন বিষয়ে তদন্ত করার সময় তারেক রহমানের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়। মামুন তাঁর হিসাব থেকে তারেকের হিসাবে টাকা পাঠান। সেখান থেকে তারেক দুটি ভিসা কার্ডের মাধ্যমে প্রায় ৪০ লাখ টাকা তুলে বিভিন্ন দেশ সফর করেন ও কেনাকাটা করেন। এ ছাড়া খাদিজা ইসলাম নামের এক ব্যক্তির হিসাব থেকে সাত লাখ ইউএস ডলার মামুনের ব্যাংক হিসাবে জমা হয়।
ঢাকার বিশেষ জজ-৩-এর বিচারক মোজাম্মেল হোসেনের আদালতে আজ বুধবার বেলা ১১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত এ বিচারকাজ অনুষ্ঠিত হয়। বাদীর পক্ষে মোশাররফ হোসেন, আনিসুল হক আর রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম মামলা পরিচালনা করেন। আদালত আগামী ৮ ডিসেম্বর মামলার পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য করেছেন।
সাক্ষ্য দেওয়ার একপর্যায়ে ডেবরা জানান, এ বিষয়ে তদন্ত শেষে সাক্ষীর স্বাক্ষর-সংবলিত ২২৯ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে পাঠানো হয়। একই সঙ্গে সিঙ্গাপুরে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাসের মাধ্যমে ৩৮ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনও অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে পাঠানো হয়। আর আজ ওই প্রতিবেদনগুলোর স্বাক্ষরিত ফটোকপি আদালতে দাখিল করা হয়।
এর আগে সকালে এজলাস বসার পরপরই মামুনের আইনজীবীরা ডেবরাকে সাক্ষী হিসেবে আদালতে আনতে দুদকের করা আবেদনের বিরোধিতা করেন এবং ডেবরার সাক্ষ্য দেওয়ার আইনগত বৈধতা রয়েছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। আদালত বিষয়টি শুনানি শেষে নাকচ করে দেন। এ পর্যায়ে তারেক-মামুনের আইনজীবীরা আদালত বর্জন করে আদালত প্রাঙ্গণের মিছিল করেন।
২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর ক্যান্টনমেন্ট থানায় বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগে তারেক রহমান ও তাঁর বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। গত বছরের ২ জুলাই তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। তারেক রহমান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে জামিন নিয়ে চিকিত্সার জন্য যুক্তরাজ্য যান। এখনো তিনি ওই দেশে আছেন। মামুন আছেন কারাগারে।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানের প্রভাব খাটিয়ে বিভিন্ন কোম্পানি ও সংস্থাকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে তাঁর বন্ধু মামুন অবৈধভাবে অর্থ আদায় করেন। তারেক রহমান নিজেকে আড়াল করতে মামুনের মাধ্যমে ২০০৩ থেকে ২০০৭ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন পথে মোট ২০ কোটি ৪১ লাখ ২৫ হাজার টাকা সিঙ্গাপুরে পাচার করেন। তারেক রহমানের অবৈধভাবে অর্জিত অর্থই সিঙ্গাপুরের সিটি ব্যাংকে মামুনের হিসাবে রক্ষিত ছিল।

Friday, November 4, 2011

'খালেদার আশা ছিল সেনাবাহিনী তাদের জেতাবে'

  নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনে সেনা মোতায়েন নিয়ে বিএনপির সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, খালেদা জিয়া চেয়েছিলেন সেনাবাহিনী যেন ভোট 'চুরি' করে তাদের জিতিয়ে দেয়।

বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন তুলে বলেন, "নারায়ণগঞ্জে কী এমন ঘটনা ঘটলো যে সেখানে [নির্বাচনে] সেনা মোতায়েন করতে হবে?"

"এমন কোনো পরিস্থিতি হয়নি।" উল্লেখ করে তিনি বলেন, "সেনা মোতায়েনের জন্য নির্বাচন কমিশন থেকে হঠাৎ করে চিঠি দিয়ে দেওয়া হলো। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কমিশন যে বৈঠক করেছে সেখানে সেনাবাহিনীকে ডাকেনি।"

প্রধানমন্ত্রী বলেন, "তিনি [খালেদা জিয়া] আশা করেছিলেন সেনাবাহিনী এসে ভোট চুরি করে তাদের জিতিয়ে দেবে। সেনাবাহিনীর দায়িত্ব কি ভোট চুরি করা?"

