Total Pageviews

Feedjit Live

This is default featured post 1 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured post 2 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured post 3 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured post 4 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

This is default featured post 5 title

Go to Blogger edit html and find these sentences.Now replace these sentences with your own descriptions.This theme is Bloggerized by Lasantha Bandara - Premiumbloggertemplates.com.

Monday, January 16, 2012

১০ দিন আগেই ভারতে হামলার ইঙ্গিত ‘মদ্যপ’ ইয়াহিয়ার !

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শুরুর প্রায় ১০ দিন আগেই ভারতে হামলা চালানোর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন পাকিস্তানের তত্কালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। মদ্যপ অবস্থায় এক মার্কিন সাংবাদিকে তিনি এ কথা বলেন। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে বলে বার্তা সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে।
ওই খবরে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ শুরুর প্রায় ১০ দিন আগে মার্কিন সাংবাদিক বব শাপলিকে মদ্যপ অবস্থায় পাকিস্তানের তত্কালীন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ভারতে হামলা চালানোর বিষয়ে তাঁর মনোভাবের কথা জানিয়ে একটি ইঙ্গিত দেন।
বৈঠকের সময় ইয়াহিয়া খান ওই মার্কিন সাংবাদিককে বলেছিলেন, তিনি ১০ দিনের মধ্যে ভারতে হামলা চালাবেন।
ইয়াহিয়া খানের এ ইঙ্গিত ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর সত্যে পরিণত হয়। ওই দিন বিকেলে ভারতের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে সেনা লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালায় পাকিস্তান।
এ ঘটনার পরপরই ভারতের তত্কালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দ্রিরা গান্ধী পাকিস্তানের এই বিমান হামলাকে যুদ্ধের ঘোষণা বলে উল্লেখ করেন। একই দিন মধ্যরাতে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে স্থল, নৌ ও বিমানপথে যুদ্ধ ঘোষণা করে ভারত।
পরের দিন দিল্লিতে নিযুক্ত মার্কিন দূত কেনেথ বার্নাড কেটিং ভারতের পররাষ্ট্রসচিব টি এন কাউলকে ইয়াহিয়ার ওই মন্তব্য সম্পর্কে অবহিত করেন। তিনি বলেন, মদ্যপ অবস্থায় ইয়াহিয়া খান মার্কিন সাংবাদিক বব শাপলিকে বলেছিলেন, পাকিস্তান ১০ দিনের মধ্যে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে যাবে। প্রথম আলো

