শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামীকে (হুজি)। আর জঙ্গিদের এ ব্যাপারে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দেওয়া হয় হাওয়া ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠক থেকে। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্রে এ তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রায় দুই বছর অধিকতর তদন্ত শেষে গত রোববার আদালতে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসংক্রান্ত দুটি মামলার (হত্যা ও বিস্ফোরক) সম্পূরক অভিযোগপত্র দিয়েছে সিআইডি। এতে ৩০ জনকে নতুন করে আসামি করা হয়েছে।
নতুন আসামিদের মধ্যে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ অভিযুক্ত বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ আনা হয়েছে।
সম্পূরক অভিযোগপত্রে এঁদের অপরাধ সম্পর্কে বলা হয়, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট হামলার কিছুদিন আগে, অর্থাৎ আগস্ট মাসের মাঝামাঝি একদিন হুজির শীর্ষস্থানীয় নেতা মুফতি হান্নান, মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা শেখ ফরিদ, মাওলানা তাজউদ্দিন আল-মারকাজুল ইসলামীর একটি মাইক্রোবাসযোগে বনানীর হাওয়া ভবনে যান। তাঁদের সঙ্গে আল-মারকাজুলের (এনজিও) কর্মকর্তা মাওলানা আবদুর রশিদও ছিলেন।
অভিযোগপত্রের বয়ান অনুযায়ী, আবদুর রশিদকে নিচতলায় দাঁড় করিয়ে ওই জঙ্গি নেতারা হাওয়া ভবনের দোতলায় যান। তাঁরা সেখানে হাওয়া ভবনের কর্ণধার তারেক জিয়া, লুৎফুজ্জামান বাবর, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ও তৎকালীন সমাজকল্যাণমন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম ও প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে জঙ্গিরা শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতাদের ওপর হামলার বিষয়ে সহযোগিতা চান। বৈঠকে মুফতি হান্নান ও তাঁর সহযোগীদের তারেক জিয়া সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন বলে সম্পূরক অভিযোগপত্রে বলা হয়।
এরপর মুফতি হান্নানসহ জঙ্গিরা বাড্ডায় ও মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে গোপন বৈঠক করে হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কর্মপন্থা গ্রহণ করেন।
অভিযোগপত্রের বিবরণ অনুযায়ী, হাওয়া ভবনে বৈঠকের পর ১৮ আগস্ট (২০০৪) তৎকালীন উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ধানমন্ডিতে সরকারি বাসায় মাওলানা আবু তাহের, তাজউদ্দিন ও মুফতি হান্নান বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর, পরিবহন-মালিক মো. হানিফ ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন। আবদুস সালাম পিন্টু ও বাবর বৈঠকে জঙ্গি নেতাদের বলেন, তাঁদের হানিফ ও আরিফুল ইসলাম সব রকম সহযোগিতা করবেন। এ ছাড়া তাঁরা (পিন্টু ও বাবর) সব ধরনের প্রশাসনিক সহযোগিতার ব্যবস্থা করবেন বলেও আশ্বাস দেন। এই বৈঠকের পর ২০ আগস্ট জঙ্গি আহসান উল্লাহ ওরফে কাজল, মুফতি মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে আবু জান্দাল ধানমন্ডিতে আবদুস সালাম পিন্টুর বাসায় যান। সেখান থেকে তাজউদ্দিনের দেওয়া ১৫টি আর্জেস গ্রেনেড নিয়ে বাড্ডায় মুফতি হান্নানের কার্যালয়ে যান। ওই দিনই ২১ আগস্ট আক্রমণের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
অভিযোগপত্রে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার জন্য সাবেক উপমন্ত্রী পিন্টুর ভাই তাজউদ্দিনকে অন্যতম পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। পিন্টু ও তাজউদ্দিনকে এর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালে দেওয়া মূল অভিযোগপত্রেই আসামি করা হয়েছে। এবার তাঁদের আরেক ভাই রাতুল বাবুকেও আসামি করা হয়েছে। অবশ্য বাবুর নাম আগেই এসেছিল, তখন তাঁর পূর্ণ পরিচয় না পাওয়াতে আসামি করা হয়নি বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ আছে।