নির্বাচনে ভোট গ্রহণের মাত্র সাত ঘণ্টা আগে বিএনপির নির্বাচন বর্জনের ঘোষণার প্রসঙ্গ টেনে হাসিনা বলেন, "সেনাবাহিনী মোতায়েন না করায় মাঝরাতে তারা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছে। সেনাবাহিনীকে কেন ভোট চুরির কাজে ব্যবহার করতে চান তিনি?"

জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনকে সরকারের সহযোগিতা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "নির্বাচন পরিচালনায় নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের নির্বাহী সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী দেওয়া হয়েছে।

সেনা মোতায়েন না হওয়ায় সংবিধান লঙ্ঘন হয়েছে বলে যারা সমালোচনা করছে তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "সংবিধানের ব্যত্যয় ঘটেনি।"

সেনা মোতায়েন না হওয়াকে 'সংবিধান লঙ্ঘন' হিসেবে অভিহিত করেছে বিএনপি। দলটি বলেছে, এর মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন 'অকার্যকর' সংস্থায় পরিণত হয়েছে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসেবে সেনাবাহিনী সরকার-প্রধানের [প্রধানমন্ত্রী] অধীন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, "সরকার-প্রধানই সিদ্ধান্ত নেবেন সেনাবাহিনী ব্যারাকের বাইরে যেতে পারে কি পারে না।"

সেনা মোতায়েন না করা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, "নির্বাচন কমিশন এমন একটা সময় সেনাবাহিনী চেয়ে চিঠি পাঠালো, যখন দেশের বাইরে আমরাও ব্যস্ত ছিলাম।"

নির্বাচন কমিশন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সেনা মোতায়েনে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগকে চিঠি দিলেও শেষ পর্যন্ত সেনা মোতায়েন হয়নি। এক নির্বাচন কমিশনার বলেছেন এ বিষয়ে জানতে চেয়ে তারা সরকারকে চিঠি দেবেন।

গত ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী দল সমর্থিত প্রার্থী শামীম ওসমানকে এক লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন।
ওই নির্বাচনে ভোট গ্রহণের মাত্র সাত ঘণ্টা আগে নির্বাচন বর্জন এবং দল সমর্থিত প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার ঘোষণা দেয় বিএনপি।

যুদ্ধাপরাধ বিচার প্রসঙ্গ

যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক জামায়াত-বিএনপি নেতাদের মুক্তি দাবি করে খালেদা জিয়ার স¤প্রতি দেওয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "আজকে উনি(খালেদা জিয়া) মাঠে নেমেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে।"

শেখ হাসিনা বলেন, "এই ঘৃণ্য অপরাধীদের বিচার বাংলার মাটিতে হতে হবে। জনগণ অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে। জনগণ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়।"

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিরোধীদলীয় নেতা জনগণের জবাব পেয়ে গেছেন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "উনি যে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন- জাতি তা পছন্দ করেনি।"

"একজন [সেলিনা হায়াৎ আইভী] নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আর আরেকজন [শামীম ওসমান] জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। [নারায়ণগঞ্জ সিটির মেয়র নির্বাচনে] একজন এক লাখের ওপর ভোট পেয়েছেন। আরেকজন, এক লাখের কাছাকাছি ভোট পেয়েছেন।" যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

টক শো

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনী দেওয়া হয়নি বলে 'সংবিধান লঙ্ঘন' হয়েছে বলে বিভিন্ন টেলিভিশন টক শো'তে যারা সরকারের সমালোচনা করছেন, তাদের পাল্টা সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, "২০০৩ ও ২০০৪ সালে নির্বাচনে সেনাবাহিনী চেয়ে তখনকার প্রধান নির্বাচন কমিশনার [এম এ] সাঈদ সাহেব নিজে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছিলেন। তখন সেনাবাহিনী দেওয়া হয়নি। সে চিঠি আমাদের কাছে আছে।"

ওই দুই নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন না করায় সংবিধান লঙ্ঘিত হয়েছিলো কি হয়নি- তা জানতে চান প্রধানমন্ত্রী।


'এখনো রক্তের পিপাসা মেটেনি'