তিন বোনকে সেনাক্যাম্পে দেন সাঈদী

জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আজ সোমবার জবানবন্দি দিয়েছেন রাষ্ট্রপক্ষের ১৩তম সাক্ষী। জবানবন্দিতে সাক্ষী তাঁর তিন বোনকে সাঈদীসহ রাজাকারদের পাকিস্তানি সেনাক্যাম্পে দেওয়ার এবং তাঁদের পুরো পরিবারকে জোর করে ধর্মান্তরিত করার বর্ণনা দেন।
বিচারপতি নিজামুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১৩তম সাক্ষী এই জবানবন্দি দেন। জবানবন্দিতে তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে একদিন সাঈদী কয়েকজন রাজাকারকে নিয়ে পিরোজপুরে তাঁদের (সাক্ষীর) বাড়িতে যান। রাজাকাররা তাঁদের বাড়ি লুট করে এবং তাঁর তিন বোনকে ধরে নিয়ে পিরোজপুরে পাকিস্তানি সেনাদের ক্যাম্পে দিয়ে আসে। তিন দিন পর তিন বোনকে বাড়িতে ফেরত পাঠানো হয়। একাত্তরে তাঁর বয়স ছিল ২৭ বছর।
তিন বোনের ওপর পাকিস্তানি সেনাদের নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে সাক্ষী কান্নায় ভেঙে পড়েন। জবানবন্দিতে তিনি আরও বলেন, ওই ঘটনার কিছুদিন পর সাঈদী আবার কয়েকজন রাজাকার নিয়ে তাঁদের বাড়িতে যান। রাজাকাররা তাঁর মা-বাবা, ভাইবোনসহ পরিবারের সব সদস্যকে জোর করে ধর্মান্তরিত করে। তাঁর নাম দেওয়া হয় আবদুল গনি। তাঁদের মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়তে বাধ্য করা হয়। এর কিছুদিন পর তিনি ছাড়া পরিবারের অন্য সবাই ভারতে চলে যান। স্বাধীনতার পর তিনি নিজ (হিন্দু) ধর্মে ফিরে আসেন।
জবানবন্দির এ পর্যায়ে সাক্ষী আবেগে চেয়ার ছেড়ে দাঁড়িয়ে যান এবং কাঁদতে থাকেন। ট্রাইব্যুনাল তাঁকে শান্ত হয়ে বসতে বলেন।
জবানবন্দিতে সাক্ষী বলেন, তাঁকে ছাড়া আরও এক-দেড় শ হিন্দুসম্প্রদায়ের লোককে রাজাকাররা ধর্মান্তরিত হতে বাধ্য করে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন নারায়ণ সাহা, নিখিল পাল, গৌরাঙ্গ পাল, সুনীল পাল। তাঁদের অনেকে মারা গেছেন। অনেকে ভারতে চলে গেছেন।
জবানবন্দি শেষে সাক্ষীকে জেরা শুরু করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী মিজানুল ইসলাম। তিনি এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের কয়েকজন সাক্ষীর নাম উল্লেখ করে সাক্ষীর কাছে জানতে চান, তাঁদের তিনি চেনেন কি না? সাক্ষী তাঁদের চেনেন বলে জানান। মিজানুল জানতে চান, সাক্ষীর তিন বোনকে নির্যাতন ও ধর্মান্তরিত করার ঘটনা ওই সাক্ষীরা জানেন কি না? জবাবে সাক্ষী বলেন, তাঁরা কী জানেন না-জানেন, তা তিনি বলতে পারবেন না।
বেলা একটায় এক ঘণ্টা বিরতির পর আবার জেরা শুরু হলে মিজানুল জানতে চান, সাক্ষী মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কাছে লুট হওয়া জিনিসপত্রের কোনো তালিকা দিয়েছেন কি না? জবাবে সাক্ষী বলেন, ‘সবকিছু এমনকি ঘর ঝাড় দেওয়ার পিছা (ঝাড়ু) পর্যন্ত লুট হয়েছে।’ স্বাধীনতার পর নিজ ধর্মে ফিরতে কোনো প্রায়শ্চিত্ত করেছেন কি না—এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জীবনের মায়ায় ধর্মান্তরিত হয়েছি, এর জন্য প্রায়শ্চিত্ত দরকার নেই।’
