নিষিদ্ধঘোষিত
জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশের (হুজি-বি) রাজনৈতিক দল
ইসলামী ডেমোক্রেটিক পার্টি (আইডিপি) সৃষ্টিতে সহায়তা করেছিল বাংলাদেশের
সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই। আর এ পদক্ষেপের পক্ষে মার্কিন
রাষ্ট্রদূতের কাছে সাফাই করেছিলেন ডিজিএফআইয়ের তত্কালীন পরিচালক এ টি এম
আমিন ।
বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি ওয়াশিংটনে পাঠানো গোপন তারবার্তায় এ কথা উল্লেখ করেছেন। সম্প্রতি ভিন্নধারার গণমাধ্যম উইকিলিকস এই তথ্য ফাঁস করে।
২০০৮ সালে ১৬ অক্টোবর ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটনে পাঠানো এক তারবার্তায় বলা হয়েছে, জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি-বি) রাজনৈতিক স্বীকৃতি চায়। এ লক্ষ্যে তারা ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টি (আইডিপি) নামে একটি রাজনৈতিক দলও ঘোষণা করেছে। ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির (আইডিপি) নেতারা দাবি করেছেন, ইসলামি শরিয়া আইনের অধীনে বাংলাদেশে তারা সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
হুজি-বির এ পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি তত্কালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বলেছেন, ‘হুজি-বি’কে অবশ্যই মূলধারার রাজনীতিতে আসার অনুমোদন দেওয়া উচিত নয়।
তারবার্তায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আইডিপি দেশব্যাপী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়েছে। যদিও দলটির নেতারা দাবি করেছেন, তাঁরা শান্তি ও গণতন্ত্রের পক্ষে কাজ করছেন। তবে সরকারি কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রদূতদের এ বিষয়ে ঘোরতর সন্দেহ রয়েছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া প্রতিবেদনে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, দলটি তাদের মূল সন্ত্রাসী সংগঠন ত্যাগ করেনি।
তারবার্তায় বলা হয়েছে, ২০০৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানী ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে দলটি আত্মপ্রকাশ করে। আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রায় দুই হাজার মানুষ অংশ নেয়।
ঢাকার অস্ট্রেলীয় দূতাবাসের কর্মকর্তাদের তথ্যের বরাত দিয়ে ওই তারবার্তায় বলা হয়, আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুজাহিদ কমান্ডার আবদুস সালাম আইডিপির আহ্বায়ক। দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে আবদুস সালাম বলেন, দলটি বাংলাদেশে ইসলামি শরিয়া আইন বাস্তবায়ন করতে চায়, তবে তা সন্ত্রাসী পন্থায় নয়।
১৬ অক্টোবর পাঠানো অপর এক মার্কিন তার বার্তায় বলা হয়েছে, তত্কালীন ডিজিএফআই-এর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ টি এম আমিন ১৫ অক্টোবর ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাউন্সেলর, এবং আঞ্চলিক কাউন্সেলরের সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন। ওই সাক্ষাতে এ টি এম আমিন আইডিপিকে মূলধারার রাজনীতিতে নিয়ে আসার পদক্ষেপের পক্ষে সাফাই করেন। তবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি এ পদক্ষেপের বিরোধিতা করেন। তিনি হুজির কর্মকাণ্ড নিয়ে বিশেষ করে সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে মার্কিন সরকারের উদ্বেগের কথা জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে এ টি এম আমিন জানান, তারা আইডিপিকে গভীর পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। তবে তিনি স্বীকার করেন, এ ক্ষেত্রে সতর্কতা দরকার।
জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশের (হুজি-বি) রাজনৈতিক দল ইসলামী ডেমোক্রেটিক পার্টির (আইডিপি) আত্মপ্রকাশ নিয়ে ২০০৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর দৈনিক প্রথম আলোতে ‘আইডিপি নামে এবার প্রকাশ্য রাজনীতিতে হুজি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ইসলামী ডেমোক্রেটিক পার্টি—আইডিপি’ নামে প্রকাশ্য রাজনীতি শুরু করেছে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী (হুজি)। রাজধানীর ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে ইফতার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে সাবেক আফগান মুজাহিদদের এ সংগঠন।
সংগঠনের আহ্বায়ক মাওলানা শেখ আবদুস সালাম তখন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের সংগঠন এ দেশে ১৯৯২ সালেই আত্মপ্রকাশ করে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ নামে। এরপর ১৯৯৮ সালে তা বিলুপ্তি ঘোষণার পর তাঁরা ‘ইসলামী গণ-আন্দোলন’ নামে সংগঠন করেন। সেই সংগঠন থেকে এখন তাঁরা আইডিপি নামে কাজ করছেন।
মাওলানা শেখ আবদুস সালামের সভাপতিত্বে আইডিপির ওই ইফতার ও আলোচনা সভায় সংগঠনের নেতারা ছাড়াও সংগঠনের ভাষায় ‘আন্ত-সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি উন্নয়নের স্বার্থে আমন্ত্রিত’ ইংরেজি সাপ্তাহিক ব্লিেজর সম্পাদক সালাহউদ্দিন শোয়েব চৌধুরী, দৈনিক আমার দেশের সহকারী নির্বাহী সম্পাদক ও হিউম্যান রাইটস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব চৌধুরী, বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের পি কে বড়ুয়া, খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি চিত্ত ফ্রান্সিস রিভেরু বক্তব্য দেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সালাহউদ্দিন শোয়েব চৌধুরী বলেন, আইডিপির আত্মপ্রকাশের মধ্য দিয়ে দেশে নতুন রাজনীতির জন্ম হলো। তিনি বলেন, আইডিপির সঙ্গে হরকাতুল জিহাদের নাম জড়িত। এটা এমন একটি সংগঠন, যার সম্পর্কে নানা আলোচনা রয়েছে। আইডিপিকে যারা সন্ত্রাসী সংগঠন বলে, ওই সব পত্রিকা বিদেশের টাকায় চলে। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধ এবং বালি বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত সত্ত্বেও হিযবুত তাহরীরের মতো সংগঠন যদি এ দেশে প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে পারে, তাহলে আইডিপি কেন পারবে না। যারা বাংলাদেশকে করদ রাজ্য বানাতে চায়, তারা আইডিপিকে হুমকি মনে করে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন আইডিপির সদস্যসচিব মাওলানা রুহুল আমিন, তিন যুগ্ম আহ্বায়ক কারি হোসাইন আহমদ, মাওলানা আবুল কাশেম রহমানী ও মাওলানা মাহবুবুর রহমান এবং মাওলানা মুফতি কামাল, মাওলানা মীর ইদ্রিস, মুফতি ফজলে এলাহি, মাওলানা মুফতি নোমান, খেলাফত মজলিসের (ইসহাক) নায়েবে আমির এমদাদুল হক আড়াইহাজারী, খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির ছফর উল্লাহ খান, জৈনপুরী পীর মাওলানা এহছানুল্লাহ আব্বাসী প্রমুখ। এ ছাড়া মরহুম হাফেজ্জী হুজুরের মেজ ছেলে হাফেজ মাওলানা হামিদুল্লাহ ও মাওলানা আতাউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
