Total Pageviews

Feedjit Live

Tuesday, September 20, 2011

মার্কিন দূতাবাসকে কারা মহাপরিদর্শক: ভিআইপি বন্দীদের নিয়ে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়েছিল

সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেপ্তার হওয়া ভিআইপি বন্দীদের নিয়ে ‘কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি’ হয়েছিলেন তৎকালীন কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জাকির হাসান। বিশেষ করে, সাবেক দুই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়াকে নিয়ে। কারা মহাপরিদর্শক মার্কিন দূতাবাসকে এ কথা জানিয়েছিলেন।
২০০৭ সালের শেষ দিকে ঢাকায় নিযুক্ত একজন মার্কিন কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠকে জাকির হাসান এ কথা বলেন। উইকিলিকসের ফাঁস করা মার্কিন তারবার্তায় এ তথ্য পাওয়া গেছে।
তারবার্তায় বলা হয়, কারা মহাপরিদর্শক জাকির হাসান বলেন, দুই সাবেক প্রধানমন্ত্রীসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়ে বিশেষ সতর্ক থাকতে হয়, যা তাঁকে কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলে দেয়। তিনি জানান, দুই নেত্রীকে দেখতে তিনি সাব-জেলে গিয়েছিলেন। এটা খুবই স্বাভাবিক বিষয় যে, দুই নেত্রী কারাগারে থাকতে কখনোই ভালো বোধ করবেন না। অনেক সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও কারা কর্তৃপক্ষ তাঁদের প্রতি সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার চেষ্টা করে।
তারবার্তায় বলা হয়, শেখ হাসিনার একজন আইনজীবী দাবি করেন, জেল কোড অনুযায়ী তিনি (শেখ হাসিনা) মুঠোফোন ব্যবহার করতে পারবেন। কারা মহাপরিদর্শক জানান, তিনি আইনজীবীর এমন দাবি নাকচ করে দেন। হাসিনার ওই আইনজীবীর যুক্তি, জেল কোড অনুযায়ী বন্দীরা ‘মৌখিকভাবে যোগাযোগ’ করতে পারে। এ যুক্তিতে শেখ হাসিনা মুঠোফোন ব্যবহার করতে পারেন। জাকির হাসান ওই যুক্তি খণ্ডন করে বলেন, ‘মৌখিক যোগাযোগ’ বলতে সামনাসামনি কথা বলাকে বোঝানো হয়েছে, ফোনের মাধ্যমে নয়। কোনো বন্দীরই ফোন ব্যবহারের নিয়ম নেই।
কারা মহাপরিদর্শক জানান, মানবাধিকারকর্মী সিগমা হুদা কারারক্ষীদের ঘুষ দিয়ে ফোন ব্যবহার করেন। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছিলেন। পরে তাঁর নির্দেশে ওই ফোন এবং সংশ্লিষ্ট কারারক্ষীদের সরিয়ে দেওয়া হয়। কারাগারে সিগমা হুদার প্রতি যথেষ্ট মনোযোগ না দেওয়ার কথা অস্বীকার করে জাকির হাসান বলেন, তাঁর (সিগমা) প্রতি কারা কর্তৃপক্ষের প্রয়োজনীয় নজর ছিল। সিগমা হুদা তাঁর আইনজীবীদের সঙ্গে প্রয়োজনীয় কথা বলেছেন, চিকিৎসার জন্য সুযোগ-সুবিধাও পেয়েছেন।
তারবার্তায় বলা হয়, সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে কাজ করতে গিয়ে হতাশা প্রকাশ করেন কারা মহাপরিদর্শক জাকির হাসান। তিনি জানান, বিগত জোট সরকারের আমলে তিনি কোনো কাজের জন্য সরাসরি তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারতেন, কিন্তু এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দীন আহমদের অধীনে। কারা মহাপরিদর্শক হলেও খুব সহজে তিনি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন না। এর ফলে আগে কোনো কাজ কয়েক দিনে করতে পারলেও এখন একই কাজের জন্য কয়েক সপ্তাহের প্রয়োজন হয়।
তারবার্তায় বলা হয়, ব্রিগেডিয়ার জাকির হাসান জানান, ওই সময়ে সারা দেশের কারাগারের ধারণক্ষমতার চেয়ে বন্দীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে তিন গুণ বেশি ছিল। তিনি আরও জানান, ২০০৫ সালে কারা মহাপরিদর্শক হিসেবে যোগ দেওয়ার পর বিভিন্ন সংস্কার করেন তিনি। কারাসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির বিষয়টি জানতে পেরে কারাগারের মধ্যে তিনি গোয়েন্দা সার্ভিস গঠন করেন। এ সার্ভিসের মাধ্যমে কারাগারের অবস্থাও পর্যবেক্ষণ করা হতো।
কারা মহাপরিদর্শক জানান, কারাগারে বিভিন্ন পণ্য সরবরাহের জন্য একটি সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে। কয়েকজন সাংসদ ওই সিন্ডিকেটে জড়িত ছিলেন। জানা গেছে, সিন্ডিকেট ভাঙায় ক্ষুব্ধ সাংসদেরা কারা মহাপরিদর্শক পদ থেকে জাকির হাসানকে সরিয়ে দিতে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর কাছে আবেদন করেছিলেন। কারাগারে ঘুষ ও ক্ষমতার অপব্যবহার বন্ধ হওয়ায় কারারক্ষী ও কর্মকর্তাদের অনেকে ক্ষুব্ধ ছিলেন। কারা মহাপরিদর্শককে সরিয়ে দেওয়ার জন্য তাঁরাও তৎপর ছিলেন।

0 comments:

Post a Comment

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More