লক্ষ্মীপুর জেলা আওয়ামী লীগের বিতর্কিত নেতা ও পৌর মেয়র আবু তাহেরের লোকজন গতকাল লক্ষ্মীপুর শহরে মিছিল বের করে
ছবি: প্রথম আলো
মহড়া শুরুর আগে আবু তাহের পৌরসভায় নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ডেকে সম্প্রতি তাঁর ছেলের ফাঁসির দণ্ড মওকুফের ব্যাপারে বক্তব্য তুলে ধরেন। তাহের বলেন, হত্যা মামলায় তাঁর ছেলে এ এইচ এম বিপ্লবকে সাজা দেওয়ার ঘটনা দেশের বিচারব্যবস্থাকে কলঙ্কিত করেছে।
গতকাল দুপুরে হঠা ৎ করেই পাল্টে যায় লক্ষ্মীপুর শহরের চিত্র। বেলা আড়াইটা থেকে দলে দলে যুবকেরা রাস্তায় নেমে আসে। তারা মাইকে করে তাহেরের ছেলে বিপ্লবের গুণগান ও স্লোগান দিতে থাকে। কেউ কেউ গানের সুরে সুরে বিপ্লবের মুক্তির দাবি জানায়। এসব মিছিলে শহরের অনেক চিহ্নিত সন্ত্রাসীকেও দেখা যায়।
স্থানীয় লোকজন জানায়, বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত শহরের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত মিছিলের নামে মূলত শক্তির মহড়া দেয় তাহেরের লোকেরা। এ সময় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
শহরের উত্তর তেমুহানী এলাকায় দেখা যায়, বেলা তিনটার দিকে পুলিশের খাতায় চিহ্নিত সন্ত্রাসী নূর হোসেন শামীমের নেতৃত্বে মিছিল চলছে। শামীম ২০ দিন আগে জামিনে মুক্তি পান। তাঁর নেতৃত্বে লোকজন তাহেরের ছেলে বিপ্লবের নাম করে মিছিল করছে।
বিভিন্ন প্রান্ত থেকে দলে দলে যুবকেরা খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বিকেল পাঁচটার মধ্যে শহরের পৌর চত্বরে জমায়েত হয়। পরে তারা একটি বড় মিছিল বের করে। এ সময় তাহের পৌর ভবনের ওপরে দাঁড়িয়ে তা প্রত্যক্ষ করেন। পুলিশি পাহারায় বড় মিছিলটি পৌরসভা থেকে বের হয়ে শহর ঘুরে আবার পৌর ভবনের সামনে এসে শেষ হয়।
বড় মিছিলটির নেতৃত্ব দেন তাহেরের আরেক ছেলে এ কে এম সালাউদ্দিন টিপু। টিপুও বিএনপির নেতা নুরুল ইসলাম হত্যা মামলায় বিচারিক আদালতে যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া আসামি। তিনি পরে উচ্চ আদালত থেকে খালাস পান।
স্থানীয় লোকজন, আওয়ামী লীগের ও তাহেরের ঘনিষ্ঠ বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সম্প্রতি বিপ্লবের দণ্ড মওকুফ নিয়ে জাতীয় দৈনিকগুলোতে লেখালেখির কারণে তাহের চাপের মুখে পড়তে পারেন এমন আশঙ্কা দেখা দেয়। এ অবস্থায় তিনি পরিস্থিতি অনুকূলে রাখা ও অবস্থান ধরে রাখতে শক্তি প্রদর্শনের এ উদ্যোগ নেন। এ জন্য বিভিন্ন এলাকা থেকে সন্ত্রাসীদের এনে জড়ো করা হয়। এই মহড়া ও মিছিলে জেলা আওয়ামী লীগ বা এর অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোর তেমন সম্পৃক্ততা ছিল না বলে দলীয় একাধিক সূত্র জানায়।
বিগত আওয়ামী লীগের সরকারের সময় (১৯৯৬-২০০০) তাহেরের পরিবারের সদস্যদের নানা ত ৎ পরতায় লক্ষ্মীপুর সন্ত্রাসের জনপদে পরিণত হয়। তখন তাহের সন্ত্রাসের গডফাদার হিসেবে পরিচিতি পান। ২০০০ সালে বিএনপির নেতা ও আইনজীবী নুরুল ইসলামকে অপহরণের পর তাঁকে কেটে টুকরো টুকরো করে লাশ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। এ মামলায় তাহেরের ছেলে বিপ্লবের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আদালত। কিন্তু সম্প্রতি রাষ্ট্রপতি এই মৃত্যুদণ্ড মওকুফ করেন। নুরুল ইসলাম হত্যা মামলা ছাড়াও বিপ্লব আরও চারটি হত্যা মামলার আসামি। এর মধ্যে দুটিতে তাঁর যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। তিনি বর্তমানে লক্ষ্মীপুর কারাগারে আছেন।
তাহেরের সংবাদ সম্মেলন: শক্তির মহড়া শুরুর আগে গতকাল দুপুরে হঠা ৎ নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের ডেকে পাঠান মেয়র আবু তাহের। তিনি তা ৎ ক্ষণিক সংবাদ সম্মেলন করার কথা বলেন। এরপর তিনি একটি লিখিত বক্তব্য সাংবাদিকদের হাতে ধরিয়ে দেন। উপস্থিত সাংবাদিকেরা জানান, তাঁরা কেউ কোনো প্রশ্ন করেননি।
লিখিত বক্তব্যে তাহের বলেন, তিনি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। তিনি, তাঁর স্ত্রী ও ছেলেমেয়েদের বিরুদ্ধে বিএনপি সরকারের আমলে মিথ্যা তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। এরপর ব্যারিস্টার মওদুদের প্রহসনমূলক বিচারে তাঁদের সাজা দেওয়া হয়, যা সার্বিক বিচারব্যবস্থাকে কলঙ্কিত করেছে।
তাহের দাবি করেন, ‘আমার নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হলে আমার দলের কিছু লোক ও বিরোধী দলের মধ্যে প্রতিহিংসার জন্ম দেয়। ফলে অনেকটা হঠা ৎ করেই নুরুল ইসলাম অপহরণ ও হত্যার সঙ্গে আমি ও আমার বড় ছেলে বিপ্লব, মেজো ছেলে টিপু এবং আমার স্ত্রীকে জড়িত করে প্রতিহিংসা চরিতার্থ করা হয়। লক্ষ্মীপুরের আরও কয়েকটি হত্যাসহ সন্ত্রাসী কাজের সঙ্গে আমার পরিবারের সবাইকে জড়িত করা হয়।’ তিনি অভিযোগ করেন, একটি চক্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় উন্মাদ হয়ে দেশের পত্রপত্রিকাকে তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। তারা অনেক অর্থ খরচ করে এসব করাচ্ছে। প্রতিনিয়ত সাংবাদিকেরা কাল্পনিক কাহিনি প্রচার করছেন। কিন্তু লক্ষ্মীপুরের মানুষ তা গ্রহণ করেনি।প্রথম আলো
0 comments:
Post a Comment