সম্পূরক অভিযোগপত্রে বলা হয়, মাওলানা তাজউদ্দিন পাকিস্তানের মাদ্রাসায় পড়াকালে কাশ্মীরভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবা, তেহরিক-ই জিহাদ আল ইসলাম ও হিজবুল মুজাহিদিনের সঙ্গে জড়িত হন। তাঁর সঙ্গে জোট সরকার আমলে লুৎফুজ্জামান বাবরের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। শুধু তা-ই নয়, বাবরের সঙ্গে পলাতক থাকা অবস্থায় মুফতি হান্নান ও আরেক জঙ্গি ফরিদপুরের কামাল উদ্দিন শাকেরেরও যোগাযোগ ছিল। তাঁরা ২০০০ সালে কোটালীপাড়ায় বোমা পেতে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলা এবং ফরিদপুরের বোমা হামলার মামলা থেকে রক্ষা পেতে বাবরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল।
এই মামলার আসামি হুজির শীর্ষস্থানীয় নেতা মাওলানা সালাম, মুফতি হান্নান, মাওলানা শেখ ফরিদ, মুফতি আবদুল হাই, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুর রউফসহ অন্যান্য জঙ্গি নেতা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের অন্য নেতাদের হত্যার জন্য অনেক আগে থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছিল। সম্পূরক অভিযোগপত্রের বিবরণে বলা হয়, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে এই জঙ্গিগোষ্ঠীকে বিভিন্ন কাজকর্মে বিএনপির সাংসদ শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সহযোগিতা করেছিলেন। ২০০৪ সালের প্রথম দিকে কায়কোবাদের সহযোগিতায় বনানীর হাওয়া ভবনে জঙ্গি নেতারা গিয়ে তারেক জিয়া ও হারিছ চৌধুরীর সঙ্গে প্রথম দেখা করেন। তখনই জঙ্গিরা শেখ হাসিনাসহ তাঁর দলের শীর্ষ নেতাদের হত্যা এবং জঙ্গিদের বিভিন্ন কাজকর্ম চালাতে সহযোগিতা চান। এরপর তারেক জিয়া সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন বলে সম্পূরক অভিযোগপত্রে বলা হয়।
নতুন করে ৩০ আসামির মধ্যে কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তাকেও আসামি করা হয়। তাঁদের অপরাধ সম্পর্কে সম্পূরক অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২১ আগস্ট হামলার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর জ্ঞাতসারে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবরের নির্দেশে গ্রেনেড সরবরাহকারী তাজউদ্দিনকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ কাজে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ওরফে ডিউক, তাঁর ভায়রা ভাই ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তা লে. কর্নেল (বরখাস্ত) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার ও ডিজিএফআইয়ের তখনকার পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন পরস্পর যোগসাজশে ২০০৬ সালের ১০ অক্টোবর মাওলানা তাজউদ্দিনকে ভিন্ন নামের পাসপোর্টে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেন। এ ছাড়া তাজউদ্দিনের বড় ভাই সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেপ্তার পর এসব কর্মকর্তা তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা এএসপি ফজলুল কবীরকে গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে অপরাধ করেছেন বলে সিআইডির তদন্তে বেরিয়ে আসে।
