Total Pageviews

Feedjit Live

Tuesday, July 5, 2011

হ্যাঁ-ভোট জয়যুক্ত হলো, হ্যাঁ-ভোট জয়যুক্ত হলো



বাহাত্তরের মূল সংবিধানের সঙ্গে চতুর্থ সংশোধনী-পরবর্তী সংবিধানের দূরত্ব দাঁড়ায় প্রায় ৪০ মাইল। পঞ্চম সংশোধনীর পর সেই দূরত্ব আরও বাড়ে, হয় ১৪০ মাইল। অষ্টম সংশোধনীর পর দূরত্ব গিয়ে দাঁড়ায় ২৮০ মাইল। পঞ্চদশ সংশোধনীর পর এখন যে সংবিধান, তার সঙ্গে বাহাত্তরের সংবিধানের দূরত্ব এগার শ মাইল: ঢাকা থেকে ডেরা ইসমাইল খাঁর (পাকিস্তানে) দূরত্ব যতটা। ৩০ জুন অপরাহ্নে যে সংবিধান গৃহীত হয়েছে, তা পৃথিবীর সংবিধানের ইতিহাসে এক অদ্বিতীয় দলিল।
এই সংবিধানে সবই আছে। ধর্ম আছে, ধর্মহীনতাও আছে। সৃষ্টিকর্তা আছেন। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আছে, পাকিস্তানি আদর্শও আছে। সমাজতন্ত্র আছে সংবিধানের শুরুতে, ধর্মতন্ত্র আছে গোটা সংবিধানজুড়ে। জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সব নাগরিকের জন্য বাধ্যতামূলক বাঙালিত্ব আছে, বিমূর্ত জাতীয়তাবাদও আছে। সে এমনই এক জাতীয়তাবাদী মূলনীতি, যা ঘরে ঘরে ডিশ অ্যান্টেনা দিয়ে বিজাতীয় সংস্কৃতি চব্বিশ ঘণ্টা উপভোগের গ্যারান্টি করে দেয়। সংবিধানে সবই আছে, তবু মহাজোটের নেতাসহ সব দল ও সম্প্রদায় বলছে, কিছু কিছু কী যেন নেই। সে কারণে সবারই মন খারাপ।
তবে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী ঐক্যজোট ও বিভিন্ন চর এলাকার ধর্মনেতাদের মন কেন খারাপ, তা বোঝা যাচ্ছে না। ধারণা করেছিলাম, পঞ্চদশ সংশোধনীর পর মগবাজারে জুসনে জুলুসের আয়োজন হবে। সেখানে সারা রাত কাওয়ালির মজলিস বসবে। পাকিস্তান থেকে আসবেন নামজাদা কাওয়াল। তাঁরা গাইবেন খুশির কাওয়ালি। কারণ, তাঁরা যা চান, তার সবই এই সংশোধিত সংবিধানে আছে: বিসমিল্লাহ থেকে রাষ্ট্রধর্ম—সবই অটুট। কিন্তু দেখা যাচ্ছে, তারাও হরতালের ডাক দিয়েছেন। ঘণ্টা ছয়েকের হরতাল নয়—৪৮ ঘণ্টার হরতাল।
এই সংশোধনী পাস হওয়ার পর চরমোনাইতে যখন খুশিতে ওরস হওয়ার কথা, সেখানে ইসলামী আন্দোলন পালন করল সারা দেশে আধা বেলা হরতাল। সংবিধানে বিসমিল্লাহ ও রাষ্ট্রধর্ম থাকার পর তাঁরা আর কী চান? রাষ্ট্রধর্মের চেয়ে বেশি আর যা হতে পারত তা হলো ‘বিশ্বরাষ্ট্রধর্ম’। আর সংখ্যালঘুদের জন্য ‘উপরাষ্ট্রধর্ম’। যা হোক, সম্ভবত তাঁরা আরও হরতাল ইত্যাদিতে যাবেন। কারণ তাঁদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ তাঁদের ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস’ নড়িয়ে দিয়েছে। চরমোনাইয়ের নেতারা চান, বিশ্বাস ও আস্থাটা সর্বশক্তিমানের ওপরই থাকুক, আওয়ামী লীগের নেতাদের অবিচল আস্থা বিদেশি বন্ধুদের ওপর।
ওদিকে হরতালে না গিয়ে নয় ঘণ্টা অনশন কর্মসূচি পালন করেছে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ এবং বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম। ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের কোনো প্রত্যাশাই পূরণ হয়নি। পরিষদ ও ফোরামের নেতারা পঞ্চদশ সংশোধনীকে সংগত কারণেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী, ধর্মাশ্রয়ী এবং ধর্মীয় বিভাজনমূলক বলে তার প্রতিবাদ করেছেন। এই বঙ্গভূমিতে ‘ধর্মাশ্রয়ী’ হতে চায় না কোন ধর্মীয় সম্প্রদায়? নিশ্চয়ই ধর্মীয় বিভাজনমূলক বিধি জঘন্য অপরাধ। তার কিছু উপাদান এই সংবিধানে আছে।