প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে বিনাবিচারে 'অগণিত' সেনা সদস্য হত্যা করা হয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, "৭৫-এর পর সেনাবাহিনীতে ১৮টি ক্যু হয়েছিলো। শেষ ক্যু'তে জিয়াউর রহমান মারা যান। প্রতিটি ক্যুর পর সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে ফায়ারিং স্কোয়াডে হত্যা করা হয়েছে। অনেকে ছুটিতে ছিলো। তাদের ডেকে এনে হত্যা করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, "জিয়াউর রহমান দেশকে খুনীদের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছিলেন। তার স্ত্রী বাংলাদেশকে জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদের দেশে পরিণত করেছে।"

২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভনেত্রী বলেন, "প্রকাশ্য দিবালোকে সরকারি মদদ ছাড়া কী এই গ্রেনেড হামলা হতে পারে ?"

কারো নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "এখনো রক্তের পিপাসা মেটেনি।"

জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভনেত্রী বলেন, "জাতির পিতা এবং জাতীয় চার নেতার খুনীরা যেন বিদেশে আশ্রয় পায়- সে ব্যবস্থাও করেছিলো জিয়াউর রহমান।"

"পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যে কর্মকর্তা এই ব্যবস্থা করেছিলেন, তিনি এখন খালেদা জিয়ার পাশে রয়েছেন। তিনি এখন বিএনপি'র নেতা," যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

স্বাধীনতার পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হলেও জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে সবাইকে মুক্ত করে দেন এবং যারা দেশের বাইরে চলে গিয়েছিলো তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেন বলেও অভিযোগ করেন শেখ হাসিনা।

আরেক সেনা শাসক এইচএম এরশাদের আমলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাহারায় বঙ্গবন্ধুর খুনীরা দেশে রাজনীতি শুরু করে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন- দলের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, এম মনসুর আলীর ছেলে মোহাম্মদ নাসিম, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত এম এ আজিজ, সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

 বদলাই হালামু সবকিছু উল্টাইয়া: শামীম (ভিডিওসহ)

‘হুমকি-ধমকি যদি কেউ দিয়ে থাকে, আমারে কইবেন। আপনাদের কিচ্ছু করতে হইব না। রাতের বেলায় ঘরে গিয়ে হুমকির জবাব দিয়ে আসব। কাউরে যাইতে হইব না। প্রতিটা বাড়িত বাড়িত গিয়ে আমি হুমকি দিয়া আসব। জবাব চামু। ভাই, হুমকি কেন দিচ্ছ? ওই কাজটা আমি ভালো পারি। শুধু পাঞ্জাবি বদলাইয়া জিনসের প্যান্টটা পরতে হইব। আর আমরা যদি জিগাইতে যাই, তাইলে শহরে কেউ থাকব না। আমরা সাচ্চা আওয়ামী লীগার। ক্ষমতায় এখনো আওয়ামী লীগ আছে। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী, খালেদা জিয়া নাইক্কা। বদলাই হালামু সবকিছু উল্টাইয়া।’

