Total Pageviews

Feedjit Live

Friday, November 4, 2011

'খালেদার আশা ছিল সেনাবাহিনী তাদের জেতাবে'

  নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনে সেনা মোতায়েন নিয়ে বিএনপির সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, খালেদা জিয়া চেয়েছিলেন সেনাবাহিনী যেন ভোট 'চুরি' করে তাদের জিতিয়ে দেয়।

বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রশ্ন তুলে বলেন, "নারায়ণগঞ্জে কী এমন ঘটনা ঘটলো যে সেখানে [নির্বাচনে] সেনা মোতায়েন করতে হবে?"

"এমন কোনো পরিস্থিতি হয়নি।" উল্লেখ করে তিনি বলেন, "সেনা মোতায়েনের জন্য নির্বাচন কমিশন থেকে হঠাৎ করে চিঠি দিয়ে দেওয়া হলো। কিন্তু নারায়ণগঞ্জের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কমিশন যে বৈঠক করেছে সেখানে সেনাবাহিনীকে ডাকেনি।"

প্রধানমন্ত্রী বলেন, "তিনি [খালেদা জিয়া] আশা করেছিলেন সেনাবাহিনী এসে ভোট চুরি করে তাদের জিতিয়ে দেবে। সেনাবাহিনীর দায়িত্ব কি ভোট চুরি করা?"

নির্বাচনে ভোট গ্রহণের মাত্র সাত ঘণ্টা আগে বিএনপির নির্বাচন বর্জনের ঘোষণার প্রসঙ্গ টেনে হাসিনা বলেন, "সেনাবাহিনী মোতায়েন না করায় মাঝরাতে তারা প্রার্থিতা প্রত্যাহার করেছে। সেনাবাহিনীকে কেন ভোট চুরির কাজে ব্যবহার করতে চান তিনি?"

জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন প্রধানমন্ত্রী।

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনকে সরকারের সহযোগিতা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "নির্বাচন পরিচালনায় নির্বাচন কমিশনকে সব ধরনের নির্বাহী সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী দেওয়া হয়েছে।

সেনা মোতায়েন না হওয়ায় সংবিধান লঙ্ঘন হয়েছে বলে যারা সমালোচনা করছে তাদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "সংবিধানের ব্যত্যয় ঘটেনি।"

সেনা মোতায়েন না হওয়াকে 'সংবিধান লঙ্ঘন' হিসেবে অভিহিত করেছে বিএনপি। দলটি বলেছে, এর মধ্য দিয়ে নির্বাচন কমিশন 'অকার্যকর' সংস্থায় পরিণত হয়েছে।

প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসেবে সেনাবাহিনী সরকার-প্রধানের [প্রধানমন্ত্রী] অধীন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, "সরকার-প্রধানই সিদ্ধান্ত নেবেন সেনাবাহিনী ব্যারাকের বাইরে যেতে পারে কি পারে না।"

সেনা মোতায়েন না করা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, "নির্বাচন কমিশন এমন একটা সময় সেনাবাহিনী চেয়ে চিঠি পাঠালো, যখন দেশের বাইরে আমরাও ব্যস্ত ছিলাম।"

নির্বাচন কমিশন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সেনা মোতায়েনে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগকে চিঠি দিলেও শেষ পর্যন্ত সেনা মোতায়েন হয়নি। এক নির্বাচন কমিশনার বলেছেন এ বিষয়ে জানতে চেয়ে তারা সরকারকে চিঠি দেবেন।

গত ৩০ অক্টোবর অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভী দল সমর্থিত প্রার্থী শামীম ওসমানকে এক লাখ ভোটের ব্যবধানে হারিয়ে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন।
ওই নির্বাচনে ভোট গ্রহণের মাত্র সাত ঘণ্টা আগে নির্বাচন বর্জন এবং দল সমর্থিত প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকারকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখার ঘোষণা দেয় বিএনপি।

যুদ্ধাপরাধ বিচার প্রসঙ্গ

যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে আটক জামায়াত-বিএনপি নেতাদের মুক্তি দাবি করে খালেদা জিয়ার স¤প্রতি দেওয়া বক্তব্যের সমালোচনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "আজকে উনি(খালেদা জিয়া) মাঠে নেমেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষা করতে।"

