Total Pageviews

Feedjit Live

Monday, June 27, 2011

শেষ ৯০ দিন অন্তর্বর্তী সরকার

সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হবে। ওই সময় সংসদ থাকলেও কার্যকর থাকবে না। এই তিন মাস অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চলবে। মন্ত্রিসভা শুধু রুটিন (নিয়মিত) কাজ করবে। তবে নির্বাচন পরিচালনার মূল কাজটি করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
এভাবে সংবিধান (পঞ্চদশ সংশোধন) বিল-২০১১-তে সংশোধনী আনা হচ্ছে। এতে পাঁচ বছর মেয়াদি জাতীয় সংসদের শেষ তিন মাসে কার্যক্ষমতা সীমিত করা হচ্ছে। অর্থাৎ এই সময়ে জাতীয় সংসদের কোনো অধিবেশন বসবে না। সংসদের শেষ তিন মাসে ৬০ দিন পর পর অধিবেশন ডাকার বাধ্যবাধকতা রহিত করা হবে। তবে নির্বাচন হলেও সংসদের পাঁচ বছর মেয়াদ শেষ হওয়ার পরই পরবর্তী সংসদ কাজ শুরু করবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের তিন মাসে প্রধানমন্ত্রী, বিরোধীদলীয় নেতাসহ মন্ত্রিসভার সদস্যরা জাতীয় পতাকাসহ সব ধরনের প্রটোকল পাবেন। এ সরকারই পরবর্তী সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে। বর্তমান সংবিধান অনুসারে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার বিধান রয়েছে।
গতকাল সোমবার জাতীয় সংসদে আইন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভায় এই নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে জানা গেছে। আজ মঙ্গলবার কমিটি সংবিধান সংশোধনী বিল সম্পর্কে প্রতিবেদন চূড়ান্ত করবে। এ সপ্তাহেই বিলটি সম্পর্কে সংসদে প্রতিবেদন দেবে কমিটি। জানা গেছে, আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহেই সংবিধান সংশোধনের বিলটি সংসদে পাস হয়ে যাবে।
কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সভাপতিত্বে গতকালের সভায় সংবিধান সংশোধন বিল সম্পর্কে দফাওয়ারি আলোচনা হয়। আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ, আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম, ফজলে রাব্বী মিয়া, রহমত আলী, আবদুল মতিন খসরু, খান টিপু সুলতান, জিয়াউল হক মৃধা, নুরুল ইসলাম ও শেখ ফজলে নূর তাপস সভায় অংশ নেন।
সভায় অনির্বাচিত কাউকে মন্ত্রী (টেকনোক্র্যাট) করা হলে পরবর্তী ছয় মাসের মধ্যে নির্বাচিত হওয়ার বিধান রাখার বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এ ব্যাপারে আজকের সভায় চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে বলে জানা গেছে। সভায় বিরোধী দল বিএনপির সঙ্গে আলোচনার ব্যাপারেও কথা হয়। বিএনপি চাইলে যেকোনো সময় কমিটির সভাপতির কাছে তাদের প্রস্তাব দিতে পারে।
জানতে চাইলে আইন মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুসারে তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল হয়ে যাওয়ায় এখন সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করতে হবে। আর ওই সময় কার্যত সংসদ থাকলেও তা কার্যকর থাকবে না। সংবিধানের বিধান অনুসারে ৬০ দিনের মধ্যে পরবর্তী অধিবেশন ডাকার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। আর এ সমস্যা এড়াতে নতুন একটি সংশোধনী আনছে কমিটি। এতে সংসদের মেয়াদের শেষ ৯০ দিনকে ওই বাধ্যবাধকতার বাইরে রাখা হয়েছে। ফলে সংসদের মেয়াদ চার বছর নয় মাসের পর আর কোনো অধিবেশন হবে না। তিনি বলেন, সংসদের মেয়াদের শেষ তিন মাস অন্তর্বর্তীকালীন সরকার চলবে। এ সরকার রুটিন কাজ করবে।
সুরঞ্জিত বলেন, এখন এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কীভাবে কাজ করবে, সেটি নিয়ে বিএনপি আলোচনা করতে পারে, প্রস্তাব দিতে পারে। এখন না এলেও বর্তমান সরকারের আরও আড়াই বছর সময় আছে। তিন-চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে মহাজোট সরকার বসে আছে। প্রয়োজনে বিএনপির যৌক্তিক দাবি বিবেচনায় আবার সংবিধান সংশোধন করা হবে।
নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পর্কিত ১২৩ অনুচ্ছেদ সংশোধনের প্রস্তাব করে প্রস্তাবিত বিলে বলা হয়েছে, ‘মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পূর্ববর্তী নব্বই দিনের মধ্যে এবং মেয়াদ অবসান ব্যতীত অন্য কোন কারণে সংসদ ভাঙ্গিয়া যাইবার ক্ষেত্রে ভাঙ্গিয়া যাইবার পরবর্তী নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে হবে।’ তবে মেয়াদ অবসান ছাড়া অন্য কোনো কারণে সংসদ ভেঙে গেলে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন হবে।
১৯৭২ সালের সংবিধানে এ বিধান থাকলেও ১৯৯০ সাল পর্যন্ত কোনো সরকারই তার পাঁচ বছরের নির্ধারিত মেয়াদ শেষ করতে না পারায় পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন করার কোনো অভিজ্ঞতা কারও নেই। এই সংশোধিত আকারে সংবিধান সংশোধন হলে আগামী দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনই হবে মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে। 
সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সংসদের এক অধিবেশনের সমাপ্তি ও পরবর্তী অধিবেশনের প্রথম বৈঠকের মধ্যে ৬০ দিনের অতিরিক্ত বিরতি থাকবে না। কমিটির সংশোধনী অনুসারে, সংসদের মেয়াদ শেষের ৯০ দিন ‘৬০ দিনে সংসদের বৈঠকের বিষয়টি প্রযোজ্য হবে না’।
বৈঠক শেষে সাবেক আইনমন্ত্রী আবদুল মতিন খসরু প্রথম আলোকে বলেন, সংসদের মেয়াদ শেষের ৯০ দিনে সংসদ বহাল থাকায় করণীয় কী হবে, তা পর্যালোচনা করে কমিটি নতুন সংশোধনী আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওই ৯০ দিন সংসদ, প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রিপরিষদ বহাল থাকলেও তাঁরা রুটিন কাজের বাইরে কিছু করবেন না। অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য এককভাবে নির্বাচন কমিশনই সংবিধানের ১১৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে। সবকিছুই নির্বাচনী আইন অনুযায়ী চলবে।
মতিন খসরু বলেন, ‘বিতর্কিত নির্বাচন আমরা কেউই চাই না। এ জন্য ভালো কোনো বিকল্প থাকলে বিরোধী দলের মত দেওয়া উচিত।’

0 comments:

Post a Comment

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More