সদ্য সমাপ্ত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সেলিনা হায়াৎ আইভীর কাছে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত সরকারি দল-সমর্থিত প্রার্থী শামীম ওসমান গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁর অনুগতদের উদ্দেশে এসব কথা বলেন। শহরের উত্তর চাষাঢ়ায় পৈতৃক বাসভবন হীরা মহলে অনুগত নেতা-কর্মীদের নিয়ে সভা করেন তিনি। তারপর এসব নেতা-কর্মী নিয়ে তিনি শহরে ‘চেঞ্জ ইমেজ, চেঞ্জ নারায়ণগঞ্জ’ ডাক দিয়ে প্রচারপত্র বিতরণ করেন।
শামীম ওসমান অনুগতদের উদ্দেশে বলেন, ‘নির্বাচনে হারার পরে সাংবাদিক সব্বাইরে ডাকাইয়া অপর পক্ষের হয়ে মিষ্টি খাওয়াইতে পারে কেউ? আমি সাংবাদিকদের মিষ্টি খাওয়াইছি, আমাগো বইন (আইভী) জিতছে দেইখা। কইছি—খা, খা না, তোরা খা না। তো, এইটা ব্রিটেনেও আজ পর্যন্ত হয় নাই।’
গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর কী আলাপ হয়েছে, কর্মীদের তা জানাতে গিয়ে শামীম ওসমান বলেন, ‘দলের কাছে ক্লিয়ার (পরিষ্কার) হইয়া গেছে, কারা বিএনপির, কারা জামায়াতের। আমি একটা জিনিস মনে করি, মজিবর ভাই (স্থানীয় নেতা) খাটতে খাটতে টায়ার্ড (ক্লান্ত), আমিও খাটতে খাটতে টায়ার্ড। সবাই খাটা-খাটনি করে টায়ার্ড হইয়া গেছি। তো, আমি আমার ছোট বোনের ব্যাপারে একটা পরামর্শ দিছি যে, দেখো, তোমার বিরুদ্ধে একটা অপপ্রচার হইছে যে, তুমি বিএনপি-জামায়াতের লোক। তারাই তোমারে ভোট দিছে। যা-ই হোক, এই মিথ্যাটা আমিই প্রচার করছি যে তুমি বিএনপি-জামায়াতের লোক। তো, মিথ্যা তো মিথ্যাই। এখন এটা তোমারে মিথ্যা প্রমাণ করতে হইব। কী করতে অইব? জামায়াত-বিএনপির আন্দোলন আইতেছে সামনে; এইত্তো ঈদের পরে। আমি কইছি আপারে (প্রধানমন্ত্রী) যে, আপা, আমার ছোট বইন আইভী আগামী তিন-চার মাস তার লোকজন যারা আছে তাদের নিয়া একটু জামায়াত-বিএনপিকে মোকাবিলা করুক। আমরা তো গেছি, এমনিও গেছি অমনিও গেছি। মোকাবেলা করলে যেটা হইব, এই যে ওর বিরুদ্ধে একটা মিথ্যা অপপ্রচার আমরা চালাইছিলাম, এটা সংশোধন হইয়া যাইব। আমাদেরও একটা বিশ্বাস জাগব যে, নাহ্, ও তো অ্যান্টি-জামায়াত, অ্যান্টি-বিএনপি। আমরা মিলামিশা সবাই কাজ করব। কাজ করতে সুবিধা হইব।’
বিএনপি-জামায়াত প্রসঙ্গে শামীম ওসমান আরও বলেন, ‘বিগত সংসদ নির্বাচনে সিটি করপোরেশন এলাকায় বিএনপি-জামায়াত ভোট পেয়েছিল এক লাখ ১১ হাজার ৮৩৫টা। এখন গ্যাস, বিদ্যুৎ-সংকট, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির কারণে বিএনপি-জামায়াতের ভোট আরও বাড়ার কথা। ভোট গেছে কই? ভোট তো পড়ছে ৭০ শতাংশ। আর ইভিএম (ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন) এলাকায় যেটা দেখলাম, ওখানে ভোট পড়ছে ৮০ থেকে ৮৫, ৯০ শতাংশ। কেন হইছে, কীভাবে হইছে, আমি জানি না। ওগুলো নিয়ে আমি প্রশ্ন তুলব না। যারা তোলার তুলবে। এটা আমাদের কাজ না। আমরা সরকারি দল করি। আমাদের কাজ হইল নির্বাচন সুষ্ঠু করে দেওয়া। আমরা করে দিয়েছি। একটা ঝামেলা হয় নাই, একটা ধাক্কাধাক্কি হয় নাই। নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে, নারায়ণগঞ্জবাসী সম্মানিত হয়েছে। এটাই আমাদের জয়।’