দুই বাম দল ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা রাশেদ খান মেনন ও জাসদের নেতা হাসানুল হক ইনু সংশোধনীর পক্ষে উচ্চ স্বরে ‘হ্যাঁ’ শুধু বলেননি, সম্মতিসূচক সইস্বাক্ষর দিয়ে ২৪ ঘণ্টা পরে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, এই সংশোধনীতে তাঁরা শতভাগ সন্তুষ্ট নন। কমরেড মেনন বলেছেন, ‘বিএনপির সঙ্গে আলোচনায় সরকারের আগ্রহ ছিল, কিন্তু তারা সাড়া দেয়নি। বিএনপির উচিত ছিল আলোচনায় এসে তাদের প্রস্তাব দেওয়া।’
এককালে আমাদের নেতা ও প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ কমরেড মেনন যা বলেছেন, নীতিগতভাবে তা আমরা সমর্থন করি। অবশ্যই বিএনপির আলোচনায় যাওয়া এবং প্রস্তাব দেওয়া উচিত ছিল। সেই সঙ্গে সবিশেষ বিষয়ের সঙ্গে একটি প্রশ্নও তাঁকে করতে পারি: আপনারা সরকারের সঙ্গী ও সহযোদ্ধা, আপনারা যে প্রস্তাব দিয়েছিলেন, সেগুলো কি গ্রহণ করা হয়েছে? আপনারা সরকারের লোক হওয়া সত্ত্বেও আপনাদের প্রস্তাব অগ্রাহ্য হয়েছে, সরকারের পরম শত্রুর অতি উত্তম প্রস্তাবগুলো যে অতি খুশিতে সরকার মেনে নিত, তার নিশ্চয়তা আওয়ামী লীগের কোনো সহসম্পাদকের কাছ থেকেও পেয়েছিলেন কি?
জাসদের সভাপতি ‘মহাজোটের ঐক্য অটুট রাখার ঘোষণা দিয়ে’ বলেছেন, ‘দেশের সংবিধান, সংস্কৃতি ও রাজনীতিকে রক্ষায় এ ঐক্য হয়েছে। জামায়াত ও তাদের দোসরদের প্রতিহত করতে এ ঝান্ডা তুলে ধরে ঐক্য চালিয়ে নেওয়া হবে।’ খালেদা জিয়ার সংঘাতের আশঙ্কার প্রত্যুত্তরে সাবলীলভাবে তিনি বলেছেন, ‘আসুন, আমরা যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত।’ এখন এই সংবিধান নিয়ে যুদ্ধ বা মারামারিতে জাসদ চুয়াত্তরের মতো প্রস্তুত থাকলেও জনগণ প্রস্তুত নয়। জনগণ ভোট দেওয়ার জন্য প্রস্তুত এবং সে ভোট পৌরসভা নির্বাচনে এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে তারা দিয়েছে। মহাজোটের ঝান্ডা বহন করার সঙ্গে সঙ্গে পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ফল বিশ্লেষণ করা আবশ্যক। গত ৭৫ বছরে এবারই প্রথম ক্ষমতাসীন দল স্থানীয় নির্বাচনে সবচেয়ে কম ভোট পেয়েছে। সুতরাং কার সঙ্গে যুদ্ধ করবেন?
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম হ্যাঁ-ভোট জয়যুক্ত হওয়ার এক দিন পর বলেছেন, ‘পঞ্চদশ সংশোধনীতে আওয়ামী লীগ পুরোপুরি সন্তুষ্ট নয়। আওয়ামী লীগের লক্ষ্য বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাওয়া। পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে সংবিধান সংশোধনে কিছুটা আপস করা হলেও ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে হুবহু বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাব।’ আওয়ামী লীগের নেতারা বলতে চান, আড়াই বছরে পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটবে। তখন হুবহু বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাবেন। বিসমিল্লাহ থাকবে না; রাষ্ট্রধর্ম থাকবে না; ইসলাম, মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান প্রভৃতি শব্দযুক্ত কোনো সংগঠন থাকবে না, সব শিল্প-কারখানা রাষ্ট্রায়ত্ত করা হবে ইত্যাদি।
