Total Pageviews

Feedjit Live

This is default featured post 1 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured post 2 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured post 3 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured post 4 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured post 5 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

Thursday, June 30, 2011

অযথা গণ্ডগোলের চেষ্টা করবেন না: প্রধানমন্ত্রী


undefined
শেখ হাসিনা
প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে উদ্দেশ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘নতুন কোনো ফর্মুলা থাকলে এখনো নিয়ে আসতে পারেন। আমরা নিশ্চয়ই আলোচনা করব। কিন্তু সংবিধান সংশোধন ইস্যুতে অযথা গণ্ডগোল পাকানোর চেষ্টা করবেন না। দেশের মানুষকে অহেতুক কষ্ট দেবেন না।’
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় সংসদে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধন বিল পাসের পর প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উচ্চ আদালতের রায় অনুসারেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী দাবি করেন, সংবিধানের এই সংশোধনী পাসের ফলে জনগণের ক্ষমতায়ন ও ভোটের অধিকার নিশ্চিত হয়েছে। ইসলামী দলগুলো ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। কিন্তু সংবিধানে এখন রাষ্ট্রধর্ম ইসলামও রাখা হয়েছে, অন্যান্য ধর্মের প্রতিও সম্মান রক্ষা করা হয়েছে।

জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা পুনর্বহাল


সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধন আইন-২০১১ সংসদে পাস হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় রাষ্ট্রপরিচালনার চার মূলনীতি জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা সংবিধানে ফিরে এল।
পঞ্চদশ সংশোধন আইনে বাহাত্তরের সংবিধানের এ অনুচ্ছেদ ফিরে আনা হয়েছে। একই সঙ্গে সংবিধানের মৌলিক বিধানাবলি সংশোধন অযোগ্য করে নতুন অনুচ্ছেদ সন্নিবেশ করা হয়েছে।
অনুচ্ছেদ-৮-এর রাষ্ট্রীয় মূলনীতির দফা ১ ও (১ক)-এর পরিবর্তে ‘(১) জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা—এই নীতিসমূহ এবং তত্সহ এ নীতিসমূহ হইতে উদ্ভূত এইভাবে বর্ণিত অন্য সকল নীতি রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি বলিয়া পরিগণিত হইবে’—এর স্থলে প্রতিস্থাপিত হয়েছে, ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্র অর্থাত্ অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিচার নীতিসমূহ এবং এসব নীতির সঙ্গে সম্পর্কিত সকল নীতি রাষ্ট্রপরিচালনার মূলনীতি বলে পরিগণিত হবে।’
সংবিধানের প্রস্তাবনার প্রথম অনুচ্ছেদে (১ক) ‘জাতীয় স্বাধীনতার জন্য ঐতিহাসিক যুদ্ধের’ শব্দের পরিবর্তে ‘জাতীয় মুক্তির ঐতিহাসিক সংগ্রামের শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত হয়েছে। খ) প্রস্তাবনার দ্বিতীয় অনুচ্ছেদে প্রতিস্থাপিত হয়েছে ‘আমরা অঙ্গীকার করিতেছি যে, যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোত্সর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল—জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার সেই সকল আদর্শ এ সংবিধানের মূলনীতি হইবে।’
বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিষয়ে অনুচ্ছেদ ৯-এ প্রতিস্থাপিত হয়েছে ‘ভাষাগত ও সংস্কৃতিগত একক সত্তাবিশিষ্ট যে বাঙালি জাতি ঐক্যবদ্ধ ও সংকল্পবদ্ধ সংগ্রাম করিয়া জাতীয় মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব অর্জন করিয়াছেন, সেই বাঙালি জাতির ঐক্য ও সংহতি হইবে বাঙালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তি।’

জাতির পিতা, সাতই মার্চের ভাষণ, স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র সংযুক্ত

সংবিধানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে জাতির পিতার স্বীকৃতি ও তাঁর প্রতিকৃতি সংরক্ষণ, প্রদর্শনের বিধান করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা দুইটা ৫০ মিনিটে পাস হওয়া সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) আইন-২০১১তে নতুন অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপন করা হয়।
সংবিধানে ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণ, বঙ্গবন্ধুর ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণা ও ১৯৭১ সালের মুজিবনগর সরকারের জারি করা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রও সন্নিবেশ করা হয়েছে।
সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪-এ নতুন দফা ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, প্রধান বিচারপতির কার্যালয় এবং সকল সরকারি ও আধা সরকারি অফিস, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষের প্রধান ও শাখা কার্যালয়, সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশের দূতাবাস ও মিশনসমূহে সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করিতে হইবে’—প্রতিস্থাপিত হয়েছে।
সাতই মার্চের গুরুত্ব অনুধাবন করে ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ওই [বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান] ভাষণ এবং এর ধারাবাহিকতায় পরবর্তী কার্যক্রম নেওয়ার নির্দেশনা তথা ২৬ মার্চের স্বাধীনতার ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধুর দেওয়া টেলিগ্রাম ও মুজিবনগর সরকারের ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল জারিকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করা রয়েছে পঞ্চদশ সংবিধান সংশোধনীতে।
জাতির পিতার সাতই মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণ, ২৬ মার্চের স্বাধীনতা ঘোষণার টেলিগ্রাম এবং ১০ এপ্রিল মুজিবনগর সরকারের জারিকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র অনুচ্ছেদ ১৫০(২)-চতুর্থ তফসিলের পর সংবিধানে পঞ্চম তফসিল, ষষ্ঠ তফসিল ও সপ্তম তফসিল সংযোজিত হয়েছে

সংবিধান সংশোধনী আওয়ামী লীগের দলীয় ইশতেহার: খালেদা


undefined
খালেদা জিয়া
বিএনপির চেয়ারপারসন ও বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, সংবিধানের ১৫তম সংশোধনী আওয়ামী লীগের ইশতেহারে পরিণত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে খালেদা জিয়া এ কথা বলেছেন।
খালেদা জিয়া বলেন, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় সংসদ ও সরকার গঠন করেছিলেন, সাংবিধানিক শাসন পুনর্বহাল করেছিলেন। জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার আলোকে এবং যুগের চাহিদা অনুযায়ী তিনি সংবিধানকে পুনর্বিন্যস্ত করেছিলেন। তিনি এ কাজগুলো করেছিলেন গণভোটের মাধ্যমে, জনগণের কাজ থেকে প্রাক-অনুমোদন গ্রহণের মাধ্যমে। পরে জনগণের নির্বাচিত সংসদও এসব কার্যব্যবস্থার অনুমোদন দেয়।
প্রথম আলো

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল


সংবিধান
জাতীয় সংসদে সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) বিল ২০১১ পাস হয়েছে। এতে ‘হ্যাঁ’ ভোট পড়েছে ২৯১টি আর ‘না’ ভোট পড়েছে একটি। এই বিল পাসের মধ্য দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা আনুষ্ঠানিকভাবে বিলুপ্ত হলো। এখন সংসদ নির্বাচন হবে দলীয় সরকারের অধীনে।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে সংসদের আইন প্রণয়ন কার্যাবলিতে বিলটি পাসের জন্য আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ উত্থাপন করেন। এরপর সংশোধন বিলে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম রাখার বিষয়ে আপত্তিসহ নয় সাংসদের আনা সংশোধনী প্রস্তাবগুলো উত্থাপন করা হয়। পরে প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। এরপর দুই দফায় বিভক্তি ভোটে বিলটি পাস হয়।
মহাজোটের সদস্যরা ‘হ্যাঁ’ ভোটের জন্য নির্ধারিত চারটি লবিতে ভোট দেন। একমাত্র স্বতন্ত্র সদস্য ফজলুল আজিম ‘না’ ভোট দেন।
স্পিকার আবদুল হামিদ বিভক্তি ভোট দেওয়ার আগে দুই মিনিট ঘণ্টা বাজিয়ে সংসদের লবিগুলো বাইরে থেকে বন্ধ করে দেন।
সংসদ সচিবালয়ের চার কর্মকর্তা এ ভোটের কার্যক্রম পরিচালনা করেন। পরে স্পিকার ভোটের ফলাফল ঘোষণা করেন।
প্রথম আলো