সমাপনী বক্তৃতায় মাওলানা আবদুস সালাম নিজেদের আন্তর্জাতিক মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে বলেন, তাঁরা মদিনা সনদের আলোকে একটি অসাম্প্রদায়িক কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ে তুলতে চান।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চাপসহ নানা কারণে সংগঠনটি বিভিন্ন সময় নাম পাল্টালেও এর নেতৃত্ব, সাংগঠনিক কাঠামো, মজলিশে শুরা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া প্রায় একই ছিল। ২০০৬ সালের আগস্টে প্রথম গোপন এ সংগঠনটি ইসলামি গণ-আন্দোলন নামে প্রকাশ্য রাজনীতিতে আসার চেষ্টা করে। এ লক্ষ্যে ওই বছরের ১৮ আগস্ট জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সচেতন ইসলামী জনতার ব্যানারে বড় একটি সমাবেশ করেছিল। তখন সচেতন ইসলামী জনতার আহ্বায়ক হিসেবে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন হাফেজ মাওলানা আবু তাহের। এই তাহের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। বর্তমানে তিনি কারাগারে। আবু তাহের হুজির ঢাকা মহানগর সভাপতি ও মজলিশে শুরার সদস্য ছিলেন।
বিভিন্ন নাশকতামূলক ঘটনার পর বাংলাদেশ সরকার ২০০৫ সালের ১৭ অক্টোবর হুজিকে নিষিদ্ধঘোষণা করে। ২০০২ সালের ২১ মে বাংলাদেশের হরকাতুল জিহাদকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। গত ৫ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডোলিত্সা রাইস এক নির্বাহী আদেশে বাংলাদেশের হুজিকে একটি ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ এবং একটি ‘বিশেষভাবে চিহ্নিত আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ হিসেবে ঘোষণা দেন।
হুজির সঙ্গে জড়িত মুফতি হান্নানসহ অনেকের বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগ আছে—এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘১৯৯৮ সালেই মুফতি হান্নানকে আমরা দল থেকে বহিষ্কার করি। বহিষ্কারের পর কেউ যদি ওই নামে নাশকতা করে থাকে, তার দায়-দায়িত্ব তাদেরই। আমাদের ওপর বর্তায় না। তবে সরকারকে ধন্যবাদ, তাদের ধরেছে। এখন তাদের বিচার চলছে।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি ওয়াশিংটনে পাঠানো গোপন তারবার্তায় এ কথা উল্লেখ করেছেন। সম্প্রতি ভিন্নধারার গণমাধ্যম উইকিলিকস এই তথ্য ফাঁস করে।
২০০৮ সালে ১৬ অক্টোবর ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে ওয়াশিংটনে পাঠানো এক তারবার্তায় বলা হয়েছে, জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ (হুজি-বি) রাজনৈতিক স্বীকৃতি চায়। এ লক্ষ্যে তারা ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টি (আইডিপি) নামে একটি রাজনৈতিক দলও ঘোষণা করেছে। ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির (আইডিপি) নেতারা দাবি করেছেন, ইসলামি শরিয়া আইনের অধীনে বাংলাদেশে তারা সত্যিকারের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
হুজি-বির এ পদক্ষেপের পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি তত্কালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বলেছেন, ‘হুজি-বি’কে অবশ্যই মূলধারার রাজনীতিতে আসার অনুমোদন দেওয়া উচিত নয়।
তারবার্তায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আইডিপি দেশব্যাপী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়েছে। যদিও দলটির নেতারা দাবি করেছেন, তাঁরা শান্তি ও গণতন্ত্রের পক্ষে কাজ করছেন। তবে সরকারি কর্মকর্তা ও রাষ্ট্রদূতদের এ বিষয়ে ঘোরতর সন্দেহ রয়েছে। বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া প্রতিবেদনে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, দলটি তাদের মূল সন্ত্রাসী সংগঠন ত্যাগ করেনি।