শামীম ওসমান গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর আলাপচারিতার বিবরণ দিয়ে বলেন, ‘নেত্রী আমাকে বলেছেন, কসম আল্লাহর বলছি, উনি বলছেন আমারে যে, “আমি কারও কাছে এত কৃতজ্ঞ হইনি জীবনে, যেটুক কৃতজ্ঞ তুমি আমাকে করেছ”, এক্কেবারে আইভীর সামনেই বলছে যে, “তুমি যে ধৈর্য দেখাইছ। আমি জানি, তুমি ১০ মিনিটের মধ্যে সকল ভোটকেন্দ্র দখল করতে পারতা। নির্বাচন বন্ধ করাইতে পারতা। বিএনপি বয়কট করার পর তোমার আর নির্বাচন করার কথা ছিল না। কারণ আমি দাঁড়াইলেও হয়তো বিএনপির দুই-একটা ভোট পাব। কিন্তু তুমি একটাও পাইবা না। তার পরও তুমি নির্বাচনে ছিলা ক্যান? যে নির্বাচনটা হোক। এত কিছুর পরও তুমি নির্বাচন করায় তোমার ইমেজ ভালো হয়েছে। আমারও ইমেজ ভালো হইছে, সারা পৃথিবীর কাছে আমি কইতে পারুম, দেখো, নির্বাচন ক্যামনে করতে হয় তা আমি দেখাই দিলাম।”’
শামীম বলেন, ‘নেত্রীকে বলেছি, রাজনীতিতে আপনার উত্তরাধিকার অবশ্যই যেন আপনার রক্তের লোক হয়। আপনার রক্তের উত্তরাধিকারী যদি থাকে, তাইলে আছি, নাইলে নাইক্কা। আমরা চাই জয় আইসা রাজনীতি ধরুক। রেহানা আপা আসুক, যে-ই আইসা ধরে ধরুক, ববি ধরুক। আপনার পরিবারের সদস্য থাকতে হবে। আপা কয়, নাম অনেক হইছে শামীম; আর না, আর না। আমি বললাম, আপনি লক্ষ লক্ষ কর্মী কার কাছে ছেড়ে দিবেন? এদের দিয়ে হইব? আপনি দেশে নাই, আর খেলে দিল!’
কর্মীদের সামনে নিজের পরাজয়ের ব্যক্তিগত মূল্যায়নও তুলে ধরেছেন শামীম। তিনি বলেন, ‘এখানে আমাদের অনেক কিছু শিখার আছে। বিএনপি বইয়া যাওয়ার পরও কেউ আমগোর লগে পারত না। পারছে কেন জানেন? পারছে কারণ, একেকটি ওয়ার্ডে আমগো ছয়-সাতজন লোক কাউন্সিলর প্রার্থী খাড়াইয়া গেল। হগলই খাড়াইয়া গেলোগা। হগলে বোলে পাস করব। পরে কী হইল? তারা যার যার নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত রইল। দেখা গেল, আমার নির্বাচন করার মতো লোক মাঠে নেই। প্রতি ওয়ার্ডে আমার একজন করে প্রার্থী হলে ২৭টি ওয়ার্ডেই আমার লোক জিতত। আমার লোকেরা ঐক্যবদ্ধভাবে ঠিকমতো কাজ করলে বিএনপির প্রার্থী বসে যাবার পরও আমি জিততাম।’
কর্মীদের উদ্দেশে শামীম ওসমান বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে গেছে কডা, দেহেন না! বিএনপি-জামায়াত, মিডিয়ার বেশির ভাগ, বামপন্থী তা হগলেই গেছে গা—মেনন-ছেনন, ইনু—হগলে এক হইছে। আরেকটা ছিল, দুই পা গেছে গা কবরে, (গালি) নাম ভুলে গেছি গা, (কর্মীরা বলছে মূসা মূসা)। নেত্রীরেও কইছি, ওই যে দুই ঠ্যাং কবরে, আপা বুঝছে, লগে লগে কইলো মূসা মূসা।’
শামীম ওসমান বলেন, ‘এই প্রথম আলো আর ডেইলি স্টার মনে করছিল, আইভী তো নেত্রীর কাছে যাইব না। শামীম ওসমান বলদ না, বুদ্ধি রাখি, এর লাইগাই ধন্যবাদ জানাইছি। হে তো নেত্রীর কাছে চইলা গেছে। এই দুই দিন পর আবার দেখবেন, এই পত্রিকাটা আমার বইনটারে লই কী লেখা শুরু করে। কী খেলা শুরু করে।’
নির্বাচন কমিশনের সমালোচনা করে শামীম বলেন, ‘নির্বাচনের দুই দিন আগে টিভিতে দেখলাম, এক নির্বাচন কমিশনার ফাইল নেড়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, অমুক প্রার্থীর বিরুদ্ধে এত মামলা রয়েছে। অমুক প্রার্থীর বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। এ থেকেই বোঝা যায়, কে ভালো মানুষ। আমি এখন ইচ্ছে করলে সব কথার জবাব দিতে পারি। আমাকে হাত-পা বেঁধে নদীতে গোসল করতে ফেলে দেওয়া হয়েছিল।’