এ ছাড়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময়কার পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) শহুদুল হক, তৎকালীন মহানগর পুলিশ কমিশনার (পরবর্তী সময়ে আইজিপি) আশরাফুল হুদা, সিআইডির প্রধান (পরবর্তী সময়ে আইজিপি) খোদা বখ্স চৌধুরী, উপকমিশনার (পূর্ব) ওবায়েদুর রহমান খান ও উপকমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসানের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো: তাঁরা আসামিদের আক্রমণ পরিচালনার সুবিধার্থে ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের ওই সমাবেশ ও র্যালির জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেননি। ঘটনায় ব্যবহূত অবিস্ফোরিত তাজা গ্রেনেড আলামত হিসেবে জব্দ করার পরও, তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেননি। আদালতের অনুমতি ছাড়াই উদ্দেশ্যমূলকভাবে সেনাবাহিনীকে দিয়ে গ্রেনেড ধ্বংস করে আলামত নষ্ট করেছে।
এঁদের কেউ কেউ ওই হামলার ঘটনা আগে থেকে জানতেন। তাই হামলার পরপর আহত ব্যক্তিদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। ফলে আক্রমণকারী জঙ্গিরা সহজে পালাতে সক্ষম হয়।
সাবেক তিন আইজিপি সম্পর্কে বলা হয়, তাঁরা ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটনাস্থলে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেননি।
ওই হামলার সময়ে কর্তব্যরত পুলিশের দায়িত্ব পালনের মারাত্মক অবহেলার জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো বিভাগীয় তদন্ত বা ব্যবস্থা নেননি।
এঁরা আইজি থাকাকালীন মুফতি হান্নান ও তাঁর জঙ্গিগোষ্ঠীর তৎপরতা সম্পর্কে আগে থেকে অবহিত ছিলেন। কিন্তু তাঁকে এবং ২১ আগস্টের প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের কোনো উদ্যোগ নেননি।
এই মামলার জোট সরকার আমলের তিন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, এ এস পি আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা ভিন্ন খাতে নেওয়ার বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করা হয়। তাঁরা জজ মিয়াসহ তিনজনকে দিয়ে মিথ্যা জবানবন্দি আদালতে লিপিবদ্ধ করিয়েছিলেন।
প্রায় দুই বছর অধিকতর তদন্ত শেষে গত রোববার আদালতে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলাসংক্রান্ত দুটি মামলার (হত্যা ও বিস্ফোরক) সম্পূরক অভিযোগপত্র দিয়েছে সিআইডি। এতে ৩০ জনকে নতুন করে আসামি করা হয়েছে।
নতুন আসামিদের মধ্যে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান, সাবেক জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ অভিযুক্ত বিএনপি-জামায়াতের নেতাদের বিরুদ্ধে একই অভিযোগ আনা হয়েছে।
সম্পূরক অভিযোগপত্রে এঁদের অপরাধ সম্পর্কে বলা হয়, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট হামলার কিছুদিন আগে, অর্থাৎ আগস্ট মাসের মাঝামাঝি একদিন হুজির শীর্ষস্থানীয় নেতা মুফতি হান্নান, মাওলানা আবু তাহের, মাওলানা শেখ ফরিদ, মাওলানা তাজউদ্দিন আল-মারকাজুল ইসলামীর একটি মাইক্রোবাসযোগে বনানীর হাওয়া ভবনে যান। তাঁদের সঙ্গে আল-মারকাজুলের (এনজিও) কর্মকর্তা মাওলানা আবদুর রশিদও ছিলেন।
অভিযোগপত্রের বয়ান অনুযায়ী, আবদুর রশিদকে নিচতলায় দাঁড় করিয়ে ওই জঙ্গি নেতারা হাওয়া ভবনের দোতলায় যান। তাঁরা সেখানে হাওয়া ভবনের কর্ণধার তারেক জিয়া, লুৎফুজ্জামান বাবর, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক সচিব হারিছ চৌধুরী, জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল ও তৎকালীন সমাজকল্যাণমন্ত্রী আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম ও প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তরের (ডিজিএফআই) পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে জঙ্গিরা শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতাদের ওপর হামলার বিষয়ে সহযোগিতা চান। বৈঠকে মুফতি হান্নান ও তাঁর সহযোগীদের তারেক জিয়া সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন বলে সম্পূরক অভিযোগপত্রে বলা হয়।