তারবার্তায় বলা হয়েছে, ২০০৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানী ঢাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে দলটি আত্মপ্রকাশ করে। আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রায় দুই হাজার মানুষ অংশ নেয়।
ঢাকার অস্ট্রেলীয় দূতাবাসের কর্মকর্তাদের তথ্যের বরাত দিয়ে ওই তারবার্তায় বলা হয়, আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী মুজাহিদ কমান্ডার আবদুস সালাম আইডিপির আহ্বায়ক। দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে আবদুস সালাম বলেন, দলটি বাংলাদেশে ইসলামি শরিয়া আইন বাস্তবায়ন করতে চায়, তবে তা সন্ত্রাসী পন্থায় নয়।
১৬ অক্টোবর পাঠানো অপর এক মার্কিন তার বার্তায় বলা হয়েছে, তত্কালীন ডিজিএফআই-এর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ টি এম আমিন ১৫ অক্টোবর ঢাকার মার্কিন রাষ্ট্রদূত, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কাউন্সেলর, এবং আঞ্চলিক কাউন্সেলরের সঙ্গে সাক্ষাত্ করেন। ওই সাক্ষাতে এ টি এম আমিন আইডিপিকে মূলধারার রাজনীতিতে নিয়ে আসার পদক্ষেপের পক্ষে সাফাই করেন। তবে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জেমস এফ মরিয়ার্টি এ পদক্ষেপের বিরোধিতা করেন। তিনি হুজির কর্মকাণ্ড নিয়ে বিশেষ করে সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে মার্কিন সরকারের উদ্বেগের কথা জানান। এর পরিপ্রেক্ষিতে এ টি এম আমিন জানান, তারা আইডিপিকে গভীর পর্যবেক্ষণে রেখেছেন। তবে তিনি স্বীকার করেন, এ ক্ষেত্রে সতর্কতা দরকার।
জঙ্গি সংগঠন হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশের (হুজি-বি) রাজনৈতিক দল ইসলামী ডেমোক্রেটিক পার্টির (আইডিপি) আত্মপ্রকাশ নিয়ে ২০০৮ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর দৈনিক প্রথম আলোতে ‘আইডিপি নামে এবার প্রকাশ্য রাজনীতিতে হুজি’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘ইসলামী ডেমোক্রেটিক পার্টি—আইডিপি’ নামে প্রকাশ্য রাজনীতি শুরু করেছে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী (হুজি)। রাজধানীর ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স মিলনায়তনে ইফতার অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে সাবেক আফগান মুজাহিদদের এ সংগঠন।
সংগঠনের আহ্বায়ক মাওলানা শেখ আবদুস সালাম তখন প্রথম আলোকে বলেন, তাঁদের সংগঠন এ দেশে ১৯৯২ সালেই আত্মপ্রকাশ করে হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশ নামে। এরপর ১৯৯৮ সালে তা বিলুপ্তি ঘোষণার পর তাঁরা ‘ইসলামী গণ-আন্দোলন’ নামে সংগঠন করেন। সেই সংগঠন থেকে এখন তাঁরা আইডিপি নামে কাজ করছেন।
মাওলানা শেখ আবদুস সালামের সভাপতিত্বে আইডিপির ওই ইফতার ও আলোচনা সভায় সংগঠনের নেতারা ছাড়াও সংগঠনের ভাষায় ‘আন্ত-সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি উন্নয়নের স্বার্থে আমন্ত্রিত’ ইংরেজি সাপ্তাহিক ব্লিেজর সম্পাদক সালাহউদ্দিন শোয়েব চৌধুরী, দৈনিক আমার দেশের সহকারী নির্বাহী সম্পাদক ও হিউম্যান রাইটস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব চৌধুরী, বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের পি কে বড়ুয়া, খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি চিত্ত ফ্রান্সিস রিভেরু বক্তব্য দেন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সালাহউদ্দিন শোয়েব