Tuesday, June 28, 2011

সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নয়, এটি মসজিদ


মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার বাহারপুর জামে মসজিদ। একে জাপান-বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র দেখিয়ে জাপান থেকে সাড়ে ছয় কোটি টাকা অনুদান এনে আত্মসাত্ করেছেন দারাদ আহমেদ
ছবি: আনিস মাহমুদ
দারাদ আহমেদ। বিশ্বভারতী থেকে স্নাতকোত্তর। সেখানকার ছাত্র-সংসদের নির্বাচিত সাবেক সাধারণ সম্পাদক। বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক ও সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক। জাপান বিএনপির সভাপতি। এসব তাঁরই দাবি।
তবে মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার দারাদ আহমেদের গ্রামের লোকজন জানান, দারাদ সপ্তম শ্রেণী পাস। আসল নাম বদরুল ইসলাম।
এই দারাদই জাপান-বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তৈরির জন্য জাপানের কাযুও আজুমা দম্পতির কাছ থেকে সাড়ে ছয় কোটি টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। আর এ জন্য তিনি তাঁর বাড়ির সামনের মসজিদটির ছবি তুলে তা জাপানে পাঠান। তিনি জানান, এটিই হচ্ছে তাঁর স্বপ্নের জাপান-বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় অনুসন্ধান করে এ ঘটনা জানা গেছে। জাপানি অধ্যাপক আজুমা দম্পতি প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, তাঁদের কাছে সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের ২০টি ছবি পাঠিয়েছেন দারাদ। জানিয়েছিলেন, বড়লেখায় এই কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। 
তবে বড়লেখার রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষক, সাধারণ মানুষ দারাদের সন্ধান জানালেও এলাকায় জাপান-বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কোনো সন্ধান দিতে পারেননি। এমনকি ছবি দেখানোর পরও তাঁরা বলতে পারেননি, এই সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি কোথায়?
এলাকাবাসী জানালেন, দারাদ আহমেদের গ্রামের বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলার তালিমপুর ইউনিয়নের বাহারপুর গ্রামে। ওই বাড়ির কাছাকাছি গিয়ে ছবিগুলো দেখালে গ্রামের কিশোর তাজউদ্দিন বলল, সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নয়, এগুলো বাহারপুর জামে মসজিদের ছবি।
মসজিদের সামনে গিয়ে ছবিগুলো মিলিয়ে দেখা যায়, মসজিদের বিভিন্ন পাশ থেকে ছবিগুলো তোলা। কেন্দ্রের নামে এই ছবিগুলো পাঠিয়ে আজুমা দম্পতির কাছ থেকে তিনি সাড়ে ছয় কোটি টাকা এনেছেন। 
মসজিদটির বিষয়ে জানতে চাইলে তালিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুনামউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘মসজিদটি পাকা করা হয়েছে বছর দুয়েক আগে। এলাকার সব মানুষ মিলে চাঁদা তুলে টাকা দিয়ে এই মসজিদ বানাইছে।’ এখানে জাপান-বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার এলাকায় এমন কোনো কেন্দ্র নেই। এটা দারাদের প্রতারণা।’
বাহারপুর জামে মসজিদের ইমাম আবদুস শহীদও জানান, ‘কোনো কেন্দ্র নয়, এটি মসজিদ।’
মসজিদের ছবি তোলার সময় হাজির হলেন মধ্যবয়সী এক লোক। নিজের নাম জানালেন মুরাদ আহমেদ। তিনি দারাদ আহমেদের ভাই। মসজিদ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এলাকার সবাই মিলে টাকা দিয়ে এই মসজিদ করেছে। কিন্তু বেশির ভাগ টাকাই দিছে আমাদের গোষ্ঠীর লোকজন।’ এই মসজিদকে জাপান-বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র দেখানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
এলাকার সাংস্কৃতিককর্মী হিসেবে পরিচিত তপন চৌধুরীর নামও জাপান-বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের সদস্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। যোগাযোগ করা হলে তপন চৌধুরী বলেন, ‘এলাকায় জাপান-বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র বলে কিছু আছে, তা আমার জানা নেই। আর আমাকে না জানিয়েই আমার নাম ব্যবহার করা হয়েছে।’
একজন প্রতারক: ২০০৮ সালের নির্বাচনে দারাদ আহমেদ বিএনপির হয়ে এই আসন থেকে মনোনয়ন নেওয়ার চেষ্টা করেন। নির্বাচনের আগে তিনি নিজেকে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক ও আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক বলে পরিচয় দেন। এ সময় তিনি এলাকায় যে প্রচারপত্র (লিফলেট) বিলি করেন, তাতে বলেন, শান্তিনিকেতনে বিশ্বভারতী ছাত্র-সংসদের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। এই সুবাদে ভারতের অনেক প্রধানমন্ত্রী এবং গান্ধী পরিবারসহ অনেকের সঙ্গেই তাঁর ঘনিষ্ঠতা আছে। নিজেকে বিএনপির জাপান শাখার সভাপতি হিসেবেও পরিচয় দেন তিনি।
দারাদ বর্তমানে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির সহযোগী সংগঠন জাতীয়তাবাদী সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংস্থার (জাসাস) কেন্দ্রীয় কমিটির সহসাধারণ সম্পাদক।
দারাদ সম্পর্কে জানতে চাইলে ওই এলাকার সাবেক প্রতিমন্ত্রী এবাদুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘দারাদকে আমি প্রথম দেখি ২০০২ সালের দিকে। তখন আমি ত্রাণ ও দুর্যোগবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী। তিনি একদিন সচিবালয়ে এসে আমার সঙ্গে দেখা করেন এবং নিজেকে রবীন্দ্রনাথ বিশেষজ্ঞ বলে পরিচয় দেন। জাপানি অধ্যাপক আজুমা ও তাঁর স্ত্রীকেও তিনি নিয়ে এসেছিলেন।’
এবাদুর রহমান বলেন, ‘কিছুদিন পর দারাদ এসে আমাকে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে তিনি একটি বিশাল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। অনুষ্ঠানে জর্জ হ্যারিসন অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হবে। এতে ভারতের রবিশঙ্কর থাকবেন। আমাকে প্রধান অতিথি হতে হবে। কিন্তু আমি গিয়ে দেখলাম, একটি ছোট্ট কলেজের অনুষ্ঠান। তাতে রবিশঙ্কর ছিলেন না। আর পদকের বিষয়টিও ছিল ভুয়া। তখনই আমার মনে হয়, এটি প্রতারণা। এ ঘটনার পর ২০০৪ বা ২০০৫ সালের দিকে আমি জাপানের একজন মেয়রের আমন্ত্রণে দেশটিতে যাই। তখন টোকিওতে আমার সঙ্গে দেখা করেন দারাদ। সে সময় আজুমা পরিবারের সঙ্গে আমি তাঁর হূদ্যতা দেখেছি।’
এলাকায় দারাদের রাজনীতি সম্পর্কে জানতে চাইলে এবাদুর রহমান বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি, তিনি নাইন বা টেন পর্যন্ত পড়েছেন। স্কুলে তাঁর নাম ছিল বদরুল ইসলাম। কিন্তু কীভাবে দারাদ হলো জানি না। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনি বিএনপি থেকে মনোনয়ন নেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় তিনি নিজেকে বিএনপির আন্তর্জাতিক ও কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক হিসেবে পরিচয় দিতেন। কিন্তু তিনি এই পদে ছিলেন না।’ এলাকায় জাপান-বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার এলাকায় এমন কোনো কেন্দ্র থাকলে আমিই আগে জানতাম।’ 
বড়লেখা উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল হাফিজও বলেন, বড়লেখায় এমন কোনো সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নেই।
দারাদ নিজেকে সাইফুর রহমানের আত্মীয় বলেও প্রচার চালান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এম নাসের রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘দারাদ আমার দলের কর্মী এবং বড়লেখা উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু কোনোভাবেই আমাদের আত্মীয়স্বজন নন।’ দারাদের প্রতারণার বিষয়ে নাসের রহমান বলেন, ‘আমি তাঁকে অনেকবার জিজ্ঞেস করেছি, জাপানে কী করেন, কিন্তু তিনি পরিষ্কার করে কিছু বলেননি। বলতেন কম্পিউটার বিক্রি করি।’ 
দারাদকে বিশ্বভারতীতে দেখেছেন এমন একজন রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী প্রথম আলোকে বলেন, দারাদ অভিনয় শিখতে কিছুদিনের জন্য এসেছিলেন। তবে পড়ালেখা করেননি। ছাত্র-সংসদেরও কিছু ছিলেন না। ওখানে গন্ডগোল করে পালিয়ে যান।
মাকে নিয়েও প্রতারণা: জাপানি অধ্যাপক আজুমার কাছে দারাদ নিজের মাকে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন সার্জন ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কর্মকর্তা হিসেবে। কিন্তু এলাকার লোকজন জানান, দারাদের মা লেখাপড়াই জানেন না।
তালিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সুনামউদ্দিন এ বিষয়ে বলেন, ‘আমি এলাকার চেয়ারম্যান। ৪০ বছর ধরে এলাকায় আছি। সবার খোঁজখবর জানি। দারাদের বাড়িতে অনেকবার গেছি। তাঁর মা সার্জন তো দূরের কথা, লেখাপড়াই জানেন না। তিনি পুরোপুরি গৃহিণী। বয়স ৮০-৮৫ হবে।’
দারাদ যা বলেন: রবীন্দ্রনাথের বিষয়ে কেন এত আগ্রহ জানার জন্য দারাদ আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি একজন রবীন্দ্রপ্রেমী। শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রসংগীতে অনার্স ও মাস্টার্স করেছি। এর পর থেকে রবীন্দ্রনাথের বিষয়ে আমার অনেক আগ্রহ।’ রাজনীতিতে কীভাবে এলেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শান্তিনিকেতন ছাত্র-সংসদের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম আমি। এই সূত্রেই রাজনীতিতে আসা। ২০০৬ ও ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনেও মনোনয়ন চেয়েছিলাম। কিন্তু পাইনি। সামনে পেলে এলাকার মানুষের সেবা করব।’ জাপানি অধ্যাপক আজুমাকে চেনেন কি না, জানতে চাইলে দারাদ বলেন, ‘তাঁর সঙ্গে তো আমার বাবা-ছেলের সম্পর্ক।’
আজুমাকে জাপান-বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে টাকা এনেছিলেন কি না, জানতে চাইলে তিনি খেপে যান। বলেন, ‘অধ্যাপক আজুমা আমার বাড়িতে ছয়-সাতবার এসেছেন। তিনিই বড়লেখায় একটি সাংস্কৃতিক কেন্দ্র করতে চেয়েছিলেন। তাঁকে জমি দেখিয়েছিলাম। কোনো টাকা নিইনি।’ এ নিয়ে কথা বলার একপর্যায়ে দারাদ বলেন, ‘এটি তো আমার আর আজুমার বিষয়। এখানে আপনি আসছেন কেন? উনি তো আর আপনার কাছে অভিযোগ করেননি।’
এসএসসি পাস না করে শান্তিনিকেতনে পড়লেন কীভাবে, জানতে চাইলে দারাদ বলেন, ‘এসএসসি পাস করেছি।’ কত সালে? ক্ষুব্ধ দারাদের উত্তর, ‘কাগজপত্র দেখে বলতে হবে। সব তো মুখস্থ থাকে না।’
(প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন মৌলভীবাজারের জুড়ী প্রতিনিধি কল্যাণ প্রসূন)

