Total Pageviews

Feedjit Live

Tuesday, March 20, 2012

অশালীন বক্তব্যে সংসদ আবারও উত্তপ্ত

বিরোধীদলীয় সাংসদেরা আবারও অশালীন বক্তব্য দিয়ে সংসদে উত্তেজনা ছড়িয়েছেন। গতকাল সোমবার তাঁদের বক্তব্যকে কেন্দ্র করে সংসদে উত্তেজনার সৃষ্টি হলে স্পিকার আবদুল হামিদ হাতুড়ি পিটিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আনা ধন্যবাদ প্রস্তাবসম্পর্কিত আলোচনার সময় এ ঘটনা ঘটে। এ সময় বিরোধীদলীয় সাংসদ সৈয়দা আসিফা আশরাফি রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুনকে নিয়ে অসংসদীয় বক্তব্য দেন।
গতকাল সংসদে প্রায় পুরোটা সময়ই সংসদ ছিল উত্তপ্ত। সরকারি ও বিরোধী দলের সাংসদেরা এ উত্তাপ ছড়ান। এক পক্ষের বক্তব্যের সময় অন্য পক্ষ হইচই করতে থাকে। পরিস্থিতি শান্ত করতে স্পিকার দুবার হাতুড়ি পেটান, যা সচরাচর সংসদে দেখা যায় না। তিনি গঠনমূলক ও সুন্দর ভাষায় সমালোচনা করতে সাংসদদের প্রতি আহ্বান জানান।
সংসদে এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপস্থিত ছিলেন। তবে বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া গতকাল সংসদে আসেননি।
গতকাল বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খানের বক্তব্যকে কেন্দ্র করেও বিরোধী দলের নেতারা উত্তেজনার সৃষ্টি করেন। বিরোধী দলের সাংসদদের হইচইয়ের মধ্যে ফারুক খান বক্তব্য শেষ করেন।
সংসদে গতকাল বিরোধীদলীয় সাংসদেরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি জানান। তাঁরা বলেন, এই ব্যবস্থা ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না।
রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর ধন্যবাদ প্রস্তাবের আলোচনায় আসিফা আশরাফি রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানকে ‘মেরুদণ্ডহীন রাষ্ট্রপতি’ বলে মন্তব্য করেন। স্পিকার সঙ্গে সঙ্গে আশরাফির এই বক্তব্য এক্সপাঞ্জ করেন। এ সময় আওয়ামী লীগের সাংসদেরা চিৎকার করে ‘অসত্য বক্তব্য, অসত্য বক্তব্য’, ‘চুপ কর, চুপ কর’ বলতে থাকেন।
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে আসিফা আশরাফি বলেন, ‘১৯৮৬ সালে এরশাদের কোলে বসেছিলেন, লং ড্রাইভে গিয়েছেন। গোলাম আযমের কোলে বসে ছিয়ানব্বইয়ে ক্ষমতায় গিয়েছেন। সর্বশেষ মইন উদ্দিন-ফখরুদ্দীনের কোলে বসে ক্ষমতা দখল করেছেন। যৌবনে আর কার কার কোলে বসেছেন? মতিউর রহমান রিন্টুর বইয়ে পড়েছি, কোন বেয়াইয়ের কোলে আপনার বসার দৃশ্য দেখে চাকর আত্মহত্যা করেছে।’
প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় মাতাল হওয়া ও অবৈধ অস্ত্র রাখার জন্য আমেরিকায় পুলিশের হেফাজতে ছিলেন বলেও দাবি করেন আসিফা আশরাফি। এ সময় সরকারি দলের সাংসদ ফজিলাতুন্নেসা বাপ্পী ও ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা হইচই করেন। তাঁরা বলেন, ‘অসত্য বক্তব্য। চুপ কর।’ কয়েকজন সাংসদ মাইক বন্ধ করে দেওয়ার দাবি জানান। সরকারি দলের হুইপ আ স ম ফিরোজ এবং বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন উঠে গিয়ে তাঁদের নিবৃত্ত করেন। এ সময় স্পিকার আসিফা আশরাফির মাইক বন্ধ করে দিয়ে টেবিলে হাতুড়ি ঠুকে সবাইকে শান্ত হতে বলেন। তিনি বলেন, ‘কোনো অশ্লীল বক্তব্য দেবেন না।’