সভায় শামীম ওসমান ছিলেন একমাত্র বক্তা। উপস্থিত ছিলেন শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবর রহমান, ফতুল্লা থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী, জেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত মো. শহীদ বাদল, যুগ্ম সম্পাদক শাহ নিজাম, প্রচার সম্পাদক জহিরুল ইসলাম ভূঁইয়া, পারভেজ (ক্যাঙ্গারু পারভেজ), ফতুল্লা থানা যুবলীগের সভাপতি মীর সোহেল, সাধারণ সম্পাদক ফাইজুল ইসলাম, ফতুল্লা থানা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ফরিদ আহমেদ ওরফে লিটন। সভায় ফতুল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ, বন্দর এলাকা থেকে আসা লোকের সংখ্যাই ছিল বেশি। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অনুগতদের এই সভা চলে।
সভা শেষে কয়েক শ লোক নিয়ে শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করেন শামীম ওসমান। এ সময় পথচারীদের মাঝে একটি প্রচারপত্র বিতরণ করা হয়। কড়া পুলিশি পাহারার মধ্যে শামীম ওসমানের ঘনিষ্ঠ ‘ক্যাডাররা’ তাঁকে ঘিরে হাঁটেন।
জেলা পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, কোনো বিশৃঙ্খলা করা হবে না—শামীম ওসমানের কাছ থেকে এ ধরনের প্রতিশ্রুতি পেয়েই তাঁকে রাস্তায় নামার অনুমতি দেওয়া হয়।
লিফলেটে যা বলেছেন শামীম: লিফলেটে গত ৩০ অক্টোবর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের জন্য নারায়ণগঞ্জবাসীকে অভিনন্দন জানান শামীম ওসমান।
এতে বলা হয়, ‘আপনারা জানেন, এই নির্বাচনকে ঘিরে নানামুখী ষড়যন্ত্র হয়েছিল। শুধু প্রগতিশীল ও স্বাধীনতার সপক্ষের শক্তির পক্ষে কথা বলার অপরাধে বিএনপির প্রার্থীকে রাতের আঁধারে বসিয়ে দেওয়া, নির্বাচন কমিশনের সর্বোচ্চ ব্যক্তিদের প্রশ্নবিদ্ধ আচরণ ও বক্তব্য দেওয়া, কিছু মুখচেনা পয়সায় কেনা বুদ্ধিজীবীর ব্যাপক অপপ্রচার এবং আমাকে ও নারায়ণগঞ্জবাসীকে সন্ত্রাসী বানানোর শত অপচেষ্টা সত্ত্বেও আপনারা সুষ্ঠু নির্বাচনের যে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন, সে জন্য আপনাদের অশেষ ধন্যবাদ।’
প্রচারপত্রে নগরবাসীর উদ্দেশে বলা হয়, ‘এত কিছুর পরও আপনাদের যে ভালোবাসা আমি পেয়েছি, সেই ঋণ শোধ করার মতো ক্ষমতা আমার মতো নগণ্য মানুষের নেই। আমি বিশ্বাস করি, মানুষের মাঝেই সৃষ্টিকর্তা মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের বসবাস। তাই বাকি জীবন আপনাদের খুশি করে আমি সৃষ্টিকর্তাকে খুশি করতে চাই। নির্বাচনে যাঁরা আমাকে ভোট দিয়েছেন, তাঁদের জানাই আন্তরিক ধন্যবাদ। যাঁরা ভোট দেননি, নিশ্চয় আমি তাঁদের মন জয় করতে পারিনি, তাঁদেরও জানাই আমার শ্রদ্ধা ও সালাম।’
প্রচারপত্রে শামীম ওসমান বলেন, ‘আমি একজন অতি সাধারণ মানুষ, আমার কোনো ক্ষমতা নেই। তার পরও আপনারা মহান আল্লাহর দরবারে দোয়া করবেন, তিনি যেন আমাকে আপনাদের সুখে-দুঃখে যেকোনো সমস্যায় আপনাদের পাশে থেকে সেবা করার তৌফিক দান করেন। আসুন, আমরা সবাই মিলে একটি আধুনিক সুখী নারায়ণগঞ্জ গড়ে তুলি। আমাদের স্লোগান হোক “চেঞ্জ ইমেজ, চেঞ্জ নারায়ণগঞ্জ।”’ প্রথম আলো

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More