Monday, June 27, 2011

শেষ ৯০ দিন অন্তর্বর্তী সরকার

সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হবে। ওই সময় সংসদ থাকলেও কার্যকর থাকবে না। এই তিন মাস অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চলবে। মন্ত্রিসভা শুধু রুটিন (নিয়মিত) কাজ করবে। তবে নির্বাচন পরিচালনার মূল কাজটি করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
এভাবে সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) বিল-২০১১-তে সংশোধনী আনা হচ্ছে। এতে পাঁচ বছর মেয়াদি জাতীয় সংসদের শেষ তিন মাসে কার্যক্ষমতা সীমিত করা হচ্ছে। অর্থাৎ এই সময়ে জাতীয় সংসদের কোনো অধিবেশন বসবে না। সংসদের শেষ তিন মাসে ৬০ দিন পর পর অধিবেশন ডাকার বাধ্যবাধকতা রহিত করা হবে। তবে নির্বাচন হলেও সংসদের পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হওয়ার পরই পরবর্তী সংসদ কাজ শুরু করবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাসে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতাসহ মন্ত্রিসভার সদস্যরা জাতীয় পতাকাসহ সব ধরনের প্রটোকল পাবেন। এ সরকারই পরবর্তী সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। বর্তমান সংবিধান অনুসারে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিধান রয়েছে।
গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদে আইন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভায় এই নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানা গেছে। আজ মঙ্গলবার কমিটি সংবিধান সংশোধনী বিল সম্পর্কে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করবে। এ সপ্তাহেই বিলটি সম্পর্কে সংসদে প্রতিবেদন দেবে কমিটি। জানা গেছে, আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহেই সংবিধান সংশোধনের বিলটি সংসদে পাস হয়ে যাবে।
কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সভাপতিত্বে গতকালের সভায় সংবিধান সংশোধন বিল সম্পর্কে দফাওয়ারি আলোচনা হয়। আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ, আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, ফজলে রাব্বী মিয়া, রহমত আলী, আবদুল মতিন খসরু, খান টিপু সুলতান, জিয়াউল হক মৃধা, নুরুল ইসলাম ও শেখ ফজলে নূর তাপস সভায় অংশ নেন।
সভায় অনির্বাচিত কাউকে মন্ত্রী (টেকনোক্র্যাট) করা হলে পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচিত হওয়ার বিধান রাখার বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এ ব্যাপারে আজকের সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে জানা গেছে। সভায় বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে আলোচনার ব্যাপারেও কথা হয়। বিএনপি চাইলে যেকোনো সময় কমিটির সভাপতির কাছে তাদের প্রস্তাব দিতে পারে।
জানতে চাইলে আইন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুসারে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল হয়ে যাওয়ায় এখন সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। আর ওই সময় কার্যত সংসদ থাকলেও তা কার্যকর থাকবে না। সংবিধানের বিধান অনুসারে ৬০ দিনের মধ্যে পরবর্তী অধিবেশন ডাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আর এ সমস্যা এড়াতে নতুন একটি সংশোধনী আনছে কমিটি। এতে সংসদের মেয়াদের শেষ ৯০ দিনকে ওই বাধ্যবাধকতার বাইরে রাখা হয়েছে। ফলে সংসদের মেয়াদ চার বছর নয় মাসের পর আর কোনো অধিবেশন হবে না। তিনি বলেন, সংসদের মেয়াদের শেষ তিন মাস অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চলবে। এ সরকার রুটিন কাজ করবে।
সুরঞ্জিত বলেন, এখন এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কীভাবে কাজ করবে, সেটি নিয়ে বিএনপি আলোচনা করতে পারে, প্রস্তাব দিতে পারে। এখন না এলেও বর্তমান সরকারের আরও আড়াই বছর সময় আছে। তিন-চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে মহাজোট সরকার বসে আছে। প্রয়োজনে বিএনপির যৌক্তিক দাবি বিবেচনায় আবার সংবিধান সংশোধন করা হবে।
নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পর্কিত ১২৩ অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রস্তাব করে প্রস্তাবিত বিলে বলা হয়েছে, ‘মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে এবং মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোন কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে হবে।’ তবে মেয়াদ অবসান ছাড়া অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হবে।
১৯৭২ সালের সংবিধানে এ বিধান থাকলেও ১৯৯০ সাল পর্যন্ত কোনো সরকারই তার পাঁচ বছরের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ করতে না পারায় পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার কোনো অভিজ্ঞতা কারও নেই। এই সংশোধিত আকারে সংবিধান সংশোধন হলে আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনই হবে মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে। 
সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সংসদের এক অধিবেশনের সমাপ্তি ও পরবর্তী অধিবেশনের প্রথম বৈঠকের মধ্যে ৬০ দিনের অতিরিক্ত বিরতি থাকবে না। কমিটির সংশোধনী অনুসারে, সংসদের মেয়াদ শেষের ৯০ দিন ‘৬০ দিনে সংসদের বৈঠকের বিষয়টি প্রযোজ্য হবে না’।
বৈঠক শেষে সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু প্রথম আলোকে বলেন, সংসদের মেয়াদ শেষের ৯০ দিনে সংসদ বহাল থাকায় করণীয় কী হবে, তা পর্যালোচনা করে কমিটি নতুন সংশোধনী আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওই ৯০ দিন সংসদ, প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিপরিষদ বহাল থাকলেও তাঁরা রুটিন কাজের বাইরে কিছু করবেন না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য এককভাবে নির্বাচন কমিশনই সংবিধানের ১১৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। সবকিছুই নির্বাচনী আইন অনুযায়ী চলবে।
মতিন খসরু বলেন, ‘বিতর্কিত নির্বাচন আমরা কেউই চাই না। এ জন্য ভালো কোনো বিকল্প থাকলে বিরোধী দলের মত দেওয়া উচিত।’

