Total Pageviews

Feedjit Live

Wednesday, July 13, 2011

এ সংবিধান ছুড়ে ফেলে দেওয়া হবে: খালেদা

  • গণ-অনশন কর্মসূচিতে খালেদা জিয়াসহ বিএনপির নেতারা
    গণ-অনশন কর্মসূচিতে খালেদা জিয়াসহ বিএনপির নেতারা
    ছবি: প্রথম আলো
1 2
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, ভবিষ্যতে জনগণের সরকার ক্ষমতায় এলে এ সংবিধান ছুড়ে ফেলে দেওয়া হবে। কেননা, এটা কোনো সংবিধান নয়, এটা আওয়ামী লীগের দলীয় ইশতেহার।
রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন প্রাঙ্গণে গতকাল বুধবার অনুষ্ঠিত বিএনপির দিনব্যাপী গণ-অনশন কর্মসূচিতে খালেদা জিয়া এ কথা বলেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন। পুলিশ, প্রশাসন ও গোয়েন্দাদের বাড়াবাড়ি করলে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন।
খালেদা জিয়া বিকেল সোয়া পাঁচটা থেকে সন্ধ্যা সোয়া ছয়টা পর্যন্ত বক্তব্য দেন। তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকার-ব্যবস্থা বহাল রেখে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। খালেদা জিয়া বক্তব্য শেষ করার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক তাসমেরি এস ইসলাম, কণ্ঠশিল্পী বেবী নাজনীন তাঁকে পানি খাইয়ে অনশন ভঙ্গ করান।
বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, এই সরকারের বিরুদ্ধে বিএনপির আন্দোলন চলছে, চলবে। ঈদের পর সরকারের জনবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আন্দোলন কর্মসূচি দেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘সরকারের বিরুদ্ধে যত আন্দোলনের প্রয়োজন, তত আন্দোলন করা হবে। প্রয়োজনে রক্ত দিয়ে হলেও বিজয় অর্জন করতে হবে। এ জন্য আরেকটা সংগ্রাম করব। আরেকবার গর্জে উঠব।’
ঈদের পরের কর্মসূচি প্রসঙ্গে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আর জ্বালাও-পোড়াও, ভাঙচুর-ধ্বংসের রাজনীতি নয়, হরতাল নয়, মানুষকে নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের মতো শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে এই ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন ঘটানো হবে।’
বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুকের ওপর পুলিশের বর্বর হামলা, হরতালের দিন বিএনপির নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাদ দিয়ে পাস করা সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের দাবিতে বিএনপি এই গণ-অনশন কর্মসূচি পালন করে। কর্মসূচির মঞ্চ ছিল ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের প্রাঙ্গণে। তবে নেতা-কর্মীরা সামনের মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগমুখী সড়কের এক পাশে অবস্থান নিলে ওই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে পুরো শহরে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
বিএনপির এই কর্মসূচিতে চারদলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামী, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি), ইসলামী ঐক্যজোট, খেলাফত মজলিস ছাড়াও বিএনপির সাবেক স্থায়ী কমিটির সদস্য অলি আহমদের নেতৃত্বাধীন লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এলডিপি), বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় গঠিত বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি, ইসলামিক পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক পার্টি (এনডিপি), বাংলাদেশ লেবার পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাপ, ভাসানী ন্যাপ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ও জাতীয় পার্টির (মতিন) নেতারা গণ-অনশনে উপস্থিত হয়ে সংহতি প্রকাশ করেন।
এ ছাড়া বিএনপি সরকারের সাবেক রাষ্ট্রপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর দল বিকল্পধারা বাংলাদেশ এতে সংহতি প্রকাশ করে। তবে দলটির কেউ অনশনস্থলে সরাসরি উপস্থিত হননি।
বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নন, এমন ব্যক্তিদের মধ্যে কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এমাজউদ্দীন আহমদ এবং এস এম এ ফায়েজ, সাবেক সহ-উপাচার্য আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি কামাল উদ্দিন সবুজ, সাংবাদিক শওকত মাহমুদ প্রমুখ। কর্মসূচিতে বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা বক্তব্য দেন।