বর্তমান সংবিধান যদি আমেরিকার সংবিধানের মতো টিকে যায় এবং যাবে বলেই আভাস পাওয়া যাচ্ছে, তাহলে বাংলাদেশের ইতিহাসে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মর্যাদা হবে ভারতের ইতিহাসে বাবা সাহেব আম্বেদকরের যে মর্যাদা, তা-ই। তাঁর ওপরই এই গুরুদায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছিল এবং তিনি বছর খানেক তাঁর দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গেই পালন করেছেন। সংশোধনীর এক দিন পর তিনি বলেছেন, ‘এমন একটা সংশোধনী আমরা পাস করলাম, যা দিয়ে কাউকেই খুশি করতে পারলাম না। না ডান, না বাম, আর সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীকে তো নয়ই। কারণ আওয়ামী লীগ ডানও নয়, বামও নয়। এই দুইয়ের কেন্দ্রে রয়েছে আওয়ামী লীগ।’ তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন, ডান ও বাম খুশি না হওয়ায় প্রতীয়মান হয়, আওয়ামী লীগ ঠিক কাজটিই করেছে।
সব দলের নেতাদের কথাই বলা হলো, বিএনপি বাদ থাকবে কেন? সংবিধান সংশোধনীতে বিএনপির নেতাদের নাখোশ হওয়ার কারণ বোঝা যায় না। ধারণা করেছিলাম, সংশোধনী পাস হওয়ার পর নয়াপল্টন, গুলশান ও লন্ডনে বিজয় মিছিল বের হবে। তাদের নেতার উপহার দেওয়া উপাদানগুলোর প্রায় সবই এই সংবিধানে অটুট রয়ে গেছে। এ তো তাদের বিরাট বিজয়।
তবে সংবিধান-অসংবিধান, সংশোধন-অসংশোধন কোনো ব্যাপার নয়। বিএনপি ক্ষমতায় যেতে চায়। সে জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ধারাটি নিয়েই তাদের দুশ্চিন্তা। ওই ধারাটি ছাড়া সংবিধানের আর কী যোগ-বিয়োগ হলো, তা নিয়ে তাদের মাথাব্যথা নেই। এমনও যদি হয় যে বিএনপি ক্ষমতায় যাবে, কিন্তু তারপর বেগম জিয়ার, মির্জা আলমগীরের বেডরুমে বঙ্গবন্ধুর ছবি থাকবে—তাতেও তাদের আপত্তি নেই। এই সংশোধনীর ফলে জনগণের মৌলিক অধিকার সংকুচিত হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখেনি তারা। তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা ও সংখ্যাগরিষ্ঠের ধর্মীয় অনুভূতির প্রশ্নে হরতাল ডেকেছে। সেই হরতাল আধা বেলা নয়—দুই দিন দুই রাত।
এই সংশোধনীতে জাতীয় পার্টি এতটাই পরিতৃপ্ত যে জেনারেল এরশাদ জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী নির্বাচনে তাঁর দল এককভাবে অংশ নিয়ে ক্ষমতায় যেতে চায়। এ জন্য ইতিমধ্যে কাজও শুরু হয়েছে। সব আসনে প্রার্থী দেওয়ার জন্য তালিকা তৈরিও শুরু করা হবে।
এবারের সংশোধনীর ফলে যে সংবিধান রচিত হয়েছে, তাতে এরশাদ সাহেবের সাফল্য আকাশচুম্বী। তিনি যা যা করে গেছেন, তার সবই আছে এবং তিনি যেসব বদ জিনিস পছন্দ করেন না, তা বাদ গেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার কথাটি তাঁর কানে যাওয়া মাত্র তিনি ঘুমের মধ্যেও তড়াক করে লাফিয়ে ওঠেন। তাঁর কপালে পেরেক ঠুকেছিল যে জিনিস, তা যে উঠে গেছে, তাতেই তাঁর পরম শান্তি। হয়তো এই একটি কারণেই শেষ পর্যন্ত তিনি শেখ হাসিনাকে আর একটি নির্বাচনে সমর্থন দিতেও পারেন। কিন্তু যদি জনমত তাঁর ভাবির দিকে ঝুঁকে পড়ে, তাহলে প্রথমে ‘একাই নির্বাচন করব’ বলে মহাজোট থেকে বেরিয়ে যাবেন; তারপর দুই-তিন দিন এ-কথা সে-কথা বলে সাংবাদিকদের বিভ্রান্ত করে বলবেন, ‘নীতি ও আদর্শের প্রশ্নে বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মধ্যে কোনো পার্থক্য নাই। সুতরাং চললাম পাঁচদলীয় জোট গঠনে।’