বিকেল চারটার দিকে জেরা শেষ হলে ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম কাল মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টা পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।

(প্রথম আলোর নীতি অনুসারে সাক্ষী ও তাঁর বোনদের নাম প্রকাশ করা হলো না।) prothom-alo

Sunday, January 15, 2012

’৭১ থেকে শিক্ষা নেয়নি পাকিস্তান: ইমরান খান

পাকিস্তানের ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ হওয়া ইমরান খান বলেছেন, ১৯৭১ সালের ঘটনা থেকে পাকিস্তান কিছুই শিক্ষা নেয়নি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় অপরাধ সংঘটনকারীরা শাস্তি পেলে পাকিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি অন্য রকম হতো।
ব্রিটিশ সাময়িকী ‘দ্য কারাভান’-এ চলতি বছরের জানুয়ারি সংখ্যায় প্রকাশিত একটি সাক্ষাত্কারে ইমরান খান এসব কথা বলেন।
ইমরান বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধের ঘটনায় আইনের শাসনবিষয়ক একটি শিক্ষা রয়েছে। পাকিস্তানের তত্কালীন শাসক ও যুদ্ধাপরাধীদের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তারা শাস্তি পেলে আমরা (পাকিস্তান) আবারও একই পথে হাঁটতাম না।’
সাক্ষাত্কারে ইমরান বলেন, ১৯৭১ সালে তিনি যখন ক্রিকেট ম্যাচ খেলতে ঢাকায় ছিলেন, বাঙালিদের হত্যার নির্দেশনা দেওয়ার বিষয়টি তিনি শুনতে পেয়েছিলেন। তিনি দাবি করেন, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশে অভিযান শুরুর আগে তিনি শেষ বিমানে করে ঢাকা ছেড়েছিলেন।
১৯৭১ সালে বাঙালি হত্যায় পাকিস্তানি সামরিক শাসকদের নির্দেশ প্রদান প্রসঙ্গে ইমরান খান বলেন, ‘আমি নিজ কানে শুনেছি, তারা বলেছে, এই বামন ও কালোদের হত্যা করো। তাদের একটা শিক্ষা দাও।’
তবে কে বা কারা কাকে এই নির্দেশ দিয়েছিল, সে সম্পর্কে ইমরান কিছুই বলেননি।
পাকিস্তান তেহরিক-ই ইনসাফ দলের নেতা ইমরান খান জানান, তিনি এখন পাকিস্তানের ভেতরেও একই ধরনের নির্দেশনা শুনছেন। তিনি বলেন, ‘এটা ঠিক একই ধরনের ভাষা। একাত্তরে যা শুনেছিলাম, তা এবারও শুনছি।’ তিনি আরও বলেন, এখন পশতুনরা এই অবহেলার শিকার।
পাকিস্তানে পশতুনদের ওপর চলমান নির্যাতন সম্পর্কে ইমরান বলেন, ‘পিণ্ডি, লাহোর, করাচিতে তাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে এবং জেলে পাঠানো হচ্ছে। কারণ তারা পশতুন। এটা এক দুঃখজনক ধারাবাহিকতা।’
ইমরান জানান, তিনি বিশ্বাস করেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি অপরাধীরা শাস্তি পেলে পশতুনরা আজ হয়রানির শিকার হতো না।
ওই ম্যাগাজিনে বলা হয়, ১৯৭১ সালে ঢাকা সফরের আগ পর্যন্ত ইমরান খান পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় প্রচারণায় বিশ্বাস করতেন। ওই প্রচারণায় মুক্তিযোদ্ধাদের ভারত-সমর্থিত সন্ত্রাসী বলে অভিহিত করা হতো।
ইমরান বলেন, ‘ওই সময় প্রথমবার আমি বুঝতে পারি, সেখানে একটা বিচ্ছিন্নতার আন্দোলন চলছে।’ তিনি বলেন, ‘পূর্ব পাকিস্তানে কী হচ্ছে, তার কিছুই আমরা জানতাম না।’ prothom-alo

