Total Pageviews

Feedjit Live

Friday, July 29, 2011

ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে কাছে টানার উদ্যোগ

আটটি দলের কাছে আ.লীগের প্রস্তাব

 রাজনৈতিক ঐক্য গড়া ও সরকারবিরোধী আন্দোলন থেকে নিবৃত্ত রাখতে ধর্মভিত্তিক ছোট ছোট রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলোর সঙ্গেও আলোচনার উদ্যোগ নিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ।
গত এক সপ্তাহে সরকারের পক্ষ থেকে আটটি দলের কাছে আলোচনার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। একজন প্রতিমন্ত্রীর পক্ষ থেকে গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা এবং মহাজোটের শরিক একটি ধর্মভিত্তিক দলের প্রধান এ প্রস্তাব দিয়েছেন বলে দলগুলোর নেতারা জানিয়েছেন।
সরকারের পক্ষ থেকে যে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা করা হচ্ছে, সেগুলো হলো চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, ইসলামী ঐক্য আন্দোলন, বাংলাদেশ ইসলামিক পার্টি এবং কয়েকটি দল ও সংগঠনের মোর্চা সম্মিলিত ওলামা মাশায়েখ পরিষদ। এর মধ্যে শেষ তিনটি নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত কোনো দল নয়। ছোট ছোট ধর্মভিত্তিক দলগুলোকে কাছে টানার এই উদ্যোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির আবদুর রব ইউসুফী প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সরকারের এই অনুভূতিকে ইতিবাচক মনে করি। তবে এই উদ্যোগ সরকারের শোচনীয় অবস্থার প্রমাণ বহন করে।’ তিনি জানান, পরিবেশ ও বন প্রতিমন্ত্রী হাছান মাহমুদের সঙ্গে আলোচনায় বসার জন্য তিনি প্রস্তাব পেয়েছেন।
২০০৬ সালের ২৩ ডিসেম্বর খেলাফত মজলিসের সঙ্গে ফতোয়ার অধিকার ফিরে দেওয়াসহ পাঁচ দফা সমঝোতা চুক্তি করেছিল আওয়ামী লীগ, যা পরে বাতিল করা হয়।
সূত্র জানায়, একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা গত বুধবার সকালে খেলাফত আন্দোলনের মহাসচিব জাফরুল্লাহ খানকে মুঠোফোনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকে বসার প্রস্তাব দেন। একজন প্রতিমন্ত্রীর পক্ষ থেকে এ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে বলে ওই কর্মকর্তা জানান।
জাফরুল্লাহ খান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আলোচনায় বসতে রাজি নই। এর দরকার আছে বলেও মনে করি না। সরকার যদি সংবিধানের মূলনীতিতে “আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস” কথাটি পুনঃস্থাপন করে, তাহলে বসার দরকার কী?’
এর আগে গত শনিবার প্রতিমন্ত্রীর পক্ষ থেকে আরেক কর্মকর্তা আলোচনার প্রস্তাব দেন খেলাফত মজলিসের আমির আহমদুল্লাহ আশরাফকে। এ কথা স্বীকার করে আশরাফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বলেছি, আমি তো যেতে পারব না। উনি (প্রতিমন্ত্রী) এলে স্বাগত জানাব।’
সূত্র জানায়, একইভাবে প্রতিমন্ত্রীর পক্ষ থেকে অন্তত দুবার বৈঠকে বসার প্রস্তাব দেওয়া হয় চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনকে।
জানতে চাইলে ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ইউনূছ আহমাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গা থেকে দাওয়াত আসছে। আমরা তাদের বলে দিয়েছি, বসার আগে আলোচ্য বিষয় ঠিক করতে হবে, লক্ষ্য স্থির করতে হবে এবং আশ্বস্ত করতে হবে।’
প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির আবদুর রব ইউসুফী ও সম্মিলিত ওলামা মাশায়েখ পরিষদের যুগ্ম মহাসচিব খলিলুর রহমান মাদানীর কাছে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসার প্রস্তাব দিয়েছেন বলে দল দুটির সূত্রগুলো জানিয়েছে।
আওয়ামী লীগের সঙ্গে বৈঠকে বসার ব্যাপারে ‘ইসলামী ও সমমনা ১১ দল’ যাতে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয়, সে ব্যাপারে ভূমিকা রাখতে আবদুর রব ইউসুফীকে অনুরোধ করেছেন ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা।
‘ইসলামী ও সমমনা ১১ দল’ নামে ছোট ছোট দলগুলোর এই মোর্চা গঠিত হয় গত ৩০ জুন। ইউসুফী এই মোর্চার অন্যতম নেতা। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, সরকার সংবিধানে পঞ্চম সংশোধনীর মূলনীতি পুনর্বহাল, বিসমিল্লাহর নতুন অনুবাদ প্রত্যাহার করে নিলেই হবে। এ জন্য কোনো দলের সঙ্গে আলোচনার প্রয়োজন নেই।’
অবশ্য সম্মিলিত ওলামা মাশায়েখ পরিষদ বিএনপি-জামায়াতঘেঁষা। এর মহাসচিব হলেন আবদুল লতিফ নেজামী। তিনি একই সঙ্গে মুফতি ফজলুল হক আমিনীর নেতৃত্বাধীন ইসলামী ঐক্যজোটেরও মহাসচিব। আলোচনার ব্যাপারে এই সংগঠনের পক্ষ থেকে খুব একটা সাড়া পায়নি সরকারি দল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ছোট ছোট এসব ধর্মভিত্তিক দলকে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আলোচনায় বসাতে গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা ছাড়াও মহাজোটের শরিক বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী সক্রিয় রয়েছেন। তাঁর দাবি, প্রধানমন্ত্রীর ইচ্ছায় তিনি এ উদ্যোগ নিয়েছেন।
মিছবাহুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘জামায়াতবিরোধী ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে তাদের বোঝাতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তারা যদি আগ্রহ দেখায়, তাহলে প্রধানমন্ত্রী তাদের আলোচনায় স্বাগত জানাবেন।’ তিনি জানান, ‘ইসলামী ও সমমনা ১১ দলের’ সাতটিসহ আরও একটি দলের নেতাদের সঙ্গে এ বিষয়ে তাঁর কথা হয়েছে। গোপনীয়তার স্বার্থে দলগুলোর নাম জানাতে রাজি হননি তিনি।
মিছবাহুর রহমান বলেন, ‘যেসব দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেছি, তাঁদের বক্তব্য হচ্ছে, সংবিধানের মূলনীতিতে “আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস” কথাটি পুনঃস্থাপন করার আশ্বাস দিলে সরকারের সঙ্গে আলোচনা ও মহাজোটের সঙ্গে থাকার কথা বিবেচনা করবেন তাঁরা।’ তিনি বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবেন।প্রথম আলো

0 comments:

Post a Comment

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More