এরপর মাইক চালু হলে আসিফা আশরাফি পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনির আগের দিনে দেওয়া বক্তব্যের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, ‘যারা নিষিদ্ধ পল্লির সদস্য, তাঁরাই নিষিদ্ধ পল্লির ভাষা বলতে পারে।’
খালেদ মোশাররফের মরণোত্তর বিচার দাবি করে আসিফা আশরাফি বলেন, ‘মোশতাক আহমেদকে ক্ষমতাচ্যুত করে আওয়ামী লীগ নেতা খালেদা মোশাররফ ক্ষমতা দখল করেন। ক্ষমতা নিষ্কণ্টক করার জন্য তিনি জিয়াউর রহমানকে বন্দী করেন এবং মুক্তিযোদ্ধা সেনা কর্মকর্তাদের হত্যা করেন। সে জন্য তাঁর বিচার দাবি করছি।’
যাঁরা তারেক রহমানকে টাকা পাচার এবং মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে জড়িত বলে মন্তব্য করেছেন, তাঁদের উদ্দেশে আসিফা আশরাফি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ মদ্যপ অবস্থায় দুবার গুলশান ও ধানমন্ডি থানায় আটক হয়েছিলেন। ২০০০ সালে আমেরিকার ভার্জিনিয়াতে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি ড্রাইভ করার জন্য তাঁকে কারাবরণ করতে হয়েছিল। এ রকম চরিত্রের ছেলেকে দিয়ে ডিজিটাল বাংলাদেশ হবে না।’
আসিফা আশরাফির বক্তব্য শেষে আবদুল হামিদ বলেন, ‘এ ধরনের বক্তব্য দেওয়া ঠিক নয়।’
আসিফা আশরাফির আগে আওয়ামী লীগের সাংসদ নাজমা আক্তার বলেন, সংসদে যে ভাষায় কথা বলা হচ্ছে, কোনো ভদ্রঘরের সন্তান এ ভাষায় কথা বলতে পারে না।
বিরোধী দলের সাংসদ রাশেদা বেগম বলেন, প্রশাসনে কিছু হিন্দু কর্মকর্তা বসিয়ে দলীয়করণ করে আর এরশাদকে গৃহপালিত বিরোধীদলীয় নেতা করে সরকার নির্বাচন করার পরিকল্পনা করছে। তিনি ভারতের টাইমস অব আসাম-এর সংবাদ পড়ে শোনান। তিনি বলেন, ওই প্রতিবেদনে প্রধানমন্ত্রী, তাঁর ছেলে ও উপদেষ্টাদের দুর্নীতির কথা বলা হয়েছে।
জমির উদ্দিন সরকার বলেন, দেশের অবস্থা নাজুক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষিত হচ্ছে না। খুন, গুম অহরহ হচ্ছে। থানায় গেলে অনেক ক্ষেত্রে ডায়েরি করা যায় না। দারোগা বলেন, কোর্টে যান। এভাবে চললে দেশে খুনখারাবি বেড়ে যাবে। সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দিতে হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে এ বিষয়ে নজর দিতে হবে।
ফারুক খান বলেন, বিরোধী দল সংসদে কথা বলবে জেনে আজ দেশের অনেকেই তাঁদের রেডিও বন্ধ রেখেছেন। কারণ, যে ভাষায় বিরোধী দলের সদস্যরা কথা বলেন, তা পরিবারের সদস্যদের নিয়ে শোনা যায় না। তিনি বলেন, বিদ্যুৎ খাতে এই সরকারের সময় উন্নতি হয়েছে, বিগত সরকারের মতো লুটপাট হয়নি। এ সময় বিরোধী দলের সাংসদেরা বলেন, ‘সামিট গ্রুপের কথা বলেন।’ কয়েকজন ফারুক খানকে ‘সামিট গ্রুপের চোর’ বলে চিৎকার করতে থাকেন।
