Total Pageviews

Feedjit Live

Monday, July 4, 2011

ছয় দিনের হরতাল ও ছুটির ফাঁদে দেশ

 তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের প্রতিবাদে সারা দেশে ৬ ও ৭ জুলাই (বুধ ও বৃহস্পতিবার) ৪৮ ঘণ্টার হরতাল ডেকেছে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। দল দুটির ঘোষণা অনুযায়ী, বুধবার সকাল ছয়টা থেকে শুরু হয়ে শুক্রবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত এই হরতাল কর্মসূচি চলবে।
বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের অন্যান্য শরিক বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) এবং খেলাফত মজলিসও একই কর্মসূচি দিয়েছে। এ কারণে বুধবার থেকে আগামী সোমবার পর্যন্ত টানা ছয় দিন হরতাল আর ছুটির ফাঁদে পড়ছে দেশ। কারণ ৪৮ ঘণ্টার হরতালের পর শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। আগামী রবি ও সোমবার টানা ৩০ ঘণ্টা দেশব্যাপী হরতালের কর্মসূচি এর আগেই ঘোষণা করেছে ধর্মভিত্তিক ও সমমনা ১২টি সংগঠন।
চারদলীয় জোটের শরিক জামায়াতে ইসলামী গতকাল রোববার দুপুর সোয়া ১২টায় সংবাদ সম্মেলনে এই হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করে। এর এক ঘণ্টা পর বিএনপি সংবাদ সম্মেলন করে একই কর্মসূচি দেয়।
হরতাল ডাকার কারণ হিসেবে বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিলুপ্তি, সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আইনশৃঙ্খলার অবনতি, গ্যাস-বিদ্যুৎ ও জ্বালানি তেলের সংকটের কথা উল্লেখ করেছে। অন্যদিকে জামায়াত বলেছে, সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস তুলে দেওয়ার প্রতিবাদে এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা পুনর্বহাল; দলের আমির মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মাদ মুজাহিদ, নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ গ্রেপ্তার নেতা-কর্মীদের মুক্তির দাবিতে তারা হরতাল ডেকেছে।
বিএনপির সংবাদ সম্মেলন: নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপি আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার সব ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে। এই সরকারকে অশনিসংকেত পর্যন্ত দিচ্ছেন তাদের বিদেশি বন্ধুরা। তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল করে সরকার ক্ষমতা চিরস্থায়ী করার দিবাস্বপ্ন দেখছে। তিনি অবিলম্বে পঞ্চদশ সংশোধনী বাতিলের দাবি জানান।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার ক্ষমতার মজা পেয়ে গেছে। তাই তারা জনগণকে দেওয়া অঙ্গীকার ভুলে গেছে। ক্ষমতা নিরঙ্কুশ করার ক্ষেত্রে তারা বিএনপি ও জাতীয়তাবাদী শক্তিকে শত্রু হিসেবে দেখছে। বিরোধী দলগুলোর প্রতি যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, এককভাবে সংবিধান সংশোধনের কারণে দেশে সংঘাত ও অস্থির পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। তিনি রাজপথে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে সর্বশক্তি দিয়ে ক্ষমতাসীন জোটের অপতৎপরতা প্রতিহত করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।
সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এম কে আনোয়ার ও নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
জামায়াতের সংবাদ সম্মেলন: বড় মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে হরতালের কর্মসূচি ঘোষণা করেন দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলাম। তিনি সরকার পতনের আন্দোলন ত্বরান্বিত করতে দেশবাসীকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।
এ টি এম আজহার বলেন, ‘সংবিধান থেকে আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস উঠে যাবে, আর রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে নাস্তিক্যবাদী মতবাদ “সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা” চালু হবে—বাংলাদেশের জনগণ তা কখনো মেনে নেবে না।’ তিনি অভিযোগ করেন, আড়াই বছরের শাসনামলে জাতীয় নারীনীতি, শিক্ষানীতি, মাদ্রাসাশিক্ষা-ব্যবস্থা ও পর্দার বিষয়ে সরকার ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। বিরোধী দলের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করছে।
সংবাদ সম্মেলনে জামায়াতের কেন্দ্রীয় সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুর রহমান, ঢাকা মহানগর আমির রফিকুল ইসলাম খানসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
একই কর্মসূচি বিজেপি ও খেলাফত মজলিসেরও: বিজেপির চেয়ারম্যান সাংসদ আন্দালিব রহমান বিকেলে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের দলও ৬ ও ৭ জুলাই একই দাবিতে হরতাল ডেকেছে। যুগপৎভাবে তাঁরা এই কর্মসূচি পালন করবেন। আজ সোমবার দলীয় ফোরামে আলোচনা করে কর্মসূচি কীভাবে পালন করা হবে, সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের দুপুরে বিজয়নগরে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে একই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। খেলাফত মজলিস হরতালে মাঠে থাকবে কি না, জানতে চাইলে দলের আমির মাওলানা মুহাম্মদ ইসহাক বলেন, ‘হরতালে আমাদের মাঠে দেখবেন। আর মাঠে না দেখলে জেলখানায় হলেও দেখবেন, ইনশাল্লাহ।’
এদিকে ইসলামী ঐক্যজোটের প্রচার সম্পাদক আহলুল্লাহ ওয়াছেল বিকেলে টেলিফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরাও বুধ ও বৃহস্পতিবার হরতাল ডেকেছেন।

0 comments:

Post a Comment

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More