ভালোর পসরা


ভালো চাই, ভালো 
ভালো নেবেন গো ভালো?
আরও ভালো...
আরও ভালোর পসরা নিয়ে কলম ধরেছেন অনেকে। যতই কাজ করেন। তাঁদের কিছুই ভালো লাগে না। তাঁদের বক্তব্য হলো, ‘এই সরকার (আওয়ামী লীগ) কিছুই করছে না, মানুষের অনেক আশা ছিল, কিন্তু তা পূরণ হচ্ছে না। মানুষ হতাশ হয়ে যাচ্ছে, দেশ একদম ভালো চলছে না। দেশের অবস্থা খুবই খারাপ।’
লেখালেখি, মধ্যরাতের টেলিভিশনে টক শো, গোল টেবিল, লম্বা টেবিল, চৌকো টেবিল, সেমিনার—কোথায় নেই তাঁরা? তাঁদের এসব কথায় সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা প্রভাবও পড়ছে। বিভ্রান্ত হচ্ছে, অনেক সময় নিজের অজান্তে এই ডায়ালগ বলে দিচ্ছে। যাঁরা এটা করছেন, তাঁদের এই ‘বলার’ কথার ফুলঝুরি কি সব সময় অব্যাহত থাকে?
সব সরকারের আমলে? না না, তা শোনা যায় না। যেমন ধরুন, সামরিক সরকারের সময় তাঁদের কলমের কালি বা রিফিল থাকে না। কলম চলে না। মুখে কথা থাকে না। তখন বাঘের গর্জন বিড়ালের মিউ মিউয়ে পরিণত হয়। এখন যাঁদের কথায় টেলিভিশনের পর্দা ফেটে মনে হচ্ছে বেরিয়ে পড়বেন লাফ দিয়ে এক্কেবারে সরকারের ঘাড়ের ওপর। ‘সর্বনাশ’! পারলে এই মুহূর্তে সরকারের ঘাড়টাই ভেঙে দেবেন আরও ভালো কিছুর আশায়। এঁরাই আবার কখনো কখনো চুপ থাকেন।
তাঁদের ডায়ালগ বা বাক্যবিন্যাস অথবা উপদেশ শোনা যায়নি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের পর বা ৩ নভেম্বর জেলহত্যা, একের পর এক মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা, সিপাই-জনতার বিপ্লবের নামে একটার পর একটা ক্যু, তাণ্ডব ও হত্যাকাণ্ডে। অন্যায়ভাবে ফাঁসি বা ফায়ারিং স্কোয়াডে সামরিক অফিসার ও সেনাদের হত্যা, রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নির্যাতন, রিমান্ড ও হত্যাকাণ্ড ঘটানোর সময় তাঁরা চুপ থেকেছেন। তাঁদের বিবেক জাগ্রত হয়নি ভালো না মন্দ, তা দেখার জন্য। বরং ঘাপটি মেরে নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছেন বাতাস কোন দিকে যায়, সেটা বুঝে নিয়ে সময়ের সুযোগে উদয় হওয়ার জন্য।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ পর্যন্ত সময়ে তাদের সোচ্চার হওয়ার একটা নির্দিষ্ট ক্ষণ ছিল, সেটা হলো মিলিটারি ডিক্টেটরদের রাজনীতি ও রাজনৈতিক নেতা কেনাবেচার সময়। যাঁরা নিজেদের উচ্চ দরে বিক্রি করতে পারলেন তাঁদের একধরনের সুর। আর যাঁরা কপালে কিছু জোটাতে পারলেন না তাঁদের সুর হলো দৃষ্টি আকর্ষণীয়-অর্থাৎ ‘আমরাও আছি, ক্রয় করুন, সেল-এ পাবেন।’ অর্থাৎ (‘use me’.)|
এরপর যাঁরা অবশিষ্ট থেকে গেলেন, তাঁরা তখন বাতাস ঘোরার সঙ্গে সঙ্গে সুর পাল্টিয়ে বিপ্লবী হয়ে গেলেন। এটা আমি ১৯৫৮ সালের জেনারেল আইয়ুব খানের মার্শাল ল জারির পর দেখেছি, আমাদের কত রাজনৈতিক ‘চাচার’ দল। যাঁরা আব্বা মন্ত্রী থাকা অবস্থায় নিজের বাড়িঘর সংসার ভুলে রাতদিন আমাদের বাড়িতে ঘুরে বেড়িয়েছেন আর প্রশংসার ফুলঝুরি উড়িয়েছেন, তাঁরাই কেমন ডিগবাজি খেয়েছেন। সুর পাল্টিয়েছেন তাও দেখেছি। ১৯৬২, ১৯৬৬, ১৯৭৫, ১৯৮২, ১৯৯১ সালসহ বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রূপ দেখার সৌভাগ্য বা দুর্ভাগ্য আমাদের হয়েছে।
১৯৯৬ সালে সরকার গঠনের পর যারা ভালো থেকে আরও ভালো, আরও ভালোও হয় না কেন বলে লেখালেখি করেছেন, মুখের বুলি আর কথার ফুলঝুরি ছড়িয়েছেন, সমালোচনায় জর্জরিত করেছেন, তাঁরাই সুর পাল্টিয়ে ফেলেছেন। যেমন একটা উদাহরণ দিচ্ছি: 
১৯৯৬ সালে ৪০ লাখ মেট্রিক টন খাদ্য ঘাটতি ছিল। খাদ্য উৎপাদন এক কোটি ৯০ লাখ মেট্রিক টন ছিল। ২০০০ সালের মধ্যে ঘাটতি মিটিয়ে চাল উৎপাদন দুই কোটি ৬৯ লাখ মেট্রিক টনে বৃদ্ধি করলাম। কী শুনেছি? ‘না, আরও একটু ভালো হতে পারত।’
পাঁচ বছরে আওয়ামী লীগ সরকার ৭৯ লাখ মেট্রিক টনের বেশি অতিরিক্ত খাদ্য উৎপাদন বাড়াল, তার পরও শুনে যেতে হলো, আরও একটু ভালো হতে পারত। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত চালের উৎপাদন কতটুকু বেড়েছিল? বিএনপি সরকারের পাঁচ বছরের মধ্যে চার বছর কোনো উৎপাদন বাড়েনি, বরং হ্রাস পেয়েছিল। অর্থাৎ উৎপাদন ছিল নেতিবাচক।
আর একটি উদাহরণ বিদ্যুতের ব্যাপারে। ১৯৯৬ সালে বিদ্যুৎ কম বেশি ১৬০০ মেগাওয়াট উৎপাদন হতো। চরম বিদ্যুৎ ঘাটতি। সঞ্চালন লাইনগুলো জরাজীর্ণ ছিল। দ্রুত সরকারি ও প্রথমবারের মতো করে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় উৎপাদন বৃদ্ধি করলাম। সঞ্চালন লাইন উন্নত করার কাজ শুরু করলাম। চাহিদা বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করার জন্য নীতিমালা গ্রহণ ও প্রকল্প প্রণয়ন করে গেলাম। ২০০১ সালের জুলাই মাসে আওয়ামী লীগ সরকারের পাঁচ বছর মেয়াদ শেষে চার হাজার ৩০০ মেগাওয়াট উৎপাদন বৃদ্ধি করলাম, তখন শুনেছি না ‘আরও ভালো করা যেত।’ 
কোনো তৃতীয় পক্ষের সাহায্য ছাড়া ভারতের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনার মাধ্যমে গঙ্গা পানি চুক্তি করলাম। দীর্ঘদিনের একটা সমস্যার সমাধান হলো। দুই দশক ধরে চলা অশান্ত পার্বত্য চট্টগ্রাম সমস্যা সমাধান করে শান্তি চুক্তি করলাম। অথচ একশ্রেণীর কাছ থেকে কখনো এ বিষয়ে ভালো কথা শুনিনি। 
২০০১ সালের পয়লা অক্টোবর নির্বাচনে বিএনপির নেতৃত্বে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এল। কতটুকু বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধি করেছিল পাঁচ বছরে? যেসব প্রকল্পের কাজ শুরু করে গিয়েছিলাম, তার কয়েকটা শেষ হয়েছিল তাতে উৎপাদন যা বেড়েছিল তাও ধরে রাখতে পারেনি।
২০০৭ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় ছিল, তারাও উৎপাদন বাড়াতে পারেনি। আমরা এসে পেলাম কত? তিন হাজার ১০০ মেগাওয়াট, যা রেখে গিয়েছিলাম তার থেকেও ১২০০ মেগাওয়াট কম। পাঁচ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল তারা যে কিছু করতে পারেনি, সে সম্পর্কে এই ‘ভালোর আশাবাদীরা’ কী ভূমিকা পালন করেছিলেন? আরও ভালো করার জন্য ১/১১-এর পর যারা উচ্চ দরের ডিগ্রিসম্পন্ন ও ওজনদার ব্যক্তিবর্গ— তারাই বা কি উন্নতি করতে পেরেছিলেন?
সে কথায় পরে আসব, কারণ তারা তখন এ কথা বলেনি যে, আওয়ামী লীগ সরকার ভালো করেছিল, কাজেই নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসুক। তারা তখন আরও ভালো মানুষের সন্ধানে ব্যস্ত ছিল, সৎ মানুষের সন্ধানে সার্চ লাইট নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। উদ্দেশ্য ছিল গণতন্ত্রের সৎকার, অর্থাৎ কবর দেওয়া।
এই ধরনের আরও অনেক দৃষ্টান্ত আমরা দিতে পারব। সব থেকে মজার কথা হলো, এই আরও ভালোর সন্ধানকারীদের নিশ্চুপ থাকতে দেখেছি ২০০১ সালের নির্বাচনের উদ্দেশ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের প্রথম দিন থেকেই। প্রশাসনের ১৩ জন সচিবের চাকরি থেকে বের করে দেওয়া নিয়ে যে শুরু, তা সামরিক-বেসামরিক প্রতিষ্ঠানকেও কীভাবে প্রভাবিত করেছে ও ভীতসন্ত্রস্ত করেছিল, তা তখনকার অবস্থা স্মরণ করলেই জানা যাবে। শপথ অনুষ্ঠান হলো বঙ্গভবনে, সচিবেরা উপস্থিত ছিলেন। ফিরে এসে আর নিজের অফিসে ঢুকতে পারলেন না, কারণ চাকরি নেই। রেডিও-টেলিভিশনের মাধ্যমেই ১৩ সচিবসহ অনেক অফিসারের চাকরি খেয়ে ফেলেছেন। শপথ নিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা তাঁর পরিষদ গঠন করেননি। ১০ জন উপদেষ্টা নিয়োগ হয়নি তখনো, অফিসেও বসেননি, কারণ শপথ অনুষ্ঠান অফিস সময়সূচির পরে হয়েছিল। তখনই কীভাবে চাকরি থেকে অফিসারদের বরখাস্ত করে? এমনকি নিজের জিনিসপত্রগুলো গুছিয়েও আনার জন্য যে অফিসে যাবেন, তারও সুযোগ দেওয়া হয়নি।
গণভবনের টেলিফোন লাইনও কেটে দেওয়া হয়। আরও ভালোর ভক্তরা তখন এই অন্যায় কাজের প্রতিবাদ না করে বরং বাহবা দিয়েছিল।
প্রথম দিনের এই আচরণের মধ্য দিয়েই কিন্তু নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারিত হয়েছিল। অথচ বাংলাদেশের ইতিহাসে যতবার ক্ষমতা পরিবর্তন হয়েছে ততবারই রক্তপাত ও সংঘাতের মধ্য দিয়ে হয়েছে। সুষ্ঠুভাবে, শান্তিপূর্ণভাবে কখনো হয়নি। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার প্রথম পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ করে শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছিল। কিন্তু রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ ও প্রধান উপদেষ্টা লতিফুর রহমান যে পক্ষপাতদুষ্ট ও অসহিষ্ণু আচরণ দেখিয়েছিলেন, তাতে জাতি বিভ্রান্ত হয়েছিল। আওয়ামী লীগের যে গণতন্ত্রের প্রতি অবিচল নিষ্ঠা ও বিশ্বাস, সে কারণেই গণতন্ত্রের স্বার্থে তখন আমরা নির্বাচন বয়কট করিনি। নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলাম। এত প্রতিকূল অবস্থার মধ্যেও ভোট পেয়েছিলাম সংখ্যার দিক থেকে বেশি কিন্তু সিট সংখ্যা ছিল কম।
আরও একটি কথা, সাহাবুদ্দীন ও লতিফুর রহমান দুজনই প্রধান বিচারপতি ছিলেন। আইনের ব্যবসাও করেছেন জীবিকার জন্য, আবার জাস্টিস হয়ে আইনের রক্ষাও করেছিলেন। কিন্তু একটা প্রশ্নের উত্তর এখনো পেলাম না, সেটা হলো জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সদস্যদের অর্থাৎ জীবিত দুই কন্যার নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য একটা আইন পার্লামেন্টে পাস করেছিল, সেই আইন বলবৎ থাকা অবস্থায় এবং সদ্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনের ফোনের লাইন ও বিদ্যুতের লাইন কীভাবে কেটে দেয়? পানির লাইন কেটেছিল কি না বুঝতে পারিনি, কারণ পানির ট্যাংক তো ভরা থাকত, শেষ হতে সময় লাগে। একজন সাধারণ সরকারি কর্মচারীও সরকারি বাড়ি ছাড়ার জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় পায়, কিন্তু আমাকে সে সময়টুকুও দেওয়া হয়নি কেন? বিবেকবান বা আরও ভালোর দল কে কে তখন এ অন্যায়ের প্রতিবাদ করেছিলেন? 
আমার নামে ছড়ানো হলো, আমি গণভবন এক টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছি, কিন্তু কেউ কি কোনো প্রমাণ দেখাতে পেরেছিল? পারেনি। কিন্তু মিথ্যা অপপ্রচারে ঠিকই মানুষকে বিভ্রান্ত করতে চেয়েছিল। সত্যটা কিন্তু কেউ বলেনি বা কোনো ডকুমেন্টও দেখাতে পারেনি। আমি পাঁচবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছি, এ পর্যন্ত কোনো সরকারি প্লট নিইনি। 
