দেশের দুই প্রধান দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতারা এসব তথ্য বিশ্বাস করতে চান না। অন্য দলের রাজনীতিকেরা অবশ্য বলছেন, উইকিলিকসে ফাঁস হওয়া মার্কিন গোপন নথির অনেক তথ্যই সঠিক এবং এর মাধ্যমে এ দেশের বড় দুই দলের রাজনৈতিক দলের দেউলিয়াত্ব প্রমাণিত হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘উইকিলিকস যেসব গোপন বার্তা ফাঁস করছে, তা কতটা সত্য সেটা প্রশ্নবিদ্ধ। যে ব্যক্তিটি বার্তা পাঠিয়েছেন, তিনিও কতটা সত্য বলেছেন, সেটাও প্রশ্নবিদ্ধ। সংশ্লিষ্ট নেতারা এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।’ তিনি বলেন, ‘তবে এর মধ্যে কিছুটা সত্য যে আছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু প্রশ্ন হল, এসব তথ্য এখনই কেন ফাঁস হচ্ছে। ভারত এত বড় দেশ, তাদের কোনো তথ্যই আসছে না। সবই বাংলাদেশকেন্দ্রিক এবং মূলত দুটি দলকে কেন্দ্র করে। বিষয়টি আমার কাছে রহস্যজনক মনে হচ্ছে।’
প্রকাশিত তথ্য সম্পর্কে সন্দেহ প্রকাশ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘আমাদের দেশের অনেক নেতা ভালো ইংরেজি জানেন না। তাঁরা যখন বিদেশের দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন, তখন অনেক ক্ষেত্রেই বিদেশিদের কাছে তাঁদের বক্তব্যের অর্থ ভিন্ন রকম হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।’
উইকিলিকসের ফাঁস হওয়া তথ্য জাতীয় নেতাদের মর্যাদাকে ক্ষুণ্ন করবে বলে মনে করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, ‘ফাঁস হওয়া তথ্য আমাদের জাতীয় রাজনীতির মর্যাদাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। আশা করা যায়, এখন থেকে দূতাবাসের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় আমাদের নেতারা আরও সতর্ক হবেন।’ জাতি ও রাজনীতিকদের মর্যাদা রক্ষার স্বার্থে উইকিলিকসের ফাঁস হওয়া তথ্য নিয়ে সংসদে আলোচনা হওয়া উচিত বলেও মনে করেন ওবায়দুল কাদের।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান মনে করেন, ‘উইকিলিকসের তথ্য রাজনীতিতে কোনো ধরনের প্রভাব ফেলবে না। কারণ তাদের তথ্য অনেক ক্ষেত্রেই বিশ্বাসযোগ্য বলে আমার কাছে মনে হচ্ছে না।’ দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, উইকিলিকসে ফাঁস করা তথ্য উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব নিয়ে হইচই করে দেশ মাতানোর কোনো প্রয়োজন নেই।
জাসদের সভাপতি ও সাংসদ হাসানুল হক ইনুর মতে, উইকিলিকস নতুন কোনো তথ্য উদঘাটন করতে পারেনি। তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের বড় দলের বড় নেতারা যে বিদেশের কাছে আত্মসমর্পণমুখী এবং ক্ষমতালিপ্সু, তা আমরা আগে থেকেই জানি। আমাদের নেতা এবং তাঁদের আত্মীয়স্বজনেরা যে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট করেন, সেটাও আমাদের অজানা নয়। রাষ্ট্রের জনগণও তা জানে। উইকিলিকসের সাফল্য হলো, তারা নতুন করে বিষয়গুলোকে সুনির্দিষ্ট এবং বিশ্বাসযোগ্য করে উপস্থাপন করেছে। সুতরাং বিষয়গুলো দেশের জাতীয় রাজনীতিতে বড় কোনো প্রভাব ফেলবে না। সংসদে আলোচনা করেও কোনো লাভ হবে না।’
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘ফাঁস হওয়া মার্কিন গোপন তথ্যের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনীতির দেওলিয়াত্ব বেরিয়ে এসেছে। দল দুটি আমাদের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে মার্কিন হস্তক্ষেপের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। এটা প্রমাণিত যে তারা রাষ্ট্রীয় স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের প্রতিযোগিতায় নেমেছে। বিষয়টি বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য অশুভ।’ তিনি আরও বলেন, ‘দুই-একজন নেতা ছাড়া আর কেউই এখন পর্যন্ত উইকিলিকসের ফাঁস করা তথ্য সম্পর্কে আপত্তি জানাননি। এতে প্রমাণিত হয়, ফাঁস হওয়া তথ্য সত্য। তবে আশপাশের দেশ থাকা সত্ত্বেও উইকিলিকস কেন শুধু বাংলাদেশের তথ্য ফাঁস করে যাচ্ছে, এর পেছনে তাদের কোনো উদ্দেশ্য আছে কি না, তা বিচার-বিশ্লেষণের জন্য এ নিয়ে সংসদে আলোচনা হওয়া উচিত।
0 comments:
Post a Comment