Saturday, January 14, 2012

বিকৃত গণতন্ত্রের বিড়ম্বনা

সহজভাবে বলতে গেলে গণতন্ত্র এমন এক শাসনপদ্ধতি, যার মাধ্যমে জনগণ নিজেরাই নিজেদের দেশ শাসন করতে পারে। এই শাসনব্যবস্থার মাধ্যমে সমাজে সবার অধিকার ও সুযোগের সমতা নিশ্চিত করা যায়। এ ব্যবস্থার মাধ্যমে সুশাসন ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা সহজতর হয়। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনো একক ব্যক্তির নিজেকে রাজা বা দেশের মালিক ভাবা ও সেই হিসাবে খেয়ালখুশি মোতাবেক দেশ পরিচালনার কোনো সুযোগ নেই। মালিক ও শাসক জনগণ; ফলে এখানে কেউ রাজা ও কেউ প্রজা এ অসমতা গ্রহণযোগ্য নয়। উত্তরাধিকার সূত্রে ক্ষমতা হস্তান্তরের কোনো সুযোগও নেই।
‘আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে’—কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এ গানে রয়েছে গণতন্ত্রের মূল বিষয়বস্তু। তবে প্রতিটি নাগরিক দেশ শাসন করবে, এটা বাস্তবসম্মত নয়। তাই জনগণের পক্ষে তাদের প্রতিনিধি মনোনীত এবং নির্বাচিত করার ব্যবস্থা চালু করা হয়। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা জনগণের প্রতিনিধি ও সেবক হিসেবে দেশ পরিচালনা করবে যতদূর সম্ভব নাগরিকের মতামত ও ইচ্ছানুসারে। এক কথায়, গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য হলো শাসনকার্যে জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।
১৯৯০ সালে আন্দোলনরত দেশের সব রাজনৈতিক দল ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার মাধ্যমে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এরশাদের জাতীয় পার্টি সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে। এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক দলগুলোর অভিযোগ ছিল এটি অগণতান্ত্রিক, স্বৈরাচারী ও দুর্নীতিবাজ সরকার এবং নির্বাচনে জালিয়াতির আশ্রয় নেয়। তাই অপরাপর রাজনৈতিক দল দেশকে স্বৈরাচার, দুর্নীতি এবং নির্বাচন জালিয়াতি থেকে মুক্ত করার জন্য অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। একই সঙ্গে তারা তিনজোটের রূপরেখা গ্রহণের মাধ্যমে দেশের রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি চালু করতে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে। সে সময় সংবিধান সংশোধন করে রাষ্ট্রপতিশাসিত সরকারব্যবস্থার পরিবর্তে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার পুনঃপ্রবর্তন করা হয়।
১৯৯০-এর পর থেকে অদ্যাবধি দুটি প্রধান রাজনৈতিক দল কখনো এককভাবে, কখনো অন্য ছোট দলগুলোর মধ্যে জোটবদ্ধভাবে পালাক্রমে একজনের পর আর একজন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে ও পরস্পর স্থান পরিবর্তন করে বিরোধী দল হিসেবে কাজ করে আসছে। দেখা যায়, ওই সময়ের পর থেকে সরকারগুলো তাদের পছন্দের ব্যক্তিদের নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দেয়। যখন যে বিরোধী দলে থাকে তখন এ বিষয়ে তাদের অভিযোগ ক্ষমতাসীন দলগুলোর প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করানোর অভিপ্রায় নিয়েই নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়ে থাকে। বিগত ২১ বছরে কোনো সরকারের সময়ই সব প্রতিদ্বন্দ্বী দলের মতৈক্যের ভিত্তিতে নির্বাচন কমিশন গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়নি। এ সময়কালে কোনো জাতীয় নির্বাচন প্রশ্নাতীতভাবে সুষ্ঠু বলে গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেনি।
অনেকেই বিশ্বাস করেন যে পেশিশক্তির দৌরাত্ম্য, অত্যধিক অর্থের ব্যবহার এবং ভয়ভীতি প্রদর্শনের সংস্কৃতির কারণে দেশের নির্বাচনগুলোতে প্রায় সময়ই জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটে না।
অনেকেই বিশ্বাস করেন যে এ অবস্থার কারণে দেশপ্রেমিক এবং যোগ্য ব্যক্তিরা যাঁরা সরকার ও রাজনীতি ভালোভাবে পরিচালনা করতে পারতেন তাঁরা নির্বাচনে জয়ী হতে পারেন না। অপরদিকে, যারা ভোটযুদ্ধে জয়ী হয়ে আসছেন তাঁরা সরকার বা রাজনীতি সঠিকভাবে পরিচালনা করতে সমর্থ নন। এমনকি তাঁদের অনেকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা, বেআইনি কার্যকলাপের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ দেখা যায়। স্বভাবতই ওই সব রাজনীতিবিদের দেশ পরিচালনার যোগ্যতা ও দেশপ্রেম প্রশ্নবিদ্ধ।
গণতন্ত্র চর্চা করতে হলে সরকারকে জনগণের মতামত নিয়ে তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী সরকার পরিচালনা করতে হবে। সে ক্ষেত্রে জনগণের মতামত জানার প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা থাকতে হবে। তা ছাড়া মতামত কার্যকর করার পদ্ধতি এবং সদিচ্ছা আবশ্যক। এগুলো নিশ্চিত করার জন্য প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতা থাকা বাঞ্ছনীয়।