চৌধুরী বলেন, আইডিপির আত্মপ্রকাশের মধ্য দিয়ে দেশে নতুন রাজনীতির জন্ম হলো। তিনি বলেন, আইডিপির সঙ্গে হরকাতুল জিহাদের নাম জড়িত। এটা এমন একটি সংগঠন, যার সম্পর্কে নানা আলোচনা রয়েছে। আইডিপিকে যারা সন্ত্রাসী সংগঠন বলে, ওই সব পত্রিকা বিদেশের টাকায় চলে। তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধ এবং বালি বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত সত্ত্বেও হিযবুত তাহরীরের মতো সংগঠন যদি এ দেশে প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে পারে, তাহলে আইডিপি কেন পারবে না। যারা বাংলাদেশকে করদ রাজ্য বানাতে চায়, তারা আইডিপিকে হুমকি মনে করে।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন আইডিপির সদস্যসচিব মাওলানা রুহুল আমিন, তিন যুগ্ম আহ্বায়ক কারি হোসাইন আহমদ, মাওলানা আবুল কাশেম রহমানী ও মাওলানা মাহবুবুর রহমান এবং মাওলানা মুফতি কামাল, মাওলানা মীর ইদ্রিস, মুফতি ফজলে এলাহি, মাওলানা মুফতি নোমান, খেলাফত মজলিসের (ইসহাক) নায়েবে আমির এমদাদুল হক আড়াইহাজারী, খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির ছফর উল্লাহ খান, জৈনপুরী পীর মাওলানা এহছানুল্লাহ আব্বাসী প্রমুখ। এ ছাড়া মরহুম হাফেজ্জী হুজুরের মেজ ছেলে হাফেজ মাওলানা হামিদুল্লাহ ও মাওলানা আতাউল্লাহ উপস্থিত ছিলেন।
সমাপনী বক্তৃতায় মাওলানা আবদুস সালাম নিজেদের আন্তর্জাতিক মুক্তিযোদ্ধা দাবি করে বলেন, তাঁরা মদিনা সনদের আলোকে একটি অসাম্প্রদায়িক কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ে তুলতে চান।
প্রথম আলোর অনুসন্ধানে জানা যায়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চাপসহ নানা কারণে সংগঠনটি বিভিন্ন সময় নাম পাল্টালেও এর নেতৃত্ব, সাংগঠনিক কাঠামো, মজলিশে শুরা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া প্রায় একই ছিল। ২০০৬ সালের আগস্টে প্রথম গোপন এ সংগঠনটি ইসলামি গণ-আন্দোলন নামে প্রকাশ্য রাজনীতিতে আসার চেষ্টা করে। এ লক্ষ্যে ওই বছরের ১৮ আগস্ট জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উত্তর গেটে সচেতন ইসলামী জনতার ব্যানারে বড় একটি সমাবেশ করেছিল। তখন সচেতন ইসলামী জনতার আহ্বায়ক হিসেবে সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন হাফেজ মাওলানা আবু তাহের। এই তাহের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় অভিযোগপত্রভুক্ত আসামি। বর্তমানে তিনি কারাগারে। আবু তাহের হুজির ঢাকা মহানগর সভাপতি ও মজলিশে শুরার সদস্য ছিলেন।
বিভিন্ন নাশকতামূলক ঘটনার পর বাংলাদেশ সরকার ২০০৫ সালের ১৭ অক্টোবর হুজিকে নিষিদ্ধঘোষণা করে। ২০০২ সালের ২১ মে বাংলাদেশের হরকাতুল জিহাদকে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করে। গত ৫ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কন্ডোলিত্সা রাইস এক নির্বাহী আদেশে বাংলাদেশের হুজিকে একটি ‘বিদেশি সন্ত্রাসী সংগঠন’ এবং একটি ‘বিশেষভাবে চিহ্নিত আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ হিসেবে ঘোষণা দেন।
হুজির সঙ্গে জড়িত মুফতি হান্নানসহ অনেকের বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগ আছে—এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘১৯৯৮ সালেই মুফতি হান্নানকে আমরা দল থেকে বহিষ্কার করি। বহিষ্কারের পর কেউ যদি ওই নামে নাশকতা করে থাকে, তার দায়-দায়িত্ব তাদেরই। আমাদের ওপর বর্তায় না। তবে সরকারকে ধন্যবাদ, তাদের ধরেছে। এখন তাদের বিচার চলছে।’
0 comments:
Post a Comment