শেখ হাসিনা বলেন, "এই ঘৃণ্য অপরাধীদের বিচার বাংলার মাটিতে হতে হবে। জনগণ অভিশাপ থেকে মুক্তি পাবে। জনগণ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চায়।"

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিরোধীদলীয় নেতা জনগণের জবাব পেয়ে গেছেন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "উনি যে মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন- জাতি তা পছন্দ করেনি।"

"একজন [সেলিনা হায়াৎ আইভী] নারায়ণগঞ্জ শহর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আর আরেকজন [শামীম ওসমান] জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। [নারায়ণগঞ্জ সিটির মেয়র নির্বাচনে] একজন এক লাখের ওপর ভোট পেয়েছেন। আরেকজন, এক লাখের কাছাকাছি ভোট পেয়েছেন।" যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

টক শো

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সেনাবাহিনী দেওয়া হয়নি বলে 'সংবিধান লঙ্ঘন' হয়েছে বলে বিভিন্ন টেলিভিশন টক শো'তে যারা সরকারের সমালোচনা করছেন, তাদের পাল্টা সমালোচনা করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, "২০০৩ ও ২০০৪ সালে নির্বাচনে সেনাবাহিনী চেয়ে তখনকার প্রধান নির্বাচন কমিশনার [এম এ] সাঈদ সাহেব নিজে প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দিয়েছিলেন। তখন সেনাবাহিনী দেওয়া হয়নি। সে চিঠি আমাদের কাছে আছে।"

ওই দুই নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের সময়ে নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন না করায় সংবিধান লঙ্ঘিত হয়েছিলো কি হয়নি- তা জানতে চান প্রধানমন্ত্রী।


'এখনো রক্তের পিপাসা মেটেনি'

প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে বিনাবিচারে 'অগণিত' সেনা সদস্য হত্যা করা হয় উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, "৭৫-এর পর সেনাবাহিনীতে ১৮টি ক্যু হয়েছিলো। শেষ ক্যু'তে জিয়াউর রহমান মারা যান। প্রতিটি ক্যুর পর সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে ফায়ারিং স্কোয়াডে হত্যা করা হয়েছে। অনেকে ছুটিতে ছিলো। তাদের ডেকে এনে হত্যা করা হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, "জিয়াউর রহমান দেশকে খুনীদের অভয়ারণ্যে পরিণত করেছিলেন। তার স্ত্রী বাংলাদেশকে জঙ্গী ও সন্ত্রাসীদের দেশে পরিণত করেছে।"

২০০৪ সালের ২১ অগাস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনা উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভনেত্রী বলেন, "প্রকাশ্য দিবালোকে সরকারি মদদ ছাড়া কী এই গ্রেনেড হামলা হতে পারে ?"

কারো নাম উল্লেখ না করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, "এখনো রক্তের পিপাসা মেটেনি।"

জিয়াউর রহমানের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভনেত্রী বলেন, "জাতির পিতা এবং জাতীয় চার নেতার খুনীরা যেন বিদেশে আশ্রয় পায়- সে ব্যবস্থাও করেছিলো জিয়াউর রহমান।"

"পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যে কর্মকর্তা এই ব্যবস্থা করেছিলেন, তিনি এখন খালেদা জিয়ার পাশে রয়েছেন। তিনি এখন বিএনপি'র নেতা," যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

স্বাধীনতার পর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু হলেও জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এসে সবাইকে মুক্ত করে দেন এবং যারা দেশের বাইরে চলে গিয়েছিলো তাদের দেশে ফিরিয়ে এনে নাগরিকত্ব ফিরিয়ে দেন বলেও অভিযোগ করেন শেখ হাসিনা।

আরেক সেনা শাসক এইচএম এরশাদের আমলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাহারায় বঙ্গবন্ধুর খুনীরা দেশে রাজনীতি শুরু করে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও জাতীয় সংসদের উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য দেন- দলের সাধারণ সম্পাদক ও স্থানীয় সরকারমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, এম মনসুর আলীর ছেলে মোহাম্মদ নাসিম, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু ও সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত এম এ আজিজ, সাধারণ সম্পাদক মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

0 comments:

Post a Comment

Twitter Delicious Facebook Digg Stumbleupon Favorites More