২০০১ থেকে ২০০৬ বিএনপির ক্ষমতার আমল—১৫ জুলাই ২০০১ সালে যেদিন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করল সেদিন থেকেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর নেমে এল অমানবিক অত্যাচার। নির্বাচনের দিনে একদিকে বিএনপি ও জামায়াতের ক্যাডার দল, অপরদিকে সামরিক বাহিনী ও পুলিশের নির্যাতনে নেতা-কর্মীরা ঘরে ঘুমাতে পারেননি। রেহানার বাড়ি দখল করে যখন পুলিশ স্টেশন করা হলো, তখনো কারও কাছ থেকে এই অন্যায় কাজের প্রতিবাদ শোনা যায়নি। অপারেশন ক্লিন হার্ট নামে যে তাণ্ডব সেনাবাহিনী নামিয়ে করা হয়েছিল এবং মানুষ হত্যা করা হয়েছিল, তা নিশ্চয়ই মনে আছে। আওয়ামী লীগের রিসার্চ সেন্টার থেকে ১৫টা কম্পিউটার, ১০ হাজার বই, ৩০০ ফাইল, এক লাখ ফরম, নগদ টাকা নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেন্টারটা তালাবদ্ধ করে রাখা হয় পাঁচটা বছর। এটা কি গণতন্ত্রচর্চা? তাদের কাছ থেকে একটা প্রতিবাদও শুনিনি এর পরই শুরু হলো র‌্যাব গঠন ও ক্রসফায়ার। তখন তো সবাই র‌্যাবের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কেবল আমিই স্রোতের বিপরীতে দাঁড়িয়ে প্রশ্ন তুলেছিলাম ও প্রতিবাদ করেছিলাম, তখন এই বিবেকবানেরা আমার সমালোচনা করেছিল। কাজগুলো নাকি খুবই ভালো হচ্ছিল বলে মন্তব্য করেছিল। এখন অবশ্য উল্টোটা শুনি।
সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগকেই চায়, কিন্তু তাদের ভোট দেওয়ার উপায় নেই। ভোটকেন্দ্রের ধারেকাছেও যেতে পারেনি। বিশেষ করে, হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ যারা আওয়ামী লীগ বা নৌকায় ভোট দেয়, তাদের ওপর অমানবিক নির্যাতন করা হয়েছিল ২০০১ সালের নির্বাচন চলাকালীন। তার পরও জনগণের ভোট আমরাই পাই কিন্তু সিট ঠিক গুনেই দেওয়া হয়। সরকার গঠন করার আগে থেকেই বিএনপি ও জামায়াতের তাণ্ডব শুরু হলো। গ্যাং রেপ করেছে, ঠিক হানাদার পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী ১৯৭১ সালে যেভাবে নির্যাতন করেছিল, ঠিক সেভাবেই নির্যাতন চলছিল। একটা সুখবর হলো পূর্ণিমা ধর্ষণ কেসের আসামিরা সাজা পেয়েছে। সাধারণত, সামাজিক লজ্জার ভয়ে কোনো পরিবার মামলা করতে চায় না। পূর্ণিমা সাহস করেছে বলেই বিচার পেয়েছে। আমার মনে হয়, এই একটা দৃষ্টান্তই যথেষ্ট। হাঁড়ি ভরা ভাত একটা টিপলেই তো বোঝা যায় সব ভাত সিদ্ধ হয়েছে কি না। ঠিক তেমনি একটা মামলার রায়ই প্রমাণ করে, কী ধরনের নির্যাতন বিএনপি ও জামায়াত দেশের মানুষের ওপর করেছিল। আমি এর বিস্তারিত বিবরণ দিতে চাই না, কারণ এত বেশি ঘটনা যে এখানে সব উল্লেখও করা যাবে না, শুধু এটুকুই বলতে চাই, তখন দেখেছিলাম অনেক বিবেকবান চুপ করে আছেন। মুখে কথাও নেই। কলমের জোরও নেই। তাদের জোর বাড়ে শুধু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে।
ঠিক স্বাধীনতার পর যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়তে সবাই ব্যস্ত। তখনো বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা, খাদ্য ঘাটতি, দেশে দেশে দুর্ভিক্ষ চলছে। আর বাংলাদেশে তো ‘মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা’ যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়া। দিনরাত পরিশ্রম করে শূন্যের ওপর যাত্রা শুরু করে দেশকে গড়ে তুলতে ব্যস্ত, তখন ‘আরও ভালোর’ দলের সমালোচনা শুনেছি। কিছু নাকি হচ্ছে না। তখনো দেখেছিলাম তাদের কলম ও মুখের জোর। আর পরিণতি মার্শাল ল জারি এবং স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের পুনর্বাসন। স্বাধীনতার মূল চেতনা থেকে দেশকে পিছিয়ে নেওয়া। ক্ষমতা দখলের ও ক্ষমতা নিষ্কণ্টক করার লক্ষ্যে মানুষ হত্যা। ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত সামরিক বাহিনীতে ১৯ ক্যু ও পাল্টা ক্যু হয়েছিল। দেশবাসীর অকল্যাণ হয়েছে, দেশ পিছিয়েছে। স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও সেই ১৯৭১ সালের পরাজিত শক্তির প্রেতাত্মারা থেমে নেই। যতবার জনগণ তাদের পরাজিত করে, ততবার আবার তারা পরগাছার মতো বেড়ে ওঠে। এবার আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তারা যেন মরিয়া হয়ে উঠেপড়ে লেগেছে। 
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটারবিহীন প্রহসনের নির্বাচন, ১৯-২০ মে সামরিক ক্যুর অপচেষ্টা হয়। সাবেক প্রধান বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে গঠিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সংঘটিত সামরিক ক্যু গণতন্ত্র ধ্বংসের চেষ্টা করেছিল। নির্বাচনের পর সরকার গঠন করতেও টালবাহানা করে আবদুর রহমান বিশ্বাস। এসব কারা এবং কেন করেছিল এসব কথা আমরা কেন বিস্মৃত হই?
দেশের অবস্থা কী? খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত আছে? ২০০১ সালে যে মোটা চাল মাত্র ১০ টাকা ছিল (আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে), সেই চাল ২০০৮ সালে ৪০-৪৫ টাকা দাম হয়েছিল, তা কমিয়ে ১৮ টাকায় আনা হয়। কৃষকের খরচ পোষানো হয়। প্রতি কেজি চাল ৩২-৩৪ টাকায় ঢাকার বাজারে এবং ঢাকার বাইরে ২৬-২৭ টাকায়ও পাওয়া যায়। সরকার ৪০-৫২ টাকায় বিদেশ থেকে চাল কিনে এনে মাত্র ২৪ টাকায় খোলাবাজারে বিক্রি করছে। ফেয়ার প্রাইস কার্ড, রেশন কার্ড, ভিজিএফ, ভিজিডিসহ বিভিন্ন উপায়ে খাদ্যনিরাপত্তা দিচ্ছে। না খেয়ে কেউ কষ্ট পাচ্ছে না। ৩৬ টাকায় বিক্রি হওয়া আটা ২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
কাজেই খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত আছে। আওয়ামী লীগ আমলে দেশে মঙ্গা হয় না। 
সামাজিক নিরাপত্তাও নিশ্চিত, মানুষ নানাভাবে সাহায্য পাচ্ছে। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী, স্তন্যদানকারী মা, সন্তানসম্ভবা গরিব মা, স্কুলে গমনকারী গরিব শিশুর মাসহ এ ধরনের নানাভাবে সামাজিক নিরাপত্তা সৃষ্টিকারী আর্থিক অনুদান সরকার দিয়ে যাচ্ছে, যা দারিদ্র্য বিমোচনে অবদান রাখছে। গরিব মানুষের কষ্ট লাঘব হচ্ছে। ১৯৯৮ সালের বন্যার পর আওয়ামী লীগ সরকার নয় মাস দুই কোটি লোককে বিনা পয়সায় খাইয়েছে। ১৯৯৬ সাল থেকে এসবই আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে করা। ইতিপূর্বে আর কোনো সরকার এদিকে দৃষ্টি দেয়নি।
শিক্ষার হার, ভর্তির হার বৃদ্ধি পাচ্ছে, পাসের হার বাড়ছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের জন্য ২৩ কোটি ২২ লাখ বই বিনা পয়সায় বিতরণ করা হচ্ছে।
বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধানে সরকার বলিষ্ঠ পদক্ষেপ নিয়েছে। সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রায় ৭১টি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। দুই বছরেই ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ অতিরিক্ত উৎপাদন করা হয়েছে।
গ্যাস উৎপাদন বেড়েছে, আরও বৃদ্ধির কাজ চলছে।
আইনশৃঙ্খলা অবস্থার উন্নতি হয়েছে, তার প্রমাণ আইসিসি ওয়ার্ল্ড কাপ, হজ, ঈদ, পূজা, বড়দিন, পয়লা বৈশাখ, বিজয় দিবস, স্বাধীনতা দিবস, মাতৃভাষা দিবস শান্তিপূর্ণভাবে পালিত হয়েছে। সবার বেতন-ভাতা বৃদ্ধি করা হয়েছে একদিকে, আর অপরদিকে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছি। মূল্যস্ফীতি ১১ ভাগ থেকে কমিয়ে ছয় ভাগে আনা হয়েছিল, এখন কিছুটা বেড়ে আট ভাগ হয়েছে। শ্রমিক ও দিনমজুরদের আয় বেড়েছে। সরকার সদা সচেষ্ট আছে এসব বিষয়ে। ১৫০০ টাকা যারা শ্রমের মূল্য পেত, তারা ৩০০০ টাকা পায়। ধান কাটার সময় ৩০০-৪০০ টাকা দিনে মজুরি পেয়েছে। রাস্তাঘাটের উন্নয়নের কাজ শুরু হয়েছে। 
অনেক কাজ, যা এই সরকার আসার আগে সাত বছরে হয়নি, তার থেকেও বেশি কাজ সরকার দুই বছরে করেছে এবং করে যাচ্ছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার কাজও সুন্দরভাবে এগিয়ে যাচ্ছে। ৪,৫০১টি ইউনিয়নে তথ্যকেন্দ্র খোলা হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, টেন্ডার সর্বক্ষেত্রে তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ ফিরে এসেছে। কোনো ঘটনা ঘটলে অপরাধী যে-ই হোক, সরকার সঙ্গে সঙ্গে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে।
বিডিআর (বিজিবি) হত্যা ও বিদ্রোহের বিচার চলছে। জঙ্গিবাদ দমনে সরকার তৎপর ও সফল। যুদ্ধাপরাধীদেরও বিচার চলছে। সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এ পর্যন্ত কেউ করতে পারেনি। বরং সরকার দুর্নীতি ও দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বদ্ধপরিকর। এবার বোরো ফসল বাম্পার হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে। ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্টে ভর্তুকির টাকা সরাসরি পাচ্ছে। ডিজেলে ২০ শতাংশ সাবসিডি পাচ্ছে। হাওর এলাকায় ও এলাকাবিশেষে বিনা মূল্যে সার ও বীজ দেওয়া হয়েছে। ব্যাংক রিজার্ভ সর্বোচ্চ। রেমিট্যান্স বেড়েছে। দুই বছরে নয় লাখ মানুষ বিদেশে গেছে। ফিরে এসেছে এক লাখ, যা স্বাভাবিক। 
সার্বিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিশ্বমন্দা সত্ত্বেও যথেষ্ট উন্নত হয়েছে। প্রবৃদ্ধি ছয় ভাগে ধরে রাখা হয়েছে, এবার বৃদ্ধি পেয়ে ৬ দশমিক ৭ ভাগে উন্নীত হয়েছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে সরকার দক্ষতার সঙ্গে দেশ পরিচালনা করছে। 
চাকরিজীবীরা সন্তুষ্ট মনে চাকরি করে যাচ্ছেন। ব্যবসায়ীরা এত শান্তিতে কোনো দিন ব্যবসা করতে পারেননি। একটু অতীতের দিকে তাকালে স্মরণ করতে পারবেন। একদিকে ছিল হাওয়া ভবনের কমিশন ও ভাগ দেওয়া, অপরদিকে তত্ত্বাবধায়কের সময় ছিল আতঙ্ক, মামলা, দেশছাড়া। অন্তত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সে আতঙ্কের পরিবেশ নেই। মুক্ত পরিবেশে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বিঘ্নে ব্যবসা-বাণিজ্য করতে পারছেন। রপ্তানি-বাণিজ্যে যা টার্গেট ছিল তার থেকে বেশি রপ্তানি হচ্ছে। বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাচ্ছে বরং, জমির অভাবে জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না। কাজেই সার্বিক দিক থেকে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। মানুষের মনে স্বস্তি আছে। 
চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন, উপনির্বাচন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে হয়েছে।
এসব প্রশ্নের উত্তরের পরও আরও ভালোর দল বলবে, তার পরও দেশের অবস্থা ভালো নেই। এর কারণ কী? কারণ একটাই, অগণতান্ত্রিক বা অসাংবিধানিক সরকার থাকলে তাদের দাম থাকে। এই শ্রেণীটা জীবনে জনগণের মুখোমুখি হতে পারে না। ভোটে জিততে পারে না। কিন্তু ক্ষমতার লোভ ছাড়তে পারে না। তাই মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে, কিন্তু অগণতান্ত্রিক বা অসাংবিধানিক সরকারের যে খোশামোদি, তোষামোদি ও চাটুকারের দলও প্রয়োজন হয়—এরা সেই দল। বিশেষ করে, মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী ও চেতনায় বিশ্বাসীরা ক্ষমতায় থাকলে দেশের মানুষের উপকার হয়। আর দেশে মানুষ যদি দরিদ্র না থাকে, তাহলে এই শ্রেণীর বাণিজ্য শেষ হয়ে যাবে, কারণ দরিদ্র্য মানুষগুলোই তো তাদের বড় পণ্য। যাদের নিয়ে তারা বাণিজ্য করে নিজেদের ভাগ্য গড়ে।
আমি বেঁচে থাকতে আমার দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে আর খেলতে দেব না।
২২.৫.২০১১
টরন্টো, কানাডা
শেখ হাসিনা: প্রধানমন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার।