এরপর মুফতি হান্নানসহ জঙ্গিরা বাড্ডায় ও মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন স্থানে গোপন বৈঠক করে হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কর্মপন্থা গ্রহণ করেন।
অভিযোগপত্রের বিবরণ অনুযায়ী, হাওয়া ভবনে বৈঠকের পর ১৮ আগস্ট (২০০৪) তৎকালীন উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর ধানমন্ডিতে সরকারি বাসায় মাওলানা আবু তাহের, তাজউদ্দিন ও মুফতি হান্নান বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবর, পরিবহন-মালিক মো. হানিফ ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন। আবদুস সালাম পিন্টু ও বাবর বৈঠকে জঙ্গি নেতাদের বলেন, তাঁদের হানিফ ও আরিফুল ইসলাম সব রকম সহযোগিতা করবেন। এ ছাড়া তাঁরা (পিন্টু ও বাবর) সব ধরনের প্রশাসনিক সহযোগিতার ব্যবস্থা করবেন বলেও আশ্বাস দেন। এই বৈঠকের পর ২০ আগস্ট জঙ্গি আহসান উল্লাহ ওরফে কাজল, মুফতি মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে আবু জান্দাল ধানমন্ডিতে আবদুস সালাম পিন্টুর বাসায় যান। সেখান থেকে তাজউদ্দিনের দেওয়া ১৫টি আর্জেস গ্রেনেড নিয়ে বাড্ডায় মুফতি হান্নানের কার্যালয়ে যান। ওই দিনই ২১ আগস্ট আক্রমণের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেওয়া হয়।
অভিযোগপত্রে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার জন্য সাবেক উপমন্ত্রী পিন্টুর ভাই তাজউদ্দিনকে অন্যতম পরিকল্পনাকারী হিসেবে উল্লেখ করা হয়। পিন্টু ও তাজউদ্দিনকে এর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৮ সালে দেওয়া মূল অভিযোগপত্রেই আসামি করা হয়েছে। এবার তাঁদের আরেক ভাই রাতুল বাবুকেও আসামি করা হয়েছে। অবশ্য বাবুর নাম আগেই এসেছিল, তখন তাঁর পূর্ণ পরিচয় না পাওয়াতে আসামি করা হয়নি বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ আছে।
সম্পূরক অভিযোগপত্রে বলা হয়, মাওলানা তাজউদ্দিন পাকিস্তানের মাদ্রাসায় পড়াকালে কাশ্মীরভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তাইয়েবা, তেহরিক-ই জিহাদ আল ইসলাম ও হিজবুল মুজাহিদিনের সঙ্গে জড়িত হন। তাঁর সঙ্গে জোট সরকার আমলে লুৎফুজ্জামান বাবরের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল। শুধু তা-ই নয়, বাবরের সঙ্গে পলাতক থাকা অবস্থায় মুফতি হান্নান ও আরেক জঙ্গি ফরিদপুরের কামাল উদ্দিন শাকেরেরও যোগাযোগ ছিল। তাঁরা ২০০০ সালে কোটালীপাড়ায় বোমা পেতে শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার মামলা এবং ফরিদপুরের বোমা হামলার মামলা থেকে রক্ষা পেতে বাবরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল।
এই মামলার আসামি হুজির শীর্ষস্থানীয় নেতা মাওলানা সালাম, মুফতি হান্নান, মাওলানা শেখ ফরিদ, মুফতি আবদুল হাই, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুর রউফসহ অন্যান্য জঙ্গি নেতা শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের অন্য নেতাদের হত্যার জন্য অনেক আগে থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছিল। সম্পূরক অভিযোগপত্রের বিবরণে বলা হয়, ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে এই জঙ্গিগোষ্ঠীকে বিভিন্ন কাজকর্মে বিএনপির সাংসদ শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদ ও সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সহযোগিতা করেছিলেন। ২০০৪ সালের প্রথম দিকে কায়কোবাদের সহযোগিতায় বনানীর হাওয়া ভবনে জঙ্গি নেতারা গিয়ে তারেক জিয়া ও হারিছ চৌধুরীর সঙ্গে প্রথম দেখা করেন। তখনই জঙ্গিরা শেখ হাসিনাসহ তাঁর দলের শীর্ষ নেতাদের হত্যা এবং জঙ্গিদের বিভিন্ন কাজকর্ম চালাতে সহযোগিতা চান। এরপর তারেক জিয়া সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন বলে সম্পূরক অভিযোগপত্রে বলা হয়।
