চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৩ ছাত্রের মৃত্যুর ঘটনায় গতকাল বুধবার শোকসভার আয়োজন করেছিল উত্তর জেলা বিএনপি। মিরসরাইয়ের ‘প্রফেসর কামাল উদ্দিন’ কলেজে দুপুরে আয়োজিত শোকসভায় ছাত্রদলের কর্মীদের মধ্যে হাতাহাতি, মারামারি হয়েছে।
শোকসভার মাঝপথে উপজেলা বিএনপির সভাপতি নুরুল আমিন মাইকে ঘোষণা দেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে ১০ হাজার টাকা করে অনুদান দেওয়া হবে।’ ঠিক এমন সময় হাতাহাতি, মারামারি শুরু হয়।
শোকসভায় অনুদান নিতে এসেছিলেন নিহত ছাত্রদের বাবা-মা এবং স্বজনেরা। কিন্তু অনুদান নেওয়ার আগে এ অবস্থা দেখে অনেকে ভয়ে মিলনায়তন ছেড়ে চলে যান। অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কায় অনুষ্ঠান শেষ না করেই অতিথিরা চলে যান। তাঁদের নিরাপদে গাড়িতে তুলে দেওয়া হয়। এভাবেই শেষ হয় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির শোকসভা।
অনুদান নিতে শোকসভায় গিয়েছিলেন নিহত ছাত্র টিটু দাসের মা অর্চনা জলদাস। তাঁর বাড়িতে গেলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনুদান দেওয়ার ঘোষণার সময় মারামারি শুরু হয়। এ কারণে জীবন বাঁচাতে দৌড়ে চলে আসি।’
প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিহতদের স্মরণে গতকাল দুপুরে স্থানীয় আবুতোরাব উচ্চবিদ্যালয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে শোকসভার আয়োজন করা হয়। একই সময় কয়েক শ গজ দূরে প্রফেসর কামাল উদ্দিন চৌধুরী কলেজে শোকসভার আয়োজন করে উত্তর জেলা বিএনপি।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি নুরুল আমিনের সভাপতিত্বে শোকসভায় দলের উত্তর জেলা সভাপতি গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরী, কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও উত্তর জেলা বিএনপির জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি কামাল উদ্দিন চৌধুরী, উত্তর জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সরওয়ার উদ্দিন, উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জাহেদুল আবছার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরু হওয়ার পরপরই শ্রেণীকক্ষে বসা নিয়ে ছাত্রদলের দুজন কর্মীর মধ্যে বাগিবতণ্ডা হয়। এরপর বিষয়টি উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক ও উত্তর জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়কের অনুসারীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। শোকসভায় উত্তেজনা বাড়তে দেখে উপজেলা বিএনপির সভাপতি নুরুল আমিন অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দেন। কিন্তু ছাত্রদলের দুই পক্ষে হাতাহাতির কারণে সভা পণ্ড হয়ে যায়।
জানতে চাইলে কামাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে আমরা অনুদান দিতে এই সভার আয়োজন করেছিলাম। কিন্তু ছাত্রদের হইচইয়ের কারণে অনুদান দিতে পারিনি। তবে অনুদান কাল বিতরণ করা হবে।’ তিনি দাবি করেন, ছাত্রলীগের ছেলেরা এসে এ ঝামেলা করেছে।
উপজেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক জাহেদুল আবছার প্রথম আলোকে বলেন, ছাত্রদলের দুজন কর্মীর মধ্যে ধাক্কাধাক্কির কারণে এ ঘটনা ঘটে। তবে এই ধাক্কাধাক্কির সুযোগ নিয়ে ছাত্রলীগের ছেলেরা শেষে ঝামেলা করেছিল। হাতাহাতির সময় উপজেলা ছাত্রদলের কর্মী সানা উল্লাহ, সায়েদুল ইসলাম এবং সরওয়ার হোসেন সামান্য আহত হন।
যোগাযোগ করা হলে উত্তর জেলা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সরওয়ার বলেন, কক্ষে ঢোকা নিয়ে ছাত্রদের মধ্যে এ বাগিবতণ্ডা হয়। তবে অনুষ্ঠান শেষে ছাত্রলীগের ছেলেরা ঝামেলা করেছে।
কলেজের অধ্যক্ষ নুরুল আবছার বলেন, ‘এটা বিএনপির অভ্যন্তরীণ সমস্যা। এটা অরাজনৈতিক কলেজ। তবে এ ঘটনার আগে আমাদের ছেলেরা শোকযাত্রা করেছে।’
মায়ানি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চেয়ারম্যান কবির নিজামী দাবি করেন, ‘আমি এ ব্যাপারে নিজেই খোঁজখবর নিয়ে জেনেছি, বিষয়টি তাদের অন্তর্কোন্দল। তবে বিষয়টি দুঃখজনক।’
প্রধানমন্ত্রী কাল, বিরোধীদলীয় নেতা আজ যাচ্ছেন: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাল শুক্রবার মিরসরাইয়ে আসছেন। এ ছাড়া বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া আজ বৃহস্পতিবার মিরসরাইয়ে আসছেন। সেখানে তিনি নিহতদের পরিবারের স্বজনদের সঙ্গে সময় কাটাবেন। পরে আহতদের দেখতে যাবেন। এ ছাড়া তিনি আবুতোরাব উচ্চবিদ্যালয় মাঠে শোকসভায় অংশ নেবেন। তাঁর সঙ্গে বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা থাকবেন। ইতিমধ্যে আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী মিরসরাইয়ে এসেছেন।
0 comments:
Post a Comment