Total Pageviews

Feedjit Live

Tuesday, July 5, 2011

পাশাপাশি দুটি রাজনৈতিক সাঁকো


‘মহাজোটের’ লোক ‘ঐক্যজোটে’ যাবে না। ঐক্যজোটের লোক মহাজোটে যাবে না। কারও পথ কেউ মাড়াবে না। অথচ সবাই একই গ্রামের মানুষ।
কুষ্টিয়া সদর উপজেলার উজানগ্রাম ইউনিয়নের মৃত্তিকাপাড়া গ্রামের মানুষের জন্য এ বিভাজন তৈরি করেছেন দুই জোটের নেতা-কর্মীরা। গ্রামের পাশে যে কালী নদী, তার ওপর একই সঙ্গে পাশাশাশি দুটি সাঁকো তৈরি করেছে দুই পক্ষ। বাঁশের তৈরি সাঁকো দুটির নাম দেওয়া হয়েছে ‘ঐক্যজোট’ ও ‘মহাজোট’।
গ্রামবাসী জানান, ক্ষমতাসীন মহাজোট ও বিরোধী চারদলীয় ঐক্যজোটের দুটি শক্ত পক্ষ আছে মৃত্তিকাপাড়া গ্রামে। মহাজোটের নেতৃত্বে আছেন মহাসিন আলী মাস্টার। ঐক্যজোটের নেতৃত্ব দেন গ্রামের নূর মোহাম্মদ। নানা বিষয়ে অনেক দিন ধরে এ দুই পক্ষে বিরোধ চলছে।
এবার ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের বিরোধ আরও বেড়ে যায়। উজানগ্রাম ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্যপদে মৃত্তিকাপাড়া গ্রাম থেকে নির্বাচন করেন নূর মোহাম্মদ নিজে এবং মহাসিন আলী পক্ষের লিয়াকত আলী। নির্বাচনে নূর মুহাম্মদ হেরে যান। সদস্য নির্বাচিত হন লিয়কত আলী।
গ্রামবাসী জানান, গ্রামের পাশ দিয়ে প্রবাহিত কালী নদীর এক পাড়ে মৃত্তিকাপাড়া গ্রাম আর অপর পাড়ে কুশলীবাসা গ্রামের বাজার। কিন্তু পারাপারের জন্য নদীতে কোনো সেতু না থাকায় গ্রামবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর নূর মোহাম্মদ নিজের উদ্যোগে নদীর ওপর একটি বাঁশের সাঁকো তৈরি শুরু করেন। তাঁরা প্রচার করেন, এই সেতু দিয়ে শুধু ঐক্যজোটের লোকজনই পারাপার হবে। এ কথা শোনার পর লিয়াকত আলীর সমর্থকেরাও পাশে আরেকটি সাঁকো তৈরি করতে শুরু করেন। তাঁরাও জানিয়ে দেন, শুধু মহাজোটের সমর্থকেরাই এই সেতু দিয়ে পারাপার হবে।
গত রোববার সাঁকো দুটি তৈরি শেষ হয়। নাম দেওয়া হয়, মহাজোট সাঁকো ও ঐক্যজোট সাঁকো। সাঁকো তৈরি শেষে উভয় পক্ষ ওই দিন নদীর পাড়ে ছাগল জবাই করে ভূরিভোজ করে।
গতকাল সোমবার মৃত্তিকাপাড়া গ্রামের মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নদীর ওপর সাঁকো হওয়ায় তারা খুব খুশি। কিন্তু সঙ্গে একটু উদ্বেগও আছে। সেতু নিয়ে এই দলাদলি কখন না জানি আবার সংঘাতে রূপ নেয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে লিয়াকত আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘নূর মোহাম্মদ আমাদের না বলে লোকজন দিয়ে একটি সাঁকো তৈরি করেছেন। ওই সাঁকো দিয়ে আমাদের লোকজন চলাচল করতে গেলে গন্ডগোল হতে পারে। এ জন্য আমরাও নিজেদের মতো করে আরেকটি সাঁকো তৈরি করেছি।’
যোগাযোগের চেষ্টা করেও নূর মোহাম্মদকে পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর সমর্থক শাজাহান আলী প্রথম আলোকে বলেন, ‘এলাকার লোকজনকে নিয়েই আমরা সাঁকোটি তৈরি করা শুরু করেছিলাম। কিন্তু কিছু লোক ঈর্ষান্বিত হয়ে আরেকটি সাঁকো তৈরি করেছে। তারা নাকি আমাদের সাঁকো দিয়ে পারাপার হবে না।’

0 comments:

Post a Comment

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More