নতুন করে ৩০ আসামির মধ্যে কয়েকজন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তাকেও আসামি করা হয়। তাঁদের অপরাধ সম্পর্কে সম্পূরক অভিযোগপত্রে বলা হয়, ২১ আগস্ট হামলার পর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর জ্ঞাতসারে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বাবরের নির্দেশে গ্রেনেড সরবরাহকারী তাজউদ্দিনকে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এ কাজে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ওরফে ডিউক, তাঁর ভায়রা ভাই ডিজিএফআইয়ের কর্মকর্তা লে. কর্নেল (বরখাস্ত) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার ও ডিজিএফআইয়ের তখনকার পরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) এ টি এম আমিন পরস্পর যোগসাজশে ২০০৬ সালের ১০ অক্টোবর মাওলানা তাজউদ্দিনকে ভিন্ন নামের পাসপোর্টে পাকিস্তানে পাঠিয়ে দেন। এ ছাড়া তাজউদ্দিনের বড় ভাই সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেপ্তার পর এসব কর্মকর্তা তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা এএসপি ফজলুল কবীরকে গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে অপরাধ করেছেন বলে সিআইডির তদন্তে বেরিয়ে আসে।
এ ছাড়া ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময়কার পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) শহুদুল হক, তৎকালীন মহানগর পুলিশ কমিশনার (পরবর্তী সময়ে আইজিপি) আশরাফুল হুদা, সিআইডির প্রধান (পরবর্তী সময়ে আইজিপি) খোদা বখ্স চৌধুরী, উপকমিশনার (পূর্ব) ওবায়েদুর রহমান খান ও উপকমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসানের বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো: তাঁরা আসামিদের আক্রমণ পরিচালনার সুবিধার্থে ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের ওই সমাবেশ ও র্যালির জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেননি। ঘটনায় ব্যবহূত অবিস্ফোরিত তাজা গ্রেনেড আলামত হিসেবে জব্দ করার পরও, তা সংরক্ষণের ব্যবস্থা করেননি। আদালতের অনুমতি ছাড়াই উদ্দেশ্যমূলকভাবে সেনাবাহিনীকে দিয়ে গ্রেনেড ধ্বংস করে আলামত নষ্ট করেছে।
এঁদের কেউ কেউ ওই হামলার ঘটনা আগে থেকে জানতেন। তাই হামলার পরপর আহত ব্যক্তিদের দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। ফলে আক্রমণকারী জঙ্গিরা সহজে পালাতে সক্ষম হয়।
সাবেক তিন আইজিপি সম্পর্কে বলা হয়, তাঁরা ইচ্ছাকৃতভাবে ঘটনাস্থলে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেননি।
ওই হামলার সময়ে কর্তব্যরত পুলিশের দায়িত্ব পালনের মারাত্মক অবহেলার জন্য তাঁদের বিরুদ্ধে কোনো বিভাগীয় তদন্ত বা ব্যবস্থা নেননি।
এঁরা আইজি থাকাকালীন মুফতি হান্নান ও তাঁর জঙ্গিগোষ্ঠীর তৎপরতা সম্পর্কে আগে থেকে অবহিত ছিলেন। কিন্তু তাঁকে এবং ২১ আগস্টের প্রকৃত অপরাধীদের শনাক্ত ও গ্রেপ্তারের কোনো উদ্যোগ নেননি।
এই মামলার জোট সরকার আমলের তিন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, এ এস পি আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা ভিন্ন খাতে নেওয়ার বিস্তারিত তথ্য উল্লেখ করা হয়। তাঁরা জজ মিয়াসহ তিনজনকে দিয়ে মিথ্যা জবানবন্দি আদালতে লিপিবদ্ধ করিয়েছিলেন।
0 comments:
Post a Comment