আ.লীগের পাশে থাকবে জাপা


আওয়ামী লীগ সরকারের বাকি আড়াই বছরে যেকোনো রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলায় পাশে থাকবে জাতীয় পার্টি। বিএনপি সংসদ থেকে পদত্যাগ করলে বা আগামী নির্বাচন বর্জন করলে জাতীয় পার্টি মহাজোট থেকে বেরিয়ে এককভাবে নির্বাচন করবে। দুই দলেরই শীর্ষস্থানীয় সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, সপ্তাহ খানেক আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ সংসদ ভবনে একান্ত বৈঠক করেছেন। এক ঘণ্টার বৈঠকে আদালতের রায়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্তি, পরবর্তী সম্ভাব্য রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং আগামী নির্বাচন নিয়ে কথা হয়। এ সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল ও নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করার ব্যাপারে দুই নেতা নীতিগতভাবে একমত হন।
সূত্র জানায়, উভয় নেতা তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের পর সম্ভাব্য রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবিলার সিদ্ধান্ত নেন। সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদ স্বীকৃত গণতান্ত্রিক পন্থা হিসেবে রাজনৈতিক সরকারের অধীনে নির্বাচন করার পক্ষে মত দেন। সংসদে সংবিধান সংশোধনী বিল এনে দ্রুত পাস করার কথাও হয় তাঁদের মধ্যে। বিএনপি নির্বাচনে না এলে করণীয় সম্পর্কে তাঁরা কথা বলেন।
ক্ষমতাসীন মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির শীর্ষস্থানীয় এক নেতা প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপি নির্বাচন বর্জন করলেও জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নেবে। দলের চেয়ারম্যান এরশাদ এ ব্যাপারে শেখ হাসিনাকে আশ্বস্ত করেছেন।
যোগাযোগ করা হলে এইচ এম এরশাদ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘রাজনৈতিক সরকারের অধীনেই আমরা নির্বাচন করব। অন্য কেউ নির্বাচনে না এলে আমরা এককভাবেই অংশ নেব। পৃথিবীর কোনো গণতান্ত্রিক দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা নেই। তাহলে আমরা কি চাঁদে বাস করছি?’
জাতীয় পার্টি ক্ষমতাসীন মহাজোটের অংশীদার হলেও বছর দেড়েক ধরে এইচ এম এরশাদ সরকারের নানা কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করছেন। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা-পরিস্থিতি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে তিনি ছিলেন সমালোচনামূখর। এমনকি তাঁর ছোট ভাই বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী জি এম কাদেরের মন্ত্রণালয়ে কোনো ক্ষমতা নেই বলেও প্রকাশ্যে মন্তব্য করেন তিনি। 
এ পরিস্থিতিতে গত এক মাসে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এরশাদের দুই দফা বৈঠক হয়। এ বৈঠকের পর থেকে তাঁর মুখ থেকে সরকারের সমালোচনা শোনা যায়নি। 
শেখ হাসিনা ও এরশাদের মধ্যে বৈঠকের পর তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে সংবিধান সংশোধনী বিল জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করা হয়েছে। সংসদে গত শনিবার বাজেট আলোচনায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম বিএনপির সমালোচনা করে বলেন, বিরোধী দল বিএনপি সংসদ থেকে পদত্যাগ করলে উপনির্বাচন দিয়ে এরশাদকে বিরোধীদলীয় নেতা করা হবে।
আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, আগামী সপ্তাহেই সংবিধান সংশোধনী বিল জাতীয় সংসদে পাস হতে পারে। তবে সরকার মনে করে, আদালতের রায় অনুসারে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত হলেও আলোচনার দরজা খোলা থাকবে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, সংবিধান সংশোধনী বিল পাস হবে। তবে আলোচনার পথ খোলা থাকবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল হলেও নানা ফর্মুলায় অন্তর্বর্তী সরকার করা যাবে। বিএনপির সদিচ্ছা থাকলে ফর্মুলা দিতে পারে।
আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকেরা জানান, আলোচনার ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হলেও বিরোধী দলকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলায় নানা কৌশল নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া বিরোধী দলের নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণার কারণে সরকারি দলকে বিকল্প চিন্তাভাবনা করতে হচ্ছে।
এ ক্ষেত্রে ১৪ দলের ভূমিকা কী হবে জানতে চাইলে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সাংসদ রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘এখনই বলাটা বেশি আগাম হয়ে যায়। তবে আমরা ১৪ দলে ছিলাম এবং আছি।’
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম গত শুক্রবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এখনই সব কথা বলছি না। আলোচনা হবেই।’ তা ছাড়া তিনি আলোচনার জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বিরোধী দলের অপেক্ষায় থাকবেন বলে জানান।
আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বিলুপ্ত হলেও নির্বাচনকালে নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিষ্ঠার সুযোগ থাকবে। আর অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চাইলে বিএনপিকে আলোচনায় আসতেই হবে। কারণ গণতান্ত্রিক উপায়ে সরকার পরিবর্তনের একমাত্র উপায় নির্বাচন। সুতরাং বিএনপি নির্বাচন বর্জন করবে—এটা মনে করার কারণ নেই। তাঁদের মতে, ১৯৮৬ সালের নির্বাচন বিএনপি বর্জন করলেও সে পরিস্থিতি এখন নেই। তখন ছিল সামরিক সরকার। এখন নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারের অধীনে আইন ও সংবিধান অনুসরণ করে সরকার পরিচালিত হচ্ছে। এ জন্য অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে নিরপেক্ষ প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশন নিয়োগ এবং একে আর্থিকভাবে স্বাধীন ও শক্তিশালী করার পক্ষে সরকারদলীয় নেতারা।
prothom-alo

Friday, June 24, 2011

প্রেসিডেন্ট ওবামা আফগানিস্তান থেকে ৩৩ হাজার সেনা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছেন


President Barack Obama delivers a televised address on his plan to drawdown U.S. troops in Afghanistan from the East Room of the White House, June 22, 2011
Photo: AP
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা আজ বৃহষ্পতিবার নিউ ইয়র্ক যাচ্ছেন ২০১২ সালের শেষ নাগাদ আফগানিস্তান থেকে ৩৩ হাজার আমেরিকান সেনা প্রত্যাহারের তার পরিকল্পনা আরও তুলে ধরার জন্য।
মি ওবামা নিউ ইয়র্কে ফোর্ট ড্রামে দশম মাউনটেইন ডিভিশন এর সেনাদের সঙ্গে সাক্ষাত্ করবেন। এই ডিভিশন থেকে প্রায়ই সৈন্য মোতায়েন করা হয় আফগানিস্তানে।
বুধবার হোয়াইট হাউসে দেওয়া এক ভাষণে প্রেসিডেন্ট ওবামা ঘোষণা করেন যে তার কথায় “যুদ্ধের যোয়ারে ভাটা পড়ছে”। তিনি বলেন এবছরের শেষ নাগাদ প্রথম ১০ হাজার আমেরিকান সেনাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসা হবে। ২০০৯ সালের ডিসেম্বার মাসে যে অতিরিক্ত সেনা সেখানে পাঠানোর কথা ঘোষণা করা হয়েছিলো তার বাদবাকি সেনা দেশে ফিরে আসবে আগামী বছর। যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনী ধীর গতিতে তাদের সৈন্য প্রত্যাহার অব্যাহত রাখবে এবং আফগান বাহিনী সেই সঙ্গে নেতৃত্বের দিকে এগিয়ে যাবে।
প্রায় এক লক্ষ আমেরিকান সেনা এখন আফগানিস্তানে দায়িত্ব পালন করছে।
আফগান প্রেসিডেন্ট হামিদ কারযাই বৃহষ্পতিবার বলেন যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য প্রত্যাহারকে তিনি স্বাগত জানান। তিনি আরও বলেন আফগানিস্তানের জনগন তাদের জন্মভূমি রক্ষা করবে।

ভয়েস অফ আমেরিকার সঙ্গে প্রেসিডেন্ট ওবামার সাক্ষাত্কার

Photo: Courtesy of White House
প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সাক্ষাত্কার নেন আন্ড্রে ডে নেশনারা


ভয়েস অফ আমেরিকাকে দেওয়া এই প্রথম কোন আমেরিকান প্রেসিডেন্টের সাক্ষাতকারে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বলেন, ‘আগামী মাস থেকে শুরু করে আমরা চলতি বছরের শেষ পর্যন্ত আফগানিস্তান থেকে ১০ হাজার সৈন্য প্রত্যাহার করতে পারবো, এবং আগামী বছরের গ্রীষ্মকাল পর্যন্ত ৩৩ হাজার সৈন্যকে ঘরে ফিরিয়ে আনতে পারবো’ ।
প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেন, ‘আমরা আফগানিস্তানকে নিখুঁত কোন স্থানে পরিণত করার চেষ্টা করবো না।  আমরা সেখানে রাস্তায়, রাস্তায় পাহারা বা পাহাড়পর্বতে অনির্দিষ্টকালের জন্য টহল দেবো না।  সেটা হবে আফগান সরকারের দায়িত্ব।  তাদেরকে অবশ্যই দ্রুত তাদের জনগনকে রক্ষা করার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে’।
নেটো মহাসচীব রাসমুসেন বলেছেন – ‘সময়ের গতি পরিবর্তন হচ্ছ।  তলেবান চাপের মুখে রয়েছে। আফগান নিরাপত্তা বাহিনী দিনে দিনে শক্তিশালী হয়ে উঠছে।
প্রেসিডেন্ট ওবামা বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই আরও সুষ্ঠু পথ অবলম্বন করতে হবে।  যেমন আমাদের আগের প্রজন্ম আমেরিকার জন্য বিশেষ একটি ভুমিকা নির্ধারণ করেছিল ।