গণ-অনশন কর্মসূচিতে যোগ দিতে সকাল থেকে বিএনপির ঢাকা মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও থানার নেতা-কর্মীরা মিছিল নিয়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে এসে হাজির হন। সকাল ১০টা থেকে কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা থাকলেও নয়টার মধ্যে অনুষ্ঠানস্থল, সামনের সড়ক ও আশপাশের এলাকা নেতা-কর্মীদের ভিড়ে পূর্ণ হয়ে যায়। তাঁরা সরকারবিরোধী ব্যানার, প্ল্যাকার্ড বহন করেন।
পূর্বনির্ধারিত সময় অনুযায়ী সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত এ কর্মসূচি পালনের কথা ছিল, কিন্তু খালেদা জিয়া দুপুর ১২টায় কর্মসূচিস্থলে হাজির হন। এরপর দলীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে অনশন শুরু হয়। প্রায় ছয় ঘণ্টাব্যাপী কর্মসূচিতে বিএনপির নেতারা ছাড়াও সংহতি প্রকাশ করতে আসা বিভিন্ন দলের নেতারা বক্তব্য দেন।
কর্মসূচিতে চারদলীয় জোটের শরিক ও সমমনা দলগুলো ভবিষ্যতে সরকারবিরোধী কর্মসূচিতে বিএনপির সঙ্গে থেকে আন্দোলন করার ঘোষণা দেয়। তবে বিএনপির নেতা-কর্মীদের আগ্রহ ছিল অলি আহমদ ও বি. চৌধুরীকে নিয়ে। অলি আহমদ না এলেও তাঁর দলের পক্ষ থেকে সেখানে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সাবেক মন্ত্রী বর্তমানে এলডিপির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য রেদোয়ান আহমেদ। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে তাঁদের দল বিএনপির সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করবে।
গণ-অনশনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, এম কে আনোয়ার, রফিকুল ইসলাম মিয়া, ঢাকা সিটি করপোরেশনের মেয়র সাদেক হোসেন খোকা প্রমুখ বক্তব্য দেন।
অনশন উপলক্ষে কর্মসূচিস্থলের আশপাশে নিরাপত্তাব্যবস্থা জোরদার করা হয়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্য অবস্থান নেন। কর্মসূচি চলাকালে সেখানে প্রিজন ভ্যান, পিকআপ ভ্যান ও জলকামানবাহী গাড়ি এবং দাঙ্গা দমনকারী পুলিশের গাড়ি অবস্থান করতে দেখা গেছে।
খালেদা জিয়ার বক্তব্য: গণ-অনশনে খালেদা জিয়া বলেন, ‘চোরের দল ও চাটার দল দেশ পরিচালনা করছে। এদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে হবে। এদের কারণে দেশের মানুষকে না খেয়ে থাকতে হচ্ছে। এরা দেশের সমস্যা সমাধান না করে কেবল ভারতকে খুশি করার কাজে ব্যস্ত।’
বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ‘আমরা প্রতিবেশীর সঙ্গে সমমর্যাদার সম্পর্কে বিশ্বাসী। আমরা দুটো জিনিস দিলে তাদেরও দুটো জিনিস দিতে হবে। কিন্তু ভারত কেবল নিচ্ছে, বিনিময়ে কিছুই দিচ্ছে না।’
বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, বিএনপি শান্তিতে বিশ্বাস করে; এ জন্য আলোচনা চায়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বহাল রেখে সরকারকে প্রধান উপদেষ্টা নিয়োগ এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন বিষয়ে বিএনপির সঙ্গে আলোচনার আহ্বান জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া এ দেশে কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না। আর নির্বাচন হলেও বিএনপি তাতে অংশ নেবে না। বিএনপি ছাড়া কোনো নির্বাচন হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের কথা উল্লেখ করে বিরোধীদলীয় নেতা বলেন, ‘আপনারা এখন অন্যের বিরুদ্ধে মিথ্যা দুর্নীতির মামলার বিচার করছেন, অথচ জয়ের বিরুদ্ধে রয়েছে দুর্নীতির অভিযোগ। ভবিষ্যতে তাই নিজেদের দুর্নীতির বিচারের মুখোমুখি হওয়ার জন্য তৈরি হোন।’ তবে জয় কী দুর্নীতি করেছেন, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেননি খালেদা জিয়া।
খালেদা জিয়া পুলিশ, প্রশাসন ও গোয়েন্দাদের বাড়াবাড়ি না করার পরামর্শ দিয়ে বলেন, ‘অন্য সরকারের সময় চাকরি না করলেও পার পাবেন না। বিচারের সম্মুখীন করা হবে।’
খালেদা জিয়া বলেন, দেশ এখন একটি জেলার মধ্যে আবদ্ধ হয়ে আছে, সেটা হলো গোপালগঞ্জ। তিনি ভিকারুননিসা নূন স্কুলের সেই শিক্ষক ও অধ্যক্ষের বিচার দাবি করেন। স্কুলের শিক্ষার্থীদের অভিভাবকের এই সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আপনাদের পাশে আছি।’ তিনি বলেন, জয়নুল আবদিনকে মেরে পুলিশ গণতন্ত্রকে মেরেছে, বুটের নিচে পিষ্ট করেছে।
খালেদা জিয়া গণ-অনশনে সংহতি প্রকাশ করতে আসা বিভিন্ন দল ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের ধন্যবাদ জানান। ভবিষ্যতে সব কর্মসূচিতে তাঁদের অংশগ্রহণ করারও আহ্বান জানান।
খালেদা জিয়ার বক্তব্যের আগে মিরসরাইয়ে দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্রদের রুহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করা হয়।

0 comments:

Post a Comment

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More