বিজেপির সাংসদ আন্দালিব রহমান বলেন, ‘রাজনীতিবিদদের প্রতি মানুষের আস্থা নষ্ট হয়েছে। এ জন্য দোষ বিরোধী দলের নয়, সরকারি দলেরও নয়। দোষ জনগণের। কেননা তাঁরা বারবার আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেন।’ তিনি বলেন, এই সরকারের আমলে ডিজিটাল দুর্নীতি হয়েছে। দরবেশখ্যাত এক ব্যক্তি তাঁর মুরিদদের নিয়ে লুটপাট করেছেন। অথচ তাঁর কোনো শাস্তি হয়নি। তিনি অর্থ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আরও যোগ্য লোকদের দিয়ে পরিচালনার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আতিউর রহমানকে ইন্দিরা গান্ধী পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। তাঁকে শেয়ারবাজার ধ্বংসের জন্য পুরস্কার দেওয়া উচিত ছিল।
আন্দালিব রহমান বলেন, বিদ্যুৎ খাতে দুই খেলোয়াড় রয়েছেন। এঁদের মধ্যে সামিট গ্রুপ হলো ম্যারাডোনা আর ওরিয়ন গ্রুপ হলো মেসি। এই দুই পরিবারের হাতে বিদ্যুৎ খাত এবং দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য জিম্মি। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ এখন ব্যাংকারদের দল। যাঁরা ব্যাংকের অনুমতি পাচ্ছেন, তাঁদের কেউ কেউ নির্বাচনের সময় আয় দেখিয়েছেন ৩৯ লাখ থেকে এক কোটি টাকা। অথচ, এখন তাঁরা ৪০০ কোটি টাকা দিয়ে ব্যাংক দিচ্ছেন।
বিএনপির সাংসদ এম কে আনোয়ার বলেন, এ সরকার কোনো প্রতিশ্রুতি পূরণ করেনি। কুইক রেন্টালের মাধ্যমে দেশকে দীর্ঘমেয়াদি অর্থনৈতিক সংকটের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী চাইলে দলীয় লোকদের লুটপাট, সন্ত্রাস, টেন্ডারবাজি বন্ধ হওয়া সম্ভব।
সরকারি দলের জহিরুল হক ভূঁইয়া বলেন, সংসদে যে ভাষায় কথা হয়, তাতে সাংসদ হিসেবে পরিচয় দিতে লজ্জা হয়। পরিবারের সদস্যরা বলে, ‘এই তোমাদের সংসদ’!
সরকারি দলের শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘গত রোববার বিরোধী দলের একজন নারী সাংসদ সরকারি দলের একজন সাংসদের কাপড় খুলতে চেয়েছেন। একজন নারী কখন একজন সক্ষম পুরুষের কাপড় খুলতে চান, তা সবাই জানে।’
এ ছাড়া গতকাল এলডিপির সভাপতি অলি আহমদ বক্তব্য দেন।
সামিটের বক্তব্য: সংসদে সামিট গ্রুপ নিয়ে বক্তব্য প্রসঙ্গে সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহাম্মদ আজিজ খান বলেন, ‘আমরা ১৯৯৮ সালে দেশে সর্বপ্রথম বেসরকারি খাতে বিদ্যুৎকেন্দ্র করেছি। বর্তমানে মোট ৫৬৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সুষ্ঠু ও নিরবচ্ছিন্নভাবে উৎপাদন করছি। আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের কোম্পানি দেশের একটি সম্পদ। কোম্পানিটি দেশের উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছে ও রাখবে।’ prothom-alo

0 comments:

Post a Comment

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More