আ.লীগ এলে জনগণ কিছু পায় অন্যরা এসে লুটে খায়


প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা

জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করে গতকাল বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম
ছবি: প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সৌজন্যে
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই জনগণ কিছু পায়, আর অন্যরা এসে লুটে খায়। তাঁর দাবি, জনগণের কল্যাণের কথা চিন্তা করেই আওয়ামী লীগ প্রতিটি পদক্ষেপ নেয়। 
গতকাল বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের ৬২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। 
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা জনগণের পাশে ছিলাম, আছি। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীদের পকেট থেকে জন্ম নেওয়া রাজনৈতিক দল কখনো জনগণকে কিছু দিতে পারে না। তাদের রাজনীতি ত্যাগের নয়, ভোগের।’ তিনি বলেন, ক্ষমতায় থেকে যারা দেশের অর্থ-সম্পদ লুণ্ঠন করে বিদেশে পাচার করেছে, সে অর্থ ফেরত এনে জনগণের কল্যাণে ব্যয় করা হবে।
গতকাল বেলা ১১টায় বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের সেন্টার চত্বরে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করেন যথাক্রমে শেখ হাসিনা ও দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। এ সময় শান্তির প্রতীক ৬২টি পায়রা ও নানা রঙের বেলুন ওড়ানো হয়। 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, উপমহাদেশের প্রাচীন ও বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগ একটি। নানা ঘাত-প্রতিঘাত মোকাবিলা করে এ দল সর্ববৃহৎ রাজনৈতিক দল হিসেবে জনগণের হূদয়ে স্থান করে নিতে পেরেছে। শুরু থেকে আওয়ামী লীগ জনগণের ভাগ্য বদলে কাজ করে যাচ্ছে। মাতৃভাষা, স্বাধিকার, স্বাধীনতা, গণতন্ত্রসহ দেশের মানুষ যা পেয়েছে, তা আওয়ামী লীগের কাছ থেকেই পেয়েছে। 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০১ থেকে বিএনপি-জামায়াত জোটের পাঁচ বছরের শাসনামলে বাংলাদেশ পরিণত হয়েছিল জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি ও অবৈধ অস্ত্র চোরাচালানের স্বর্গরাজ্যে। বর্তমান সরকারের মাত্র দুই বছরে সেই দুর্নাম ঘুচিয়েছে। বাংলাদেশ এখন সামাজিক নিরাপত্তা, খাদ্য উৎপাদনের মডেল হিসেবে পরিচিতি পাচ্ছে। দুই বছরে এ সরকার জাতীয় গ্রিডে ১৯২২ মেগাওয়াট নতুন বিদ্যুৎ যোগ করেছে।
আলোচনা সভায় ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন মহাজোটের ঐক্যকে আরও সুদৃঢ় করার তাগিদ দেন। তিনি বলেন, মৌলবাদী অপশক্তি ও তাদের দোসরদের পরাজিত করতে না পারলে দেশ আবারও গভীর খাদে পড়ে যাবে। দেশ যখন সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন এই অপশক্তি নতুন করে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে। 
জাসদের সভাপতি হাসানুল হক ইনু বলেন, বিএনপি হচ্ছে নব্য মুসলিম লীগ আর জামায়াত হচ্ছে ঘোমটা পরা উগ্র জঙ্গিবাদী দল। বিএনপি-জামায়াত জোট নির্বাচনের পরাজয় এখনো মেনে নিতে পারেনি। 
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু বলেন, দেশের মানুষ যতটুকু গণতন্ত্র ভোগ করছে, তার একমাত্র অবদান বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার। 
আবদুর রাজ্জাক বলেন, একাত্তরের চেতনায় মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি আবারও ঐক্যবদ্ধ হলে ষড়যন্ত্রকারীরা কিছুই করতে পারবে না। 
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত নিঃশর্তভাবে সংসদে এসে আলোচনায় অংশ নেওয়ার জন্য বিরোধী দলের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, গত ১৮ বছরে তত্ত্বাবধায়ক সরকার একটি সুষ্ঠু নির্বাচনও দিতে পারেনি। 
নূহ-উল আলম লেনিন ও অসীম কুমার উকিলের উপস্থাপনায় আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য দেন সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, এম এ আজিজ ও মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু। 
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান সুষ্ঠু ও সফল হওয়ায় সংশ্লিষ্ট সবাইকে ধন্যবাদ জানান। 
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন: গতকাল রাজধানীসহ সারা দেশেই নানা আয়োজনে আওয়ামী লীগের ৬২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালিত হয়। ভোরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, বঙ্গবন্ধু ভবন ও সারা দেশের দলীয় কার্যালয়ে উত্তোলন করা হয় জাতীয় ও দলীয় পতাকা। সকাল সাড়ে সাতটায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথমে সরকার এবং পরে দলের সভানেত্রী হিসেবে ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। 
এ সময় মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সাংসদ, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও সহযোগী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। 
প্রধানমন্ত্রীর পর আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বিকেলে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়

প্রথম আলো

অননুমোদিত আবাসন প্রকল্পের ২২টি বিলবোর্ড অপসারণ


রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) গতকাল রাজধানীর বনানী থেকে শুরু করে বিমানবন্দর এলাকায় অননুমোদিত আবাসন প্রকল্পের বিলবোর্ড অপসারণ করে। রাজউকের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের অধীনে দিনব্যাপী এ অভিযানে পাঁচটি আবাসন প্রকল্পের ২২টি বিলবোর্ড অপসারণ করা হয়।
আবাসন প্রকল্পসংশ্লিষ্ট হাইকোর্টের রায় বাস্তবায়নের প্রাথমিক কাজ হিসেবে এ উচ্ছেদ অভিযান চালাচ্ছে রাজউক। রাজউক মঙ্গলবার থেকে এ অভিযান শুরু করে। 
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সকালে নগরের বনানী এলাকা থেকে বিলবোর্ড-সাইনবোর্ডগুলো অপসারণের কাজ শুরু হয়। বনানীতে ওমেগা রিয়েল স্টেটের বিলবোর্ড অপসারণের মধ্য দিয়ে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়। দিনব্যাপী অভিযানে ওমেগা রিয়েল স্টেট, জেনোভ্যালি পিংক সিটি, ফোর সিজনস হোল্ডিংস, গ্রীন কনসেপ্ট হাউজিং ও বেস্টওয়ে গ্রুপের ২২টি বিলবোর্ড অপসারণ করা হয়। বনানী, নেভি হেডকোয়ার্টারের বিপরীতে, জিয়া কলোনির সামনে, খিলক্ষেতের কুড়াতলী এলাকা থেকে এসব বিলবোর্ড সরানো হয়। 
অভিযান পরিচালনাকারী দলের সূত্র জানিয়েছে, বিলবোর্ড-সাইনবোর্ড অপসারণকালে তাঁরা কোনো ধরনের বাধার মুখে পড়েননি। তবে বিলবোর্ডগুলো অনেক উঁচুতে থাকার কারণে অপসারণে বেশি সময় লেগেছে। বিকেলের মধ্যেই অভিযান পরিচালনাকারী দল নির্ধারিত কাজ শেষ করতে পেরেছে। অভিযান শেষে অপসারণ করা বিলবোর্ড-সাইনবোর্ডগুলো ট্রাকে করে রাজউকের মহাখালী গোডাউনে নেওয়া হয়। এগুলো সেখানে সংরক্ষণ করা হবে বলে জানিয়েছে রাজউক কর্তৃপক্ষ। 
রাজউকের উপনগর পরিকল্পনাবিদ মো. সিরাজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘হাইকোর্টের নির্দেশের আলোকে অননুমোদিত আবাসন প্রকল্পের বিলবোর্ড-সাইনবোর্ড অপসারণে এ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। পর্যায়ক্রমে সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন এলাকায় এ অভিযান চলবে।’ 
মো. সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে গতকালের অভিযানে ম্যাজিস্ট্রেট রোকনউদ্দৌলা, দুজন অনুমোদনকারী কর্মকর্তা, একজন সহকারী পরিকল্পনাবিদ, সার্ভেয়ারসহ ১৩ জনের একটি দল অংশ নেয়। তাদের সঙ্গে এক প্লাটুন পুলিশ ও ২০ জন শ্রমিক ছিলেন।
হাইকোর্টের রায়ে বলা হয়েছিল, অননুমোদিত আবাসন কোম্পানি ও প্রকল্পগুলো প্লট বিক্রির জন্য কোনো ধরনের বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারে না। রায়ে অননুমোদিত বেসরকারি আবাসন প্রকল্পের প্লট-ফ্ল্যাট বিক্রির জন্য প্রচারিত সব বিজ্ঞাপন ও এ-সংক্রান্ত সাইনবোর্ড-বিলবোর্ড অপসারণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