এই সংবিধান পেয়ে শুধু যে ধর্মওয়ালা রাজনীতিকদের সুবিধা, তা-ই নয়, ধর্মের বিরুদ্ধে যাঁরা জিহাদ ঘোষণা করতে চান, তাঁদেরও পোয়া বারো। নিজামী-আমিনীসহ বিভিন্ন চর এলাকার পীর সাহেবরা তাঁদের বিরুদ্ধে আট ঘণ্টা নয়, আমরণ অনশন করলেও কাজ হবে না।
ছত্রিশ বছর পর সমাজতন্ত্র ফিরে আসায় বামরা খুশি। তাঁদের কথাবার্তা শুনে মনে হচ্ছে, বিষ্যুদবার বিকেল থেকে বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র। যেকোনো সময় সরকার কোনো ডায়িং কারখানা অথবা ঢাকা-বরিশালগামী দোতলা স্টিমার লঞ্চ রাষ্ট্রায়ত্ত করতে পারবে। বাম নেতাদের ভয় নেই, কারণ তাঁদের কোনো নেতা অ্যাঙ্গেলসের মতো কারখানার মালিক নন।
বিষ্যুদবার দুপুর দুইটা ৫০ মিনিটে সংসদে বিভক্তি ভোটে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস হয়। পক্ষে ২৯১ ভোট, বিপক্ষে মাত্র একটি। বাংলার ঘরে ঘরে টেলিভিশনে মানুষ দেখল, ধ্বনিত হচ্ছে: হ্যাঁ-ভোট জয়যুক্ত হলো, হ্যাঁ-ভোট জয়যুক্ত হলো, হ্যাঁ-ভোট জয়যুক্ত হলো। কে জয়ী হলো, কে পরাজিত হলো, তা বাংলার মানুষ বুঝে ওঠার আগেই যা হওয়ার, তা-ই হয়ে গেল। তবে মাননীয় স্পিকার থেকে জানা গেল, ‘বরাবর রাতের বেলা সংবিধান সংশোধন পাস হয়েছে। এবারই হলো দিনের বেলায়।’ চতুর্থ সংশোধনী পাসের সময় আমি সংসদ গ্যালারিতে ছিলাম। ওটা দিনেই হয়েছিল। অবশ্য যা কিছু রাতে ঘটে, তার সবই খারাপ, তা বলা যাবে না। জীবনের বহু অপরিহার্য ও মধুর কাজ রাতেই হয়।
জীব, উদ্ভিদ, জড়জগৎসহ প্রত্যেক দেশের একটি ভূগোল আছে। খুব বড় বিপর্যয় ছাড়া তা অপরিবর্তনীয়। কিন্তু একটি রাষ্ট্র তার সংবিধান পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায়। অস্ট্রিয়া, সুইজারল্যান্ড ও জার্মানি এখন যেমন আছে, তা থাকবে না যদি আগামীকাল তাদের সংবিধান সংশোধন করে সৌদি আরবের মতো রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রত্যেক দেশের সংবিধান একটি চটি বই বটে, কিন্তু তার ওজন এক মণের ওপর। সংবিধান কড়ি দিয়ে কিনলাম-এর মতো কোনো উপন্যাস নয়, শাহনামার মতো মহাকাব্য নয়, রবীন্দ্র-নজরুল রচনাবলিও নয়। এর প্রতিটি বাক্য অতি অর্থবহ। রাষ্ট্রীয় জীবনে তার সুষ্ঠু প্রয়োগ না করা সর্বোচ্চ মাত্রার রাষ্ট্রবিরোধিতা।
বিষ্যুদবার বিকেল থেকে বাংলাদেশ যে সংবিধান দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে, তার চরিত্র অনেকটা সৌদি রাজতন্ত্রের, খানিকটা গাদ্দাফির লিবীয় সোশ্যালিস্ট জমহুরিয়ার, খানিকটা ফিদেল কাস্ত্রোর কিউবার, খানিকটা প্রয়াত কিম ইল সুঙ ও তাঁর ছেলের উত্তর কোরিয়ার, আর খানিকটা নরোদম সিহানুকের কাম্পুচিয়ার। কিন্তু যে তিন রাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের এখন সবচেয়ে বেশি মিল খুঁজে পাওয়া যাবে, তা হলো কারজাইয়ের আফগানিস্তান, মালিকির ইরাক ও জারদারির পাকিস্তান। অন্যদিকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মিল নেই ভারত, চীন, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনাম, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে।
বর্তমান সংবিধানটি আমাদের অনেক কিছু দিয়েছে—একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাটি ছাড়া।
সৈয়দ আবুল মকসুুদ: গবেষক, প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক।                             

0 comments:

Post a Comment

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More