সংসদীয় পদ্ধতির সরকারে ‘সংসদ’ এসব কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান। সংসদে তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা উপস্থাপিত করা হবে। সরকার বা নির্বাহী বিভাগ সেগুলোকে আমলে নেবে ও বাস্তবায়নে অগ্রসর হবে, এটাই কাম্য। সংসদীয় স্থায়ী কমিটিগুলো তত্ত্বাবধানকারী হিসেবে সর্বদা বিষয়গুলো দেখাশোনা করবে। এভাবেই ‘সংসদ’-এর দায়িত্ব পালনের কথা।
সংসদীয় গণতন্ত্রের পুনঃপ্রবর্তনের পর এ পর্যন্ত সব সরকারের আমলেই বিরোধী দলগুলো অধিকাংশ সময়ই সংসদ বর্জন করে এসেছে। তাদের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সংসদ বর্জনের কারণে দেশের প্রায় অর্ধেক জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা বা তাদের কথাগুলো সংসদে আলোচিত হচ্ছে না। কাজেই জনগণের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ প্রাতিষ্ঠানিকভাবে দেশের শাসনব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারছে না।
সংসদ বর্জনের কারণ হিসেবে বিরোধী দল বলে আসছে যে, দলীয় দৃষ্টিভঙ্গির স্পিকাররা সংসদে তাদের কথা বলতে দেন না। বিরোধী দলগুলোর আরেকটি অভিযোগ হলো যে অনেক ক্ষেত্রে তাদের কথা বলতে দেওয়া হলেও তাদের মতামতকে কোনো সময় গুরুত্ব দেওয়া হয় না। এ অবস্থায় তাদের সংসদে যোগদান দেশ পরিচালনায় খুব গুরুত্ব বহন করে না। তাঁরা বলে থাকেন সরকার স্বৈরতান্ত্রিকভাবে একাই দেশ পরিচালনা করে যাচ্ছে। যে দল ক্ষমতায় থেকে সংসদকে কার্যকর করার জন্য বিরোধী দলকে সংসদে যোগদান করার আহ্বান জানিয়েছিল, সে দলই বিরোধী দলে গিয়ে সংসদ বর্জনের পক্ষে সাফাই গেয়ে যায়। যেহেতু দুই প্রতিপক্ষই সংসদ বর্জনের পক্ষে যুক্তি দিচ্ছে, ফলে সে যুক্তি সঠিক ধরে নেওয়া যায়।
আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ। এই বিতর্কিত অনুচ্ছেদের কারণে সংসদ সদস্যরা সংসদে তাঁদের দলের বিরুদ্ধে ভোট দিতে পারেন না। দলীয় সিদ্ধান্ত ভঙ্গ করে কেউ সংসদে ভোট দিলে সংশ্লিষ্ট সংসদ সদস্যের সদস্যপদ বাতিল হয়। প্রধানমন্ত্রী একই সঙ্গে দলীয় প্রধান এবং ক্ষমতাসীন দলের সংসদীয় দলের নেতা। তাই সংসদীয় পদ্ধতির সরকার পুনঃপ্রবর্তনের পর থেকে প্রধানমন্ত্রীরা তাঁদের দলের সব সংসদ সদস্যের ওপর নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সমর্থ হয়েছেন। তাঁর আদেশ অমান্য করলে সংসদ সদস্যরা সংসদ থেকে বহিষ্কৃত হন। সংসদের সব সিদ্ধান্তই সংখ্যাগরিষ্ঠতার ভিত্তিতে নেওয়া হয়। যেহেতু ক্ষমতাসীন দলের সর্বোচ্চ সংখ্যক সংসদ সদস্য থাকেন, সেহেতু প্রধানমন্ত্রী বা সংসদীয় দলের নেতা যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন সেটাই সংখ্যাধিক্যের ভোটে সংসদে অনুমোদিত হয়। আর এ কারণেই উল্লিখিত সংশোধনী পরবর্তী যেকোনো সরকারের প্রধানমন্ত্রী মোটামুটি তাঁর ইচ্ছা-অনিচ্ছা বাস্তবায়নে সংসদের নিশ্চিত সমর্থন লাভ করেন। ফলে বলা যায়, সংসদ অকার্যকর হওয়ার একমাত্র কারণ বিরোধী দলের সংসদ বর্জন নয়। সংসদ সচল থাকলেও তা স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থার সহায়ক হিসেবে কাজ করে।
জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য গৃহীত সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করে নির্বাহী বিভাগ। ‘জনগণ’ বলতে এখানে দলমত নির্বিশেষে সব নাগরিককে বোঝায়, কোনো নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে বোঝায় না। কিন্তু সংসদীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তনের পর থেকে আজ পর্যন্ত সব সরকারের আমলেই প্রায় সব উন্নয়ন প্রকল্প বা জনস্বার্থবিষয়ক কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে দলীয় নেতা-কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার জন্য। প্রশাসনে নিয়োগ, পদোন্নতি, ব্যবসা, ভূমি এবং সরকারি সম্পত্তি ইজারা প্রদান, সামাজিক নিরাপত্তামূলক সুযোগ-সুবিধা সবই প্রধানত দলীয় লোকদের দেওয়া হয়। আর এ জন্য টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি ইত্যাদি করা হয় বলে অভিযোগ আছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিরোধী দল বা কোনো সাধারণ নাগরিক এ ধরনের কোনো রাষ্ট্রীয় সুবিধা থেকে বঞ্চিত হন।