কোকোর ৬ বছরের জেল



আরাফাত রহমান কোকো
বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকে ছয় বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ ছাড়া কোকোকে জরিমানা দিতে হবে প্রায় সাড়ে ১৯ কোটি টাকা। 
সিঙ্গাপুরে ২০ কোটি টাকার বেশি অর্থের অবৈধ লেনদেনের দায়ে গতকাল বৃহস্পতিবার আদালত এ রায় দিয়েছেন। সিঙ্গাপুর থেকে এই টাকার সমপরিমাণ অর্থ ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে পদক্ষেপ নিতেও আদেশ দিয়েছেন আদালত। মামলার বিবরণ অনুযায়ী, টেলিযোগাযোগ খাতে সিমেন্সকে কাজ পাইয়ে দিতে এই অর্থ ঘুষ নিয়েছিলেন আরাফাত রহমান কোকো।
মামলার অপর আসামি সাবেক মন্ত্রী মরহুম লে. কর্নেল আকবর হোসেনের ছেলে ইসমাইল হোসেন সায়মনকে একই দণ্ড দিয়েছেন আদালত। আদালত মোট জরিমানা করেছেন ৩৮ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, যা কোকো ও সায়মনকে অর্ধেক অর্ধেক করে দিতে হবে। 
ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩-এর বিচারক মোজাম্মেল হোসেন আসামি কোকো ও সায়মনকে পলাতক দেখিয়ে গতকাল এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে বলা হয়, আসামিদের আদালতে হাজির হয়ে মামলায় প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ দেওয়া সত্ত্বেও তাঁরা হাজির হননি। আসামিরা গ্রেপ্তার বা আত্মসমর্পণ করার তারিখ থেকে এ রায় কার্যকর হবে। 
জিয়া পরিবারের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে অর্থের অবৈধ লেনদেনের অভিযোগে এই প্রথম কোনো মামলার রায় দেওয়া হলো।
গতকাল দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে রায় ঘোষণা করা হয়। বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের হট্টগোলের মধ্যেই বিচারক রায়ের সংক্ষিপ্ত অংশ পড়ে শোনান। রায়ে বলা হয়, আসামিদের বিরুদ্ধে ২০০২ সালের মানি লন্ডারিং আইনের ২(ক) আ, ই ১৩ ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় অপরাধ প্রমাণ হওয়ায় দুজনকে ছয় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হলো। এ সময় বিএনপিপন্থী আইনজীবী ‘প্রহসনের রায় মানি না’ বলে আদালতকক্ষ থেকে বেরিয়ে যান। 
মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়েছিল গত বছর ৩০ নভেম্বর। চলতি বছর ৪ জানুয়ারি কোকো পলাতক থাকায় তাঁর অনুপস্থিতিতেই বিচারকাজ শুরু হয়। ১৯ জুন যুক্তিতর্ক শেষে আদালত রায়ের তারিখ ধার্য করেন। 
এর আগে ২০০৯ সালের ১৭ মার্চ রাজধানীর কাফরুল থানায় দুদক এ মামলা করে। সিঙ্গাপুরে ২৮ লাখ ৮৪ হাজার সিঙ্গাপুরি ডলার এবং নয় লাখ ৩২ হাজার ৬৭২ মার্কিন ডলার (সে সময়ের বাজারদর অনুযায়ী ২০ কোটি ৮৫ লাখ ৮৪ হাজার ৫১৮ টাকা) অবৈধ লেনদেনের অভিযোগে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনে ২০০৯ সালের ১২ নভেম্বর অভিযোগপত্র দেয় দুদক।
২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর কোকোকে গ্যাটকো দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ২০০৮ সালের মে মাসে তাঁকে সাময়িক মুক্তি (প্যারোল) দিয়ে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে অনুমতি দেওয়া হয়। এরপর কয়েক দফা এর মেয়াদ বাড়ানোর পর গত ১৪ আগস্ট প্যারোলের মেয়াদ শেষ হয়। ১৯ আগস্ট প্যারোল বাতিল করে ৩১ আগস্টের মধ্যে দেশে ফিরতে চিঠি দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কোকোর পক্ষে করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে ২৬ আগস্ট হাইকোর্ট ৪০ দিনের জন্য প্যারোলের মেয়াদ বাড়ালেও এর শর্ত ভঙ্গ করায় আপিল বিভাগ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত বহাল রাখেন। এরপর বিচারিক আদালত কোকোর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
আদালত পরিস্থিতি: গতকাল বেলা ১১টার আগেই আওয়ামী ও বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা আদালতকক্ষে জড়ো হন। ১১টা ২০ মিনিটে বিচারক এজলাসে ওঠেন। প্রথমেই জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার শুনানি হয়। এ মামলায় আসামিপক্ষ সময়ের আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। এরপর আদালত থেকে জানানো হয়, দুপুর ১২টার পর রায় ঘোষণা করা হবে। এ সময় থেকেই বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা আদালতকক্ষের বাইরে ও আদালত চত্বরে মিছিল এবং ‘কোকোর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলায় প্রহসনের বিচার মানি না’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন। দুপুর ১২টার দিকে আদালত ভবনে আইনজীবীরা দলবদ্ধ হয়ে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তির ঘটনাও ঘটে। 
গতকাল আদালত এলাকায় নেওয়া হয় ব্যাপক নিরাপত্তাব্যবস্থা। সকাল থেকেই পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন ছিল। 
কোকোর সাজার রায়ের খবর ছড়িয়ে পড়লে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতির কক্ষের সামনে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের ব্যানারে আইনজীবীরা জড়ো হতে থাকেন। পরে তাঁরা সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন। সমাবেশ থেকে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে এ সাজা দেওয়া হয়েছে। বিক্ষুব্ধ আইনজীবীরা সুপ্রিম কোর্ট ও আইনজীবী সমিতি ভবনের সংযোগ পথে রাখা ফুলের টব ভাঙচুর করেন। এ ছাড়া দ্বিতীয় তলা থেকে ফুলের টব ছুড়ে ফেলে দিলে নিচে থাকা দুটি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। 
অন্যদিকে রায় ঘোষণার পর আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা রায়কে স্বাগত জানিয়ে মিছিল করেন।
আইনজীবীদের প্রতিক্রিয়া: রায়ের পর দুদকের প্রধান কৌঁসুলি আনিসুল হক বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) সিমেন্সের একটা ঘুষ কেলেঙ্কারি তদন্ত করতে গিয়ে কোকোকে ঘুষ দেওয়ার বিষয়ে তথ্য পায়। সেই কাগজপত্র থেকে শুরু হয় অনুসন্ধান, পরে এজাহার করা হয়। তথ্যটা যেহেতু এফবিআই থেকে প্রাপ্ত, এখানে সরকারের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বেলা দুইটার দিকে আইনজীবী সমিতি ভবনে নিজ কক্ষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। 
অপর এক প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, ‘সিমেন্স এফবিআইয়ের কাছে দোষ স্বীকার করেছে। আমরা সিঙ্গাপুরে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট পরীক্ষা করেছি। সিঙ্গাপুরের সেই ব্যাংকে কোকোর পাসপোর্টের একটা ফটোকপি দেওয়া হয়েছিল।’ কোকোর সাজা কার্যকর করতে হলে কী করতে হবে—এমন প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, ‘কোকো বর্তমানে যে দেশে রয়েছেন, সেই দেশের সঙ্গে প্রত্যাবর্তন চুক্তি থাকলে তা কার্যকর করতে পারে। এটা সরকারের ব্যাপার। আমি মন্তব্য করতে চাই না।’ 
দুদকের আইনজীবী মোশারফ হোসেন রায়ের পর আদালত প্রাঙ্গণে বলেন, দুদকের ২১ সাক্ষীর জবানবন্দি পর্যালোচনা করে আদালত রায় দিয়েছেন। 
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি খন্দকার মাহবুব হোসেন নিজ কার্যালয়ে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যখন কোকোর মামলার ত্বরিত নিষ্পত্তির কথা বলেছিলেন, তখনই আশঙ্কা হয়েছিল, ত্বরিত নিষ্পত্তি মানে ত্বরিত শাস্তি। আমাদের সেই আশঙ্কা সত্যি হয়েছে।’ 
মামলার ভবিষ্যৎ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, ‘নিম্ন আদালত যখন একটা রায় দিয়েছেন, তখন উচ্চ আদালতেই এর ফয়সালা হবে। এ মামলায় ত্রুটি আছে। তাই আশা করি, উচ্চ আদালতে ন্যায়বিচার পাবেন কোকো।’ তিনি বলেন, ‘যখন এই মামলা উচ্চ আদালতে আসবে, তখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকবে না। তখন দলীয়করণমুক্ত অবস্থায় উচ্চ আদালত ন্যায়বিচার করতে পারবেন বলে আমরা আশা করি।’ 
কোকোর আইনজীবী সানাউল্লাহ মিয়া, গোলাম মোস্তফা খান ও মাসুদ আহমেদ তালুকদার একে প্রহসনের রায় উল্লেখ করে রায়ের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। 
মামলার বিবরণ: মামলার বিবরণে বলা হয়েছে, কোকোর দেওয়া আয়কর বিবরণী ও দুদকে দেওয়া সম্পদ বিবরণীতে সিঙ্গাপুরে তাঁর হিসাবে অর্থ জমা বা উত্তোলনের কোনো উল্লেখ নেই। সিঙ্গাপুরে জ্যাজ ট্রেডিং অ্যান্ড কনসালটিং প্রাইভেট লিমিটেড এবং ফারহিল কনসালটিং প্রাইভেট লিমিটেড নামে কোকোর দুটি কোম্পানির ব্যাংক হিসাবে অর্থ জমা হওয়ার সময় তাঁর মা বেগম খালেদা জিয়া দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। যেসব সূত্র থেকে অর্থ জমা হয়েছে তাদের সঙ্গে কোকোর কোনো ব্যবসায়িক সম্পর্কও ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর ছেলে হিসেবে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে তিনি অবৈধ উপায়ে এ অর্থ আয় করেন। 
এজাহারে বলা হয়েছে, ইউওবি ব্যাংকের জ্যাজের হিসাবে ২০০৫ সালের ৬ মে এবং ৩১ মে নয় লাখ ২০ হাজার ৯৮৬ দশমিক ৫৭ এবং আট লাখ ৩০ হাজার ৬৫৬ দশমিক ৭৭ সিঙ্গাপুর ডলার জমা হয়। চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি থেকে এই অর্থ পাঠানো হয়। একই বছরের ১ আগস্ট নিউইয়র্ক থেকে চায়না হারবার ইঞ্জিনিয়ারিং থেকে পাঠানো হয় আরও আট লাখ ২৯ হাজার ৭০৫ দশমিক ৮১ সিঙ্গাপুর ডলার। এর বাইরে জ্যাজের হিসাবে ২০০৫ সালের ৬ অক্টোবর আবারও এক লাখ ৮০ হাজার মার্কিন ডলার (তিন লাখ তিন হাজার ২৫৪ সিঙ্গাপুর ডলার) জমা হয়। ওই অর্থ জুলফিকার আলী নামের এক ব্যক্তি সিঙ্গাপুরের আরেকটি ব্যাংকের হিসাব থেকে হস্তান্তর করেন। জুলফিকার আলী টেলিযোগাযোগ যন্ত্রপাতি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান সিমেন্সের পরামর্শক। 
সিমেন্স বাংলাদেশকে তিনি রাষ্ট্রীয় মোবাইল ফোন প্রতিষ্ঠান টেলিটকের কাজ পাইয়ে দিতে পরামর্শক হিসেবে কাজ করেছিলেন। টেলিটকের কাজ পেতে সিমেন্স কোকোসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্তরের সরকারি কর্মকর্তাদের যে ঘুষ দিয়েছিল, তা প্রমাণিত হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের আদালত কোম্পানিটির বিরুদ্ধে জরিমানার রায় দেন। জরিমানার অর্থ পরিশোধও করেছে সিমেন্স। 
মামলার এজাহারে আরও বলা হয়েছে, জ্যাজের হিসাব থেকে বিভিন্ন দফায় কোকোর সইয়ে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। হিসাবে ২৮ লাখ ৮৫ হাজার ৭৫৪ দশমিক ১৫ সিঙ্গাপুর ডলার জমার বিপরীতে বিভিন্ন চেকের মাধ্যমে আট লাখ ৭২ হাজার ৮৬ দশমিক ৭৭ সিঙ্গাপুর ডলার উত্তোলন করেন কোকো। ২০০৫ সালের ২৯ জুলাই আট লাখ ৩০ হাজার ৬৫৬ দশমিক ৭৭ সিঙ্গাপুর ডলার ইসমাইল হোসেনকে দেওয়া হয়। 
জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি, চাঁদাবাজি ও আয়কর ফাঁকির অভিযোগে ২২টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে গ্যাটকো, নাইকো, বড়পুকুরিয়া কয়লাখনি ও জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের অর্থ আত্মসাৎ-সংক্রান্ত দুর্নীতির মামলা রয়েছে। এ ছাড়া তাঁর বড় ছেলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, অর্থ পাচারসহ বিভিন্ন অভিযোগে ১২টি মামলা রয়েছে। তারেকের বিরুদ্ধে করা অর্থ পাচারের মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানির জন্য ৭ জুলাই দিন ধার্য রয়েছে। বাকি মামলাগুলোর কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More