১৯৯১ সালের পর থেকে যাঁরা বিরোধী দলে ছিলেন তাঁরা অভিযোগ করে আসছেন সরকার তাঁদের পছন্দের বা দলীয় লোকদের বিচারক হিসেবে নিয়োগ দিচ্ছেন। আর এর উদ্দেশ্য হলো বিচারিক প্রক্রিয়ার ফলাফল ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে নেওয়া। এভাবেই প্রতিনিয়ত গণতন্ত্রের অন্যতম শর্ত বিচার বিভাগের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়ছে এবং জনগণ বিচারব্যবস্থার প্রতি আস্থা হারাতে বসেছে।
সরকারি কর্মকমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, তথ্য কমিশনসহ সব রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব হচ্ছে দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করতে সহায়তা করা। কিন্তু এ লক্ষ্যে আমাদের বিদ্যমান প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকারিতা এখন পর্যন্ত চোখে পড়ার মতো কিছু না। তা ছাড়া, এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের মুখ্য পদগুলোতে দলীয়করণের মাধ্যমে দলীয় স্বার্থে ব্যবহারের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয় বলে বিরোধী দলের অভিযোগ আছে।
প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো কোনোটির কর্মকাণ্ড প্রায়ই গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি করার পরিবর্তে তা নষ্ট করে চলছে বলে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো অভিযোগ করে আসছে। অন্যতম উদাহরণ সরকারি কর্মকমিশনের কর্মকাণ্ড। অভিযোগ আছে যে ক্ষমতাসীন দল তাদের নিজস্ব ব্যক্তিদের সরকারি কর্মকমিশনে নিয়োগ প্রদান করে। ফলে এই পছন্দের ব্যক্তিরা মেধা বা যোগ্যতার পরিবর্তে দলীয় সুপারিশের ভিত্তিতে সরকারি নিয়োগের ব্যবস্থা করেন। এভাবেই গণতন্ত্রের অন্যতম লক্ষ্য ‘সবার জন্য সমান সুযোগ’—এই শর্ত লঙ্ঘিত হয়। আর এর অন্যতম ফলাফল হলো সুশাসনের অভাব বা দুঃশাসন।
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল পর পর পাঁচবার (২০০১-০৫) বিশ্বে সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত দেশ বলে বাংলাদেশকে আখ্যায়িত করে। এখন শীর্ষে না থাকলেও বাংলাদেশ বেশি দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোর দলে। জনগণ এখন ভাবতে শুরু করেছে যে পাঁচ বছর পর পর নির্বাচন করে সরকার গঠনের বৈধতা দেওয়া মানে কি ক্ষমতাসীন দলকে জনগণের সম্পদ লুট করতে দেওয়ার ন্যায্য অধিকার দেওয়া এবং জনগণকে প্রজার মতো ব্যবহার করতে দেওয়া?
আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, আশির দশকের শেষ দিকে সরকারবিরোধী আন্দোলনের যথার্থতার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে তারা কার্যকর সংসদীয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু করবে ও রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক সাংস্কৃতির চর্চা করবে। তাদের সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন গত দুই দশকেও হয়নি। বরং বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে (২০০১-২০০৬) দেশকে জঙ্গবািদী ইসলামিক মৌলবাদীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল। বর্তমান মহাজোট সরকার দেশকে সেই কলঙ্কের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত সুষ্ঠু নির্বাচনী ব্যবস্থা চালু করতে পারেনি, গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি ও গণতন্ত্রের চর্চার মাধ্যমে স্বৈরতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার কাঠামো থেকে মুক্ত হতে পারেনি। অনেকেই মনে করেন নব্বই-পরবর্তী শাসনব্যবস্থা প্রকৃত প্রস্তাবে যেভাবে চর্চা করা হচ্ছে, তাতে গণতন্ত্রের মোড়কে স্বৈরতান্ত্রিক একনায়কতন্ত্র বিকশিত হচ্ছে। এমনকি সচেতন নাগরিকদের অনেকে গণতন্ত্রের মোড়কে স্বৈরতন্ত্র থেকে দেশ রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার দিকে ধাবিত হচ্ছে কি না এটা ভেবে আতঙ্কিত। দুর্নীতির পরিমাপেও অবস্থার তেমন উন্নতি করতে পারেনি।
গণতন্ত্রের নামে চরম দুর্নীতি, ক্রমবর্ধমান সহিংসতা, মানুষের অধিকারের নিরন্তর লঙ্ঘন, ভিন্নমতের প্রতি অসহিষ্ণুতার সংস্কৃতি বাংলাদেশের রাজনীতি পরিচালনা করছে। আর এ কারণেই দেশে সংঘাতমূলক পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে এবং তা পুরো জাতিকে এক হতাশা ও অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত, যত দ্রুত সম্ভব এ অবস্থা থেকে উত্তরণের সমাধান খুঁজে বের করা। অন্যথায় জনগণ গণতন্ত্রের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে ফেলবে। ফলে, অনাকাঙ্ক্ষিত অগণতান্ত্রিক বিকল্প শক্তির দিকে জনগণ আকৃষ্ট হতে পারে, যেমনটি অতীতে হয়েছিল।
গোলাম মোহাম্মদ কাদের: মন্ত্রী, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য।

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More